তোমরা হয়তো পারো
তোমাদের পক্ষে সম্ভব তোমরা এক ধমকে চলন্ত ট্রেন
থামিয়ে দিতে পারো
বেয়াড়া বাসটি তোমাদের গলার শব্দেই কেঁপে ওঠে,
তোমরা চুলের ঝুঁটি ধরে শাসন করতে পারো এই শহরকে
গ্রামের তো কথাই নেই হাঁক না দিতেই তটস্ত;
তোমাদের সবাই সমীহ করে, উঠতে বসতে তোমাদের নিয়ে
সবাই ব্যস্ত
তোমরা চোখ তুলে তোকাতেই লাইটপোস্টগুলোও কেমন বিব্রত
হয়ে যায়
তোমাদের পক্ষে হয়তো সম্ভব, সবই সম্ভব;
আমার কথা ছাড়ো আমি সারাদিন গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়েও
একটি শিশুর কান্না থামাতে পারিনে
বাইরের কথঅ থাক নিজের ভিতরই আমার কেমন ভাঙচুর
আমার কথা ঠিক কেউ বোঝে না
ফুলের জন্য আমাকে তাই ফুলদানিই কতোবার ভাঙতে হয়েছে
গানের বদলে গিটার থেকে ঝরেছে কেবল চিৎকার
এই রুক্ষ সংসারে এতোটুকু প্রাঞ্জলতা আনতে পারিনি আমি,
মাটিতে হাত দিয়েছি মাটিই হয়ে গেছে পাথর-
কেউ কেউ পারে না, ঠিক এমনি পারে না;
তাই তোমাদের পক্ষে যা সম্ভব দোস্ত তা হয়তো আমার জন্য নয়
তোমরা যে-কারো মতোই এমনকি গাছপালারও কলার চেপে ধরে
বলতে পারো, চুপ করো,
আমার হয়তো সামান্যও ক্ষমতা নেই
যেমন এক ধরনের লোক থাকে যারা চোখ রাঙাতে গেলে
ক্রোধের বদলে সেখান থেকে অশ্রুই ঝরে পড়ে
ধমকের বদলে গলা থেকে বেরিয়ে আসে অসহায় কান্না
তাই আমি ঠিক অনেক কিছুই পারিনে, তাই এমন লুকোতে হয়,
দৌড়ঝাঁপ করতে হয়, কাদামাটি মাখতে হয়;
আমার জন্য এই শহরে কোনো টেলিফোন-সেট নেই
এমনকি কয়েন বক্সে একটার পর একটা বাঘমার্কা সিকি ফেলে
দেখেছি সেখানে শীতল নীরবতা
কতোদিন মাত্র পাঁচ টাকার একটি নোট হাতে কাউন্টার থেকে
কাউন্টারে ঘুরেছি খুচরো টাকার জন্য
অথচ কতোদিন তোমাদের ওস্তাদের মতো যেখানে সেখানে
নোট বাড়িয়ে দিয়েই ভাড়িয়ে নিতে দেখেছি,
যে-কোনো জায়গায় টেলিফোন মরালের মতো গলা বাড়িয়ে
দিয়েছে তোমাদের জন্য
কতোদিন যে কতোজনের বন্ধ দরোজা দেখে দেখে ফিরে এসেছি
আর কড়া নাড়ারই সাহস হয়নি,
অথচ নিজের চোখেই দেখেছি তোমাদের যাওয়ার শব্দেই
কলরোল করে খুলে গেছে বন্ধ দরোজা
ভিতর থেকে বেজে উঠেছে উষ্ণ আপ্যায়ন;
তোমরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেই সেখানে ঝরে পড়ে ফুলের
পাপড়ি
হাত তুলে অভিবাদনের পর অভিবাদন স্বাগত জানায় তোমাদের,
আমার সারা পথে কন্টকশয্যা
একটি পরিচিত মুখেরও দেখা মেলে না কখনো;
তোমাদের সুখদুঃখ-হাসিকান্না নিয়ে রচিত হয় ডকুমেন্টারি
তোমাদের কথাই আলাদা-
তোমরা যেখানেই হাত দিয়েছো সেখানেই ম্যাজিক,
আমার কথা ছাড়ো, আমি অনেক কিছুই পারিনে।
নারীর মুখের যোগ্য শোভা নেই
কী করে বলো না করি অস্বীকার এখনো আমার কাছে
একটি নারীর মুখই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দর্শনীয়,
তার চেয়ে অধিক সুন্দর কিছু অদ্যাবধি দেখিনি কোথাও;
অন্তত আমার কাছে নারীর মুখের চেয়ে অনবদ্য শিল্প কিছু নেই
তাই নারীর মুখের দিকে নির্বোধের মতো চেয়ে রই,
মাঝে মাঝে বিসদৃশ লাগে তবু চোখ ফেরাতে পারি না
নিতান্ত হ্যাংলা ভেবে পাছে করে নীরব ভর্ৎসনা তাই এই পোড়া চোখে
অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেখি কোনো পার্শ্ববর্তী শোখা, লেক কিংবা জলাশয়
আসলে নারীর মুখই একমাত্র দর্শনীয় এখনো আমার!
