তোমার নাভি দেখে হাঁটছি একা আমি
দেবে কি গুল্মের কৃষ্ণ সানুদেশ?
যেখানে পাখি নেই রক্ত দ্রুতগামী
তোমার নাভি দেখে হাঁটছি একা আমি
মধ্যযুগী এক যুবক গোস্বামী
দেহেই পেতে চায় পথের নির্দেশ;
তোমার নাভিমূলে দেখেছি একা আমি
নরম গুল্মের কৃষ্ণ সানুদেশ।
গোপন রাত্রির কোপন যাদুকর
আমার করতলে রেখেছে অগ্নি,
পুড়িয়ে এসেছি তো যা ছিল নির্ভর
গোপন রাত্রির কোপন যাদুকর—
দেখালো সেই মুখ দারুণ সুন্দর
জেনেছি কে আমার কৃপণ ভগ্নি;
গোপন রাত্রির কোপন যাদুকর
আমার করতলে জ্বেলেছে অগ্নি।
কনক জঙ্ঘার বিপুল মাঝখানে
রচেছো গরিয়সী এ কোন দর্প?
আকুল বাশরীর অবশ টানে টানে
কনক জঘার বিপুল মাঝখানে,
আবাস ছেড়ে আমি আদিম উত্থানে
ধরেছি ফণা নীল আহত সর্প,
কনক জঙ্ঘার বিপুল মাঝখানে
মেলেছো গরিয়সী এ কোন দর্প।
সত্যের দাপটে
আমাদের এ সংসার সত্য হয়ে ওঠে কি কখনো?
তবু কেন সত্য সত্য বলা?
সত্যের দাপটে যেন না ভাঙে এ-ঘরের দেয়াল।
খাটের বিছানা জুড়ে ঘুমিয়েছে যে গরিমা, তার
দেখো চেয়ে বুকে দুলছে, নিঃশ্বাসে কাঁপছে দুটি বুক।
বাহুতে জমেছে ঘাম। কাতানের ওপরে বাতাস
আস্তে উড়িয়েছে পাড়। উরুর প্রান্তরে
একটি তিলের শোভা অনাবৃত হয়েছে দৈবাৎ।
তাকে কি জাগাতে চাও মহত্তম সত্য সংবাদে?
তাহলে জাগিয়ে দেখো, উঠবে সে চোখে নদী নিয়ে
সত্যের বিদ্যুতে তার ঝলসে যাবে ঘরের পঁচিল।
একটিমাত্র শিশুর কান্নায়
ছিঁড়ে যাবে টেলিফোন, পাখার ঘূর্ণন
অকস্মাৎ বেড়ে গিয়ে উল্টে দেবে লতাকুঞ্জময়
বুদ্ধের মস্তকসহ ধাতুর পাখিটি।
আর পাড়ার লোকেরা—
প্রতিবেশী গৃহস্থের ঘরে অকস্মাৎ
সত্যের সৌন্দর্য দেখে
দমকল, দমকল বলে ছুটবে রাস্তায়।
সাহসের সমাচার
কাজী নজরুল ইসলামকে
সাহসের সমাচার শেষ হয়ে যাচ্ছে ক্রমে ক্রমে
হে কবি, একদা
ভেসে যেতে যেতে কালো তোমার চুলের মতো মেঘ
বড়ো অনুরোধ করে রক্তের ওপারে যেতে প্ররোচনা দিতো,
কারাগার ভেদ করে দাঁড়াতো দণ্ডিত।
পথে এসো, বলে।
প্রকাণ্ড প্রাচীন মুখে গাওয়া হতো ধ্বংসের ধ্রুপদ।
বিপ্লব বিপ্লব বলে হে মিথ্যার মোহন কোকিল
বাংলার শীতল রক্তে তুলে দিয়ে খারাপ ঝংকার
নিসর্গের স্তনে যেনো কালো এক তিল হয়ে গেলে।
আজ তাই শান্তি নাও কবিবর। নাও এ-হলুদ
শুকনো মাংসের স্তুপ। ঢাকো প্রেম মলিন চাদরে
যেন না গড়ায় রস সংক্রামক পারার নিঃসার।
অথবা বধির হও, যেনো কোনো সঙ্গীতের স্বেদ
না জমে ললাটে আর একবিন্দু। এখন সটান
শুয়ে পড়ো নিয়তির তীরবিদ্ধ মত্ত বাজপাখি!
