উঁচু মাথা হল হেঁট,
খালি হল ভরা পেট,
শপাশপ্ পিঠে পড়ে বেত।
কভু ফাঁসি কভু জেল,
কভু শূল কভু শেল,
কভু ক্রোক দেয় ভরা খেত।
মহিষী বলেন তবে,–
“দম্ভ যদি না র’বে
কী দেখে হাসিব তবে, প্রভু।’
বাদশা শুনিয়া কহে,–
“কিছুই যদি না রহে
হসনীয় আমি র’ব তবু।’
বালিশ নেই, সে ঘুমোতে যায় মাথার নিচে ইঁট দিয়ে
বালিশ নেই, সে ঘুমোতে যায় মাথার নিচে ইঁট দিয়ে।
কাঁথা নেই; সে প’ড়ে থাকে রোদের দিকে পিঠ দিয়ে।
শ্বশুর বাড়ি নেমন্তন্ন, তাড়াতাড়ি তারই জন্য
ছেঁড়া গামছা পরেছে সে তিনটে-চারটে গিঁঠ দিয়ে।
ভাঙা ছাতার বাঁটখানাতে ছড়ি ক’রে চায় বানাতে,
রোদে মাথা সুস্থ করে ঠাণ্ডা জলের ছিট দিয়ে।
হাসির কথা নয় এ মোটে, খেঁকশেয়ালিই হেসে ওঠে
যখন রাতে পথ করে সে হতভাগার ভিট দিয়ে।
বিড়ালে মাছেতে হল সখ্য
বিড়ালে মাছেতে হল সখ্য।
বিড়াল কহিল, “ভাই ভক্ষ্য,
বিধাতা স্বয়ং জেনো সর্বদা কন তোরে–
ঢোকো গিয়ে বন্ধুর রসময় অন্তরে,
সেখানে নিজেরে তুমি সযতনে রক্ষ।
ঐ দেখো পুকুরের ধারে আছে ঢালু ডাঙা,
ঐখানে সয়তান বসে থাকে মাছরাঙা,
কেন মিছে হবে ওর চঞ্চুর লক্ষ্য!
» বেণীর মোটরখানা
বেণীর মোটরখানা
চালায় মুখুর্জে।
বেণী ঝেঁকে উঠে বলে,
“মরল কুকুর যে!’
অকারণে সেরে দিলে
দফা ল্যাম্-পোস্টার,
নিমেষেই পরলোকে
গতি হল মোষটার।
যেদিকে ছুটেছে সোজা
ওদিকে পুকুর যে–
আরে চাপা পড়ল কে?
জামাই খুকুর যে।
বেদনায় সারা মন
বেদনায় সারা মন
করতেছে টনটন্
শ্যালী কথা বলল না
সেই বৈরাগ্যে।
মরে গেলে ট্রাস্টিরা
করে দিক বণ্টন
বিষয়-আশয় যত–
সবকিছু যাক গে।
উমেদারি-পথে আহা
ছিল যাহা সঙ্গী–
কোথা সে শ্যামবাজার
কোথা চৌরঙ্গি–
সেই ছেঁড়া ছাতা চোরে
নেয় নাই ভাগ্যে–
আর আছে ভাঙা ঐ
হ্যারিকেন লণ্ঠন,
বিশ্বের কাজে তারা
লাগে যদি লাগ্ গে।
বেলা আটটার কমে
বেলা আটটার কমে
খোলে না তো চোখ সে।
সামলাতে পারে না যে
নিদ্রার ঝোঁক সে।
জরিমানা হলে বলে,–
“এসেছি যে মা ফেলে,
আমার চলে না দিন
মাইনেটা না পেলে।
তোমার চলবে কাজ
যে ক’রেই হোক সে,
আমারে অচল করে
মাইনের শোক সে।’
ব্রিজটার প্ল্যান দিল
ব্রিজটার প্ল্যান দিল
বড়ো এন্জিনিয়ার
ডিস্ট্রিক্ট্ বোর্ডের
সবচেয়ে সীনিয়ার।
নতুন রকম প্ল্যান
দেখে সবে অজ্ঞান,
বলে, “এই চাই, এটা
চিনি নাই-চিনি আর।’
ব্রিজখানা গেল শেষে
কোন্ অঘটন দেশে,
তার সাথে গেছে ভেসে
ন হাজার গিনি আর।
ভুত হয়ে দেখা দিল
ভুত হয়ে দেখা দিল
বড়ো কোলাব্যাঙ,
এক পা টেবিলে রাখে,
কাঁধে এক ঠ্যাঙ।
বনমালী খুড়ো বলে, —
“করো মোরে রক্ষে,
শীতল দেহটি তব
বুলিয়ো না বক্ষে।’
উত্তর দেয় না সে,
দেয় শুধু “ক্যাঙ’।
ভূমিকা (খাপছাড়া)
ডুগডুগিটা বাজিয়ে দিয়ে
ধুলোয় আসর সাজিয়ে দিয়ে
পথের ধারে বসল জাদুকর।
এল উপেন, এল রূপেন,
দেখতে এল নৃপেন, ভূপেন,
গোঁদলপাড়ার এল মাধু কর।
দাড়িওয়ালা বুড়ো লোকটা,
