ভারত শ্মশান হল মা, তুই শ্মশানবাসিনী বলে
ভারত শ্মশান হল মা, তুই শ্মশানবাসিনী বলে।
জীবন্ত শব নিত্য মোরা চিতাগ্নিতে মরি জ্বলে॥
আজ হিমালয় হিমে ভরা
দারিদ্র্য-শোক-ব্যাধি-জরা,
নাই যৌবন, যেদিন হতে শক্তিময়ী গেছিস চলে॥
(তুই) ছিন্নমস্তা হয়েছিস তাই, হানাহানি হয় ভারতে
নিত্য-আনন্দিনী, কেন টানিস নিরানন্দ পথে?
শিব-সীমন্তিনী বেশে
খেল মা আবার হেসে হেসে।
ভারত মহাভারত হবে, আয় মা ফিরে মায়ের কোলে॥
মা ব্রহ্মময়ী জননী মোর
(মা) ব্রহ্মময়ী জননী মোর
(মোরে) অব্রাহ্মণ কে বলে?
শ্যামা নামের জঠরে মোর
নব জন্ম ভূতলে॥
(মা) চণ্ডিকারে মা বলে রে
আমি হলাম দ্বিজ।
(আমি দ্বিতীয়বার জনম নিলাম)
(মা) আদর করে নাম রেখেছেন
পুত্র মনসিজ।
(আমি যে মা-র মানস-পুত্র)
(তাই) অক্ষমালার যজ্ঞোপবীত
মা পরালেন মোর গলে॥
রুদ্রাক্ষ মালার যজ্ঞোপবীত
মা পরালেন মোর গলে॥
(মোরে) কে কবে অস্পৃশ্য বলে
দিয়েছিল গালি।
(আমি) কেঁদেছিলাম ‘মা’ বলে
(তাই) মা হলেন মোর কালী।
(মা) হলেন ভদ্রকালী।
(মোরে) পতিত বলে ঘৃণা যারা
করেছিল আগে,
(আজ) মায়ের কোলে তাহাদেরই
ডাকি অনুরাগে।
(ওরে আয় তোরা আয় রে) –
জগৎ-জননীর কোলে তোরা সবাই আয় রে॥)
(সেই) চণ্ডাল আজ কমল হয়ে
ফুটল মা-র চরণ-তলে।
(মা-র) রাঙা চরণ-কমল ছুঁয়ে
ফুটল মা-র চরণ-তলে॥
মা মেয়েতে খেলব পুতুল
মা মেয়েতে খেলব পুতুল
আয় মা আমার খেলা-ঘরে।
(আমি) মা হয়ে মা শিখিয়ে দেব
পুতুল খেলে কেমন করে॥
কাঙাল অবোধ করবি যারে
বুকের কাছে রাখিস তারে
(নইলে কে তার দুখ ভোলাবে – যারে রত্ন-মানিক
দিবি না মা উচিত সে তার মাকে পাবে)
(আবার) কেউ বা ভীষণ দামাল হবে
(কেউ) থাকবে গৃহকোণে পড়ে॥
মৃত্যু সেথা থাকবে না মা
থাকবে লুকোচুরি খেলা।
রাত্রি বেলায় কাঁদিয়ে যাবে
আসবে ফিরে সকাল বেলা।
কাঁদিয়ে খোকায় ভয় দেখিয়ে
ভয় ভুলাব আদর দিয়ে (মা)
(বেশি তারে কাঁদাস না মা–
মা ছেড়ে যে পালিয়ে যাবে)
(সে) খেলে যখন শ্রান্ত হবে
ঘুম পাড়াবি বক্ষে ধরে॥
শংকর-অঙ্কলীনা-যোগমায়া
শংকর-অঙ্কলীনা-যোগমায়া
শংকরী শিবানী।
বালিকা-সম লীলাময়ী
নীল-উৎপল-পাণি॥
সজল-কাজল-বর্ণা
মুক্তবেণী-অপর্ণা
তিমির-বিভাবরী-স্নিগ্ধা
শ্যামা কালিকা ভবানী॥
প্রলয়-ছন্দময়ী চণ্ডী
শব্দ-নূপুর-চরণা
শাম্ভবী শিব-সীমন্তিনী
শংকরাভরণা।
অম্বিকা দুঃখহারিণী
শরণাগততারিণী
জগদ্ধাত্রী শান্তি-দাত্রী
প্রসীদ মা ঈশানী॥
শ্যামা নামের ভেলায় চড়ে
শ্যামা নামের ভেলায় চড়ে
কাল-নদীতে দুলি
ঘাটে ঘাটে ঘটে ঘটে
সুরের লহর তুলি।
কাল-তরঙ্গে ভাসিয়ে অঙ্গ
দেখে বেড়াই কতই রঙ্গ ;
কায়ায় কায়ায় রং-বেরঙের
শত মায়ার ধূলি॥
জন্মান্তর ঘাটে ঘাটে
ভাসি, উঠি, ডুবি ;
কেবলই মা ডাকে আমায় –
‘আয় আমারে ছুঁবি।’
(মোরে) কালস্রোতে ভাসাবার ছলে
লীলা দেখান নাটমহলে,
(মা) আপনি এসে খেলার শেষে
বক্ষে লবে তুলি॥