আজি কোন্ ধন হতে বিশ্বে আমারে
আজি কোন্ ধন হতে বিশ্বে আমারে
কোন্ জনে করে বঞ্চিত–
তব চরণ-কমল-রতন-রেণুকা
অন্তরে আছে সঞ্চিত ॥
কত নিঠুর কঠোর দরশে ঘরষে মর্মমাঝারে শল্য বরষে,
তবু প্রাণ মন পীযূষপরশে পলে পলে পুলকাঞ্চিত ॥
আজি কিসের পিপাসা মিটিল না ওগো
পরম পরানবল্লভ!
চিতে চিরসুধা করে সঞ্চার তব
সকরুণ করপল্লব।
নাথ, যার যাহা আছে তার তাই থাক, আমি থাকি চিরলাঞ্ছিত–
শুধু তুমি এ জীবনে নয়নে নয়নে থাকো থাকো চিরবাঞ্ছিত ॥
আজি নাহি নাহি নিদ্রা আঁখিপাতে
আজি নাহি নাহি নিদ্রা আঁখিপাতে।
তোমার ভবনতলে হেরি প্রদীপ জ্বলে,
দূরে বাহিরে তিমিরে আমি জেগে জোড়হাতে ॥
ক্রন্দন ধ্বনিছে পথহারা পবনে,
রজনী মূর্ছাগত বিদ্যুতঘাতে।
দ্বার খোলো হে দ্বার খোলো–
প্রভু, করো দয়া, দেহো দেখা দুখরাতে ॥
আজি নির্ভয়নিদ্রিত ভুবনে জাগে, কে জাগে
আজি নির্ভয়নিদ্রিত ভুবনে জাগে, কে জাগে?
ঘন সৌরভমন্থর পবনে জাগে, কে জাগে?।
কত নীরব বিহঙ্গকুলায়ে
মোহন অঙ্গুলি বুলায়ে– জাগে, কে জাগে?
কত অস্ফুট পুষ্পের গোপনে জাগে, কে জাগে?
এই অপার অম্বরপাথারে
স্তম্ভিত গম্ভীর আঁধারে– জাগে, কে জাগে?
মম গভীর অন্তরবেদনে জাগে, কে জাগে?।
আজি প্রণমি তোমারে চলিব, নাথ, সংসারকাজে
আজি প্রণমি তোমারে চলিব, নাথ, সংসারকাজে।
তুমি আমার নয়নে নয়ন রেখো অন্তরমাঝে ॥
হৃদয়দেবতা রয়েছ প্রাণে মন যেন তাহা নিয়ত জানে,
পাপের চিন্তা মরে যেন দহি দুঃসহ লাজে ॥
সব কলরবে সারা দিনমান শুনি অনাদি সঙ্গীতগান,
সবার সঙ্গে যেন অবিরত তোমার সঙ্গ রাজে।
নিমেষে নিমেষে নয়নে বচনে, সকল কর্মে, সকল মননে,
সকল হৃদয়তন্ত্রে যেন মঙ্গল বাজে ॥
আজি এ আনন্দসন্ধ্যা সুন্দর বিকাশে, আহা
আজি এ আনন্দসন্ধ্যা সুন্দর বিকাশে, আহা ॥
মন্দ পবনে আজি ভাসে আকাশে
বিধুর ব্যাকুল মধুমাধুরী, আহা ॥
স্তব্ধ গগনে গ্রহতারা নীরবে
কিরণসঙ্গীতে সুধা বরষে, আহা।
প্রাণ মন মম ধীরে ধীরে প্রসাদরসে আসে ভরি,
দেহ পুলকিত উদার হরষে, আহা ॥
আজি বহিছে বসন্তপবন সুমন্দ তোমারি সুগন্ধ হে
আজি বহিছে বসন্তপবন সুমন্দ তোমারি সুগন্ধ হে।
কত আকুল প্রাণ আজি গাহিছে গান, চাহে তোমারি পানে আনন্দে হে ॥
জ্বলে তোমার আলোক দ্যুলোকভূলোকে গগন-উৎসবপ্রাঙ্গণে–
চিরজ্যোতি পাইছে চন্দ্র তারা, আঁখি পাইছে অন্ধ হে ॥
তব মধুরমুখভাতিবিহসিত প্রেমবিকশিত অন্তরে
কত ভকত ডাকিছে, “নাথ, যাচি দিবসরজনী তব সঙ্গ হে।’
উঠে সজনে প্রান্তরে লোকলোকান্তরে যশোগাথা কত ছন্দে হে–
ওই ভবশরণ, প্রভু, অভয় পদ তব সুর মানব মুনি বন্দে হে ॥
আজি মম জীবনে নামিছে ধীরে
আজি মম জীবনে নামিছে ধীরে
ঘন রজনী নীরবে নিবিড়গম্ভীরে॥
জাগো আজি জাগো, জাগো রে তাঁরে লয়ে
প্রেমঘন হৃদয়মন্দিরে॥
আজি মম মন চাহে জীবনবন্ধুরে
আজি মম মন চাহে জীবনবন্ধুরে,
সেই জনমে মরণে নিত্যসঙ্গী
নিশিদিন সুখে শোকে–
সেই চির-আনন্দ, বিমল চিরসুধা,
যুগে যুগে কত নব নব লোকে নিয়তশরণ ॥
পরাশান্তি, পরমপ্রেম, পরামুক্তি, পরমক্ষেম,
সেই অন্তরতম চিরসুন্দর প্রভু, চিত্তসখা,
ধর্ম-অর্থ-কাম-ভরণ রাজা হৃদয়হরণ ॥
আজি মর্মরধ্বনি কেন জাগিল রে
আজি মর্মরধ্বনি কেন জাগিল রে!
