হৃদিমন্দিরদ্বারে বাজে সমুঙ্গল শঙ্খ
হৃদিমন্দিরদ্বারে বাজে সমুঙ্গল শঙ্খ ॥
শত মঙ্গলশিখা করে ভবন আলো,
উঠে নির্মল ফুলগন্ধ ॥
হৃদয় আমার প্রকাশ হল অনন্ত আকাশে
হৃদয় আমার প্রকাশ হল অনন্ত আকাশে।
বেদন-বাঁশি উঠল বেজে বাতাসে বাতাসে ॥
এই-যে আলোর আকুলতা আমারি এ আপন কথা–
ফিরে এসে আমার প্রাণে আমারে উদাসে॥
বাইরে তুমি নানা বেশে ফের নানা ছলে;
জানি নে তো আমার মালা দিয়েছি কার গলে।
আজকে দেখি পরান-মাঝে, তোমার গলায় সব মালা যে–
সব নিয়ে শেষ ধরা দিলে গভীর সর্বনাশে।
সেই কথা আজ প্রকাশ হল অনন্ত আকাশে॥
হৃদয়নন্দনবনে নিভৃত এ নিকেতনে
হৃদয়নন্দনবনে নিভৃত এ নিকেতনে।
এসো হে আনন্দময়, এসো চিরসুন্দর ॥
দেখাও তব প্রেমমুখ, পাসরি সর্ব দুখ,
বিরহকাতর তপ্ত চিত্ত-মাঝে বিহরো ॥
শুভদিন শুভরজনী আনো এ জীবনে,
ব্যর্থ এ নবজনম সফল করো প্রিয়তম।
মধুর চিরসঙ্গীতে ধ্বনিত করো অন্তর,
ঝরিবে জীবনে মনে দিবানিশা সুধানিঝর ॥
হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল আজি মম পূর্ণ হল
হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল আজি মম পূর্ণ হল, শুন সবে জগতজনে ॥
কী হেরিনু শোভা, নিখিলভুবননাথ
চিত্ত-মাঝে বসি স্থির আসনে ॥
হৃদয়বেদনা বহিয়া, প্রভু, এসেছি তব দ্বারে
হৃদয়বেদনা বহিয়া, প্রভু, এসেছি তব দ্বারে।
তুমি অর্ন্তযামী হৃদয়স্বামী, সকলই জানিছ হে–
যত দুঃখ লাজ দারিদ্র৻ সঙ্কট আর জানাইব কারে?।
অপরাধ কত করেছি, নাথ, মোহপাশে প’ড়ে–
তুমি ছাড়া, প্রভু, মার্জনা কেহ করিবে না সংসারে ॥
সব বাসনা দিব বিসর্জন তোমার প্রেমপাথারে,
সব বিরহ বিচ্ছেদ ভুলিব তব মিলন-অমৃতধারে।
আর আপন ভাবনা পারি না ভাবিতে, তুমি লহো মোর ভার–
পরিশ্রান্ত জনে, প্রভু, লয়ে যাও সংসারসাগরপারে ॥
হৃদয়মন্দিরে, প্রাণাধীশ, আছ গোপনে
হৃদয়মন্দিরে, প্রাণাধীশ, আছ গোপনে।
অমৃতসৌরভে আকুল প্রাণ, হায়,
ভ্রমিয়া জগতে না পায় সন্ধান–
কে পারে পশিতে আনন্দভবনে
তোমার করুণাকিরণ-বিহনে ॥
হৃদয়শশী হৃদিগগনে উদিল মঙ্গললগনে
হৃদয়শশী হৃদিগগনে উদিল মঙ্গললগনে,
নিখিল সুন্দর ভুবনে একি এ মহামধুরিমা॥
ডুবিল কোথা দুখ সুখ রে অপার শান্তির সাগরে,
বাহিরে অন্তরে জাগে রে শুধুই সুধাপুরনিমা॥
গভীর সঙ্গীত দ্যুলোকে ধ্বনিছে গম্ভীর পুলকে,
গগন-অঙ্গন-আলোকে উদার দীপদীপ্তিমা।
চিত্তমাঝে কোন্ যন্ত্রে কী গান মধুময় মন্ত্রে
বাজে রে অপরূপ তন্ত্রে, প্রেমের কোথা পরিসীমা॥
হৃদয়ে তোমার দয়া যেন পাই
হৃদয়ে তোমার দয়া যেন পাই।
সংসারে যা দিবে মানিব তাই,
হৃদয়ে তোমায় যেন পাই ॥
তব দয়া জাগিবে স্মরণে
নিশিদিন জীবনে মরণে,
দুঃখে সুখে সম্পদে বিপদে তোমারি দয়া-পানে চাই–
