নিরুপায়
বসি বছরের পয়লা তারিখে
মনের খাতায় রাখিলাম লিখে-
“সহজ উদরে ধরিবে যেটুক্,
সেইটুকু খাব হব না পেটুক।”
মাস দুই যেতে খাতা খুলে দেখি,
এরি মাঝে মন লিখিয়াছে একি!
লিখিয়াছে, “যদি নেমন্তন্নে
কেঁদে ওঠে প্রাণ লুচির জন্যে,
উচিত হবে কি কাঁদান তাহারে?
কিম্বা যখন বিপুল আহারে ,
তেড়ে দেয় পাতে পোলাও কালিয়া
পায়েস অথবা রাবড়ি ঢালিয়া-
তখন কি করি, আমি নিরূপায়!
তাড়াতে না পারি, বলি আয় আয়,
ঢুকে আয় মুখে দুয়ার ঠেলিয়া
উদার রয়েছি উদর মেলিয়া!”
পরিবেষণ
পরি’পূর্বক ‘বিষ’ধাতু তাহে ‘অনট্’ বসে
তবে ঘটায় পরিবেষণ, লেখে অমরকোষে।
– অর্থাৎ ভোজের ভাণ্ড হাতে লয়ে মেলা
ডেলা ডেলা ভাগ করি পাতে পাতে ফেলা।
এই দিকে এস তবে লয়ে ভোজভাণ্ড
সমুখে চাহিয়া দেখ কি ভীষণ কান্ড।
কেহ কহে “দৈ আন” কেহ হাঁকে “লুচি”
কেহ কাঁদে শুন্য মুখে পাতখানি মুছি।
হোথা দেখি দুই প্রভু পাত্র লয়ে হাতে
হাতাহাতি গুঁতাগুতি দ্বন্দ্বরণে মাতে।
কেবা শোনে কার কথা সকলেই কর্তা-
অনাহারে কতধারে হল প্রাণ হত্যা।
কোন প্রভু হস্তিদেহ ভুঁড়িখানা ভারি
ঊর্ধ্ব হতে থপ্ করি খাদ্য দেন্ ছাড়ি।
কোন চাচা অন্ধপ্রায় (মাইনাস কুড়ি)
ছড়ায় ছোলার ডাল পথঘাট জুড়ি।
মাতব্বর বৃদ্ধ যায় মুদি চক্ষু দুটি,
“কারো কিছু চাই” বলি তড়বড় ছুটি-
বীরোচিত ধীর পদে এস দেখি ত্রস্তে-
ওই দিকে খালি পাত, চল হাঁড়ি হস্তে।
তবে দেখ, খাদ্য দিতে অতিথির থালে
দৈবাৎ না ঢোকে কভু যেন নিজ গালে।
ছুটোনাকো ওরকম মিছে খালি হাতে
দিও না মাছের মুড়া নিরামিষ পাতে।
অযথা আক্রোশে কিবা অন্যায় আদরে
ঢেলো না অম্বল কারো নতুন চাদরে।
বোকাবৎ দন্তপাটি করিয়া বাহির
করোনাকো অকারণে কৃতিত্ব জাহির।
পাকাপাকি
আম পাকে বৈশাখে, কুল পাকে ফাগুনে,
কাঁচা ইট পাকা হয় পোড়ালে তা আগুনে।
রোদে জলে টিকে রঙ পাকা কই তাহারে।
ফলারটি পাকা হয় লুচি দই আহারে।
হাত পাকে লিখে লিখে, চুল পাকে বয়সে,
জ্যাঠামিতে পাকা ছেলে বেশি কথা কয় সে।
লোকে কয় কাঁঠাল সে পাকে নাকি কিলিয়ে?
বুদ্ধি পাকিয়ে তোলে লেখাপড়া গিলিয়ে!
কান পাকে ফোড়া পাকে, পেকে করে টন্টন্-
কথা যার পাকা নয়, কাজে তার ঠন্ঠন্
রাঁধুনী বসিয়া পাকে পাক দেয় হাঁড়িতে,
সজোরে পাকালে চোখ ছেলে কাঁদে বাড়িতে।
পাকায়ে পাকায়ে দড়ি টান হয়ে থাকে সে।
দুহাতে পাকালে গোফঁ তবু নাহি পাকে সে।
পড়ার হিসাব
ফির্ল সবাই ইস্কুলেতে সাঙ্গ হল ছুটি-
আবার চলে বই-বগলে সবাই গুটি গুটি।
পড়ার পরে কার কি রকম মনটি ছিল এবার,
সময় এল এখন তারই হিসেব খানা দেবার।
কেউ পড়েছেন পড়ার পুঁথি, কেউ পড়েছেন গল্প,
কেউ পড়েছেন হদ্দমতন, কেউ পড়েছেন অল্প।
কেউ বা তেড়ে গড়গড়িয়ে মুখস্থ কয় ঝাড়া,
কেউ বা কেবল কাঁচুমাঁচু মোটে না দেয় সাড়া।
গুরুমশাই এসেই কাশে বলেন, ওরে গদাই,
এবার কিছু পড়লি? নাকি খেলতি কেবল সদাই!
