মেঘ-বিনিন্দিত স্বরে
মেঘ-বিনিন্দিত স্বরে–
কে তুমি আমারে ডাকিলে শ্রাবণ বাতাসে?
তোমার আহবান ধ্বনি
পরশিয়া মোরে গরজিল দূর আকাশে।
বেদনা বিভোল আমি
ক্ষণেক দুয়ারে থামি
বাহিরে ধূসর দিনে—
ছুটে চলি পথে মন্দির-বিবশ নিশাসে।
মেঘে মেঘে ছাওয়া মলিন গগনে,
কোন আয়োজন ছিল আনমনে।
বাহিরে কী ঘনঘটা,
ভিতরে বিজলী-ছটা
মত্ত ভিতরে বাহিরে–
আজ কি কাটিবে বিরহ বিধুর হতাশে।।
শীতের হাওয়া ছুয়ে গেল ফুলের বনে
শীতের হাওয়া ছুয়ে গেল ফুলের বনে,
শিউলি-বকুল উদাস হল ক্ষণে ক্ষণে,
ধূলি-ওড়া পথের প’রে
বনের পাতা শীতের ঝড়ে
যায় ভেসে ক্ষীণ মলিন হেসে আপন মনে
রাতের বেলা বইল বাতাস নিরুদ্দেশে,
কাঁপনটুকু রইল শুধু বনের শেষে।
কাশের পাশে হিমের হাওয়া,
কেবল তারি আসা-যাওয়া—
সব-ঝরাবার মন্ত্রণা সে দিল শুধু সংগোপনে।
শয়ন শিয়রে ভোরের পাখির রবে
শয়ন শিয়রে ভোরের পাখির রবে
তন্দ্ৰা টুটিল যবে।
দেখিলাম আমি খোলা বাতায়নে
তুমি আনমনা কুসুম চয়নে
অন্তর মোর ভরে গেল সৌরভে।
সন্ধ্যায় যবে ক্লান্ত পাখিরা ধীরে,
ফিরিছে আপন নীড়ে,
দেখিলাম তুমি এলে নদীকূলে
চাহিলে আমায় ভীরু আঁখি তুলে
হৃদয় তখনি উড়িল অজানা নভে।।
সাঁঝের আঁধার ঘিরল যখন
সাঁঝের আঁধার ঘিরল যখন
শাল-পিয়ালের বন,
তারই আভাস দিল আমায়
হঠাৎ সমীরণ।
কুটির ছেড়ে বাইরে এসে দেখি
আকাশকোণে তারার লেখালেখি
শুরু হয়ে গেছে বহুক্ষণ।
আজকে আমার মনের কোণে
কে দিল যে গান,
ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠি
রোমাঞ্চিত প্ৰাণ।
আকাশতলে বিমুক্ত প্ৰান্তরে,
উধাও হয়ে গেলাম ক্ষণ তরে!
কার ইশারায় হলাম অন্যমন।।
হে পাষান আমি নির্ঝরিণী
হে পাষান, আমি নির্ঝরিণী
তব হৃদয়ে দাও ঠাঁই।
আমার কল্লোলে
নিঠুর যায় গ’লে
ঢেউয়েতে প্ৰাণ দোলে,
—তবু নীরব সদাই!
আমার মৰ্মেতে কী গান ওঠে মেতে
জানো না তুমি তা,
তোমার কঠিন পায় চির দিবসই হায়
রহিনু অবনতা।
যতই কাছে আসি
আমারে মৃদু হাসি
করিছ পরবাসী,
তোমাতে প্ৰেম নাই।।
হে মোর মরণ
হে মোর মরণ, হে মোর মরণ!
বিদায় বেলা আজ একেলা
দাও গো শরণ।
তুমি আমার বেদনাতে
দাও আলো আজ এই ছায়াতে
ফোটার গন্ধে অলস ছন্দে
ফেলিও চরণ।।
তোমার বুকে অজানা স্বাদ,
ক্লান্তি আনো, দাও অবসাদ;
তোমায় আমি দিবসযামী
করিনু বরণ।
তোমার পায়ে কী আছে যে,
জীবনবীণা উঠেছে বেজে?
আমায় তুমি নীরব চুমি
করিও হরণ।।