সুখে আমায় রাখবে কেন
সুখে আমায় রাখবে কেন
রাখো তোমার কোলে;
যাক-না গো সুখ জ্বলে।
যাক-না পায়ের তলার মাটি,
তুমি তখন ধরবে আঁটি,
তুলে নিয়ে দুলাবে ওই
বাহু-দোলার দোলে।
যেখানে ঘর বাঁধব আমি
আসে আসুক বান–
তুমি যদি ভাসাও মোরে
চাই নে পরিত্রাণ।
হার মেনেছি, মিটেছে ভয়,
তোমার জয় তো আমারি জয়,
ধরা দেব, তোমায় আমি
ধরব যে তাই হলে।
শান্তিনিকেতন, ৭ ভাদ্র, ১৩২১
সুখের মাঝে তোমায় দেখেছি
সুখের মাঝে তোমায় দেখেছি,
দুঃখে তোমায় পেয়েছি প্রাণ ভ’রে।
হারিয়ে তোমায় গোপন রেখেছি,
পেয়ে আবার হারাই মিলন-ঘোরে।
চিরজীবন আমার বীণা-তারে
তোমার আঘাত লাগল বারে বারে,
তাই তো আমার নানা সুরের তানে
তোমার পরশ প্রাণে নিলেম ধ’রে।
আজ তো আমি ভয় করি নে আর
লীলা যদি ফুরায় হেথাকার।
নূতন আলোয় নূতন অন্ধকারে
লও যদি বা নূতন সিন্ধুপারে
তবু তুমি সেই তো আমার তুমি,
আবার তোমায় চিনব নূতন ক’রে।
পাল্কি-পথে , ২৫ আশ্বিন-বেলা, ১৩২
সেই তো আমি চাই
সেই তো আমি চাই।
সাধনা যে শেষ হবে মোর
সে ভাবনা তো নাই।
ফলের তরে নয় তো খোঁজা–
কে বইবে সে বিষম বোঝা,
যেই ফলে ফল ধুলায় ফেলে
আবার ফুল ফুটাই।
এমনি করে মোর জীবনে
অসীম ব্যাকুলতা,
নিত্য নূতন সাধনাতে
নিত্য নূতন ব্যথা।
পেলেই সে তো ফুরিয়ে ফেলি,
আবার আমি দু হাত মেলি–
নিত্য দেওয়া ফুরায় না যে
নিত্য নেওয়া তাই।
শান্তিনিকেতন, ২৮ ভাদ্র, ১৩২১
হিসাব আমার মিলবে না তা জানি
হিসাব আমার মিলবে না তা জানি,
যা আছে তাই সামনে দিলাম আনি।
করজোড়ে রইনু চেয়ে মুখে
বোঝাপড়া কখন যাবে চুকে,
তোমার ইচ্ছা মাথায় লব মানি।
গর্ব আমার নাই রহিল প্রভু,
চোখের জল তো কাড়বে না তো কভু।
নাই বসালে তোমার কোলের কাছে,
পায়ের তলে সবারি ঠাঁই আছে–
ধুলার ‘পরে পাতব আসনখানি।
শান্তিনিকেতন, ১৬ আশ্বিন-রাত্রি, ১৩২১
হৃদয় আমার প্রকাশ হল
হৃদয় আমার প্রকাশ হল
অনন্ত আকাশে।
বেদন-বাঁশি উঠল বেজে
বাতাসে বাতাসে।
এই যে আলোর আকুলতা
আমারি এ আপন কথা,
উদাস হয়ে প্রাণে আমার
আবার ফিরে আসে।
বাইরে তুমি নানা বেশে
ফের নানান ছলে;
জানি নে তো আমার মালা
দিয়েছি কার গলে।
আজ কী দেখি পরানমাঝে
তোমার গলায় সব মালা যে,
সব নিয়ে শেষ ধরা দিলে
গভীর সর্বনাশে।
সেই কথা আজ প্রকাশ হল
অনন্ত আকাশে।
সুরুল, ১৩ ভাদ্র, ১৩২১