একটা খোঁড়া ঘোড়ার ‘পরে
একটা খোঁড়া ঘোড়ার ‘পরে
চড়েছিল চাটুর্জে,পড়ে গিয়ে কী দশা তার
হয়েছিল হাঁটুর যে!
বলে কেঁদে, “ব্রাহ্মণেরে
বইতে ঘোড়া পারল না যে
সইত তাও, মরি আমি
তার থেকে এই অধিক লাজে–
লোকের মুখের ঠাট্টা যত
বইতে হবে টাটুর যে!’
কনে দেখা হয়ে গেছে
কনে দেখা হয়ে গেছে, নাম তার চন্দনা;
তোমারে মানাবে ভায়া, অতিশয় মন্দ না।
লোকে বলে, খিট্খিটে, মেজাজটা নয় মিঠে–
দেবী ভেবে নেই তারে করিলে বা বন্দনা।
কুঁজো হোক, কালো হোক, কালাও না, অন্ধ না।
কনের পণের আশে
কনের পণের আশে
চাকরি সে ত্যেজেছে।
বারবার আয়নাতে
মুখখানি মেজেছে।
হেনকালে বিনা কোনো কসুরে
যম এসে ঘা দিয়েছে শ্বশুরে,
কনেও বাঁকালো মুখ–
বুকে তাই বেজেছে।
বরবেশ ছেড়ে হীরু
দরবেশ সেজেছে।
কন্কনে শীত তাই
কন্কনে শীত তাই
চাই তার দস্তানা;
বাজার ঘুরিয়ে দেখে,
জিনিসটা সস্তা না।
কম দামে কিনে মোজা
বাড়ি ফিরে গেল সোজা–
কিছুতে ঢোকে না হাতে,
তাই শেষে পস্তানা।
চড়াপাড়াতে এক ছিল রাজপুত্তুর
কাঁচড়াপাড়াতে এক
ছিল রাজপুত্তুর,
রাজকন্যারে লিখে
পায় না সে উত্তর।
টিকিটের দাম দিয়ে
রাজ্য বিকাবে কি এ,
রেগেমেগে শেষকালে
বলে ওঠে–দুত্তোর!
ডাকবাবুটিকে দিল
মুখে ডালকুত্তোর।
কাঁধে মই বলে কই ভূঁইচাপা গাছ
কাঁধে মই, বলে “কই ভূঁইচাপা গাছ’,
দইভাঁড়ে ছিপ ছাড়ে, খোঁজে কইমাছ,
ঘুঁটেছাই মেখে লাউ রাঁধে ঝাউপাতা–
কী খেতাব দেব তায় ঘুরে যায় মাথা।
কালুর খাবার শখ সব চেয়ে পিষ্টকে
কালুর খাবার শখ সব চেয়ে পিষ্টকে।
গৃহিণী গড়েছে যেন চিনি মেখে ইষ্টকে।
পুড়ে সে হয়েছে কালো,
মুখে কালু বলে “ভালো’,
মনে মনে খোঁটা দেয় দগ্ধ অদৃষ্টকে।
কলিক্-ব্যথায় ডাকে ক্রুসে-বেঁধা খ্রীস্টকে।
কুঁজো তিনকড়ি ঘোরে
কুঁজো তিনকড়ি ঘোরে
পাড়া চারিদিককার,
সন্ধ্যায় ঘরে ফেরে
নিয়ে ঝুলি ভিক্ষার।
বলে সিধু গড়গড়ি
রাগে দাঁত কড়মড়ি,
“ভিখ্ মেগে ফের’, মনে
হয় না কি ধিক্কার?’
ঝুলি নিজে কেড়ে বলে,
“মাহিনা এ শিক্ষার।’
কেন মার’ সিঁধ-কাটা ধূর্তে
কেন মার’ সিঁধ-কাটা ধূর্তে।
কাজ ওর দেয়ালটা খুঁড়তে।
তোমার পকেটটাকে করেছ কি ডোবা হে–
চিরদিন বহমান অর্থের প্রবাহে
বাধা দেবে অপরের পকেটটি পূরতে?
