সেই যে কখন থেকে
সেই যে কখন থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি বড় একা
তোমার নিস্তব্ধ দোরে, তুমি
খেয়ালই করোনি। হায়, কিছুতেই তুমি
ভুলেও একটিবার তাকাচ্ছো না এই গরিবের দিকে!
না হয় আমার গায়ে চোখ-জুড়ানো পোশাক নেই,
না হয় আমার কথা জাঁদুরেল কোনও
শরিফের মতো কেতাদুরস্ত হওয়ার
তেমন সুযোগ কিছুতেই পাইনি কস্মিনকালে।
তা’বলে অশেষ ঘেন্না পেয়ে দিগ্ধিদিক
লুকিয়ে নিতান্ত সাধারণ মুখ লুকিয়ে বেড়াবো,
এমনও তো মেনে নেয়া যায় না সহজে।
অজান্তেই এই সত্তা বিদ্রোহের আগুনে উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
আমার জৌলুশ নেই বটে, কিন্তু বিদ্যার বৈভব
আমার অন্তরে আছে, তুমি তার পরিচয় পেয়েছো নিশ্চিত,
তবু কেন তোমার নিস্তব্ধ দোরে এভাবে দাঁড়িয়ে
থেকে প্রায়। ভিখারির ধরনে নিশ্চুপ সময়ের দাস হবো?
তোমার তো জানা আছে আমাদের শহীদ, উন্নত শির নেতা
কখনও জালিম আর অন্যায় বিলাসী
কারও সঙ্গে করেননি সন্ধি। তিনি নেই, তাঁর
আদর্শের ওজ্জ্বল্য, মহিমা রয়ে গেছে অবিচল।
০৯.০৪.২০০৪
হাঁটছি হাঁটছি
ভোর নেই, দ্বিপ্রহর নেই,
নেই সন্ধ্যা; হাঁটছি, হাঁটছি।
কখন যে বেলা শেষ হয়ে এলো
বস্তুত পাইনি টের। রাত্রি দাঁত, নখ বের করে
আমাকে খাবলে ধরে। কী ভীষণ যন্ত্রণার ফাঁদে
পড়ে কাতরাতে গিয়ে অসহায়, বোবা হয়ে থাকি।
পথের ধূসর ধুলো, কালো
কাঁটা ক্ষিপ্ত, বেয়াড়া গাছের,
আমাকে খোঁচাতে থাকে আর
বেধড়ক রক্ত ঝরে অতিশয় ক্লান্ত শরীরের
নানা শিরা ছিঁড়ে-খাঁড়ে। গাছে-বসা কয়েকটি পাখি
ভীত স্বরে কেঁদে ওঠে, হায়, মানবের দুর্দুশায়।
এই যে যাত্রায় আমি আজ
পদে পদে বিপর্যস্ত হয়ে
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি
রেখে ফের হাঁটছি, হাঁটছি, সে কি শুধু অবিরত
ব্যর্থতার ভস্মরাশি সত্তাময় গ্রহণের জন্যে?
যতই ক্লান্তির চাপ থাক, তবু এগোতেই হবে।
ঐ তো দূরে যাচ্ছে দেখা চূড়া
অপরূপ আস্তানার, যার
প্রদীপের আভা মুছে ফেলে
দেবে অতীতের ভ্রান্তি, দুর্গন্ধ এবং হাহাকার।
সম্মুখে উঠছে ভেসে অগ্রসর তরুণ, তরুণী,
যারা হাতে আগামীর প্রদীপ, নিশান তুলে নেয়।
হেঁটে হেঁটে বেশ কিছুদূর এসে
হেঁটে হেঁটে বেশ কিছুদূর এসে আজ মনে হয়-
এই যে এতটা পথ পেরিয়ে এলাম কত আলো,
কত অন্ধকার খেলা করেছে আমার সঙ্গে। ভালো,
মন্দ এসে ঘিরেছে আমাকে আর ক্রুর দ্বন্দ্বময়
অন্তরের ইতিহাস রয়ে যাবে অজানা নিশ্চয়।
যদি নগ্নতায় উদ্ভসিত হতো অন্তর্লোক, তবে
অনেকে আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতো নীরবে,
কেউ কেউ দিতো টিটকিরি দিব্যি রাজপথময়।
আমরা এমন যুগে বাস করছি, যখন কেউ
পাশে এসে বসলে ভীষণ উসখুস বোধ করি।
মনে হয়, পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির শার্টের খুব ফিকে
আড়ালে রিভলবার কিংবা ছোরা ঘাপ্টিমারা ফেউ
হয়ে আছে। এক্ষুণি লোকটা হাসিমুখে তড়িঘটি
হিম লাশ করে দেবে জলজ্যান্ত ভদ্রলোকটিকে!
হয়তো ভালোবাসা
কখন যে কী ক’রে তারার মতো জ্বলজ্বল করে
শব্দমালা খাতার পাতায়, যায় না
ঠিক বোঝে। সেই শব্দগুচ্ছ আখেরে
পরিণত হয় পুরো কবিতায়। কখনও কখনও দেয়ালে
মাথা কুটে মরলেও হায় কবিতার ছায়া
বিন্দুমাত্র হয় না দৃষ্টিগোচর। কপাল-চাপড়ানোই সার।
কখনও কখনও তুমুল আড্ডায় ব’সে থাকি
যখন, হঠাৎ কবিতা ঝলসে ওঠে চিত্তে
দু’তিনটি শব্দ নিয়ে। আড্ডার দৃশ্য দৃষ্টি থেকে
মুছে যায়। চতুর্দিকে কতিপয় শব্দ নর্তকীরূপে
প্রস্ফুটিত হয় খাতায়। হে কল্পনা, হে সাধনা
আমাকে ভীষণ পথে নিয়ে যাও ক্ষতি নেই। সব দিক দেখে নিতে চাই।
ইচ্ছে করলেই দেখা যায় কি সকল আকাঙ্ক্ষিত
দ্রষ্টব্য কখনও? সম্ভবত নয়, মৃত্যু মুছে ফেলে
ঢের সুন্দরের চিত্রমালা দৃষ্টি থেকে, শুধু কিছু
হাহাকার থেকে যায় বাগানে, গলিতে,
বারান্দায়। কখনও কখনও তোমাদের মাঝে যারা
কাব্য ভালোবাসো তারা হয়তো আমাকে ভালোবাসো।
১৯.১০.২০০৪