আনন্দ রয়েছে জাগি ভুবনে তোমার
আনন্দ রয়েছে জাগি ভুবনে তোমার
তুমি সদা নিকটে আছ ব’লে।
স্তব্ধঅবাক নীলাম্বরে রবি শশী তারা
গাঁথিছে হে শুভ্র কিরণমালা ॥
বিশ্বপরিবার তোমার ফেরে সুখে আকাশে,
তোমার ক্রোড়ে প্রসারিত ব্যোমে ব্যোমে।
আমি দীন সন্তান আছি সেই তব আশ্রয়ে
তব স্নেহমুখপানে চাহি চিরদিন ॥
আনন্দগান উঠুক তবে বাজি
আনন্দগান উঠুক তবে বাজি
এবার আমার ব্যথার বাঁশিতে।
অশ্রুজলের ঢেউয়ের ‘পরে আজি
পারের তরী থাকুক ভাসিতে ॥
যাবার হাওয়া ওই-যে উঠেছে, ওগো, ওই-যে উঠেছে,
সারারাত্রি চক্ষে আমার ঘুম যে ছুটেছে।
হৃদয় আমার উঠছে দুলে দুলে
অকূল জলের অট্টহাসিতে–
কে গো তুমি দাও দেখি তান তুলে
এবার আমার ব্যথার বাঁশিতে ॥
হে অজানা, অজানা সুর নব
বাজাও আমার ব্যথার বাঁশিতে,
হঠাৎ এবার উজান হাওয়ায় তব
পারের তরী থাক্-না ভাসিতে।
কোনো কালে হয় নি যারে দেখা, ওগো, তারি বিরহে
এমন করে ডাক দিয়েছে– ঘরে কে রহে!
বাসার আশা গিয়েছে মোর ঘুরে,
ঝাঁপ দিয়েছি আকাশরাশিতে
পাগল, তোমার সৃষ্টিছাড়া সুরে
তান দিয়ো মোর ব্যথার বাঁশিতে ॥
আনন্দধারা বহিছে ভুবনে
আনন্দধারা বহিছে ভুবনে,
দিনরজনী কত অমৃতরস উথলি যায় অনন্ত গগনে ॥
পান করি রবে শশী অঞ্জলি ভরিয়া–
সদা দীপ্ত রহে অক্ষয় জ্যোতি–
নিত্য পূর্ণ ধরা জীবনে কিরণে ॥
বসিয়া আছ কেন আপন-মনে,
স্বার্থনিমগন কী কারণে?
চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি,
ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি
প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে ॥
আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর
আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর ॥
মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,
বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে ॥
গ্রহতারক চন্দ্রতপন ব্যাকুল দ্রুত বেগে
করিছে পান, করিছে স্নান, অক্ষয় কিরণে ॥
ধরণী’পরে ঝরে নির্ঝর, মোহন মধু শোভা
ফুলপল্লব-গীতবন্ধ-সুন্দর-বরনে ॥
বহে জীবন রজনীদিন চিরনূতনধারা,
করুণা তব অবিশ্রাম জনমে মরণে ॥
স্নেহ প্রেম দয়া ভক্তি কোমল করে প্রাণ,
কত সান্ত্বন করো বর্ষণ সন্তাপহরণে ॥
জগতে তব কী মহোৎসব, বন্দন করে বিশ্ব
শ্রীসম্পদ ভূমাস্পদ নির্ভয়শরণে ॥
আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া
আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া,
বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া ॥
এই-যে বিপুল ঢেউ লেগেছে তোর মাঝেতে উঠুক নেচে,
সকল পরান দিক-না নাড়া ॥
বোস্-না ভ্রমর, এই নীলিমায় আসন লয়ে
অরুণ-আলোর স্বর্ণরেণু মাখা হয়ে।
যেখানেতে অগাধ ছুটি মেল সেথা তোর ডানাদুটি,
সবার মাঝে পাবি ছাড়া ॥
আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না
আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না।
এই জানারই সঙ্গে সঙ্গে তোমায় চেনা ॥
কত জনম-মরণেতে তোমারি ওই চরণেতে
আপনাকে যে দেব, তবু বাড়বে দেনা ॥
আমারে যে নামতে হবে ঘাটে ঘাটে,
বারে বারে এই ভুবনের প্রাণের হাটে।
ব্যাবসা মোর তোমার সাথে চলবে বেড়ে দিনে রাতে,
আপনা নিয়ে করব যতই বেচা কেনা ॥
আপনারে দিয়ে রচিলি রে কি এ আপনারই আবরণ
আপনারে দিয়ে রচিলি রে কি এ আপনারই আবরণ!
