আঁধার রাতে একলা পাগল যায় কেঁদে
আঁধার রাতে একলা পাগল যায় কেঁদে।
বলে শুধু, বুঝিয়ে দে, বুঝিয়ে দে, বুঝিয়ে দে॥
আমি যে তোর আলোর ছেলে,
আমার সামনে দিলি আঁধার মেলে,
মুখ লুকালি– মরি আমি সেই খেদে॥
অন্ধকারে অস্তরবির লিপি লেখা,
আমারে তার অর্থ শেখা।
তোর প্রাণের বাঁশির তান সে নানা
সেই আমারই ছিল জানা,
আজ মরণ-বীণার অজানা সুর নেব সেধে॥
আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে
আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে তোমারি নাম সকল তারার মাঝে ॥
সে নামখানি নেমে এল ভুঁয়ে, কখন আমার ললাট দিল ছুঁয়ে,
শান্তিধারায় বেদন গেল ধুয়ে– আপন আমার আপনি মরে লাজে ॥
মন মিলে যায় আজ ওই নীরব রাতে তারায়-ভরা ওই গগনের সাথে।
অমনি করে আমার এ হৃদয় তোমার নামে হোক-না নামময়,
আঁধারে মোর তোমার আলোয় জয় গভীর হয়ে থাক্ জীবনের কাজে ॥
আকাশে দুই হাতে প্রেম বিলায় ও কে
আকাশে দুই হাতে প্রেম বিলায় ও কে!
সে সুধা ছড়িয়ে গেল লোকে লোকে ॥
গাছেরা ভরে নিল সবুজ পাতায়,
ধরণী ধরে নিল আপন মাথায়।
ছেলেরা সকল গায়ে নিল মেখে,
পাখিরা পাখায় পাখায় নিল এঁকে।
ছেলেরা কুড়িয়ে নিল মায়ের বুকে,
মায়েরা দেখে নিল ছেলে মুখে ॥
সে যে ওই অশ্রুধারায় পড়ল গলে।
সে যে ওই বিদীর্ণ বীর-হৃদয় হতে
বহিল মরণরূপী জীবনস্রোতে।
সে যে ওই ভাঙাগড়ার তালে তালে
নেচে যায় দেশে দেশে কালে কালে ॥
আগুনে হল আগুনময়
আগুনে হল আগুনময়।
জয় আগুনের জয়॥
মিথ্যা যত হৃদয় জুড়ে এইবেলা সব যাক-না-পুড়ে,
মরণ-মাঝে তোর জীবনের হোক রে পরিচয়॥
আগুন এবার চলল রে সন্ধানে
কলঙ্ক তোর লুকিয়ে আছে প্রাণে।
আড়াল তোমার যাক রে ঘুচে, লজ্জা তোমার যাক রে মুছে,
চিরদিনের মতো তোমার ছাই হয়ে যাক ভয়॥
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে ॥
আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো–
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে ॥
আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারা রাত ফোটাক তারা নব নব।
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো,
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো–
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊর্ধ্ব পানে ॥
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
এ জীবন পুণ্য কর দহন-দানে॥
আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,
তোমার ঐ দেবালয়ের প্রদীপ করো—
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে॥
আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারা রাত ফোটাক তারা নব নব।
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো,
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো—
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊর্ধ্ব-পানে॥
আঘাত করে নিলে জিনে
আঘাত করে নিলে জিনে,
কাড়িলে মন দিনে দিনে ॥
সুখের বাধা ভেঙে ফেলে তবে আমার প্রাণে এলে–
বারে বারে মরার মুখে অনেক দুখে নিলেম চিনে ॥
তুফান দেখে ঝড়ের রাতে
ছেড়েছি হাল তোমার হাতে।
বাটের মাঝে, হাটের মাঝে, কোথাও আমায় ছাড়লে না-যে–
যখন আমার সব বিকালো তখন আমায় নিলে কিনে ॥
আছ অন্তরে চিরদিন, তবু কেন কাঁদি
আছ অন্তরে চিরদিন, তবু কেন কাঁদি।
তবু কেন হেরি না তোমার জ্যোতি,
কেন দিশাহারা অন্ধকারে?।
অকূলের কূল তুমি আমার,
তবু কেন ভেসে যাই মরণের পারাবারে?
আনন্দঘন বিভু, তুমি যার স্বামী
সে কেন ফিরে পথে দ্বারে দ্বারে।
আছ আপন মহিমা লয়ে মোর গগনে রবি
আছ আপন মহিমা লয়ে মোর গগনে রবি,
আঁকিছ মোর মেঘের পটে তব রঙেরই ছবি ॥
তাপস, তুমি ধেয়ানে তব কী দেখ মোরে কেমনে কব–
তোমার জটে আমি তোমারি ভাবের জাহ্নবী ॥
তোমারি সোনা বোঝাই হল, আমি তো তার ভেলা।
নিজেরে তুমি ভোলাবে ব’লে আমারে নিয়ে খেলা।
কণ্ঠে মম কী কথা শোন অর্থ আমি বুঝি না কোনো–
বীণাতে মোর কাঁদিয়া ওঠে তোমারি ভৈরবী ॥
আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে
আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ॥
তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা,
বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে ॥
তরঙ্গ মিলায়ে যায় তরঙ্গ উঠে,
কুসুম ঝরিয়া পড়ে কুসুম ফুটে।
নাহি ক্ষয়, নাহি শেষ, নাহি নাহি দৈন্যলেশ–
সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে ॥
আজ জ্যোত্স্নারাতে সবাই গেছে বনে
আজ জ্যোত্স্নারাতে সবাই গেছে বনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে॥
যাব না গো যাব না যে, রইনু পড়ে ঘরের মাঝে—
এই নিরালায় রব আপন কোণে।
যাব না এই মাতাল সমীরণে॥
আমার এ ঘর বহু যতন ক’রে
ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে।
আমারে যে জাগতে হবে, কী জানি সে আসবে কবে
যদি আমায় পড়ে তাহার মনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে॥
আজকে মোরে বোলো না কাজ করতে
আজকে মোরে বোলো না কাজ করতে,
যাব আমি দেখাশোনার নেপথ্যে আজ সরতে
ক্ষণিক মরণ মরতে॥
অচিন কূলে পাড়ি দেব, আলোকলোকে জন্ম নেব,
মরণরসে অলখঝোরায় প্রাণের কলস ভরতে॥
অনেক কালের কান্নাহাসির ছায়া
ধরুক সাঁঝের রঙিন মেঘের মায়া।
আজকে নাহয় একটি বেলা ছাড়ব মাটির দেহের খেলা,
গানের দেশে যাব উড়ে সুরের দেহ ধরতে॥
আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে আসবে যদি শূন্য হাতে
আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে আসবে যদি শূন্য হাতে–
আমি তাইতে কি ভয় মানি!
জানি জানি, বন্ধু, জানি–
তোমার আছে তো হাতখানি ॥
চাওয়া-পাওয়ার পথে পথে দিন কেটেছে কোনোমতে,
এখন সময় হল তোমার কাছে আপনাকে দিই আনি ॥
আঁধার থাকুক দিকে দিকে আকাশ-অন্ধ-করা,
তোমার পরশ থাকুক আমার-হৃদয়-ভরা।
জীবনদোলায় দুলে দুলে আপনারে ছিলেম ভুলে,
এখন জীবন মরণ দু দিক দিয়ে নেবে আমায় টানি ॥