মুচকে হাসে অতুল খুড়ো
মুচকে হাসে অতুল খুড়ো,
কানে কলম গোঁজা।
চোখ টিপে সে বললে হঠাৎ,
“পরতে হবে মোজা।’
হাসল ভজা, হাসল নবাই–
“ভারি মজা’ ভাবল সবাই–
ঘরসুদ্ধ উঠল হেসে,
কারণ যায় না বোঝা।
মুরগি পাখির ‘পরে
মুরগি পাখির ‘পরে
অন্তরে টান তার,
জীবে তার দয়া আছে
এই তো প্রমাণ তার।
বিড়াল চাতুরী ক’রে
পাছে পাখি নেয় ধরে
এই ভয়ে সেই দিকে
সদা আছে কান তার–
শেয়ালের খলতায়
ব্যথা পায় প্রাণ তার।
মেছুয়াবাজার থেকে পালোয়ান চারজন
মেছুয়াবাজার থেকে
পালোয়ান চারজন
পরের ঘরেতে করে
জঞ্জাল-মার্জন।
ডালায় লাগিয়ে চাপ
বাক্সো করেছে সাফ,
হঠাৎ লাগালো গুঁতো
পুলিসের সার্জন।
কেঁদে বলে, “আমাদের
নেই কোনো গার্জন,
ভেবেছিনু হেথা হয়
নৈশবিদ্যালয়–
নিখর্চা জীবিকার
বিদ্যা-উপার্জন।’
যখন জলের কল
যখন জলের কল
হয়েছিল পলতায়
সাহেবে জানালো খুদু,
ভরে দেবে জল তায়।
ঘড়াগুলো পেত যদি
শহরে বহাত নদী,
পারেনি যে সে কেবল
কুমোরের খলতায়।
যখনি যেমনি হোক জিতেনের মর্জি
যখনি যেমনি হোক জিতেনের মর্জি
কথায় কথায় তার লাগে আশ্চর্যি।
অডিটর ছিল জিতু হিসাবেতে টঙ্ক,
আপিসে মেলাতেছিল বজেটের অঙ্ক;
শুনলে সে, গেছে দেশে রামদীন দর্জি,
শুনতে না-শুনতেই বলে “আশ্চর্যি’।
যে দোকানি গাড়ি তাকে করেছিল বিক্রি
কিছুতে দাম না পেয়ে করেছে সে ডিক্রি,
বিস্তর ভেবে জিতু উঠল সে গর্জি–
“ভারি আশ্চর্যি।
শুনলে, জামাইবাড়ি ছিল বুড়ি ঝিনাদায়,
ছ বছর মেলেরিয়া ভুগে ভুগে চিনা দায়,
সেদিন মরেছে শেষে পুরোনো সে ওর ঝি,
জিতেন চশমা খুলে বলে “আশ্চর্যি’।
যে-মাসেতে আপিসেতে
যে-মাসেতে আপিসেতে
হল তার নাম ছাঁটা
স্ত্রীর শাড়ি নিজে পরে,
স্ত্রী পরিল গামছাটা।
বলে, “আমি বৈরাগী,
ছেড়ে দেব শিগ্গির,
ঘরে মোর যত আছে
বিলাস-সামিগ্গির।’
ছিল তার টিনে-গড়া
চা-খাওয়ার চাম্চাটা,
কেউ তা কেনে না সেটা
যত করে দাম-ছাঁটা।
রসগোল্লার লোভে
রসগোল্লার লোভে
পাঁচকড়ি মিত্তির
দিল ঠোঙা শেষ করে
বড়ো ভাই পৃথ্বির।
সইল না কিছুতেই
যকৃতের নিচুতেই
যন্ত্র বিগড়ে গিয়ে
ব্যামো হল পিত্তির।
ঠোঙাটাকে বলে, “পাজি
ময়রার কারসাজি।’
দাদার উপরে রাগে–
দাদা বলে, “চিত্তির!