আর, যত নীতিকথা সে তো ওর চেনা না–
ওর কাছে অর্থনীতিটা নয় জেনানা;
বন্ধ ধনেরে তাই দেয় সদা ঘুরতে,
হেথা হতে হোথা তারে চালায় মুহূর্তে।
ক্ষান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ির
ক্ষান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ির
পাঁচ বোন থাকে কাল্নায়,
শাড়িগুলো তারা উনুনে বিছায়,
হাঁড়িগুলো রাখে আল্নায়।
কোনো দোষ পাছে ধরে নিন্দুকে
নিজে থাকে তারা লোহাসিন্দুকে,
টাকাকড়িগুলো হাওয়া খাবে ব’লে
রেখে দেয় খোলা জাল্নায়–
নুন দিয়ে তারা ছাঁচিপান সাজে,
চুন দেয় তারা ডাল্নায়।
খবর পেলেম কল্য
খবর পেলেম কল্য,
তাঞ্জামেতে চ’ড়ে রাজা
গাঞ্জামেতে চলল।
সময়টা তার জলদি কাটে;
পৌঁছল যেই হলদিঘাটে
একটা ঘোড়া রইল বাকি,
তিনটে ঘোড়া মরল।
গরানহাটায় পৌঁছে সেটা
মুটের ঘাড়ে চড়ল।
খুদিরাম ক’সে টান
খুদিরাম ক’সে টান
দিল থেলো হুঁকোতে–
গেল সারবান কিছু
অন্তরে ঢুকোতে।
অবশেষে হাঁড়ি শেষ করি রসগোল্লার
রোদে বসে খুদুবাবু গান ধরে মোল্লার;
বলে, “এতখানি রস
দেহ থেকে চুকোতে
হবে তাকে ধোঁয়া দিয়ে
সাত দিন শুকোতে।’
খুব তার বোলচাল
খুব তার বোলচাল, সাজ ফিট্ফাট্,
তক্রার হলে আর নাই মিট্মাট্।
চশমায় চম্কায়, আড়ে চায় চোখ–
কোনো ঠাঁই ঠেকে নাই কোনো বড়ো লোক।–
খ্যাতি আছে সুন্দরী বলে তার
খ্যাতি আছে সুন্দরী বলে তার,
ত্রুটি ঘটে নুন দিতে ঝোলে তার;
চিনি কম পড়ে বটে পায়সে
স্বামী তবু চোখ বুজে খায় সে–
যা পায় তাহাই মুখে তোলে তার,
দোষ দিতে মুখ নাহি খোলে তার।
খড়দয়ে যেতে যদি সোজা এস খুল্না
খড়দয়ে যেতে যদি সোজা এস খুল্না
যত কেন রাগ কর, কে বলে তা ভুল না।
মালা গাঁথা পণ ক’রে আন যদি আমড়া,
রাগ করে বেত মেরে ফাটাও-না চামড়া,
তবুও বলতে হবে– ও জিনিস ফুল না।
বেঞ্চিতে বসে তুমি বল যদি “দোল দাও’,
চটে-মটে শেষে যদি কড়া কড়া বোল দাও,
পষ্ট বুঝিয়ে দেব– ওটা নয় ঝুল্না।
যদি বা মাথার গোলে ঘরে এসে বসবার
হাঁটুতে বুরুষ করো একমনে দশবার,
কী করি, বলতে হবে– ওখানে তো চুল না।
গণিতে রেলেটিভিটি প্রমাণের ভাবনায়
গণিতে রেলেটিভিটি প্রমাণের ভাবনায়
দিনরাত একা ব’সে কাটালো সে পাবনায়–
নাম তার চুনিলাল, ডাক নাম ঝোড়্কে।
১ গুলো সবই ১ সাদা আর কালো কি,
গণিতের গণনায় এ মতটা ভালো কি।
অবশেষে সাম্যের সামলাবে তোড় কে।
একের বহর কভু বেশি কভু কম হবে,
এক রীতি হিসাবের তবুও কি সম্ভবে।
৭ যদি বাঁশ হয়, ৩ হয় খড়কে,
তবু শুধু ১০ দিয়ে জুড়বে সে জোড় কে।
যোগ যদি করা যায় হিড়িম্বা কুন্তীতে,
সে কি ২ হতে পারে গণিতের গুন্তিতে।
যতই না কষে নাও মোচা আর থোড়কে
তার গুণফল নিয়ে আঁক যাবে ভড়কে।
গব্বুরাজার পাতে ছাগলের কোর্মাতে
গব্বুরাজার পাতে
ছাগলের কোর্মাতে
যবে দেখা গেল তেলা-
পোকাটা
রাজা গেল মহা চ’টে,
চীৎকার করে ওঠে,–
“খানসামা কোথাকার
বোকাটা।’
মন্ত্রী জুড়িয়া পাণি
কহে, “সবই এক প্রাণী।’
রাজার ঘুচিয়া গেল
ধোঁকাটা।
জীবের শিবের প্রেমে
একদম গেল থেমে
মেঝে তার তলোয়ার
ঠোকাটা।