সোনালী কাবিন
সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়না হরিণী
যদি নাও দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দুটি,
আত্মবিক্রয়ের স্বর্ন কোনোকালে সঞ্চয় করিনি
আহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি;
ভালবাসা দাও যদি আমি দেব আমার চুম্বন,
ছলনা জানিনা বলে আর কোনো ব্যাবসা শিখিনি
দেহ দিলে দেহ পাবে দেহের অধিক মূলধন
আমারতো নেই শখি, যেই পণ্যে অলংকার কিনি।
বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল
পৌরষ আবৃত করে জলপাই পাতাও থাকবেনা,
তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিও সেই ফল
জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরষ্পর হব চিরচেনা
পরাজিত নই নারী, পরাজিত হয়না কবিরা;
দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা- উপশিরা।
২
হাত বেয়ে উঠে এসো হে পানোখী, পাটিতে আমার
এবার গুটাও ফণা কালো লেখা লিখো না হৃদয়ে;
প্রবল ছোবলে তুমি যতটুকু ঢালো অন্ধকার
তারও চেয়ে নীল আমি অহরহ দংশনের ভয়ে।
এ কোন্ কলার ছলে ধরে আছো নীলাম্বর শাড়ি
দরবিগলিত হয়ে ছলকে যায় রাত্রির বরণ,
মনে হয় ডাক দিলে সে-তিমিরে ঝাপ দিতে পারি
আঁচল বিছিয়ে যদি তুলে নাও আমার মরণ।
বুকের ওপরে মৃদু কম্পমান নখবিলেখনে
লিখতে কি দেবে নাম অনুজ্জ্বল উপাধিবিহীন?
শরমিন্দা হলে তুমি, ক্ষান্তিহীন সজল চুম্বনে
মুছে দেবো আদ্যাক্ষর, রক্তবর্ণ অনার্য প্রাচীন।
বাঙালি কৌমের কেলি কল্লোলিত কর কলাবতী
জানতো না যা বাৎসায়ণ, আর যত আর্যের যুবতী।
৩
ঘুরিয়ে গলার বাঁক ওঠো বুনো হংসিনী আমার
পালক উদাম করে দাও উষ্ণ অঙ্গের আরাম,
নিসর্গ নমিত করে যায় দিন, পুলকের দ্বার
মুক্ত করে দেবে এই শব্দরিদ কোবিদের নাম।
কক্কার শব্দের শর আরণ্যক আত্মার আদেশ
আঠারোটি ডাক দেয় কান পেতে শোনো অষ্টাদশী,
আঙুলে লুলিত করো বন্ধবেণী, সাপিনী বিশেষ
সুনীল চাদরে এসো দুই তৃষ্ণা নগ্ন হয়ে বসি।
ক্ষুধার্ত নদীর মতো তীব্র দুটি জলের আওয়াজ—
তুলে নিয়ে যাই চলো অকর্ষিত উপত্যকায়,
চরের মাটির মতো খুলে দাও শরীরের ভাঁজ
উগোল মাছের মাংস তৃপ্ত হােক তোমার কাদায়,
ঠোঁটের এ-লাক্ষারসে সিক্ত করে নর্ম কারুকাজ
দ্রুত ডুবে যাই এসো, ঘূর্ণমান রক্তের ধাধায়।
৪
এ-তীর্থে আসবে যদি ধীরে অতি পা ফেলো সুন্দরী,
মুকুন্দরামের রক্ত মিশে আছে এ-মাটির গায়,
ছিন্ন তালপত্র ধরে এসো সেই গ্রন্থ পাঠ করি
কত অশ্রু লেগে আছে এই জীর্ণ তালের পাতায়।
কবির কামনা হয়ে আসবে কি, হে বন্য বালিকা
অভাবের অজগর জেনো তবে আমার টোটেম,
সতেজ খুনের মতো এঁকে দেবো হিঙুলের টিকা
তোমার কপালে লাল, আর দীন-দরিদ্রের প্রেম।
সে-কোন্ গোত্রের মন্ত্রে বলো বন্ধু তোমাকে বরণ
করে এই ঘরে তুমি? আমার তো কপিলে বিশ্বাস,
প্রেম করে নিয়েছিলো ধর্ম কিংবা সংঘের শরণ?
মরণের পরে শুধু ফিরে আসে কবরের ঘাস।
যতক্ষণ ধরো এই তাম্রবর্ণ অঙ্গের গড়ন।
তারপর কিছু নেই, তারপর হাসে ইতিহাস।