পেটে যে স্মরণসভা
আপনারি কীর্তির।’
রাজা বসেছেন ধ্যানে
রাজা বসেছেন ধ্যানে,
বিশজন সর্দার
চীৎকাররবে তারা
হাঁকিছে– “খবরদার’।
সেনাপতি ডাক ছাড়ে,
মন্ত্রী সে দাড়ি নাড়ে,
যোগ দিল তার সাথে
ঢাকঢোল-বর্দার।
ধরাতল কম্পিত,
পশুপ্রাণী লম্ফিত,
রানীরা মূর্ছা যায়
আড়ালেতে পর্দার।
রান্নার সব ঠিক
রান্নার সব ঠিক,
পেয়েছি তো নুনটা–
অল্প অভাব আছে,
পাইনি বেগুনটা।
পরিবেষণের তরে
আছি মোরা সব ভাই,
যাদের আসার কথা
অনাগত সব্বাই।
পান পেলে পুরো হয়,
জুটিয়েছি চুনটা–
একটু-আধটু বাকি,
নাই তাহে কুণ্ঠা।
রায়ঠাকুরানী অম্বিকা
রায়ঠাকুরানী অম্বিকা।
দিনে দিনে তাঁর বাড়ে বাণীটার লম্বিকা।
অবকাশ নেই তবুও তো কোনো গতিকে
নিজে ব’কে যান, কহিতে না দেন পতিকে।
নারীসমাজের তিনি তোরণের স্তম্ভিকা।
সয় নাকো তাঁর দ্বিতীয় কাহারো দম্ভিকা।
লটারিতে পেল পীতু
লটারিতে পেল পীতু
হাজার পঁচাত্তর,
জীবনী লেখার লোক
জুটিল সে-মাত্তর।
যখনি পড়িল চোখে
চেহারাটা চেক্টার
“আমি পিসে’ কহে এসে
ড্রেন্ইন্স্পেক্টার।
গুরু-ট্রেনিঙের এক
পিলেওয়ালা ছাত্তর
অযাচিত এল তার
কন্যার পাত্তর।
শিমূল রাঙা রঙে
শিমূল রাঙা রঙে চোখেরে দিল ভ’রে।
নাকটা হেসে বলে, “হায় রে যাই ম’রে।’
নাকের মতে, গুণ কেবলি আছে ঘ্রাণে,
রূপ যে রঙ খোঁজে নাকটা তা কি জানে।
শুনব হাতির হাঁচি
“শুনব হাতির হাঁচি’
এই ব’লে কেষ্টা
নেপালের বনে বনে
ফেরে সারা দেশটা।
শুঁড়ে সুড়্সুড়ি দিতে
নিয়ে গেল কঞ্চি,
সাত জালা নস্যি ও
রেখেছিল সঞ্চি,
জল কাদা ভেঙে ভেঙে
করেছিল চেষ্টা–
হেঁচে দু-হাজার হাঁচি
মরে গেল শেষটা।
শ্বশুরবাড়ির গ্রাম
শ্বশুরবাড়ির গ্রাম,
নাম তার কুলকাঁটা,
যেতে হবে উপেনের–
চাই তাই চুল-ছাঁটা।
নাপিত বললে, “কাঁচি
খুঁজে যদি পাই বাঁচি–
ক্ষুর আছে, একেবারে
করে দেব মূল-ছাঁটা।
জেনো বাবু, তাহলেই
বেঁচে যায় ভুল-ছাঁটা।’
সন্ধেবেলায় বন্ধুঘরে
সন্ধেবেলায় বন্ধুঘরে
জুটল চুপিচুপি
গোপেন্দ্র মুস্তুফি।
রাত্রে যখন ফিরল ঘরে
সবাই দেখে তারিফ করে–
পাগড়িতে তার জুতোজোড়া,
পায়ে রঙিন টুপি।
এই উপদেশ দিতে এল–
সব করা চাই এলোমেলো,
“মাথায় পায়ে রাখব না ভেদ’
চেঁচিয়ে বলে গুপি।
সভাতলে ভুঁয়ে কাৎ হয়ে শুয়ে
সভাতলে ভুঁয়ে
কাৎ হয়ে শুয়ে
নাক ডাকাইছে সুল্তান,
পাকা দাড়ি নেড়ে
গলা দিয়ে ছেড়ে
মন্ত্রী গাহিছে মূলতান।
এত উৎসাহ দেখি গায়কের
জেদ হল মনে সেনানায়কের–
কোমরেতে এক ওড়না জড়িয়ে
নেচে করে সভা গুলতান।
ফেলে সব কাজ
বরকন্দাজ
বাঁশিতে লাগায় ভুল তান।
সময় চলেই যায়
“সময় চ’লেই যায়’
নিত্য এ নালিশে
উদ্বেগে ছিল ভুপু
মাথা রেখে বালিশে।
কব্জির ঘড়িটার
উপরেই সন্দ,
একদম করে দিল
দম তার বন্ধ–
সময় নড়ে না আর,
হাতে বাঁধা খালি সে,
ভুপুরাম অবিরাম-
বিশ্রাম-শালী সে।
ঝাঁ-ঝাঁ করে রোদ্দুর,
তবু ভোর পাঁচটায়
ঘড়ি করে ইঙ্গিত
ডালাটার কাঁচটায়–
রাত বুঝি ঝক্ঝকে
কুঁড়েমির পালিশে।
বিছানায় প’ড়ে তাই
দেয় হাততালি সে।