আমার সত্য মিথ্যা সকলই ভুলায়ে দাও
আমার সত্য মিথ্যা সকলই ভুলায়ে দাও,
আমায় আনন্দে ভাসাও ॥
না চাহি তর্ক না চাহি যুক্তি, না জানি বন্ধ না জানি মুক্তি,
তোমার বিশ্বব্যাপিনী ইচ্ছা আমার অন্তরে জাগাও ॥
সকল বিশ্ব ডুবিয়া যাক শান্তিপাথারে,
সব সুখ দুখ থামিয়া যাক হৃদয়মাঝারে।
সকল বাক্য সকল শব্দ সকল চেষ্টা হউক স্তব্ধ-
তোমার চিত্তজয়িনী বাণী আমার অন্তরে শুনাও ॥
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি।
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥
আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি ॥
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়–
আনন্দে তাই ভুলেছিলেম, কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে আমার দুঃখসুখের গানে
সুর দিয়েছ তুমি, আমি তোমার গান তো গাই নি ॥
আমার আর হবে না দেরি
আমার আর হবে না দেরি–
আমি শুনেছি ওই বাজে তোমার ভেরী॥
তুমি কি, নাথ, দাঁড়িয়ে আছ আমার যাবার পথে ?
মনে হয় যে ক্ষণে ক্ষণে মোর বাতায়ন হতে
তোমায় যেন হেরি–
আমার আর হবে না দেরি॥
আমার স্বপন হল সারা,
এখন প্রাণে বীণা বাজায় ভোরের তারা।
দেবার মতো যা ছিল মোর নাই কিছু আর হাতে,
তোমার আশীর্বাদের মালা নেব কেবল মাথে
আমার ললাট ঘেরি–
আমার আর হবে না দেরি॥
আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে
আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে
তখন কে তুমি তা কে জানত।
তখন ছিল না ভয়, ছিল না লাজ মনে,
জীবন বহে যেত অশান্ত ॥
তুমি ভোরের বেলা ডাক দিয়েছ কত
যেন আমার আপন সখার মতো,
হেসে তোমার সাথে ফিরেছিলেম ছুটে
সে দিন কত-না বন-বনান্ত ॥
ওগো, সেদিন তুমি গাইতে যে-সব গান
কোনো অর্থ তাহার কে জানত।
শুধু সঙ্গে তারি গাইত আমার প্রাণ,
সদা নাচত হৃদয় অশান্ত।
হঠাৎ খেলার শেষে আজ কী দেখি ছবি–
স্তব্ধ আকাশ, নীরব শশী রবি,
তোমার চরণ-পানে নয়ন করি নত
ভুবন দাঁড়িয়ে আছে একান্ত ॥
আমার মন তুমি, নাথ, লবে হ’রে
আমার মন তুমি, নাথ, লবে হ’রে
আমি আছি বসে সেই আশা ধরে ॥
নীলাকাশে ওই তারা ভাসে, নীরব নিশীথে শশী হাসে,
আমার দু নয়নে বারি আসে ভরে– আছি আশা ধরে ॥
স্থলে জলে তব ধূলিতলে, তরুলতা তব ফুলে ফলে,
নরনারীদের প্রেমডোরে,
নানা দিকে দিকে নানা কালে, নানা সুরে সুরে নানা তালে
নানা মতে তুমি লবে মোরে– আছি আশা ধরে ॥
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন–
আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন ॥
যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে,
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন–
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন-ডোরে,
মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ’রে।
যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে একে একে তারা,
আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন–
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন–
আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন ॥
যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে,
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন–
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন-ডোরে,
মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ’রে।
যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে একে একে তারা,
আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন–
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
আমার কণ্ঠ তাঁরে ডাকে
আমার কণ্ঠ তাঁরে ডাকে,
তখন হৃদয় কোথায় থাকে ॥
যখন হৃদয় আসে ফিরে আপন নীরব নীড়ে
আমার জীবন তখন কোন্ গহনে বেড়ায় কিসের পাকে ॥
যখন মোহ আমায় ডাকে
তখন লজ্জা কোথায় থাকে!
যখন আনেন তমোহারী আলোক-তরবারি
তখন পরান আমার কোন্ কোণে যে
লজ্জাতে মুখ ঢাকে ॥
আমার না-বলা বাণীর ঘন যামিনীর মাঝে
আমার না-বলা বাণীর ঘন যামিনীর মাঝে
তোমার ভাবনা তারার মতন বাজে ॥
নিভৃত মনের বনের ছায়াটি ঘিরে
না-দেখা ফুলের গোপন গন্ধ ফিরে,
আমার লুকায় বেদনা অঝরা অশ্রুনীরে–
অশ্রুত বাঁশি হৃদয়গহনে বাজে ॥
ক্ষণে ক্ষণে আমি না জেনে করেছি দান
তোমায় আমার গান।
পরানের সাজি সাজাই খেলার ফুলে,
জানি না কখন নিজে বেছে লও তুলে–
তুমি অলখ আলোকে নীরবে দুয়ার খুলে
প্রাণের পরশ দিয়ে যাও মোর কাজে ॥
আমার যে আসে কাছে, যে যায় চলে দূরে
আমার যে আসে কাছে, যে যায় চলে দূরে,
কভু পাই বা কভু না পাই যে বন্ধুরে,
যেন এই কথাটি বাজে মনের সুরে–
তুমি আমার কাছে এসেছ ॥
কভু মধুর রসে ভরে হৃদয়খানি,
কভু নিঠুর বাজে প্রিয়মুখের বাণী,
তবু নিত্য যেন এই কথাটি জানি–
তুমি স্নেহের হাসি হেসেছ ॥
ওগো কভু সুখের কভু দুখের দোলে
মোর জীবন জুড়ে কত তুফান তোলে,
যেন চিত্ত আমার এই কথা না ভোলে–
তুমি আমায় ভালোবেসেছ।
যবে মরণ আসে নিশীথে গৃহদ্বারে
যবে পরিচিতের কোল হতে সে কাড়ে,
যেন জানি গো সেই অজানা পারাবারে
এক তরীতে তুমিও ভেসেছ ॥