হারে রে রে রে রে
হারে রে রে রে রে, আমায় ছেড়ে দে রে, দে রে–
যেমন ছাড়া বনের পাখি মনের আনন্দে রে॥
ঘনশ্রাবণধারা যেমন বাঁধনহারা,
বাদল-বাতাস যেমন ডাকাত আকাশ লুটে ফেরে॥
হারে রে রে রে রে, আমায় রাখবে ধ’রে কে রে–
দাবানলের নাচন যেমন সকল কানন ঘেরে,
বজ্র যেমন বেগে গর্জে ঝড়ের মেঘে,
অট্টহাস্যে সকল বিঘ্ন-বাধার বক্ষ চেরে॥
হায় হায় রে হায় পরবাসী
হায় হায় রে হায় পরবাসী,
হায় গৃহছাড়া উদাসী।
অন্ধ অদৃষ্টের আহ্বানে
কোথা অজানা অকূলে চলেছিস ভাসি।
শুনিতে কি পাস দূর আকাশে কোন্ বাতাসে
সর্বনাশার বাঁশি–
ওরে, নির্মম ব্যাধ যে গাঁথে মরণের ফাঁসি।
রঙিন মেঘের তলে গোপন অশ্রুজলে
বিধাতার দারুণ বিদ্রূপবজ্রে
সঞ্চিত নীরব অট্টহাসি॥
হায় হায় হায় দিন চলি যায়
হায় হায় হায় দিন চলি যায়।
চা-স্পৃহ চঞ্চল চাতকদল চল’ চল’ চল’ হে॥
টগ’বগ’-উচ্ছল কাথলিতল-জল কল’কল’হে।
এল চীনগগন হতে পূর্বপবনস্রোতে শ্যামলরসধরপুঞ্জ॥
শ্রাবণবাসরে রস ঝর’ঝর’ ঝরে, ভুঞ্জ হে ভুঞ্জ দলবল হে।
এস’ পুঁথিপরিচারক তদ্ধিতকারক তারক তুমি কাণ্ডারী।
এস’ গণিতধুরন্ধর কাব্যপুরন্দর ভূবিবরণভাণ্ডারী।
এস’ বিশ্বভারনত শুষ্করুটিনপথ- মরু-পরিচারণক্লান্ত।
এস’ হিসাবপত্তরত্রস্ত তহবিল-মিল-ভুল-গ্রস্ত লোচনপ্রান্ত- ছল’ছল’ হে।
এস’ গীতিবীথিচর তম্বুরকরধর তানতালতলমগ্ন।
এস’ চিত্রী চট’পট’ ফেলি তুলিকপট রেখাবর্ণবিলগ্ন।
এস’ কন্স্টিট্যুশন- নিয়মবিভূষণ তর্কে অপরিশ্রান্ত।
এস’ কমিটিপলাতক বিধানঘাতক এস’ দিগভ্রান্ত টল’মল’ হে॥
হে আকাশবিহারী-নীরদবাহন জল
হে আকাশবিহারী-নীরদবাহন জল,
আছিল শৈলশিখরে-শিখরে তোমার লীলাস্থল॥
তুমি বরনে বরনে কিরণে কিরণে প্রাতে সন্ধ্যায় অরুণে হিরণে
দিয়েছ ভাসায়ে পবনে পবনে স্বপনতরণীদল॥
শেষে শ্যামল মাটির প্রেমে তুমি ভুলে এসেছিলে নেমে,
কবে বাঁধা পড়ে গেলে যেখানে ধরার গভীর তিমিরতল।
আজ পাষাণদুয়ার দিয়েছি টুটিয়া, কত যুগ পরে এসেছ ছুটিয়া
নীল গগনের হারানো স্মরণ
গানেতে সমুচ্ছল॥
দে গো নন্দরানী
হ্যাদে গো নন্দরানী, আমাদের শ্যামকে ছেড়ে দাও।
আমরা রাখাল-বালক দাঁড়িয়ে দ্বারে। আমাদের শ্যামকে দিয়ে যাও॥
হেরো গো প্রভাত হল, সুয্যি ওঠে, ফুল ফুটেছে বনে।
আমরা শ্যামকে নিয়ে গোষ্ঠে যাব আজ করেছি মনে।
ওগো, পীত ধড়া পরিয়ে তারে কোলে নিয়ে আয়।
তার হাতে দিয়ো মোহন বেণু, নূপুর দিয়ো পায়॥
রোদের বেলায় গাছের তলায় নাচব মোরা সবাই মিলে।
বাজবে নূপুর রুনুঝুনু, বাজবে বাঁশি মধুর বোলে।
বনফুলে গাঁথব মালা, পরিয়ে দেব’ শ্যামের গলে॥