মেঘ দেখার দুঃখ, গোলাপ দেখার ব্যাকুলতা
কী করে বলি এই মেঘ দেখর দুঃখ, এই গোলাপ দেখার
ব্যাকুলতা-
কিন্তু আমিও যখন মেঘের দিকে তাকাই দেখি কালিদাসই
দেখছেন বিরহী যক্ষকে,
হঠাৎ মন ভরে যায় বহু যুগের ওপার থেকে আসা বর্ষণে:
এই গোলাপ দেখর কথা আমার হয়তো বলাই হবে না
কিন্তু যখান গোলাপের দিকে তাকাই দেখি ব্রেক
তাকিয়ে আছেন গেলোপের রুগ্নতার দিকে,
কিংবা রিলকে আয়ত্ত করে চলেছেন একটি শ্বেতগোলাপ,
কী করে বলি এই মেঘ দেখার দুঃখ, এই
গোলাপ দেখার ব্যাকুলতা!
মেঘ দেখতে দেখতে আমি যে কখন মেঘদূতের ভেতর ডুবে যাই,
বিরহকাতর যক্ষের জন্য ভারী হয়ে ওঠে এই বুক
কিংবা গোলাপের দিকে তাকাতেই চোখে ভেসৈ ওঠে
রিলকের মুখটি,
এই মেঘ দেখার দুঃখ, এই গোলাপ দেখার ব্যাকুলতা
কাউকে বলাই হবে না ;
আমি যখন এই প্রকৃতির দিকে তাকাই দেখি রবীন্দ্রনাথ
দেখছেন প্রকৃতির নীলাম্বরী
সেই ব্যকুল বসন্তে আমারও দুচোখ জলে ভরে যায় –
এই মেঘ, এই গোলাপ আমারও অলিখিত কবিতা।
যখন মানুষের সুদ্ধতার কথা ভাবি দেখি দাঁড়িয়ে আছেন
ব্যথিত বোদলেয়ার
শহরের রাত্রির দিকে তাকালে মনে হয় জীবনানন্দ দাশ দেখছেন
লিবিয়ার জঙ্গল,
যখন একজন বিপ্লবীর দিকে তাকাই দেখি দুচোখে
মায়াকোভস্কির স্বপ্ন
আর্ত স্বদেশের দিকে তাকিয়ে আমিও নেরুদার কথাই ভাবি,
কেউ জানে না একটি ফুলের মৃত্যু দেখে, একটি পাখির ক্রন্দন দেখে
আমারও হৃদয় পৃথিবীর আহত কবিদের মতোই হাহাকার
করে ওঠে।
একটি ফুল দেখে আমিও একজন প্রেমিকের মতোই পরাজিত
হতে ভালোবাসি
একটি ঝরাফুলের দুঃখ বুকে নিয়ে যে-কোনো ব্যথিত কবির
মতোই সারাদনি ঘুরে বেড়াই,
আসলে সে-কথাগুলোই বলা হয়নি, বলা হয়নি;
মানুষের সমাজে এই বৈষম্য দেখে আমিও একজন
বিপ্লবীর মতোই শ্রেনীসংগ্রামের জন্য তৈরি হই,
এই জরা বার্ধক্য দেখে কতোবার বুদ্ধের মতোই
ব্যথিত হয়ে উঠি;
কিন্তু কী করে বলবো এইসব মেঘ দেখার দুঃখ, এইসব
গোলাপ দেখার ব্যাকুলতা!
লেলিন, এইনাম উচ্চারিত হলে
লেনিন, এই নাম উচ্চারিত হলে
রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে প্রাণ;
দেখি ভলগা থেকে নেমে আসে মানবিক উৎসধারা
আমাদের বঙ্গোপসাগরে
আমাদের পদ্মা-মেঘনা ছেয়ে যায় প্রাণের বন্যায়;
লেনিন নামের অর্থ আমি তাই করি শোষণহীন একটি গোলাপ
লেনিন নামের অর্থ আমি তাই করি শোষণমুক্ত একঝাঁক পাখি,
লেনিন নামের অর্থ আমি তাই করি শোষণহীন একটি সমাজ।
ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো যোগ্য প্রতিশব্দ আমি দেখিনি কোথাও
যা হতে পারে লেনিন শব্দের ঠিক স্বচ্ছ অনুবাদ,
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা কখনো যে হতে পারে
সীমাহীন আকাশের মতো
কখনো যে মানুষের এই হাত এতোটা উপরে উঠতে পারে
তোমার আগে কখনো তা কেউ দেখায়নি, কমরেড লেনিন।
তুমিই প্রথম পৃথিবীর মাটিতে উড়িয়ে দিলে সাম্যের পতাকা
এই মাটিতেই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ এভারেস্ট জয়ের
চেয়েও যে কঠিন,
কঠিন যে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে কোনো নতুন দেশের
সন্ধান লাভের চেয়েও
কিংবা কোনো অজ্ঞাত দ্বীপ আবিস্কারের চেয়েও যে দুরূহ
তু তুমি জানতে বলেই এই কাজই বেছে নিয়েছিলে;
তাই তুমি পৃথিবীর মাটিতে উড়ালে প্রথম এই মানুষের মুক্তির পতাকা।
এর আগে মানুষ কোথাও আর প্রকৃতই স্বাধীন ছিলো না
মানুষ তোমারই হাতে এই পেলো প্রথম স্বীকৃতি
তার আগে মেহনতী মানুষের ছিলো না কিছুই;
এবার শস্য তার, শস্যের খামার তার, শিল্প-কারখানাও এবার তাদেরই।
সমরেড লেনিন, এই নাম উচ্চারিত হলে রক্তে খেলে যায়
প্রত্যাশার কী যে বিদ্যুৎ ঝিলিক
ইতিহাস হয়ে ওঠে সচকিত গভরি উজ্জ্বল
দেখতে পাই মানুষের কাছে কীভাবে খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার
একেকটি দুয়ার;
লেনিনের নামে মুহূর্তে শূন্যে ওঠে মানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত
লেনিনের নামে উড়ে যায় একঝাঁক শান্তি কপোত,
লেনিন নামের, সেদিন মানুষের দেহে ছিলো শোষকের
নিষ্ঠুর দাঁতের চিহ্ন
সেই চিহ্ন সুদুর বাংলায় আজো মানচিত্রের শরীরে ব্যাপক
আরো বহু দেশে মানুষের এই চরম নিগ্রহ ;
তাই যখন তোমার দিকে ফিরে চাই কমরেড লেনিন
মনে হয় আর কোনো ভয় নেই-
শোষণের দিন শেষ পৃথিবীতে মেহনতী মানুষ জেগেছে!