তোমারি দয়া যেন পাই ॥
তব দয়া শান্তির নীরে অন্তরে নামিবে ধীরে।
তব দয়া মঙ্গল-আলো
জীবন-আঁধারে জ্বালো–
প্রেমভক্তি মম সকল শক্তি মম তোমারি দয়ারূপে পাই,
আমার ব’লে কিছু নাই ॥
হৃদয়ে হৃদয় আসি মিলে যায় যেথা
হৃদয়ে হৃদয় আসি মিলে যায় যেথা,
হে বন্ধু আমার,
সে পুণ্যতীর্থের যিনি জাগ্রত দেবতা
তাঁরে নমস্কার ॥
বিশ্বলোক নিত্য যাঁর শাশ্বত শাসনে
মরণ উত্তীর্ণ হয় প্রতি ক্ষণে ক্ষণে,
আবর্জনা দূরে যায় জরাজীর্ণতার,
তাঁরে নমস্কার ॥
যুগান্তের বহ্নিস্নানে যুগান্তরদিন
নির্মল করেন যিনি, করেন নবীন,
ক্ষয়শেষে পরিপূর্ণ করেন সংসার,
তাঁরে নমস্কার।
পথযাত্রী জীবনের দুঃখে সুখে ভরি
অজানা উদ্দেশ-পানে চলে কালতরী,
ক্লান্তি তার দূর করি করিছেন পার,
তাঁরে নমস্কার ॥
হে অন্তরের ধন তুমি যে বিরহী
হে অন্তরের ধন,
তুমি যে বিরহী, তোমার শূন্য এ ভবন ॥
আমার ঘরে তোমায় আমি একা রেখে দিলাম স্বামী–
কোথায় যে বাহিরে আমি ঘুরি সকল ক্ষণ ॥
হে অন্তরের ধন,
এই বিরহে কাঁদে আমার নিখিল ভুবন।
তোমার বাঁশি নানা সুরে আমায় খুঁজে বেড়ায় দূরে,
পাগল হল বসন্তের এই দখিন-সমীরণ ॥
হে চিরনূতন, আজি এ দিনের প্রথম গানে
হে চিরনূতন, আজি এ দিনের প্রথম গানে
জীবন আমার উঠুক বিকাশি তোমার পানে ॥
তোমার বাণীতে সীমাহীন আশা, চিরদিবসের প্রাণময়ী ভাষা–
ক্ষয়হীন ধন ভরি দেয় মন তোমার হাতের দানে ॥
এ শুভলগনে জাগুক গগনে অমৃতবায়ু,
আনুক জীবনে নবজনমের অমল আয়ু।
জীর্ণ যা-কিছু যাহা-কিছু ক্ষীণ নবীনের মাঝে হোক তা বিলীন–
ধুয়ে যাক যত পুরানো মলিন
নব-আলোকের স্নানে ॥
হে নিখিলভারধারণ বিশ্ববিধাতা
হে নিখিলভারধারণ বিশ্ববিধাতা,
হে বলদাতা মহাকালরথসারথি॥
তব নামজপমালা গাঁথে রবি শশী তারা,
অনন্ত দেশ কাল জপে দিবারাতি॥
হে মহাজীবন, হে মহামরণ
হে মহাজীবন, হে মহামরণ, লইনু শরণ, লইনু শরণ ॥
আঁধার প্রদীপে জ্বালাও শিখা,
পরাও পরাও জ্যোতির টিকা– করো হে আমার লজ্জাহরণ ॥
পরশরতন তোমারি চরণ– লইনু শরণ, লইনু শরণ।
যা-কিছু মলিন, যা-কিছু কালো,
যা-কিছু বিরূপ হোক তা ভালো– ঘুচাও ঘুচাও সব আবরণ ॥
হে মহাদুঃখ, হে রুদ্র, হে ভয়ঙ্কর
হে মহাদুঃখ, হে রুদ্র, হে ভয়ঙ্কর, ওহে শঙ্কর, হে প্রলয়ঙ্কর।
হোক জটানিঃসৃত অগ্নিভুজঙ্গম দংশনে জর্জর স্থাবর জঙ্গম,
ঘন ঘন ঝন ঝন ঝননন ঝননন পিনাক টঙ্করো॥
হে মহাপ্রবল বলী
হে মহাপ্রবল বলী,
কত অসংখ্য গ্রহ তারা তপন চন্দ্র
ধারণ করে তোমার বাহু,
নরপতি ভূমাপতি হে দেববন্দ্য ॥
ধন্য ধন্য তুমি মহেশ, ধন্য, গাহে সর্ব দেশ–
স্বর্গে মর্তে বিশ্বলোকে এক ইন্দ্র ॥
অন্ত নাহি জানে মহাকাল মহাকাশ,
গীতছন্দে করে প্রদক্ষিণ।
তব অভয়চরণে শরণাগত দীনহীন,
হে রাজা বিশ্ববন্ধু ॥