Site icon BnBoi.Com

জুলফিকার – কাজী নজরুল ইসলাম

জুলফিকার - কাজী নজরুল ইসলাম

অসীম বেদনায় কাঁদে মদিনাবাসী

অসীম বেদনায় কাঁদে মদিনাবাসী।
নিভিয়া গেল চাঁদের মুখের হাসি॥
শোকের বাদল আছড়ে পড়ে
কাঁদছে মরুর বুকের পরে,
ব্যথার তুফানে আরব গেল ভাসি॥
গোলাব-বাগে গুল নাহি আজ
কাঁদিছে বুলবুলি।
ছাইল আকাশ অন্ধকারে
মরু সাহারার ধূলি।
তরুলতা বনের পাখি
কোথায় হোসেন কইছে ডাকি,
পড়ছে ঝরে তারার রাশি॥

আজি ঈদ ঈদ ঈদ খুশির ঈদ

আজি ঈদ ঈদ ঈদ খুশির ঈদ, এল ঈদ
(যাঁর) আসার আশায় চোখে মোদের ছিল না রে নিদ॥
শোন, রে গাফিল, কী বলে তকবির ঈদগাহে,
(তোর) আমানতের হিসসা সাদকা দে খোদার রাহে;
নে সাদকা দিয়ে বেহেশ‍্‍তে, যাবার রসিদ॥
ঈদের চাঁদের তশতরিতে জান্নাত হতে
আনন্দেরই শিরনি এল আশমানি পথে,
সেই শিরনি নিয়ে নতুন আশায় জাগবে না-উম্মিদ॥
(তোর) পিরাহানের আতব গোলাব লাগুক রে মনে,
(আজ) প্রেমের দাওত দে দুনিয়ার সকল জনে,
দিলেন ঈদের মারফতে হজরত এই তাগিদ॥

আমার হৃদয় শামাদানে জ্বালি মোমের বাতি

আমার হৃদয় শামাদানে জ্বালি মোমের বাতি।
নবিজিগো! জেগে আমি কাঁদি সারা রাতি॥
আশমানেরই চাঁদোয়াতলে
চাঁদ সেতারার পিদিম জ্বলে,
ওরাও যেন খোঁজে তোমার আমার দুখের সাথি॥
দিনের কাজে পাই না সময় তাই নিরালা রাতে
তোমার পাওয়ার পথ খুঁজি গো কোরানের আয়াতে।
ঝরলে পাতা ডাকলে পাখি
চমকে ভাবি তুমি নাকি?
মসজিদে যাই গভীর রাতে খুঁজি আঁতিপাঁতি
রোজহাশরে পায় দেখা মোরে সবাই বলে
তোমার বিহনে ঘুম নাই নয়নে,
মোর জীবনে রোজ কিয়ামত আসে প্রতিপলে,
বিষের সমান লাগে আমার দুনিয়ার যশ খ্যাতি॥

মিনার কোলে নাচে হেলে দুলে

আমিনার কোলে নাচে হেলে দুলে
শিশু নবি আহমদ রূপের লহর তুলে॥
রাঙা মেঘের কাছে ঈদের চাঁদ নাচে –
যেন নাচে ভোরের আলো গোলাব গাছে।
চরণে ভোমরা গুঞ্জরে গুল ভুলে॥
সেই খুশির ঢেউ লাগে আরশ ও কুরসির পাশে,
হাততালি দিয়ে হুরি সব বেহেশ‍্‍তে হাসে,
সুখে ওঠে কেঁপে দুনিয়া চরণ-মূলে॥
চাঁদনি-রাঙা অতুল মোহন মোমের পুতুল
আদুল গায়ে নাচে খোদার প্রেমে বেভুল।
আল্লার দয়ায় তোহ‍্‍ফা এল ধরার কূলে॥

