সেই যদি সেই যদি ভাঙিল এ পোড়া হৃদি
সেই যদি সেই যদি ভাঙিল এ পোড়া হৃদি,
সেই যদি ছাড়াছাড়ি হল দুজনায়,
একবার এসো কাছে– কী তাহাতে দোষ আছে।
জন্মশোধ দেখে নিয়ে লইব বিদায়।
সেই গান একবার গাও সখী, শুনি–
যেই গান একসনে গাইতাম দুইজনে,
গাইতে গাইতে শেষে পোহাত যামিনী।
চলিনু চলিনু তবে– এ জন্মে কি দেখা হবে।
এ জন্মের সুখ তবে হল অবসান॥
তবে, সখী, এসো কাছে। কী তাহাতে দোষ আছে।
আরবার গাও, সখী, পুরানো সে গান॥
সোনার পিঞ্জর ভাঙিয়ে আমার
সোনার পিঞ্জর ভাঙিয়ে আমার প্রাণের পাখিটি উড়িয়ে যাক।
সে যে হেথা গান গাহে না! সে যে মোরে আর চাহে না!
সুদূর কানন হইতে সে যে শুনেছে কাহার ডাক–
পাখিটি উড়িয়ে যাক॥
মুদিত নয়ন খুলিয়ে আমার সাধের স্বপন যায় রে যায়।
হাসিতে অশ্রুতে গাঁথিয়া গাঁথিয়া দিয়েছিনু তার বাহুতে বাঁধিয়া
আপনার মনে কাঁদিয়া কাঁদিয়া ছিঁড়িয়া ফেলেছে হায় রে হায়,
সাধের স্বপন যায় রে যায়॥
যে যায় সে যায়, ফিরিয়ে না চায়, যে থাকে সে শুধু করে হায়-হায়–
নয়নের জল নয়নে শুকায়– মরমে লুকায় আশা।
বাঁধিতে পারে না আদরে সোহাগে– রজনী পোহায়, ঘুম হতে জাগে,
যায় যদি তবে যাক। একবার তবু ডাক্।
কী জানি যদি রে প্রাণ কাঁদে তার তবে থাক্, তবে থাক্॥
স্বপনলোকের বিদেশিনীকে যেন এলে কে
স্বপনলোকের বিদেশিনীকে যেন এলে কে
কোন্ ভুলে যাওয়া বসন্ত থেকে॥
যা-কিছু সব গেছ ফেলেখুঁজতে এলে হৃদয়ে,
পথ চিনেছ চেনা পুলের চিহ্ন দেখে॥
বুঝি মনে তোমার আছে আশা
কার হৃদয়ব্যথায় মিলবে বাসা।
দেখতে এলে করুণ বীণা– বাজে কিনা হৃদয়ে,
তারগুলি তার কাঁপে কিনা– যায় কি সে ডেকে॥
হা সখী ও আদরে আরো বাড়ে মনোব্যথা
হা সখী, ও আদরে আরো বাড়ে মনোব্যথা।
ভালো যদি নাহি বাসে কেন তবে কহে প্রণয়ের কথা॥
মিছে প্রণয়ের হাসি বোলো তারে ভালো নাহি বাসি।
চাই নে মিছে আদর তাহার, ভালোবাসা চাই নে।
বোলো বোলো, সজনী লো, তারে–
আর যেন সে লো আসে নাকো হেথা॥
হাসি কেন নাই ও নয়নে
হাসি কেন নাই ও নয়নে! ভ্রমিতেছ মলিন-আননে।
দেখো, সখী, আঁখি তুলি ফুলগুলি ফুটেছে কাননে॥
তোমারে মলিন দেখি ফুলেরা কাঁদিছে সখী
শুধাইছে বনলতা কত কথা আকুল বচনে॥
এসো সখী, এসো হেথা, একটি কহো গো কথা–
বলো, সখী, কার লাগি পাইয়াছ মনোব্যথা।
বলো, সখী, মন তোর আছে ভোর কাহার স্বপনে॥
হিয়া কাঁপিছে সুখে কি দুখে সখী
হিয়া কাঁপিছে সুখে কি দুখে সখী,
কেন নয়নে আসে বারি।
আজি প্রিয়তম আসিবে মোর ঘরে–
বলো কী করিব আমি সখী।
দেখা হলে, সখী, সেই প্রাণবঁধুরে কী বলিব নাহি জানি।
সে কি না জানিবে, সখী, রয়েছে যা হৃদয়ে–
না বুঝে কি ফিরে যাবে সখী॥
হিয়ামাঝে গোপনে হেরিয়ে তোমারে
হিয়ামাঝে গোপনে হেরিয়ে তোমারে
ক্ষণে ক্ষণে পুলক যে কাঁপে কিশলয়ে,
কুসুমে কুসুমে ব্যথা লাগে॥
হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর
হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর ফাল্গুনী ঢেউ আসে–
বেড়া ভাঙার মাতন নামে উদ্দাম উল্লাসে॥
তোমার মোহন এল সোহন বেশে, কুয়াশাভার গেল ভেসে–
এল তোমার সাধনধন উদার আশ্বাসে॥
অরণ্যে তোর সুর ছিল না, বাতাস হিমে ভরা–
জীর্ণ পাতায় কীর্ণ কানন, পুষ্পবিহীন ধরা।
এবার জাগ্ রে হতাশ, আয় রে ছুটে অবসাদের বাঁধন টুটে–
বুঝি এল তোমার পথে সাথি উতল উচ্ছ্বাসে॥
হৃদয় মোর কোমল অতি
হৃদয় মোর কোমল অতি, সহিতে নারি রবির জ্যোতি
লাগিলে আলো শরমে ভয়ে মরিয়া যাই মরমে॥
ভ্রমর মোর বসিলে পাশে তরাসে আঁখি মুদিয়া আসে,
ভূতলে ঝ’রে পড়িতে চাহি আকুল হয়ে শরমে॥
কোমল দেহে লাগিলে বায় পাপড়ি মোর খসিয়া যায়,
পাতার মাঝে ঢাকিয়া দেহ রয়েছি তাই লুকায়ে।
আঁধার বনে রূপের হাসি ঢালিব সদা সুরভিরাশি,
আঁধার এই বনের কোলে মরিব শেষে শুকায়ে॥
হৃদয়ের মণি আদরিণী মোর
হৃদয়ের মণি আদরিণী মোর, আয় লো কাছে আয়।
মিশাবি জোছনাহাসি রাশি রাশি মৃদু মধু জোছনায়।
মলয় কপোল চুমে ঢলিয়া পড়িছে ঘুমে,
কপোলে নয়নে জোছনা মরিয়া যায়।
যমুনালহরীগুলি চরণে কাঁদিতে চায়॥