কেন তোমরা আমায় ডাকো
কেন তোমরা আমায় ডাকো, আমার মন না মানে।
পাই নে সময় গানে গানে ॥
পথ আমারে শুধায় লোকে, পথ কি আমার পড়ে চোখে,
চলি যে কোন্ দিকের পানে গানে গানে ॥
দাও না ছুটি, ধর ত্রুটি, নিই নে কানে।
মন ভেসে যায় গানে গানে।
আজ যে কুসুম-ফোটার বেলা, আকাশে আজ রঙের মেলা,
সকল দিকেই আমায় টানে গানে গানে ॥
কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেম না
কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেম না শুকনো ধুলো যত!
কে জানিত আসবে তুমি গো অনাহূতের মতো ॥
তুমি পার হয়ে এসেছ মরু, নাই যে সেথায় ছায়াতরু–
পথের দুঃখ দিলেম তোমায় গো এমন ভাগ্যহত ॥
তখন আলসেতে বসে ছিলেম আমি আপন ঘরের ছায়ে,
জানি নাই যে তোমায় কত ব্যথা বাজবে পায়ে পায়ে।
তবু ওই বেদনা আমার বুকে বেজেছিল গোপন দুখে–
দাগ দিয়েছে মর্মে আমার গো গভীর হৃদয়ক্ষত ॥
কেন বাণী তব নাহি শুনি নাথ হে
কেন বাণী তব নাহি শুনি নাথ হে?
অন্ধজনে নয়ন দিয়ে অন্ধকারে ফেলিলে, বিরহে তব কাটে দিনরাত হে ॥
স্বপনসম মিলাবে যদি কেন গো দিলে চেতনা–
চকিতে শুধু দেখা দিয়ে চিরমরমবেদনা,
আপনা-পানে চাহি শুধু নয়নজলপাত হে ॥
পরশে তব জীবন নব সহসা যদি জাগিল
কেন জীবন বিফল কর– মরণশরঘাত হে।
অহঙ্কার চূর্ণ করো, প্রেমে মন পূর্ণ করো,
হৃদয় মন হরণ করি রাখো তব সাথ হে ॥
কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়
কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয় ?
জয় অজানার জয়।
এই দিকে তোর ভরসা যত, ওই দিকে তোর ভয় !
জয় অজানার জয়॥
জানাশোনার বাসা বেঁধে কাটল তো দিন হেসে কেঁদে,
এই কোণেতেই আনাগোনা নয় কিছুতেই নয়।
জয় অজানার জয়॥
মরণকে তুই পর করেছিস ভাই,
জীবন যে তোর তুচ্ছ হল তাই।
দু দিন দিয়ে ঘেরা ঘরে তাইতে যদি এতই ধরে,
চিরদিনের আবাসখানা সেই কি শূন্যময় ?
জয় অজানার জয়॥
কেমনে ফিরিয়া যাও না দেখি তাঁহারে
কেমনে ফিরিয়া যাও না দেখি তাঁহারে!
কেমনে জীবন কাটে চির-অন্ধকারে ॥
মহান জগতে থাকি বিস্ময়বিহীন আঁখি,
বারেক না দেখ তাঁরে এ বিশ্বমাঝারে ॥
যতনে জাগায়ে জ্যোতি ফিরে কোটি সূর্যলোক,
তুমি কেন নিভায়েছ আত্মার আলোক?
তাঁহার আহ্বানরবে আনন্দে চলিছে সবে,
তুমি কেন বসে আছ ক্ষুদ্র এ সংসারে?।
কেমনে রাখিবি তোরা তাঁরে লুকায়ে
কেমনে রাখিবি তোরা তাঁরে লুকায়ে
চন্দ্রমা তপন তারা আপন আলোকছায়ে॥
হে বিপুল সংসার, সুখে দুখে আঁধার,
কত কাল রাখিবি ঢাকি তাঁহারে কুহেলিকায়।
আত্মা-বিহারী তিনি, হৃদয়ে উদয় তাঁর–
নব নব মহিমা জাগে, নব নব কিরণ ভায়॥
কোথা হতে বাজে প্রেমবেদনা রে
কোথা হতে বাজে প্রেমবেদনা রে!
