বিষম চিন্তা
মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার-
সবাই বলে, মিথ্যে বাজে বকিস্নে আর খবরদার!
অমন ধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব?
বলবে সবাই মুখ্য ছেলে, বলবে আমায় “গো গর্দভ!”
কেউ কি জানে দিনের বেলায় কোথায় পালায় ঘুমের ঘোর?
বর্ষা হলেই ব্যাঙের গলায় কোথেকে হয় এমন জোর?
গাধার কেন শিং থাকে না, হাতির কেন পালক নেই?
গরম তোলে ফোড়ন দিলে লাফায় কেন তাধেই ধেই
সোডার বোতল খুললে কেন ফঁসফঁসিয়ে রাগ করে?
কেমন করে রাখবে টিকি মাথায় যাদের টাকা পড়ে?
ভুত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়?
মাথায় যাদের গোল বেধেছে তাদের কেন “পাগোল” কয়?
কতই ভাবি এসব কথা, জবাব দেবার মানুষ কই?
বয়স হলে কেতাব খুলে জানতে পাব সমস্তই।
শ্রাবণে
জল ঝরে জল ঝরে সারাদিন সারারাত –
অফুরান নাম্তায় বাদলের ধারাপাত।
আকাশের মুখ ঢাকা, ধোঁয়ামাখা চারিধার,
পৃথিবীর ছাত পিটে ঝমাঝম্ বারিধার,
স্নান করে গাছপালা প্রাণখোলা বরষায়,
নদীনালা ঘোলাজল ভরে ওঠে ভরসায়।
উৎসব ঘনঘোর উম্মাদ শ্রাবণের
শেষ নাই শেষ নাই বরষার প্লাবনের।
জলে জলে জলময় দশদিক্ টলমল্,
অবিরাম একই গান, ঢালো জল, ঢালো জল।
ধুয়ে যায় যত তাপ জর্জর গ্রীষ্মের,
ধুয়ে যায় রৌদ্রের স্মৃতিটুকু বিশ্বের।
শুধু যেন বাজে কোথা নিঃঝুম ধুক্ধুক্.
ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ।
সঙ্গীহারা
সবাই নাচে ফূর্তি করে সবাই গাহে গান,
একলা বসে হাঁড়িচাঁচার মুখটি কেন ম্লান?
দেখ্ছ নাকি আমার সাথে সবাই করে আড়ি-
তাইতো আমার মেজাজ খ্যাপা মুখটি এমন হাঁড়ি।
তাও কি হয়! ঐ যে মাঠে শালিখ পাখি ডাকে
তার কাছে কৈ যাওনিতো ভাই শুধাওনিতো তাকে!
শালিখ পাখি বেজায় ঠ্যাঁটা চেচায় মিছিমিছি,
হল্লা শুনে হাড় জ্বলে যায় কেবল কিচিমিচি।
মিষ্টি সুরে দোয়েল পাখি জুড়িয়ে দিল প্রাণ
তার কাছে কৈ বসলে নাতো শুনলে না তার গান!
দোয়েল পাখির ঘ্যান ঘ্যানানি আর কি লাগে ভালো?
যেমন রূপে তেমন গুণে তেমনি আবার কালো।
রূপ যদি চাও যাও না কেন মাছরাঙার কাছে,
অমন খাসা রঙের বাহার আর কি কারো আছে?
মাছরাঙা! তারেও কি আর পাখির মধ্যে ধরি
রকম সকম সঙের মতন দেমাক দেখে মরি।
পায়রা ঘূঘু কোকিল চড়াই চন্দনা টুনটুনি
কারে তোমার পছন্দ হয়, সেই কথাটি শুনি!
এইগুলো সব ছ্যাবলা পাখি নেহাৎ ছোট জাত-
দেখলে আমি তফাৎ হঠি অমনি পচিশ হাত!
এতক্ষণে বুঝতে পারি ব্যাপারখানা কি যে-
সবার তমি খুৎ পেয়েছে নিখুঁৎ কেবল নিজে!
মনের মতন সঙ্গী তোমার কপালে নাই লেখা
তাইতে তোমায় কেউ পোঁছে না তাইতে থাক একা।
সাধে কি বলে গাধা!
বললে গাধা মনের দুঃখ অনেকখানি ভেবে-
“বয়েস গেল খাটেতে খাটতে, বৃদ্ধ হলাম এবে,
কেউ করে না তোয়াজ তবু, সংসারের কি রীতি!
ইচ্ছে করে এক্ষুনি দিই কাজে কর্মে ইতি।
কোথাকার ঐ নোংরা কুকুর ,আদর যে তার কত –
যখন তখন ঘুমোচেছ সে লাটসাহেবের মত!
