কইরে হারামজাদা, দেখুম আজকা তর হগল পুংটামি
কোনখানে পাড়ো তুমি জবর সোনার আণ্ডা, কও মিছাখোর
বলেই টানবে লেপ, তারপর তাজ্জবের মতো
পেখম উদাম করে দেখবে এক বেশরম কাউয়ার গতর।
গালি-গালাজের ঢেউ টলমলায় আমার উঠোনে
আমারে ভাসিয়ে নেয় খাদ্যলোভী ক্ষোভের কাতারে
সাপের অঙ্গের মতো ভগি ধরে, চন মারে, মিছিলে রাস্তায়।
সাহস দেখো না মিয়া, শহরে আগুন দিতে আহে ঐ
বে-তমিজ গাওয়ের পোলারা।
দিলো বাইন্ধা পথঘাট, বাস গাড়ি মোটর দোকান
গোলমালের কারিগর ইঁট মারে মুরবির গায়।
সাহস দেখো না মিয়া, বে-তমিজ বান্দীর পুতেরা
মাইনষের লওয়ের মতো হাঙ্গামার নিশান উড়ায়।
আসে না আর
পাহাড়পুরের পাথর রেখে বামে
পেরিয়ে খাল, পুরনো গড়খাই
এগোলে কেউ আসে না আর ঘরে
এই কথা তো জানতে, তবু কেন
হাটের মাঝে আসতে দিয়েছিলে?
তোমার শিকায় রঙ মাখাতো যারা
তোমায় এনে দিতো মোরগফুল
তাদের হাত ফেরালে একবার
কখনো তারা আসে না আর গাঁয়ে
সেই কথা তো জানাই ছিল, তবু
বানের জলে ভাসতে দিয়েছিলে!
তোমায় যারা বলতে যাদুকরী,
তোমায় যারা ডাকতো কালোসাপ,
যাদের দেখে ভাঙে কাঁখের ঘড়া,
যাদের ভয়ে মুখ লুকাতে জলে,
দীঘির পাড়ের অন্ধ জনরবে
তখন কেন হাসতে দিয়েছিলে?
উল্টানো চোখ
এইতো সেই অবসর, যখন কোনো দৃশ্যই আর গ্রাহ্য নয়।
পলকহীন চোখ যেন উল্টে যাচ্ছে। যেখানে থরে থরে সাজানো আছে
ঘটনার বিদ্যুচ্চমক। না, কাউকে ধমক দিতে চাই না।
কোনো কর্তব্য আমার জন্যে নয়। বরং হৃদয়ের ভেতর
যে ব্রহ্মাণ্ডকে বসিয়ে রেখেছি তার গোলক
দ্রুত আবর্তিত হোক।
ভিয়েতনামে বোমা পড়ছে। আমি তার প্রতিবাদ করি।
আমার উল্টানো চোখ যেখানে খুশি ভ্রমণে উদগ্রীব।
এমন কি মেয়েরা যখন কলতলায় শাড়ি পাল্টায়,
আমার চোখ নির্লজ্জের মতো দ্রুত দেখে নেয়।
সাত পাট কাপড় যেখানে কাচের মতো স্বচ্ছ
কে আর আমাকে অন্ধ করতে পারবে?
আমার চোখ দ্রষ্টব্যের উল্টো দিকে ফেরানো
সেখানে ফালতু আবরণ উঠে গিয়ে আসল বেরিয়ে পড়ে।
কেউ বক্তৃতা করলে।
আমি শুনতে পাই না।
বরং বক্তার জিভের ওপর
তার আত্মাকে দেখতে পাই। কেউ সিজদায় নত হলে
আমি দেখি একটি কলস ভরা লোভ উবুড় হয়েছে।
পরিচিত অপরিচিত মেয়েরা এখন আমার সামনে না-আসুক
কারণ তাদের ঢাকাঢাকি বড়ো বেশি। আর
আমার চোখে এখন আবরণের অস্তিত্ব নেই।
এখন আমার মনের মধ্যে রয়েছে এক শিল্পীর একক প্রদর্শনী।
সবাই তার বর্ণলেপনের পারদর্শিতা নিয়ে গল্প-গুজব করুন,
কিন্তু আমি সমস্ত বিমূর্ততাকে ভেদ করে দেখলাম
এক বেকার নিরপরাধ কামুক বেশ্যার বুকে মাথা রেখে কাঁদছে।
যে মেয়েটি বুকে হাত রাখলে খদ্দেরদের ভীষণ ধমকাতো।
আমার ঘরে একজন জাতীয় নেতার ছবি রয়েছে
আমি সেদিকে তাকাতে ভয় পাই।
একবার সেদিকে চোখ পড়লেই ছবিটা
পঁচিশে মার্চের রাত্রি হয়ে যায়।
পারতপক্ষে আমি নিজের ছবির দিকেও তাকাই না।
বিশ্রী রেখাবহুল পোট্রেট। একবার চোখ পড়লেই ছবিটা
কাঁপতে কাঁপতে এক বড়োসড়ো গ্রাম হয়ে যায়।
এঁদো ডোবা। কচুরিপানার ওপর বেগুনি ফুল। নেবুপাতার
ভেতর দিয়ে ধাবমান বাতাস। গোবরের গন্ধ। কোকিল। পাটখেতে
দমবন্ধ গরমের মধ্যে মুল্লাবাড়ির সবচেয়ে রূপসী মেয়েটিকে
চুমু খাওয়া।
এই তো আমার মুখ ভাইসব, এইতো আমার মুখ!