লেনিন এনেছে পৃথিবীতে নবযুগ
কাস্তে-হাতুড়ি সাম্যের সংবাদ,
লেনিন এনেছে ঐক্যের মহামন্ত্র
মানুষের মানুষে মৈত্রীর সেতুবন্ধন
কমরেড লেনিন এই নাম উচ্চারিত হলে
হৃদয়ে হৃদয়ে ওঠে গঢ় শিঞরন, খুলে যায় মানবিক সকল উৎসধারা
ভলগা এসে মোশে এই গৈরিক পদ্মায়-
আকাশ হঠাৎ যেন নিচু হয়ে মাটিকেই জানায় সেলাম,
মানুষের অফুরন্ত প্রাণের জোয়ারে ভেসে ওঠে তোমার মুখ,
কমরেড লেনিন
আমি আর কিছুই দেখি না, সেইদিকে শুধু চেয়ে থাকি।
স্বাধীন প্যালেস্টাইন তোমার জন্য এই কবিতা
আমার এই কবিতা, গোলাপ ও স্বর্ণচাঁপার প্রতি যার
বিশেষ দুর্বলতা ছিলো
যার তন্ময়তা ছিলো পাখি, ফুল ও প্রজাপতির দিকে
সে এখন প্যালেস্টাইনী গেরিলাদের কানে স্বাধীনতার
গান গাইছে;
ইসরাইলী হামলায় ক্ষতবিক্ষত লেবাননের পল্লীতে সে
এখন ব্যস্ত উদ্ধারকর্মী,
হাতে শুশ্রূষার ব্যাগ নিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের বাহুতে
ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিচ্ছে আমার এই কবিতা;
ধ্বংসস্তপের মধ্যে কুড়িয়ে পাওয়া একটি ভাঙা গিটারে
সে আবার বাজিয়ে দিচ্ছে প্রত্যাশার গান,
আমার এই উদাসীন ও লাজুক কবিতাটিই এখন
নক্ষত্র ও চন্দ্রমল্লিকার বদলে আহরণ করছে বুলেট-
যে-হাতে গোলাপ কুড়াতো সেই হাতেই সে এখন
প্যালেস্টাইন্তমুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিচ্ছে মেশিনগান,
বুকে বাংলাদেশের নয় কোটি মাুনষের উষ্ণ ভালোবাসা নিয়ে
আমার এই কবিতাটি এখন সারারাত জেগে আছে অবরুদ্ধ
গেরিলাদের পাশে।
আমার এই কবিতাটি এখন আহত একজন প্যালেস্টাইনী যোদ্ধার
সামনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র নার্স,
যুদেধ মৃত লেবাননের সেই স্বজনহারা যুবতিিটর জন্য
আমার কবিতাটিই এখন ব্যথিত এপিটাফ;
প্যালেস্টাইনের সেইসব শহীদ যাদের জন্য কোনো শোকের
গান গাওয়া হয়নি
আমার কবিতাটিই তাদের জন্য আজ সারাদিন শোকের
গান গাইবে,
শ্রাবণের বর্ষণের মতো আমার এই কবিতাটিই এখন তাদের
কবরে ঝরে-পড়া নীরব শোকাশ্রু।
স্বাধীন প্যালেস্টাইন তোমাকে কেউ স্বীকৃতি দেবে কি না দেবে
সে-কথা আমার জানা নেই-
কিন্তু আমার এই কবিতাটির নিবিড় উষ্ণতার মধ্যে
প্যালেস্টাইন তোমার স্বাধীনতার চিরকালীন স্বীকৃতি
লেখা রইলো;
আমি জানি জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতির সনদপত্রের চাইতেও
এই ভালোবাসার স্বীকৃতি অনেক বেশি মূল্যবান!
তাই তোমাদের জন্য বাড়িয়ে দিচ্ছি বাংলাদেশের
সবুজ মাঠের বিশাল হাতছানি,
ভাটিয়ালি গানের ব্যঞ্জনা
আর পৃথিবীর একই আকাশের অভিন্নতার সাথে
আমার এই কবিতার রক্তিম অভিনন্দন।