ল্যাজ নেড়ে যেই, ঘেউ ঘেউ ঘেউ, লাফিয়ে দাঁড়ায় কোলে,
মনিব আমার বোক্চন্দর্, আহ্লাদে যান গলে।
আমিও যদি সেয়ানা হতুম, আরামে চোখ মুদে
রোজ মনিবের মন ভোলাতুম আমি নেচে কুঁদে।
ঠ্যাং নাচাতুম , ল্যাজ দোলাতুম, গান শোনাতুম সাধা –
এ বুদ্ধিটা হয়নি আমার – সাধে কি বলে গাধা!
বুদ্ধি এঁটে বসল গাধা আহ্লাদে ল্যাজ নেড়ে,
নাচ্ল কত, গাইল কত, প্রাণের মায়া ছেড়ে।
তারপরেতে শেষটা ক্রমে স্ফুতি এল প্রাণে
চলল গাধা খোদ্ মনিবের ড্রয়িংরুমের পানে।
মনিবসাহেব ঝিমুচ্ছিলেন চেয়ারখানি জুড়ে,
গাধার গলার শব্দে হঠাৎ তন্দ্রা গেল উড়ে।
চম্কে উঠে গাধার নাচন যেমনি দেখেন চেয়ে,
হাসির চোটে সাহেব বুঝি মরেন বিষম খেয়ে।
ভাব্লে গাধা – এই তো মনিব জল হয়েছেন হেসে
এইবারে যাই আদর নিতে কোলের কাছে ঘেষে।
এই না ভেবে এক্কেবারে আহ্লাদেতে ক্ষেপে
চড়্ল সে তার হাটুর উপর দুই পা তুলে চেপে।
সাহেব ডাকেন ‘ত্রাহি ত্রাহি’ গাধাও ডাকে ‘ঘ্যাঁকো’,
অর্থাৎ কিনা কোলে চড়েছি, এখন আমায় দ্যাখো!
ডাক শুনে সব দৌড়ে এল ব্যস্ত হয়ে ছুটে ,
দৌড়ে এল চাকর বাকর মিস্ত্রী মজুর মুটে,
দৌড়ে এল পাড়ার লোকে ,দৌড়ে এল মালী –
কারুর হাতে ডান্ডা লাঠি কারু বা হাত খালী।
ব্যাপার দেখে অবাক সবাই ,চক্ষু ছানা বড়া –
সাহেব বললে, “উচিত মতন শাসন টি চাই কড়া।”
হাঁ হাঁ বলে ভীষন রকম উঠ্ল সবাই চটে।
দে দমাদম্ মারের চোটে গাধার চমক্ ছোটে।
ছুটল গাধা প্রাণের ভয়ে গানের তালিম ছেড়ে,
ছুটল পিছে একশো লোকে হুড়মুড়িয়ে তেড়ে।
তিন পা যেতে দশ ঘা পড়ে, রক্ত ওঠে মুখে –
কষ্টে শেষে রক্ষা পেলে কাঁটার ঝোপে ঢুকে।
কাঁটার ঘায়ে চামড়া গেল সার হল তার কাঁদা;
ব্যাপার শুনে বললে সবাই, “সাধে কি বলে গাধা”।
হরিষে বিষাদ
দেখছে খোকা পঞ্জিকাতে এই বছরে কখন কবে
ছুটির কত খবর লেখে, কিসের ছুটি কঁদিন হবে।
ঈদ্ মহরম দোল্ দেওয়ালি বড়দিন আর বর্ষাশেষে-
ভাবছে যত, ফুল্লমুখে ফুর্তিভরে ফেলছে হেসে
এমন কালে নীল আকাশে হঠাৎ -খ্যাপা মেঘের মত,
উথলে ছোটে কান্নাধারা ডুবিয়ে তাহার হর্য যত।
“কি হল তোর?” সবাই বলে, “কলমটা কি বিঁধল হাতে?
জিবে কি তোর দাঁত বসালি? কামড়াল কি ছারপোকাতে?”
প্রশ্ন শুনে কান্না চড়ে অশ্র“ ঝরে দ্বিগুন বেগে,
“পঞ্জিকাটি আছড়ে ফেলে বললে কেঁদে আগুন রেগে;
ঈদ্ পড়েছে জষ্ঠি মাসে গ্রীষ্মে যখন থাকেই ছুটি,
বর্ষাশেষে আর দোল্ ত দেখি রোব্বারেতেই পড়ল দুটি।
দিনগুলোকে করলে মাটি মিথ্যে পাজি পঞ্জিকাতে-
মুখ ধোব না ভাত খাব না গুম যাব না আজকে রাতে।”