ধীরে ধীরে বুঝি অন্ধকারঘন
হৃদয়-অঙ্গনে আসে সখা মম ॥
সকল দৈন্য তব দূর করো ওরে,
জাগো সুখে ওরে প্রাণ।
সকল প্রদীপ তব জ্বালো রে, জ্বালো রে–
ডাকো আকুল স্বরে “এসো হে প্রিয়তম’ ॥
কোথায় আলো কোথায় ওরে আলো
কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো!
বিরহানলে জ্বালো রে তারে জ্বালো।
রয়েছে দীপ না আছে শিখা,
এই কি ভালে ছিল রে লিখা–
ইহার চেয়ে মরণ সে যে ভালো।
বিরহানলে প্রদীপখানি জ্বালো।
বেদনাদূতী গাহিছে, “ওরে প্রাণ,
তোমার লাগি জাগেন ভগবান।
নিশীথে ঘন অন্ধকারে
ডাকেন তোরে প্রেমাভিসারে,
দু:খ দিয়ে রাখেন তোর মান।
তোমার লাগি জাগেন ভগবান।’
গগনতল গিয়েছে মেঘে ভরি,
বাদল-জল পড়িছে ঝরি ঝরি।
এ ঘোর রাতে কিসের লাগি
পরান মম সহসা জাগি
এমন কেন করিছে মরি মরি।
বাদল-জল পড়িছে ঝরি ঝরি।
বিজুলি শুধু ক্ষণিক আভা হানে,
নিবিড়তর তিমির চোখে আনে।
জানি না কোথা অনেক দূরে
বাজিল প্রাণ গভীর সুরে,
সকল গান টানিছে পথপানে।
নিবিড়তর তিমির চোখে আনে।
কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো!
বিরহানলে জ্বালো রে তারে জ্বালো।
ডাকিছে মেঘ, হাঁকিছে হাওয়া,
সময় গেলে হবে না যাওয়া,
নিবিড় নিশা নিকষঘন কালো।
পরান দিয়ে প্রেমের দীপ জ্বালো।
কোথায় তুমি, আমি কোথায়
কোথায় তুমি, আমি কোথায়,
জীবন কোন্ পথে চলিছে নাহি জানি॥
নিশিদিন হেনভাবে আর কতকাল যাবে–
দীননাথ, পদতলে লহো টানি॥
কোন্ আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আস
কোন্ আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আস–
সাধক ওগো, প্রেমিক ওগো,
পাগল ওগো, ধরায় আস॥
এই অকূল সংসারে
দুঃখ আঘাত তোমার প্রাণে বীণা ঝঙ্কারে।
ঘোর বিপদ-মাঝে
কোন্ জননীর মুখের হাসি দেখিয়া হাসো॥
তুমি কাহার সন্ধানে
সকল সুখে আগুন জ্বেলে বেড়াও কে জানে !
এমন ব্যাকুল ক’রে
কে তোমারে কাঁদায় যারে ভালোবাস॥
তোমার ভাবনা কিছু নাই–
কে যে তোমার সাথের সাথি ভাবি মনে তাই।
তুমি মরণ ভুলে
কোন্ অনন্ত প্রাণসাগরে আনন্দে ভাস॥
কোন্ খেলা যে খেলব কখন ভাবি বসে সেই কথাটাই
কোন্ খেলা যে খেলব কখন ভাবি বসে সেই কথাটাই–
তোমার আপন খেলার সাথি করো, তা হলে আর ভাবনা তো নাই॥
শিশির-ভেজা সকালবেলা আজ কি তোমার ছুটির খেলা–
বর্ষণহীন মেঘের মেলা তার সনে মোর মনকে ভাসাই॥
তোমার নিঠুর খেলা খেলবে যে দিন বাজবে সে দিন ভীষণ ভেরী–
ঘনাবে মেঘ, আঁধার হবে, কাঁদবে হাওয়া আকাশ ঘেরি।
সে দিন যেন তোমার ডাকে ঘরের বাঁধন আর না থাকে–
অকাতরে পরানটাকে প্রলয়দোলায় দোলাতে চাই॥