আল্লা নামের বীজ বুনেছি এবার মনের মাঠে

আল্লা নামের বীজ বুনেছি এবার মনের মাঠে।
ফলবে ফসল, বেচব তারে কিয়ামতের হাটে॥
পত্তনিদার যে এই জমি
খাজনা দিয়ে সেই নবিজির
বেহেশ‍্‍তেরই তালুক কিনে বসব সোনার খাটে॥
মসজিদে মোর ধরাই বাঁধা, হবে নাকো চুরি,
‘মনকের’‘নকির’ দুই ফেরেশতা হিসাব রাখে জুড়ি।
রাখব হেফাজতের তরে
ইমানকে মোর সাথি করে,
রদ হবে না কিস্তি, জমি উঠবে না আর লাটে॥

আল্লা রসুল জপের গুণে কী হল দেখ চেয়ে

আল্লা রসুল জপের গুণে কী হল দেখ চেয়ে।
সদাই ঈদের দিনের খুশিতে তোর পরান আছে ছেয়ে॥
আল্লার রহমত ঝরে
ঘরে বাইরে তোর উপরে,
আল্লার রসুল হয়েছেন তোর জীবন-তরির নেয়ে॥
দুখে সুখে সমান খুশি, নাই ভাবনা ভয়,
(তুই) দুনিয়াদারি করিস, তবু আল্লাতে মন রয়।
মরণকে আর ভয় নাই তোর,
খোদার প্রেমে পরান বিভোর,
(এখন) তিনিই দেখেন তোর সংসার তোর ছেলেমেয়ে॥

আল্লাহ্ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়

ভৈরবী – কারফা

আল্লাহ্ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়।
আমার নবি মোহাম্মদ, যাঁহার তারিফ জগৎময়॥
আমার কীসের শঙ্কা,
কোরআন আমার ডঙ্কা,
ইসলাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়॥
কলেমা আমার তারিজ, তৌহীদ আমার মুরশিদ,
ইমান আমার বর্ম, হেলাল আমার খুরশিদ।
‘আল্লাহ্ আকবর’ধ্বনি
আমার জেহাদ-বাণী,
আখের মোকাম ফেরদৌস খোদার আরশ যথায় রয়॥
আরব মেসের চীন হিন্দ মুসলিম-জাহান মোর ভাই,
কেহ নয় উচ্চ কেহ নীচ, এখানে সমান সবাই।
এক দেহ এক দিল এক প্রাণ,
আমির ফকির এক সমান,
এক তকবীরে উঠি জেগে, আমার হবেই হবে জয়॥

আহ্‌মদের ওই মিমের পর্দা উঠিয়ে দেখ মন

পিলু কাম্বাজ – সাদ্রা

আহ্‌মদের ওই মিমের পর্দা
উঠিয়ে দেখ মন।
আহাদ সেথায় বিরাজ করেন
হেরে গুণীজন॥
যে চিনতে পারে রয় না ঘরে
হয় সে উদাসী
সে সকল ত্যজি ভজে শুধু
নবিজির চরণ॥
ওই রূপ দেখে রে পাগল হল
মনসুর হল্লাজ
সে আনালহক’‘আনালহক’বলে
ত্যজিল জীবন॥
তুই খোদকে যদি চিনতে পারিস
চিনবি খোদাকে,
তোর রুহানী আয়নাতে দেখরে
সেই নূরী রওশন॥

আয় মরু-পারের হাওয়া

মাঢ়-মিশ্র – দাদরা

আয় মরু-পারের হাওয়া,
নিয়ে যা রে মদিনায়।
জাত পাক মোস্তফার
রওজা মোবারক যথায়॥
পড়িয়া আজি দুখে
মুশরেকী এই মুল্লুকে,
পড়ব মগরেবের নামাজ
কবে খানায়ে-কাবায়॥
হজরতের নাম তসবি করে,
যাব রে মিসকিন বেশে,
ইসলামেরই দীন-ই ডঙ্কা
বাজল প্রথম যে দেশে॥
কাঁদব মাজার-শরিফ ধরে,
শুনব সেথায় কান পাতি,
হয়তো সেথা নবির মুখে
রব ওঠে ‘য়্যা উম্মতি’!
আজও কোরআনের কালাম
হয়তো সেথা শোনা যায়॥

