গাড়িতে মদের পিপে
গাড়িতে মদের পিপে ছিল তেরো-চোদ্দো,
এঞ্জিনে জল দিতে দিল ভুলে মদ্য।
চাকাগুলো ধেয়ে করে ধানখেত-ধ্বংসন,
বাঁশি ডাকে কেঁদে কেঁদে “কোথা কানু জংশন’–
ট্রেন করে মাতলামি নেহাত অবোধ্য,
সাবধান করে দিতে কবি লেখে পদ্য।
গিন্নির কানে শোনা ঘটে অতি সহজেই
গিন্নির কানে শোনা ঘটে অতি সহজেই
“গিনি সোনা এনে দেব’ কানে কানে কহ যেই।
না হলে তোমারি কানে দুর্গ্রহ টেনে আনে,
অনেক কঠিন শোনা– চুপ করে রহ যেই।’
গুপ্তিপাড়ায় জন্ম তাহার
গুপ্তিপাড়ায় জন্ম তাহার;
নিন্দাবাদের দংশনে
অভিমানে মরতে গেল
মোগলসরাই জংসনে।
কাছা কোঁচা ঘুচিয়ে গুপি
ধরল ইজের, পরল টুপি,
দু হাত দিয়ে লেগে গেল
কোফ্তা-কাবাব-ধ্বংসনে।
গুরুপুত্র সঙ্গে ছিল–
বললে তারে, “অংশ নে।’
ঘাসি কামারের বাড়ি
ঘাসি কামারের বাড়ি সাঁড়া,
গড়েছে মন্ত্রপড়া খাঁড়া।
খাপ থেকে বেরিয়ে সে
উঠেছে অট্টহেসে;
কামার পালায় যত
বলে, “দাঁড়া দাঁড়া।’
দিনরাত দেয় তার
নাড়ীটাতে নাড়া।
ঘাসে আছে ভিটামিন
ঘাসে আছে ভিটামিন, গোরু ভেড়া অশ্ব
ঘাস খেয়ে বেঁচে আছে, আঁখি মেলে পশ্য।
অনুকূল বাবু বলে, “ঘাস খাওয়া ধরা চাই,
কিছুদিন জঠরেতে অভ্যেস করা চাই–
বৃথাই খরচ ক’রে চাষ করা শস্য।
গৃহিণী দোহাই পাড়ে মাঠে যবে চরে সে,
ঠেলা মেরে চলে যায় পায়ে যবে ধরে সে–
মানবহিতের ঝোঁকে কথা শোনে কস্য;
দুদিনে না যেতে যেতে মারা গেল লোকটা,
বিজ্ঞানে বিঁধে আছে এই মহা শোকটা,
বাঁচলে প্রমাণ-শেষ হ’ত যে অবশ্য।
ঘোষালের বক্তৃতা
ঘোষালের বক্তৃতা
করা কর্তব্যই,
বেঞ্চি চৌকি আদি
আছে সব দ্রব্যই।
মাতৃভূমির লাগি
পাড়া ঘুরে মরেছে,
একশো টিকিট বিলি
নিজ হাতে করেছে।
চোখ বুজে ভাবে, বুঝি
এল সব সভ্যই।
চোখ চেয়ে দেখে, বাকি
শুধু নিরেনব্বই।
চিন্তাহরণ দালালের বাড়ি
চিন্তাহরণ দালালের বাড়ি
গিয়ে
একশো টাকার একখানি নোট
দিয়ে
তিনখানা নোট আনে সে
দশ টাকার।
কাগজ্-গন্তি মুনফা যতই
বাড়ে
টাকার গন্তি লক্ষ্মী ততই
ছাড়ে,
কিছুতে বুঝিতে পারে না
দোষটা কার।
জন্মকালেই ওর লিখে দিল কুষ্ঠি
জন্মকালেই ওর লিখে দিল কুষ্ঠি,
ভালো মানুষের ‘পরে চালাবে ও মুষ্টি।
যতই প্রমাণ পায় বাবা বলে, “মোদ্দা,
কভু জন্মেনি ঘরে এত বড়ো যোদ্ধা।’
“বেঁচে থাকলেই বাঁচি’ বলে ঘোষগুষ্টি,–
এত গাল খায় তবু এত পরিপুষ্টি।
জমল সতেরো টাকা
জমল সতেরো টাকা;
সুদে টাকা খেলাবার
শখ গেল, নবু তাই
গেল চলি ম্যালাবার।
ভাবনা বাড়ায় তার
মুনফার মাত্রা,
পাঁচ মেয়ে বিয়ে ক’রে
বাঁচল এ যাত্রা।
কাজ দিল কন্যারা
ঠেলাগাড়ি ঠেলাবার,
রোদ্দুরে ভার্যার
ভিজে চুল এলাবার।
» জর্মন প্রোফেসার
জর্মন প্রোফেসার দিয়েছেন গোঁফে সার কত যে!
