আমাদের খেপিয়ে বেড়ায় যে কোথায় লুকিয়ে থাকে রে
আমাদের খেপিয়ে বেড়ায় যে কোথায় লুকিয়ে থাকে রে ?।
ছুটল বেগে ফাগুন-হাওয়া কোন্ খ্যাপামির নেশায় পাওয়া,
ঘূর্ণা হাওয়ায় ঘুরিয়ে দিল সূর্যতারাকে॥
কোন্ খ্যাপামির তালে নাচে পাগল সাগর-নীর।
সেই তালে যে পা ফেলে যাই, রইতে নারি স্থির।
চল্ রে সোজা, ফেল্ রে বোঝা, রেখে দে তোর রাস্তা-খোঁজা,
চলার বেগে পায়ের তলায় রাস্তা জেগেছে॥
আমার ব্যথা যখন আনে আমায় তোমার দ্বারে
আমার ব্যথা যখন আনে আমায় তোমার দ্বারে
তখন আপনি এসে দ্বার খুলে দাও, ডাকো তারে ॥
বাহুপাশের কাঙাল সে যে, চলেছে তাই সকল ত্যেজে,
কাঁটার পথে ধায় সে তোমার অভিসারে ॥
আমার ব্যথা যখন বাজায় আমায় বাজি সুরে–
সেই গানের টানে পারো না আর রইতে দূরে।
লুটিয়ে পড়ে সে গান মম ঝড়ের রাতের পাখি-সম,
বাহির হয়ে এসো তুমি অন্ধকারে ॥
আমার মন, যখন জাগলি না রে
আমার মন, যখন জাগলি না রে
ও তোর মনের মানুষ এল দ্বারে।
তার চলে যাওয়ার শব্দ শুনে ভাঙল রে ঘুম–
ও তোর ভাঙল রে ঘুম অন্ধকারে॥
মাটির ’পরে আঁচল পাতি একলা কাটে নিশীথরাতি।
তার বাঁশি বাজে আঁধার-মাঝে, দেখি না যে চক্ষে তারে॥
ওরে, তুই যাহারে দিলি ফাঁকি খুঁজে তারে পায় কি আঁখি ?
এখন পথে ফিরে পাবি কি রে ঘরের বাহির করলি যারে॥
আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও
আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও,
কে আমারে কী-যে বলে ভোলাও ভোলাও ॥
ওরা কেবল কথার পাকে নিত্য আমায় বেঁধে রাখে,
বাঁশির ডাকে সকল বাঁধন খোলাও ॥
মনে পড়ে, কত-না দিন রাতি
আমি ছিলেম তোমার খেলার সাথী।
আজকে তুমি তেমনি ক’রে সামনে তোমার রাখো ধরে,
আমার প্রাণে খেলার সে ঢেউ তোলাও ॥
আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে,
তাই হেরি তায় সকল খানে॥
আছে সে নয়নতারায় আলোক-ধারায়, তাই না হারায়–
ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়
তাকাই আমি যে দিক-পানে॥
আমি তার মুখের কথা শুনব ব’লে গেলাম কোথা,
শোনা হল না, হল না–
আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি
শুনি তাহার বাণী আপন গানে॥
কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল বেশে দ্বারে দ্বারে,
দেখা মেলে না, মেলে না–
তোরা আয় রে ধেয়ে, দেখ্ রে চেয়ে আমার বুকে–
ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে॥
আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে
আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে।
সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে॥
নিজেরে করিতে গৌরব দান নিজেরে কেবলি করি অপমান,
আপনারে শুধু ঘেরিয়া ঘেরিয়া ঘুরে মরি পলে পলে।
সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে॥
আমারে না যেন করি প্রচার আমার আপন কাজে,
তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ আমার জীবনমাঝে।
যাচি হে তোমার চরম শান্তি, পরানে তোমার পরম কান্তি,
আমারে আড়াল করিয়া দাঁড়াও হৃদয়পদ্মদলে।
সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে॥
আমার যে গান তোমার পরশ পাবে
আমার যে গান তোমার পরশ পাবে
থাকে কোথায় গহন মনের ভাবে?।
সুরে সুরে খুঁজি তারে অন্ধকারে,
আমার যে আঁখিজল তোমার পায়ে নাবে
থাকে কোথায় গহন মনের ভাবে?।
যখন শুষ্ক প্রহর বৃথা কাটাই
চাহি গানের লিপি তোমায় পাঠাই।
কোথায় দুঃখসুখের তলায় সুর যে পলায়,
আমার যে শেষ বাণী তোমার দ্বারে যাবে
থাকে কোথায় গহন মনের ভাব?।
আমার আঁধার ভালো, আলোর কাছে বিকিয়ে দেবে আপনাকে সে
আমার আঁধার ভালো, আলোর কাছে বিকিয়ে দেবে আপনাকে সে ॥
আলোরে যে লোপ ক’রে খায় সেই কুয়াশা সর্বনেশে ॥
অবুঝ শিশু মায়ের ঘরে সহজ মনে বিহার করে,
অভিমানী জ্ঞানী তোমার বাহির দ্বারে ঠেকে এসে ॥
তোমার পথ আপনায় আপনি দেখায়, তাই বেয়ে, মা, চলব সোজা।
যারা পথ দেখাবার ভিড় করে গো তারা কেবল বাড়ায় খোঁজা–
ওরা ডাকে আমায় পূজার ছলে, এসে দেখি দেউল-তলে–
আপন মনের বিকারটারে সাজিয়ে রাখে ছদ্মবেশে ॥
আমার পথে পথে পাথর ছড়ানো
আমার পথে পথে পাথর ছড়ানো।
তাই তো তোমার বাণী বাজে ঝর্না-ঝরানো॥
আমার বাঁশি তোমার হাতে ফুটোর পরে ফুটো তাতে–
তাই শুনি সুর এমন মধুর পরান-ভরানো॥
তোমার হাওয়া যখন জাগে আমার পালে বাধা লাগে–
এমন করে গায়ে প’ড়ে সাগর-তরানো।
ছাড়া পেলে একেবারে রথ কি তোমার চলতে পারে–
তোমার হাতে আমার ঘোড়া লাগাম-পরানো॥
আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন
আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন !
তারি গলার মালা হতে পাপড়ি হোথা লুটায় ছিন্ন॥
এল যখন সাড়াটি নাই, গেল চলে জানালো তাই–
এমন ক’রে আমারে হায় কে বা কাঁদায় সে জন ভিন্ন॥
তখন তরুণ ছিল অরুণ আলো, পথটি ছিল কুসুমকীর্ণ।
বসন্ত যে রঙিন বেশে ধরায় সে দিন অবতীর্ণ।
সে দিন খবর মিলল না যে, রইনু বসে ঘরের মাঝে–
আজকে পথে বাহির হব বহি আমার জীবন জীর্ণ॥
আমার যাবার বেলাতে
আমার যাবার বেলাতে
সবাই জয়ধ্বনি কর্।
ভোরের আকাশ রাঙা হল রে,
আমার পথ হল সুন্দর॥
কী নিয়ে বা যাব সেথা ওগো তোরা ভাবিস নে তা,
শূন্য হাতেই চলব বহিয়ে
আমার ব্যাকুল অন্তর॥
মালা প’রে যাব মিলনবেশে,
আমার পথিকসজ্জা নয়।
বাধা বিপদ আছে মাঝের দেশে,
মনে রাখি নে সেই ভয়।
যাত্রা যখন হবে সারা উঠবে জ্বলে সন্ধ্যাতারা,
পুরবীতে করুণ বাঁশরি
দ্বারে বাজবে মধুর স্বর॥