পত্র (সম্পাদক সমীপেষু)
শ্রীমান্ দামু বসু এবং চামু বসু
সম্পাদক সমীপেষু ।
দামু বোস আর চামু বোসে
কাগজ বেনিয়েছে
বিদ্যেখানা বড্ড ফেনিয়েছে!
(আমার দামু আমার চামু!)
কোথায় গেল বাবা তোমার
মা জননী কই!
সাত-রাজার-ধন মানিক ছেলের
মুখে ফুটছে খই!
(আমার দামু আমার চামু!)
দামু ছিল একরত্তি
চামু তথৈবচ ,
কোথা থেকে এল শিখে
এতই খচমচ!
(আমার দামু আমার চামু!)
দামু বলেন ‘ দাদা আমার ‘
চামু বলেন ‘ ভাই ‘,
আমাদের দোঁহাকার মতো
ত্রিভুবনে নাই!
(আমার দামু আমার চামু!)
গায়ে পড়ে গাল পাড়ছে
বাজার সরগরম ,
মেছুনি-সংহিতায় ব্যাখ্যা
হিঁদুর ধরম!
(দামু আমার চামু!)
দামুচন্দ্র অতি হিঁদু
আরো হিঁদু চামু
সঙ্গে সঙ্গে গজায় হিঁদু
রামু বামু শামু
(দামু আমার চামু!)
রব উঠেছে ভারতভূমে
হিঁদু মেলা ভার ,
দামু চামু দেখা দিয়েছেন
ভয় নেইকো আর ।
(ওরে দামু , ওরে চামু!)
নাই বটে গোতম অত্রি
যে যার গেছে সরে ,
হিঁদু দামু চামু এলেন
কাগজ হাতে করে ।
(আহা দামু আহা চামু!)
লিখছে দোঁহে হিঁদুশাস্ত্র
এডিটোরিয়াল ,
দামু বলছে মিথ্যে কথা
চামু দিচ্ছে গাল ।
(হায় দামু হায় চামু!)
এমন হিঁদু মিলবে না রে
সকল হিঁদুর সেরা ,
বোস বংশ আর্যবংশ
সেই বংশের এঁরা!
(বোস দামু বোস চামু!)
কলির শেষে প্রজাপতি
তুলেছিলেন হাই ,
সুড়সুড়িয়ে বেড়িয়ে এলেন
আর্য দুটি ভাই ;
(আর্য দামু চামু!)
দন্ত দিয়ে খুঁড়ে তুলছে
হিঁদু শাস্ত্রের মূল ,
মেলাই কচুর আমদানিতে
বাজার হুলুস্থুল ।
(দামু চামু অবতার!)
মনু বলেন ‘ মনু আমি ‘
বেদের হল ভেদ ,
দামু চামু শাস্ত্র ছাড়ে ,
রইল মনে খেদ!
(ওরে দামু ওরে চামু!)
মেড়ার মত লড়াই করে
লেজের দিকটা মোটা ,
দাপে কাঁপে থরথর
হিঁদুয়ানির খোঁটা!
(আমার হিঁদু দামু চামু!)
দামু চামু কেঁদে আকুল
কোথায় হিঁদুয়ানি!
ট্যাকে আছে গোঁজ ‘ যেথায়
সিকি দুয়ানি ।
(থলের মধ্যে হিঁদুয়ানি!)
দামু চামু ফুলে উঠল
হিঁদুয়ানি বেচে ,
হামাগুড়ি ছেড়ে এখন
বেড়ায় নেচে নেচে!
(ষেটের বাছা দামু চামু!)
আদর পেয়ে নাদুস নুদুস
আহার করছে কসে ,
তরিবৎটা শিখলে নাকো
বাপের শিক্ষাদোষে!
(ওরে দামু চামু!)
এসো বাপু কানটি নিয়ে ,
শিখবে সদাচার ,
কানের যদি অভাব থাকে
তবেই নাচার!
(হায় দামু হায় চামু!)
পড়াশুনো করো , ছাড়ো
শাস্ত্র আষাঢ়ে ,
মেজে ঘষে তোল্ রে বাপু
স্বভাব চাষাড়ে ।
(ও দামু ও চামু!)
ভদ্রলোকের মান রেখে চল্
ভদ্র বলবে তোকে ,
মুখ ছুটোলে কুলশীলটা
জেনে ফেলবে লোকে!
(হায় দামু হায় চামু!)
পয়সা চাও তো পয়সা দেব
থাকো সাধুপথে ,
তাবচ্চ শোভতে কেউ কেউ
যাবৎ ন ভাষতে!
(হে দামু হে চামু!)
পবিত্র জীবন
মিছে হাসি , মিছে বাঁশি , মিছে এ যৌবন ,
মিছে এই দরশের পরশের খেলা ।
চেয়ে দেখো , পবিত্র এ মানবজীবন ,
কে ইহারে অকাতরে করে অবহেলা !
ভেসে ভেসে এই মহা চরাচরস্রোতে
কে জানে গো আসিয়াছে কোন্খান হতে ,
কোথা হতে নিয়ে এল প্রেমের আভাস ,
কোন্ অন্ধকার ভেদি উঠিল আলোতে !