উঠেছে ঝাঁকড়া হয়ে খোঁচা-খোঁচা ছাঁটা ছাঁটা–
দেখে তাঁর ছাত্রের ভয়ে গায়ে দেয় কাঁটা,
মাটির পানেতে চোখ নত যে।
বৈদিক ব্যাখ্যায় বাণী তাঁর মুখে এসে
যে নিমেষে পা বাড়ান ওষ্ঠের দ্বারদেশে
চরণকমল হয় ক্ষত যে।
জান তুমি রাত্তিরে
জান তুমি, রাত্তিরে
নাই মোর সাথি আর–
ছোটোবউ, জেগে থেকো,
হাতে রেখো হাতিয়ার।
যদি করে ডাকাতি,
পারিনে যে তাকাতেই,
আছে এক ভাঙা বেত
আছে ছেঁড়া ছাতি আর।
ভাঙতে চায় না ঘুম,
তা না হলে দুমাদুম্
লাগাতেম কিল ঘুষি
চালাতেম লাথি আর।
জামাই মহিম এল
জামাই মহিম এল, সাথে এল কিনি–
হায় রে কেবলই ভুলি ষষ্ঠীর দিনই।
দেহটা কাহিল বড়ো, রাঁধবার নামে,
কে জানে কেন রে, বাপু, ভেসে যায় ঘামে।
বিধাতা জানেন আমি বড়ো অভাগিণী।
বেয়ানকে লিখে দেব, খাওয়াবেন তিনি।
জিরাফের বাবা বলে
জিরাফের বাবা বলে,–
“খোকা তোর দেহ
দেখে দেখে মনে মোর
ক’মে যায় স্নেহ।
সামনে বিষম উঁচু,
পিছনেতে খাটো,
এমন দেহটা নিয়ে
কী করে যে হাঁটো।’
খোকা বলে, “আপনার
পানে তুমি চেহো,
মা যে কেন ভালোবাসে
বোঝে না তা কেহ।’
ঝিনেদার জ্ঞাদনার
ঝিনেদার জ্ঞাদনার
ছেলেটার জন্যে
ত্রিচিনাপল্লী গিয়ে
খুঁজে পেল কন্যে।
শহরেতে সব-সেরা
ছিল যেই বিবেচক
দেখে দেখে বললে সে,–
“কিবে নাক, কিবে চোখ;
চুলের ডগার খুঁত
বুঝবে না অন্যে।’
কন্যেকর্তা শুনে
ঘটকের কানে কয়,–
“ওটুকু ত্রুটির তরে
করিস্নে কোনো ভয়;
ক’খানা মেয়েকে বেছে
আরো তিনজন নে,
তাতেও না ভরে যদি
ভরি কয় পণ নে।’
টাকা সিকি আধুলিতে
টাকা সিকি আধুলিতে
ছিল তার হাত জোড়া;
যে-সাহসে কিনেছিল
পান্তোয়া সাত ঝোড়া।
ফুঁকে দিয়ে কড়াকড়ি
শেষে হেসে গড়াগড়ি;
ফেলে দিতে হল সব–
আলুভাতে পাত-জোড়া।
টেরিটি বাজারে তার
টেরিটি বাজারে তার
সন্ধান পেনু–
গোরা বোষ্টমবাবা,
নাম নিল বেণু।
শুদ্ধ নিয়ম-মতে
মুরগিরে পালিয়া,
গঙ্গাজলের যোগে
রাঁধে তার কালিয়া–
মুখে জল আসে তার
চরে যবে ধেনু।
বড়ি ক’রে কৌটায়
বেচে পদরেণু।
ট্রাম্-কন্ডাক্টার
ট্রাম্-কন্ডাক্টার,
হুইসেলে ফুঁক দিয়ে শহরের বুক দিয়ে
বারো-আনা বাকি তার মাথাটার তেলো যে,
চিরুনির চালাচালি শেষ হয়ে এল যে।
বিধাতার নিজ হাতে ঝাঁট-দেওয়া ফাঁকটার
কিছু চুল দুপাশেতে ফুটপাত আছে পেতে,
মাঝে বড়ো রাস্তাটা বুক জুড়ে টাকটার।