স্বগত ভাষণ
আমার মাথার ক্ষত দ্যাখে লোকে ফুলের মতন
উন্মীলিত প্রতিদিন, আমি বিশ শতকের যিশু।
আমার চৌদিকে দেখি ক্রুশকাঠ নিয়ে যাচ্ছে বয়ে
মুখ বুজে কয়েকটি শীর্ণ শব, তারাই আবার
জ্বলজ্বলে রাত্রির দোকানে এসে কয় খিলি পান
কিনে দলছাড়া হয় অথবা প্রচণ্ড ক্ষোভে মেতে
নখ দিয়ে মাটি খুঁড়ে তোলে তারার কবর
দেখতে চায় না চাঁদ ভেসে যাক অবারিত নীলে।
আমার মাথাটা যেন বহ্নিমান একটি শহর
যেখানে মানুষ, যান, বিজ্ঞাপন, রেডিওর গান,
ভিখিরির চ্যাঁচামেচি, বেশ্যার বেহায়া অনুরাগ,
কানাঘুষো, নামহীন মৃত শিশু আবর্তিত শুধু।
আমাকে শাসায় ভাগ্য সারাক্ষণ, বাগে পেয়ে যদি
টিট করে দেয় ঈর্ষাতুর দেবদূত দুঃস্বপ্নের
মুখোশ দেখিয়ে তবে কী মজা লুটবে অন্ধকারে
আমার দুর্দশা দেখে নোনাধরা চারটি দেয়াল!
ক্লান্ত হয়ে স্বপ্ন দেখি পেরিয়ে হুলুদ মরুভূমি
একটি বিকট সিংহ আত্মাটাকে নেড়ে-চেড়ে শেষে
ছুড়ে ফেলে দিয়ে জীর্ণ জঞ্জালে নিঃশব্দে চলে গেছে।
হয়তো রোচেনি মুখে, কিংবা যেটা যোগ্য কুকুরের
কী করে বসাবে ভাগ তাতে অরণ্যের অধীশ্বর?
নিজের ছায়াকে দেখি হেঁটে যায় দূরে, আমি তার
অনুগামী। কয়েকটি প্রবঞ্চক স্বর গান হয়ে
মিশে যায় কঙ্কালের মতন বৃক্ষের অন্তরালে
তিনটি ডাইনী বুড়ি দূরের আকাশ থেকে সাদা
চাঁদটাকে উপড়ে এনে, গুঁড়ো করে পাচনের সাথে
মিশিয়ে বিকৃত শব্দে টেনে নিয়ে তৃষিত জঠরে
বলে তারা কেন বৃথা করো তুমি নিজেরই মৃগায়?
মাথার ক্ষতের ঘ্রাণে জেগে দেখি ঘরের দেয়ালে
অলীক ফুলের নকশা, চতুর্দিকে যৌবনের রঙ
নিয়েছে জড়তা শুষে। শরীর চিৎকারে দীর্ণ হয়
আমি কি এখনও যুবা আলোকিত আয়ুর ভূগোলে?
হাতির শুঁড়
আদ্যিকালের বেবাক কিছুই অলৌকিক।
পক্ষীরাজের পক্ষছায়ায় দিগ্ধিদিক
নীল আকাশে উড়ত কত রাজকুমার।
আদ্যিকালের আজব কথার নেই শুমার!
ফলত সদা সোনার ডালে হীরের ফল,
জাগত জ্বেলে ঘিরের প্রদীপ লালকমল,
অসির খেলায় দৈত্যদানো করত বধ।
মরুভূমি, দূরের পাহাড়, মায়ার হ্রদ
উড়ন্ত সেই গালিচাটায় হচ্ছে পার।
সাত সফরে এই জীবনের সত্যসার
সিন্দাবাদের নখমুকুরে বিম্বিত।
সোনার কাঠি রুপোর কাঠি চিহ্নিত
ঘুমের খাটে শঙ্খমালা ঘুমন্ত;
কৌটো খোলা ভোমরা মরে জীবন্ত।
ঐরাবতের খেয়ালখুশির ধন্দায়
ভোরের ফকির মুকুট পরে সন্ধ্যায়।
প্রাক্তন সেই ভেল্কিবাজির মন্তরে
যাচ্ছে চেনা অনেক সাধু-সন্তরে।
সেই চালে ভাই মিত্র কিবা শত্তুর
চলছে সবই-মস্ত সহায় হাতির শুঁড়!