এ নহে খেলার ধন , যৌবনের আশ —
বোলো না ইহার কানে আবেশের বাণী !
নহে নহে এ তোমার বাসনার দাস ,
তোমার ক্ষুধার মাঝে আনিয়ো না টানি !
এ তোমার ঈশ্বরের মঙ্গল – আশ্বাস ,
স্বর্গের আলোক তব এই মুখখানি ।
পবিত্র প্রেম
ছুঁয়ো না , ছুঁয়ো না ওরে , দাঁড়াও সরিয়া ।
ম্লান করিয়ো না আর মলিন পরশে ।
ওই দেখো তিলে তিলে যেতেছে মরিয়া ,
বাসনানিশ্বাস তব গরল বরষে ।
জান না কি হৃদিমাঝে ফুটেছে যে ফুল ,
ধুলায় ফেলিলে তারে ফুটিবে না আর ।
জান না কি সংসারের পাথার অকূল ,
জান না কি জীবনের পথ অন্ধকার ।
আপনি উঠেছে ওই তব ধ্রুবতারা ,
আপনি ফুটেছে ফুল বিধির কৃপায় ,
সাধ করে কে আজি রে হবে পথহারা —
সাধ করে এ কুসুম কে দলিবে পায় !
যে প্রদীপ আলো দেবে তাহে ফেল শ্বাস ,
যারে ভালোবাস তারে করিছ বিনাশ !
পাষাণী মা
হে ধরণী , জীবের জননী ,
শুনেছি যে মা তোমায় বলে ,
তবে কেন তোর কোলে সবে
কেঁদে আসে , কেঁদে যায় চলে ।
তবে কেন তোর কোলে এসে
সন্তানের মেটে না পিয়াসা ।
কেন চায় , কেন কাঁদে সবে ,
কেন কেঁদে পায় না ভালোবাসা ।
কেন হেথা পাষাণ – পরান ,
কেন সবে নীরস নিষ্ঠুর ,
কেঁদে কেঁদে দুয়ারে যে আসে
কেন তারে করে দেয় দূর ।
কাঁদিয়া যে ফিরে চলে যায়
তার তরে কাঁদিস নে কেহ ,
এই কি মা , জননীর প্রাণ ,
এই কি মা , জননীর স্নেহ !
পুরাতন
হেথা হতে যাও , পুরাতন ।
হেথায় নূতন খেলা আরম্ভ হয়েছে ।
আবার বাজিছে বাঁশি , আবার উঠিছে হাসি ,
বসন্তের বাতাস বয়েছে ।
সুনীল আকাশ -‘ পরে শুভ্র মেঘ থরে থরে
শ্রান্ত যেন রবির আলোকে ,
পাখিরা ঝাড়িছে পাখা , কাঁপিছে তরুর শাখা ,
খেলাইছে বালিকা বালকে ।
সমুখের সরোবরে আলো ঝিকিমিকি করে ,
ছায়া কাঁপিতেছে থরথর ,
জলের পানেতে চেয়ে ঘাটে বসে আছে মেয়ে ,
শুনিছে পাতার মরমর ।
কী জানি কত কী আশে চলিয়াছে চারি পাশে
কত লোক কত সুখে দুখে ,
সবাই তো ভুলে আছে , কেহ হাসে কেহ নাচে ,
তুমি কেন দাঁড়াও সমুখে ।
বাতাস যেতেছে বহি , তুমি কেন রহি রহি
তারি মাঝে ফেল দীর্ঘশ্বাস ।
সুদূরে বাজিছে বাঁশি , তুমি কেন ঢাল আসি
তারি মাঝে বিলাপ – উচ্ছ্বাস ।
উঠেছে প্রভাতরবি , আঁকিছে সোনার ছবি ,
তুমি কেন ফেল তাহে ছায়া ।
বারেক যে চলে যায় তারে তো কেহ না চায় ,
তবু তার কেন এত মায়া ।
তবু কেন সন্ধ্যাকালে জলদের অন্তরালে
লুকায়ে ধরার পানে চায় —
নিশীথের অন্ধকারে পুরানো ঘরের দ্বারে
কেন এসে পুন ফিরে যায় ।
কী দেখিতে আসিয়াছ যাহা কিছু ফেলে গেছ
কে তাদের করিবে যতন !
স্মরণের চিহ্ন যত ছিল পড়ে দিন – কত
ঝরে – পড়া পাতার মতন
আজি বসন্তের বায় একেকটি করে হায়
উড়ায়ে ফেলিছে প্রতিদিন —
ধূলিতে মাটিতে রহি হাসির কিরণে দহি
ক্ষণে ক্ষণে হতেছে মলিন ।
ঢাকো তবে ঢাকো মুখ , নিয়ে যাও দুঃখ সুখ ,
চেয়ো না চেয়ো না ফিরে ফিরে ।
হেথায় আলয় নাহি , অনন্তের পানে চাহি
আঁধারে মিলাও ধীরে ধীরে ।