মম পল্লবে পল্লবে হিল্লোলে হিল্লোলে
থরথর কম্পন লাগিল রে ॥
কোন্ ভিখারি হায় রে এল আমারি এ অঙ্গনদ্বারে,
বুঝি সব মন ধন মম লাগিল রে ॥
হৃদয় বুঝি তারে জানে,
কুসুম ফোটায় তারি গানে।
আজি মম অন্তরমাঝে সেই পথিকেরই পদধ্বনি বাজে,
তাই চকিতে চকিতে ঘুম ভাঙিল রে ॥
আজি যত তারা তব আকাশে
আজি যত তারা তব আকাশে
সবে মোর প্রাণ ভরি প্রকাশে॥
নিখিল তোমার এসেছে ছুটিয়া, মোর মাঝে আজি পড়েছে টুটিয়া হে,
তব নিকুঞ্জের মঞ্জরী যত আমারি অঙ্গে বিকাশে॥
দিকে দিগন্তে যত আনন্দ লভিয়াছে এক গভীর গন্ধ,
আমার চিত্তে মিলি একত্রে তোমার মন্দিরে উছাসে।
আজি কোনোখানে কারেও না জানি,
শুনিতে না পাই আজি কারো বাণী হে,
নিখিল নিশ্বাস আজি এ বক্ষে বাঁশরির সুরে বিলাসে॥
আজি শুভ শুভ্র প্রাতে কিবা শোভা দেখালে
আজি শুভ শুভ্র প্রাতে কিবা শোভা দেখালে
শান্তিলোক জ্যোতির্লোক প্রকাশি।
নিখিল নীল অম্বর বিদারিয়া দিক্দিগন্তে
আবরিয়া রবি শশী তারা
পুণ্যমহিমা উঠে বিভাসি ॥
আজি হেরি সংসার অমৃতময়
আজি হেরি সংসার অমৃতময়।
মধুর পবন, বিমল কিরণ, ফুল্ল বন,
মধুর বিহগকলধ্বনি॥
কোথা হতে বহিল সহসা প্রাণভরা প্রেমহিল্লোল, আহা–
হৃদয়কুসুম উঠিল ফুটি পুলকভরে॥
অতি আশ্চর্য দেখো সবে, দীনহীন ক্ষুদ্র হৃদয়মাঝে
অসীম জগতস্বামী বিরাজে সুন্দর শোভন !
ধন্য এই মানবজীবন, ধন্য বিশ্বজগত,
ধন্য তাঁর প্রেম, তিনি ধন্য ধন্য॥
আজিকে এই সকালবেলাতে
আজিকে এই সকালবেলাতে
বসে আছি আমার প্রাণের সুরটি মেলাতে ॥
আকাশে ওই অরুণ রাগে মধুর তান করুণ লাগে,
বাতাস মাতে আলোছায়ার মায়ার খেলাতে ॥
নীলিমা এই নিলীন হল আমার চেতনায়।
সোনার আভা জড়িয়ে গেল মনের কামনায়।
লোকান্তরের ও পার হতে কে উদাসী বায়ুর স্রোতে
ভেসে বেড়ায় দিগন্তে ওই মেঘের ভেলাতে ॥
আনন্দ তুমি স্বামী, মঙ্গল তুমি
আনন্দ তুমি স্বামী, মঙ্গল তুমি,
তুমি হে মহাসুন্দর, জীবননাথ ॥
শোকে দুখে তোমারি বাণী জাগরণ দিবে আনি,
নাশিবে দারুণ অবসাদ ॥
চিত মন অর্পিনু তব পদপ্রান্তে–
শুভ্র শান্তিশতদল-পুণ্যমধু-পানে
চাহি আছে সেবক, তব সুদৃষ্টিপাতে
কবে হবে এ দুখরাত প্রভাত ॥