রানী, তোর ঠোঁট দুটি মিঠি
রানী, তোর ঠোঁট দুটি মিঠি
রানী, তোর মধুখানা দিঠি
রানী, তুই মণি তুই ধন,
তোর কথা ভাবি সারাক্ষণ।
দীর্ঘ সন্ধ্যা কাটে কী করিয়া?
সাধ যায় তোর কাছে গিয়া
চুপিচাপি বসি এক ভিতে
ছোটোছোটো সেই ঘরটিতে।
ছোটো হাতখানি হাতে করে
অধরেতে রেখে দিই ধরে।
ভিজাই ফেলিয়া আঁখিজল
ছোট সে কোমল করতল।
Heinrich Hein
রূপসী আমার, প্রেয়সী আমার
রূপসী আমার, প্রেয়সী আমার
যাইবি কি তুই যাইবি কি তুই,
রূপসী আমার যাইবি কি তুই,
ভ্রমিবারে গিরি-কাননে?
পাদপের ছায়া মাথার ‘পরে,
পাখিরা গাইছে মধুর স্বরে
অথবা উড়িছে পাখা বিছায়ে
হরষে সে গিরি-কাননে!
রূপসী আমার প্রেয়সী আমার
যাইবি কি তুই যাইবি কি তুই,
রূপসী আমার, যাইবি কি তুই
ভ্রমিবারে গিরি-কাননে?
শিখর উঠেছে আকাশ-‘পরি,
ফেনময় স্রোত পড়িছে মরি,
সুরভি-কুঞ্জ ছায়া বিছায়ে
শোভিছে সে গিরি-কাননে!
রূপসী আমার, প্রেয়সী আমার
যাইবি কি তুই যাইবি কি তুই,
রূপসী আমার, যাইবি কি তুই
ভ্রমিবারে গিরি-কাননে?
ধবল শিখর কুসুমে ভরা
সরসে ঝরিছে নিঝর-ধারা
উছসে উঠিয়া সলিল-কণা
শীতলিছে গিরি-কাননে!
রূপসী আমার, প্রেয়সী আমার
যাইবি কি তুই যাইবি কি তুই,
রূপসী আমার, যাইবি কি তুই
ভ্রমিবারে গিরি-কাননে?
সুখ দুখ যাহা দিলেন, বিধি,
কিছুই মানিতে চায় না হৃদি,
তোমারে ও প্রেমে লইয়া পাশে
ভ্রমি যদি গিরি-কাননে!
Robert Burns
ললিত-নলিনী (হা নলিনী গেছে আহা কী সুখের দিন)
(কৃষকের প্রেমালাপ।)
ললিত
হা নলিনী গেছে আহা কী সুখের দিন,
দোঁহে যবে এক সাথে, বেড়াতেম হাতে হাতে
নবীন হৃদয় চুরি করিলি নলিন!
হা নলিনী কত সুখে গেছে সেই দিন।
নলিনী
কত ভালোবাসি সেই বনেরে ললিত,
প্রথমে বলিনু যেথা, মনের লুকানো কথা,
স্বর্গ-সাক্ষী করি যেথা হয়ে হরষিত
বলিলে, আমারি তুমি হইবে ললিত।
ললিত
বসন্ত-বিহগ যথা সুললিত ভাষী,
যত শুনি তত তার, ভালো লাগে গীতধার,
যত দিন যায় তত তোরে ভালোবাসি,
যত দিন যায় তব বাড়ে রূপরাশি।
নলিনী
কোমল গোলাপকলি থাকে যথা গাছে,
দিন দিন ফুটে যত, পরিমল বাড়ে তত,
এ হৃদয় ভালোবাসা আলো করি আছে
সঁপেছি সে ভালোবাসা তোমারি গো কাছে।
ললিত
মৃদুতর রবিকর সুনীল আকাশ
হেরিলে শস্যের আশে, হৃদয় হরষে ভাসে
তার চেয়ে এ হৃদয়ে বাড়ে গো উল্লাস
হেরিলে নলিনী তোর মৃদু মধু হাস।
নলিনী
মধু আগমন বার্তা করিতে কুজিত
কোকিল যখন ডাকে, হৃদয় নাচিতে থাকে
কিন্তু তার চেয়ে হৃদি হয় উথলিত,
মিলিলে তোমার সাথে প্রাণের ললিত।
ললিত
কুসুমের মধুময় অধর যখন
ভ্রমর প্রনয়ভরে, হরষে চুম্বন করে
সে কি এত সুখ পায় আমার মতন
যবে ও অধরখানি করি গো চুম্বন?
