ডাকাতের সাড়া পেয়ে
ডাকাতের সাড়া পেয়ে
তাড়াতাড়ি ইজেরে
চোক ঢেকে মুখ ঢেকে
ঢাকা দিল নিজেরে।
পেটে ছুরি লাগালো কি,
প্রাণ তার ভাগালো কি,
দেখতে পেল না কালু
হল তার কী যে রে!
তম্বুরা কাঁধে নিয়ে
তম্বুরা কাঁধে নিয়ে
শর্মা বাণেশ্বর
ভেবেছিল, তীর্থেই
যাবে সে থানেশ্বর।
হঠাৎ খেয়াল চাপে গাইয়ের কাজ নিতে–
বরাবর গেল চলে একদম গাজনিতে,
পাঠানের ভাব দেখে
ভাঙিল গানের স্বর।
নকড়ি তোল্পাড়িয়ে উঠল পাড়া
তিনকড়ি। তোল্পাড়িয়ে উঠল পাড়া,
তবু কর্তা দেন না সাড়া! জাগুন শিগ্গির জাগুন্।
কর্তা। এলারামের ঘড়িটা যে
চুপ রয়েছে, কই সে বাজে–
তিনকড়ি। ঘড়ি পরে বাজবে, এখন ঘরে লাগল আগুন।
কর্তা। অসময়ে জাগলে পরে
ভীষণ আমার মাথা ধরে–
তিনকড়ি। জানলাটা ঐ উঠল জ্বলে, ঊর্ধ্বশ্বাসে ভাগুন।
কর্তা। বড্ড জ্বালায় তিনকড়িটা–
তিনকড়ি। জ্বলে যে ছাই হল ভিটা,
ফুটপাথে ঐ বাকি ঘুমটা শেষ করতে লাগুন।
থাকে সে কাহালগাঁয়
থাকে সে কাহালগাঁয়;
কলুটোলা আফিসে
রোজ আসে দশটায়
এক্কায় চাপি সে।
ঠিক যেই মোড়ে এসে
লাগাম গিয়েছে ফেঁসে,
দেরি হয়ে গেল ব’লে
ভয়ে মরে কাঁপি সে–
ঘোড়াটার লেজ ধ’রে
করে দাপাদাপি সে।
দাঁয়েদের গিন্নিটি
দাঁয়েদের গিন্নিটি
কিপ্টে সে অতিশয়,
পান থেকে চুন গেলে
কিছুতে না ক্ষতি সয়।
কাঁচকলা-খোষা দিয়ে
পচা মহুয়ার ঘিয়ে
ছেঁচকি বানিয়ে আনে–
সে কেবল পতি সয়;
একটু করলে “উহুঁ’
যদি এক রতি সয়!
দাড়ীশ্বরকে মানত ক’রে
দাড়ীশ্বরকে মানত ক’রে
গোঁপ-গাঁ গেল হাবল–
স্বপ্নে শেয়ালকাঁটা-পাখি
গালে মারল খাবল।
দেখতে দেখতে ছাড়ায় দাড়ি
ভদ্র সীমার মাত্রা–
নাপিত খুঁজতে করল হাবল
রাওলপিণ্ডি যাত্রা।
উর্দু ভাষায় হাজাম এসে
বক্ল আবল-তাবল।
তিরিশটা খুর একে একে
ভাঙল যখন পটাৎ
কামারটুলি থেকে নাপিত
আনল তখন হঠাৎ
যা হাতে পায় খাঁড়া বঁটি
কোদাল করাত সাবল।
দিন চলে না যে
দিন চলে না যে, নিলেমে চড়েছে
খাট-টিপাই;
ব্যাবসা ধরেছি গল্পেরে করা
নাট্যি-fy।
ক্রিটিক মহল করেছি ঠাণ্ডা,
মুর্গি এবং মুর্গি-আণ্ডা
খেয়ে করে শেষ, আমি হাড় দুটি-
চারটি পাই–
ভোজন-ওজনে লেখা ক’রে দেয়
certify।
দু-কানে ফুটিয়ে দিয়ে
কাঁকড়ার দাঁড়া
বর বলে, “কান দুটো
ধীরে ধীরে নাড়া।’
বউ দেখে আয়নায়,
জাপানে কি চায়নায়
হাজার হাজার আছে
মেছনীর পাড়া–
কোথাও ঘটেনি কানে
এত বড়ো ফাঁড়া।
দোতলায় ধুপ্ধাপ্
দোতলায় ধুপ্ধাপ্ হেমবাবু দেয় লাফ,
মা বলেন, একি খেলা ভূতের নাচন নেচে?