এখনো নারীর মুখের দিকে চেয়ে হতে পারি প্রকৃত তন্ময়
সময়ের গতিবিধি, প্রয়োজন একমাত্র নারীর মুখের দিকে চেয়ে
ভুলে যেতে পারি;
তা সে যতোক্ষণই হোক নারীর মুখের দৃশ্য ছাড়া পৃথিবীতে
বাস্তবিকই অভিভূত হওয়ার যোগ্য শিল্প কি স্থাপত্য কিছু নেই।
মিথ্যা বলবো না এখনো আমার কাছে একটি নারীর মুখই
সর্বাপেক্ষা প্রিয়
তার দিক থেকে এখনো ফেরাতে চোখ সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়,
শহরের দর্শনীয় বস্তু ফেলে তাই আমি হাবাগোবা নির্বোধের মতো
নারীর মুখের দিকে অপলক শুধু চেয়ে রই
মনে হয় এই যেন পৃথিবীতে প্রথম দেখেছি আমি একটি নারীর মুখ;
নয়ন জুড়ানো এতো শোভা আর কোনো পত্রপুষ্পে নেই-
সেসব সুন্দর শুধু পৃথিবীতে নারী আছে বলে।
তাই নারীর মুখের দৃশ্য ছাড়া মনোরম বিপণিও কেমন
বেখাপ্পা লাগে যেন
অপেরা বা সিনেমা নিষপ্রাণ,
পার্কের সকল দৃশ্য অর্থহীন বিন্যাস কেবল
নারীর সান্নিধ্য ছাড়া দর্শনীয় স্থানের মহিমা কিছু নেই ;
তাই তো এখনো পথে দুপাশের দৃশ্য ফেলে নারীর মুখের
দিকে ব্যগ্র চেয়ে থাকি
লোকে আর কি দেখে জানি না
আমি শুধু দেখি এই সৌন্দর্র্যের শুদ্ধ শিল্পকলা, নারীর সুন্দর মুখ।
এর চেয়ে সম্পূর্ণ গোলাপ কিংবা অনবদ্য গাঢ় স্বর্ণচাঁপা
আমার মানুষ জন্মে আমি আর কোথাও দেখিনি,
এর চেয়ে শুদ্ধ শিল্প, সম্যক ভাস্কর্য কিংবা অটুট নির্মণ
মিউজিয়াম, চিত্রশালা আর ইতিহাস-প্রসিদ্ধ কোথাও
আমি তো পাইনি খুঁজে ;
কী করে বলবো বলো নারীর মুখের চেয়ে দর্শনীয় ক্রিসানথিমান
কী করে বলবো আমি নারীর মুখের চেয়ে স্মরণীয়
অন্য কোনো নাম!
ফুল কই, শুধু অস্ত্রের উল্লাস
কতোদিন কোথাও ফোটে না ফুল, দেখি শুধু
অস্ত্রের উল্লাস
দেখি মার্চপাস্ট, লেফট রাইট, কুচকাওয়াজ ;
স্বর্ণচাঁপার বদলে দেখি মাথা উঁচু করে আছে হেলমেট
ফুলের কুঁড়ির কোনো চিহ্ন নেই, গাছের আড়ালে থেকে
উঁকি দেয় চকচকে নল,
যেখানে ফুটতো ঠিক জুঁই, বেলি, রঙিন গোলাপ
এখন সেখানে দেখি শোভা পাচ্ছে বারুদ ও বুলেট ;
প্রকৃতই ফুলের দুর্ভিক্ষে আজ বিরান এদেশ
কোথাও সামান্য কোনো সবুজ অঞ্চল নেই, খাদ্য নেই,
শুধু কংক্রিট, পাথর আর ভয়ল আগুন
এখানে কারফিউ-ঘেরা রাতে নিষিদ্ধ পূর্ণিমা ;
আজ গানের বদলে মুহুর্মুহু মেশিনগানের শব্দ-
সারাক্ষণ বিউগল, সাইরেন আর বিকট হুইসিল
বুঝি কোথাও ফুলের কোনো অস্তিত্বই নেই।
ফুলের শরীর ভেদ করে জিরাফের মতো আজ
অস্ত্রই বাগয়েছে গ্রীবা
পাতার প্রতীক তাই ভুলে গেছি দেখে দেখে অস্ত্রের মডেল!
খেলনার দোকানগুলিতে একটিও গিটার, পুতুল কিংবা
ফুল পাখি নেই
শিশুদের জন্য শো-কেসে সাজানো শুধু অস্ত্রের সঞ্চার
বাইরেবাতাস শ্বাসদুদ্ধকর, রাজপথে সারি সারি বুট,
সব কিছু চেয়ে আছে অস্ত্রেরই বিশাল ডালপালা ;
কোথাও ফোটে না ফূল, কোথাও শুনি না আর
হৃদয়ের ভাষা,
কেবল তাকিয়ে দেখি মার্চপাস্ট, কুচকাওয়াজ, লেফট রাইট
এই রক্তাক্ত মাটিতে আর ফুল কই, শুধু অস্ত্রের উল্লাস।