নলিনী
শিশিরাক্ত পত্রকোলে মল্লিকা হসিত,
বিজন সন্ধ্যার ছায়ে, ফুটে সে মলয়বায়ে,
সে অমন নহে মিষ্ট নহে সুবাসিত
তোমার চুম্বন আহা যেমন ললিত।
ললিত
ঘুরুক অদৃষ্টচক্র সুখ দুখ দিয়া
কভু দিক্ রসাতলে, কভু বা স্বরগে তুলে
রহিবে একটি চিন্তা হৃদয়ে জাগিয়া
সে চিন্তা তোমারি তরে জানি ওগো প্রিয়া।
নলিনী
ধন রত্ন কনকের নাহি ধার ধারি
পদতলে বিলাসীর, নত করিব না শির
প্রণয়ধনের আমি দরিদ্র ভিখারি,
সে প্রণয়, ললিত গো তোমারি তোমারি।
Robert Burns
সংগীত (কেমন সুন্দর আহা ঘুমায়ে রয়েছে)
কেমন সুন্দর আহা ঘুমায়ে রয়েছে
চাঁদের জোছনা এই সমুদ্রবেলায়!
এসো প্রিয়ে এইখানে বসি কিছুকাল;
গীতস্বর মৃদু মৃদু পশুক শ্রবণে!
সুকুমার নিস্তব্ধতা আর নিশীথিনী–
সাজে ভালো মর্ম-ছোঁয়া সুধা-সংগীতেরে।
বইস জেসিকা, দেখো, গগন-প্রাঙ্গণ
জলৎ কাঞ্চন-পাতে খচিত কেমন!
এমন একটি নাই তারকামণ্ডল
দিব্য গীত যে না গায় প্রতি পদক্ষেপে!
অমর আত্মাতে হয় এমনি সংগীত।
কিন্তু ধূলিময় এই মর্ত্য-আবরণ
যতদিন রাখে তারে আচ্ছন্ন করিয়া
ততদিন সে সংগীত পাই না শুনিতে।
William Shakespeare
সুখী প্রাণ (জান না তো নির্ঝরিণী, আসিয়াছ কোথা হতে)
জান না তো নির্ঝরিণী, আসিয়াছ কোথা হতে,
কোথায় যে করিছ প্রয়াণ,
মাতিয়া চলেছ তবু আপন আনন্দে পূর্ণ,
আনন্দ করিছ সবে দান।
বিজন-অরণ্য-ভূমি দেখিছে তোমার খেলা
জুড়াইছে তাহার নয়ান।
মেষ-শাবকের মতো তরুদের ছায়ে ছায়ে
রচিয়াছ খেলিবার স্থান।
গভীর ভাবনা কিছু আসে না তোমার কাছে,
দিনরাত্রি গাও শুধু গান।
বুঝি নরনারী মাঝে এমনি বিমল হিয়া
আছে কেহ তোমারি সমান।
চাহে না চাহে না তারা ধরণীর আড়ম্বর,
সন্তোষে কাটাতে চায় প্রাণ,
নিজের আনন্দ হতে আনন্দ বিতরে তারা
গায় তারা বিশ্বের কল্যাণ।
Robert Buchanan
আলোচনা’ পত্রিকা, ভাদ্র, ১২৯১
সুশীলা আমার, জানালার ‘পরে
সুশীলা আমার, জানালার ‘পরে
দাঁড়াও একটিবার!
একবার আমি দেখিয়া লইব
মধুর হাসি তোমার!
কত দুখ-জ্বালা সহি অকাতরে
ভ্রমি, গো, দূর প্রবাসে
যদি লভি মোর হৃদয়-রতন–
সুশীলারে মোর পাশে!
কালিকে যখন নাচ গান কত
হতেছিল সভা-‘পরে,
কিছুই শুনি নি, আছিনু মগন
তোমারি ভাবনা-ভরে
আছিল কত-না বালিকা, রমণী,
রূপসী প্রমোদ-হিয়া,
বিষাদে কহিনু, “তোমরা তো নহ
সুশীলা, আমার প্রিয়া!’
সুশীলে, কেমনে ভাঙ তার মন
হরষে মরিতে পারে যেই জন
তোমারি তোমারি তরে!
সুশীলে, কেমনে ভাঙ হিয়া তার
কিছু যে করি নি, এক দোষ যার
ভালোবাসে শুধু তোরে!
প্রণয়ে প্রণয় না যদি মিশাও
দয়া কোরো মোর প্রতি,
সুশীলার মন নহে তো কখনো
নিরদয় এক রতি!
Robert Burns