নাকি সুরে বেলা হেমা, “চলতে যে পারিনে, মা,
সকালে সর্দি লেগে যেমনি উঠেছি হেঁচে
অমনি যে খচ্ করে পা আমার মচ্কেছে।’
ধীরু কহে শূন্যেতে মজো রে
ধীরু কহে শূন্যেতে মজো রে,
নিরাধার সত্যেরে ভজো রে।
এত বলি যত চায় শূন্যেতে ওড়াটা
কিছুতে কিছু-না-পানে পৌঁছে না ঘোড়াটা,
চাবুক লাগায় তারে সজোরে।
ছুটে মরে সারারাত, ছুটে মরে সারাদিন–
হয়রান হয়ে তবু আমিহীন ঘোড়াহীন
আপনারে নাহি পড়ে নজরে।
ননীলাল বাবু যাবে লঙ্কা
ননীলাল বাবু যাবে লঙ্কা;
শ্যালা শুনে এল, তার
ডাক-নাম টঙ্কা।
বলে, “হেন উপদেশ তোমারে দিয়েছে সে কে,
আজও আছে রাক্ষস, হঠাৎ চেহারা দেখে
রামের সেবক ব’লে করে যদি শঙ্কা।
আকৃতি প্রকৃতি তব হতে পারে জম্কালো,
দিদি যা বলুন, মুখ নয় কভু কম কালো —
খামকা তাদের ভয় লাগিবে আচমকা।
হয়তো বাজাবে রণডঙ্কা।’
নাম তার চিনুলাল
নাম তার চিনুলাল
হরিরাম মোতিভয়,
কিছুতে ঠকায় কেউ
এই তার অতি ভয়।
সাতানব্বই থেকে
তেরোদিন ব’কে ব’কে
বারোতে নামিয়ে এনে
তবু ভাবে, গেল ঠকে।
মনে মনে আঁক কষে,
পদে পদে ক্ষতি-ভয়।
কষ্টে কেরানি তার
টিঁকে আছে কতিপয়।
নাম তার ডাক্তার ময়জন
নাম তার ডাক্তার ময়জন।
বাতাসে মেশায় কড়া পয়জন।
গণিয়া দেখিল, বড়ো বহরের
একখানা রীতিমতো শহরের
টিঁকে আছে নাবালক নয়জন।
খুশি হয়ে ভাবে, এই গবেষণা
না জানি সবার কবে হবে শোনা,
শুনিতে বা বাকি রবে কয়জন।
নাম তার ভেলুরাম ধুনিচাঁদ শিরত্থ
নাম তার ভেলুরাম ধুনিচাঁদ শিরত্থ,
ফাটা এক তম্বুরা কিনেছে সে নিরর্থ।
সুরবোধ-সাধনায়
ধুরপদে বাধা নাই,
পাড়ার লোকেরা তাই হারিয়েছে ধীরত্ব–
অতি-ভালোমানুষেরও বুকে জাগে বীরত্ব॥
নাম তার সন্তোষ
নাম তার সন্তোষ,
জঠরে অগ্নিদোষ,
হাওয়া খেতে গেল সে পচম্বা।
নাকছাবি দিয়ে নাকে
বাঘনাপাড়ায় থাকে
বউ তার বেঁটে জগদম্বা।
ডাক্তার গ্রেগ্সন
দিল ইনজেক্শন–
দেহ হল সাত ফুট লম্বা।
এত বাড়াবাড়ি দেখে
সন্তোষ কহে হেঁকে,
“অপমান সহিব কথম্ বা।
শুন ডাক্তার ভায়া,
উঁচু করো মোর পায়া,
স্ত্রীর কাছে কেন রব কম বা।
খড়ম জোড়ায় ঘষে
ওষুধ লাগাও কষে–
শুনে ডাক্তার হতভম্বা।
নামজাদা দানুবাবু রীতিমতো খর্চে
নামজাদা দানুবাবু
রীতিমতো খর্চে,
অথচ ভিটেয় তার
ঘুঘু সদা চরছে।
দানধর্মের ‘পরে
মন তার নিবিষ্ট,
রোজগার করিবার
বেলা জপে “শ্রীবিষ্ণু’,
চাঁদার খাতাটা তাই
দ্বারে দ্বারে ধরছে।
এই ভাবে পুণ্যের
খাতা তার ভরছে।
নিজের হাতে উপার্জনে
নিজের হাতে উপার্জনে
সাধনা নেই সহিষ্ণুতার।
পরের কাছে হাত পেতে খাই,
বাহাদুরি তারি গুঁতার।
কৃপণ দাতার অন্নপাকে
ডাল যদি বা কমতি থাকে
গাল-মিশানো গিলি তো ভাত–
নাহয় তাতে নেইকো সুতার।
নিজের জুতার পাত্তা না পাই,
স্বাদ পাওয়া যায় পরের জুতার।
নিদ্রা-ব্যাপার কেন
নিদ্রা-ব্যাপার কেন
হবেই অবাধ্য,
চোখ-চাওয়া ঘুম হোক
মানুষের সাধ্য–
এম.এস্সি বিভাগের ব্রিলিয়ান্ট্ ছাত্র
এই নিয়ে সন্ধান করে দিনরাত্র,
বাজায় পাড়ার কানে
নানাবিধ বাদ্য,
চোখ-চাওয়া ঘটে তাহে,
নিদ্রার শ্রাদ্ধ।
নিধু বলে আড়চোখে কুছ নেই পরোয়া
নিধু বলে আড়চোখে, “কুছ নেই পরোয়া।’–
স্ত্রী দিলে গলায় দড়ি বলে, “এটা ঘরোয়া।’
দারোগাকে হেসে কয়,
“খবরটা দিতে হয়’–
পুলিস যখন করে ঘরে এসে চড়োয়া।
বলে, “চরণের রেণু
নাহি চাহিতেই পেনু।’–
এই ব’লে নিধিরাম করে পায়ে-ধরোয়া।