খুলে দেখ্ দ্বার, অন্তরে তার আনন্দনিকেতন ॥
মুক্তি আজিকে নাই কোনো ধারে, আকাশ সেও যে বাঁধে কারাগারে,
বিষনিশ্বাসে তাই ভরে আসে নিরুদ্ধ সমীরণ ॥
ঠেলে দে আড়াল; ঘুচিবে আঁধার– আপনারে ফেল্ দূরে–
সহজে তখনি জীবন তোমার অমৃতে উঠিবে পূরে।
শূন্য করিয়া রাখ্ তোর বাঁশি, বাজাবার যিনি বাজাবেন আসি–
ভিক্ষা না নিবি, তখনি জানিবি ভরা আছে তোর ধন ॥
আপনি আমার কোন্খানে
আপনি আমার কোন্খানে
বেড়াই তারি সন্ধানে॥
নানান রূপে নানান বেশে ফেরে যেজন ছায়ার দেশে
তার পরিচয় কেঁদে হেসে শেষ হবে কি, কে জানে॥
আমার গানের গহন-মাঝে শুনেছিলেম যার ভাষা
খুঁজে না পাই তার বাসা।
বেলা কখন যায় গো বয়ে, আলো আসে মলিন হয়ে–
পথের বাঁশি যায় কী কয়ে বিকালবেলার মূলতানে॥
আবার এরা ঘিরেছে মোর মন
আবার এরা ঘিরেছে মোর মন।
আবার চোখে নামে আবরণ ॥
আবার এ যে নানা কথাই জমে, চিত্ত আমার নানা দিকেই ভ্রমে,
দাহ আবার বেড়ে ওঠে ক্রমে, আবার এ যে হারাই শ্রীচরণ ॥
তব নীরব বাণী হৃদয়তলে
ডোবে না যেন লোকের কোলাহলে।
সবার মাঝে আমার সাথে থাকো, আমায় সদা তোমার মাঝে ঢাকো,
নিয়ত মোর চেতনা-‘পরে রাখো আলোকে-ভরা উদার ত্রিভুবন ॥
আবার যদি ইচ্ছা কর আবার আসি ফিরে
আবার যদি ইচ্ছা কর আবার আসি ফিরে
দুঃখসুখের-ঢেউ-খেলানো এই সাগরের তীরে॥
আবার জলে ভাসাই ভেলা, ধুলার ’পরে করি খেলা গো,
হাসির মায়ামৃগীর পিছে ভাসি নয়ননীরে॥
কাঁটার পথে আঁধার রাতে আবার যাত্রা করি,
আঘাত খেয়ে বাঁচি নাহয় আঘাত খেয়ে মরি।
আবার তুমি ছদ্মবেশে আমার সাথে খেলাও হেসে গো,
নূতন প্রেমে ভালোবাসি আবার ধরণীরে॥
আমরা তারেই জানি তারেই জানি সাথের সাথী
আমরা তারেই জানি তারেই জানি সাথের সাথী,
তারেই করি টানাটানি দিবারাতি ॥
সঙ্গে তারি চরাই ধেনু,
বাজাই বেণু,
তারি লাগি বটের ছায়ায় আসন পাতি ॥
তারে হালের মাঝি করি
চালাই তরী,
ঝড়ের বেলায় ঢেউয়ের খেলায় মাতামাতি।
সারা দিনের কাজ ফুরালে
সন্ধ্যাকালে
তাহারি পথ চেয়ে ঘরে জ্বালাই বাতি ॥