গদাই ভয়ে চোক পাকিয়ে ঘাবড়ে গিয়ে শেষে
বললে, “এবার পড়ার ঠেলা বেজায় সর্বনেশে-
মামার বাড়ি যেম্নি যাওয়া অম্নি গাছে চড়া,
এক্কেবারে অম্নি ধপাস্ পড়ার মত পড়া!”
বর্ষ গেল বর্ষ এল
বর্ষ গেল বর্ষ এল গ্রীষ্ম এলেন বাড়ি-
পৃথিবী এলেন চক্র দিয়ে এক বছরের পাড়ি।
সত্যিকারের এই পৃথিবী বয়স কেবা জানে,
লক্ষ হাজার বছর ধরে চল্ছে একই টানে।
আপন তালে আকাশ পথে আপনি চলে বেগে,
গ্রীষ্মকালের তপ্তরোদে বর্ষাকালের মেঘে,
শরৎকালের কান্নাহাসি হাল্কা বাদল হাওয়া,
কুয়াশা – ঘেরা পর্দা ফেলে হিমের আসা যাওয়া-
শীতের শেষে রিক্ত বেশে শূন্য করে ঝুলি,
তার প্রতিশোধ ফুলে ফলে বসন্তে লয় তুলি।
না জানি কোন নেশার ঝোঁকে যুগযুগান্ত ধরে,
ছয়টি ঋতুর দ্বারে দ্বারে পাগল হয়ে ঘোরে
না জানি কোন ঘূর্ণিপাকে দিনের পর দিন,
এমন করে ঘোরার তারে নিদ্রাবিরামহীন
কাঁটায় কাঁটায় নিয়ম রাখে লক্ষযুগের প্রথা,
না জানি তার চাল চলনের হিসাব রাখে কোথা!
বর্ষ শেষ
শুনে রে আজব কথা, শুন বলি ভাই রে-
বছরের আয়ু দেখ বেশিদিন নাই রে।
ফেলে দিয়ে পুরাতন জীর্ণ এ খোলসে
নতুন বরষ আসে, কোথা হতে বল সে!
কবে যে দিয়েছে চাবি জগতের যন্ত্রে!
সেই দমে আজ চলে না জানি কি মন্ত্রে!
পাকে পাকে দিনরাত ফিরে আসে বার বার ।
ফিরে আসে মাস ঋতু- এ কেমন কারবার।
কোথা আসে কোথা যায় নাহি কোন উদ্দেশ,
হেসে খেলে ভেসে যায় কত দুর দুর দেশ।
রবি যায় শশী যায় গ্রহ তারা সব যায়,
বিনা কাঁটা কম্পাসে বিনা কল কব্জায় ।
ঘুর পাকে ঘুরে চলে ,চলে কত ছন্দে,
তালে তালে হেলে দুলে চলে রে আনন্দে।
বর্ষার কবিতা
কাগজ কলম লয়ে বসিয়াছি সদ্য,
আষাঢ়ে লিখিতে হবে বরষার পদ্য।
কি যে লিখি কি যে লিখি ভাবিয়া না পাই রে,
হতাশে বসিয়া তাই চেয়ে থাকি বাইরে।
সারাদিন ঘনঘটা কালো মেঘ আকাশে,
ভিজে ভিজে পৃথিবীর মুখ খানা ফ্যাকাশে।
বিনা কাজে ঘরে বাঁধা কেটে যায় বেলাটা,
মাটি হল ছেলেদের ফুটবল খেলাটা।
আপিসের বাবুদের মুখে নাই ফুর্তি,
ছাতা কাঁধে জুতা হাতে ভ্যাবাচ্যাকা মূর্তি।
কোনখানে হাটু জল কোথা ঘন কর্দম –
চলিতে পিছল পথে পড়ে লোকে হর্দম।
ব্যাঙেদের মহাসভা আহ্লাদে গদ্গদ্,
গান করে সারারাত অতিশয় বদ্খদ্।