কিসের-নেশায়-পাওয়া চোখটা,
চারদিকে তার জুটল অনেক ছেলে।
যা-তা মন্ত্র আউড়ে, শেষে
একটুখানি মুচকে হেসে
ঘাসের ‘পরে চাদর দিল মেলে।
উঠিয়ে নিল কাপড়টা যেই
দেখা দিল ধুলোর মাঝেই
দুটো বেগুন, একটা চড়ুইছানা,
জামের আঁঠি, ছেঁড়া ঘুড়ি,
একটিমাত্র গালার চুড়ি,
ধুঁইয়ে-ওঠা ধুনুচি একখানা,
টুকরো বাসন চিনেমাটির,
মুড়ো ঝাঁটা খড়কেকাঠির,
নলছে-ভাঙা হুঁকো, পোড়া কাঠটা–
ঠিকানা নেই আগুপিছুর,
কিছুর সঙ্গে যোগ না কিছুর,
ক্ষণকালের ভোজবাজির এই ঠাট্টা।
শান্তিনিকেতন, ১৬ পৌষ, ১৩৪৩
ভোতনমোহন স্বপ্ন দেখেন
ভোতনমোহন স্বপ্ন দেখেন, চড়েছেন চৌঘুড়ি।
মোচার খোলার গাড়িতে তাঁর ব্যাঙ দিয়েছেন জুড়ি।
পথ দেখালো মাছরাঙাটায়, দেখল এসে চিংড়িঘাটায়–
ঝুম্কো ফুলের বোঝাই নিয়ে মোচার খোলা ভাসে।
খোকনবাবু বিষম খুশি খিল্খিলিয়ে হাসে।
উত্তরায়ণ, ৫। ৯। ৩৮
ভোলানাথ লিখেছিল
ভোলানাথ লিখেছিল,
তিন-চারে নব্বই–
গণিতের মার্কায়
কাটা গেল সর্বই।
তিন চারে বারো হয়,
মাস্টার তারে কয়;
“লিখেছিনু ঢের বেশি”
এই তার গর্বই।
ভয় নেই আমি আজ রান্নাটা দেখছি
ভয় নেই, আমি আজ
রান্নাটা দেখছি।
চালে জলে মেপে, নিধু,
চড়িয়ে দে ডেকচি।
আমি গণি কলাপাতা,
তুমি এসো নিয়ে হাতা,
যদি দেখ, মেজবউ,
কোনোখানে ঠেকছি।
রুটি মেখে বেলে দিয়ো,
উনুনটা জ্বেলে দিয়ো,
মহেশকে সাথে নিয়ে
আমি নয় সেঁকছি।
মন উড়ুউড়ু চোখ ঢুলুঢুলু
মন উড়ুউড়ু, চোখ ঢুলুঢুলু,
ম্লান মুখখানি কাঁদুনিক–
আলুথালু ভাষা, ভাব এলোমেলো,
ছন্দটা নির্বাঁধুনিক।
পাঠকেরা বলে, “এ তো নয় সোজা,
বুঝি কি বুঝিনে যায় না সে বোঝা।’
কবি বলে, “তার কারণ, আমার
কবিতার ছাঁদ আধুনিক।’
মহারাজা ভয়ে থাকে
মহারাজা ভয়ে থাকে
পুলিশের থানাতে,
আইন বানায় যত
পারে না তা মানাতে।
চর ফিরে তাকে তাকে–
সাধু যদি ছাড়া থাকে
খোঁজ পেলে নৃপতিরে
হয় তাহা জানাতে,
রক্ষা করিতে তারে
রাখে জেলখানাতে।
মাঝে মাঝে বিধাতার ঘটে একি ভুল
মাঝে মাঝে বিধাতার ঘটে একি ভুল–
ধান পাকাবার মাসে ফোটে বেলফুল।
হঠাৎ আনাড়ি কবি তুলি হাতে আঁকে ছবি,
অকারণে কাঁচা কাজে পেকে যায় চুল।
মানিক কহিল পিঠ পেতে দিই দাঁড়াও
মানিক কহিল, “পিঠ পেতে দিই দাঁড়াও।
আম দুটো ঝোলে, ওর দিকে হাত বাড়াও।
উপরের ডালে সবুজে ও লালে
ভরে আছে, কষে নাড়াও।
নিচে নেমে এসে ছুরি দিয়ে শেষে
ব’সে ব’সে খোসা ছাড়াও।
যদি আসে মালি চোখে দিয়ে বালি
পারো যদি তারে তাড়াও।
বাকি কাজটার মোর ‘পরে ভার,
পাবে না শাঁসের সাড়াও।
আঁঠি যদি থাকে দিয়ো মালিটাকে,
মাড়াব না তার পাড়াও।
পিসিমা রাগিলে তাঁর চড়ে কিলে
বাঁদরামি-ভূত তাড়াও।’
মাস্টার বলে
মাস্টার বলে, “তুমি দেবে ম্যাট্রিক,
এক লাফে দিতে চাও হবে না সে ঠিক।
ঘরে দাদামশায়ের দেখো example,
সত্তর বৎসরও হয়নিকো ample।
একদা পরীক্ষায় হবে উত্তীর্ণ
যখন পাকবে চুল, হাড় হবে জীর্ণ।’