আমার মুখচ্ছবির মধ্যে এইতো চারজন যুবক প্রবেশ করলো।
কচুরিপানার শিকড়ের মতো কালো উজ্জ্বল দাড়ি। দুমড়ানো
পোশাক। যারা সর্বশেষ আহ্বানে হৃদয়ের ভেতর
অস্ত্র জমা রেখেছে। এখন আমার মুখের ভেতর তাদের
গুপ্ত অধিবেশন। যে অতর্কিতে
শহরগুলোকে দখল করা হবে
আমার মুখ তারি রক্তাক্ত পরিকল্পনা।
এই সম্মোহনে
তোমার জন্যে লোকালয়
হেঁটে এসে আজো কড়া নাড়ি
তোমার জন্যে করি জয়
অভাবের ক্ষিপ্ত তরবারি।
তুমি আছো এই সম্মোহনে
খুলতে যাই মৃত্যুর তামস,
অবারিত চুম্বনে, গুঞ্জনে
ধরে থাকি তোমাকে, অবশ।
সবুজ গন্ধের এক গাছ
যেন আমি; স্ফটিকের ঘর,
কাচের আধারে কালো মাছ
মুখে নেয় সোনালি পাথর।
একুরিয়ামের মতো ছোট
স্বচ্ছ শাদা সংসার আমার,
কে মৎসিনী দীপ্ত হয়ে ওঠো
ছলকে নীল জলের আধার।
ক্ষুধার্ত এ মুখ তুলে যত
বাতাসের বিন্দু আনা যায়
এ মহর্ঘ বুদ্ধুদ কেহ তো
রাখবে কোন শৈবালের গায়?
শব্দহীন ভুরভুরির গতি
হয়ে যায় আনন্দের ফুল
প্রায় এক মাহের যুবতী
ঠুকরে খায়, আমার আঙ্গুল।
এক নদী
তোমার মুখ ভাবলে, এক নদী
বুকে আমার জলের ধারা তোলে;
সামনে দেখি ভরা ভাতের থালা
ঝালের বাটি উপচে পড়ে ঝোলে।
পিঠার মতো হলুদ মাখা চাঁদ
যেনো নরম কলাপাতায় মোড়া;
পোড়া মাটির টুকরো পাত্রকে
স্মৃতি কি ফের লাগাতে পারে জোড়া।
নীল বইচা মাছের মতো চোখ
স্বপ্নে আমার কুশল পুছে রোজ—
‘ভালো কি আছো?’ হায়রে ভালো থাকা!
নগরবাসী কে রাখে কার খোঁজ!
ফিরতে চাই, পাবো কি সেই পথ?
তরমুজের ক্ষেতের পাশে ঘর,
লজ্জাহীনা ফাজিল ছুঁড়ি এক
ভীষণ কালো, হাসতো থর থর!
মহাকালের কালোর চেয়ে কালো
রাত বরণী রূপসী সেই পরী,
কাঁপিয়ে কাখে ঠিল্লা ভরা পানি
দেহের ভঁজে ভেজা নীলাম্বরী—
উঠতো হেঁটে জলের ধার বেয়ে;
কালো-বাউশী যেনো কলমী বনে
অঙ্গ নেড়ে অস্ত গোলা জলে
দেখেছিলাম একদা কুক্ষণে।
ফিরলে আজো পাবো কি সেই নদী
স্রোতের তোড়ে ভাঙা সে এক গ্রাম?
হায়রে নদী খেয়েছে সব কিছু
জলের ঢেউ ঢেকেছে নাম-ধাম।
কবিতা এমন