ইসলামের ওই সওদা লয়ে এল নবীন সওদাগর

ভৈরবী – কারফা

ইসলামের ওই সওদা লয়ে
এল নবীন সওদাগর।
বদনসিব আয়, আয় গুনাহ‍্‍গার,
নতুন করে সওদা কর॥
জীবন ভরে করলি লোকসান,
আজ হিসাব তার খতিয়ে নে,
বিনি মূলে দেয় বিলিয়ে
সে যে, বেহেশ‍্‍তি নজর॥
কোরানের ওই জাহাজ বোঝাই
হিরা মুক্তা পান্নাতে,
লুটে নে রে লুটে নে সব
ভরে তোল তোর শূন্য ঘর॥
কলেমার ওই কানাকড়ির
বদলে দেয় এই বণিক
শাফায়তের সাত রাজার ধন,
কে নিবি আয় ত্বরা কর॥
কিয়ামতের বাজারে ভাই
মুনাফা, যে চাও বহুত,
এই ব্যাপারীর হও খরিদার,
লও রে ইহার সিলমোহর॥
আরশ হতে পথ ভুলে এ
এল মদিনা শহর,
নামে মোবারক মোহাম্মদ,
পুঁজি আল্লাহু আকবর॥

ঈদুজ্জোহার তকবীর শোন ঈদগাহে

ঈদুজ্জোহার তকবীর শোন ঈদগাহে।
(তোর) কোরবানিরই সামান নিয়ে চল রাহে॥
কোরবানিরই রঙে রঙিন পর লেবাস,
পিরহানে মাখ রে ত্যাগের গুল-সুবাস,
হিংসা ভুলে প্রেমে মেতে ঈদগাহেরই পথে যেতে
দে মোবারক-বাদ দীনের বাদশাহে॥
খোদারে দে প্রাণের প্রিয়, শোন এ ঈদের মাজেরা,
যেমন পুত্র বিলিয়ে দিলেন খোদার নামে হাজেরা,
ওরে কৃপণ, দিসনে ফাঁকি আল্লাহে॥
তোর পাশের ঘরে গরিব কাঙাল কাঁদছে যে
তুই তাকে ফেলে ঈদগাহে যাস সং সেজে,
তাই চাঁদ উঠল, এল না ঈদ, নাই হিম্মত নাই উম্মিদ,
শোন কেঁদে কেঁদে বেহেশ্‌ত হতে হজরত আজ কী চাহে॥

 ও কে সোনার চাঁদ কাঁদে রে

ও কে সোনার চাঁদ কাঁদে রে
হেরা গিরির পরে!
শিরে তাঁহার লক্ষ কোটি
চাঁদের আলো ঝরে॥

কী অপরূপ জ্যোতির ধারা নীল আশমান হতে
নামে বিপুল স্রোতে,
হেরা পাহাড় বেয়ে বহে সাহারা মরুর পথে–
সেই জ্যোতিতে দুনিয়া আজি ঝলমল করে॥
আগুনবরন ফেরেশ্‌তা এক এসে
খোদার হাবিব জাগো জাগো, বলে হেসে হেসে॥
নবুয়তের মোহর দিল বাহুতে তাঁর বেঁধে
তাজিম করে কদমবুসি করে কেঁদে কেঁদে;
সেই নবিরই নামে আজি দুনিয়া দরুদ পড়ে॥

ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ

পিলু – কারফা

ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে
এল খুশির ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে
শোন আশমানি তাকিদ॥
তোর সোনাদানা বালাখানা
সব রহে লিল্লাহ্
দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ
ভাঙাইতে নিদ॥
তুই পড়বি ঈদের নামাজ রে মন
সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজি মুসলিম
হয়েছে শহিদ॥
আজ ভুলে গিয়ে দোস্ত দুশমন
হাত মিলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল
ইসলামে মুরিদ।
যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা
নিত-উপবাসী
সেই গরিব এতিম মিসকিনে দে
যা কিছু মফিদ॥
ঢাল হৃদয়ের তোর তশতরিতে
শিরনি তৌহিদের,
তার দাওত কবুল করবেন হজরত,
হয় মনে উমিদ॥
তোরে মারল ছুঁড়ে জীবন জুড়ে
ইঁট পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তুল রে গড়ে
প্রেমেরই মসজিদ॥

ও মন, কারও ভরসা করিসনে তুই

ও মন, কারও ভরসা করিসনে তুই
এক আল্লার ভরসা কর।
আল্লা যদি সহায় থাকেন
ভাবনা কীসের, কীসের ডর॥
রোগে শোকে দুখে ঋণে
নাই ভরসা আল্লা বিনে,
তুই মানুষের সহায় মাগিস
তাই পাসনে খোদার নেক-নজর॥
রাজার রাজা বাদশা যিনি
‘গোলাম’হ তুই সেই খোদার,
বড়োলোকের দুয়ারে তুই
বৃথাই হাত পাতিসনে আর॥
তোর দুঃখের বোঝা ভারী হলে
ফেলে প্রিয়জনও যায় রে চলে,
সেদিন ডাকলে খোদায় তাহার রহম
ঝরবে রে তোর মাথার পর॥

ওগো আমিনা তোমার দুলালে আনিয়া

[ধাত্রী হালিমার উক্তি]

ওগো আমিনা! তোমার দুলালে আনিয়া
আমি ভয়ে ভয়ে মরি।
এ নহে মানুষ, বুঝি ফেরেশতা
আসিয়াছে রূপ ধরি॥
সে নিশীথে যখন বক্ষে ঘুমায়
চাঁদ এসে তাঁয় চুমু খেয়ে যায়,
দিনে যবে মেঘ-চারণে সে যায়
মেঘ চলে ছায়া করি।
সাথে সাথে তার মেঘ চলে ছায়া করি॥
মনে হয় যেন লুকাইয়া রাতে তোমার শিশুর পায়
কত ফেরেশ‍্‍তা হুরপরি এসে সালাম করিয়া যায়॥
সে চলে চায় যবে মরুর উপরে,
বসরা গোলাপ ফোটে থরে থরে,
তার চরণ ঘিরিয়া কাঁদে গুলবনে
অলিকুল গুঞ্জরি॥

ওরে ও চাঁদ উদয় হলি কোন জোছনা দিতে

(ওরে) ও চাঁদ! উদয় হলি কোন জোছনা দিতে!
(দেয়) অনেক বেশি আলো আমার নবির পেশানীতে॥
(ওরে) রবি! আলোক দিস যত তুই দগ্ধ করিস তত,
আমার নবি স্নিগ্ধ শীতল কোটি চাঁদের মতো,
(সে) নাশ করেছে মনের আঁধার ঈষৎ হাসিতে॥

(ওরে) আশমান! তুই সুনীল হলি জানি কেমন করে,
আমার নবির কালো চোখের একটুকু নীল হরে।
(ওরে) তারা! তোরা জ্যোতি পেলি নবির চাউনিতে॥

ওরে বসরা গোলাব! অনেক বেশি খোশবু তোদের চেয়ে
সেই ধূলিতে মোর নবিজি যেতেন যে-পথ বেয়ে।
সেই বারতা ফুলকে শোনায় বুলবুলি সংগীতে॥

কাবার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদিনায়

কাবার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদিনায়।
আমার সালাম পৌঁছে দিয়ো নবিজির রওজায়॥
হাজিদেরই যাত্রা পথে
দাঁড়িয়ে আছি সকাল হতে,
কেঁদে বলি কেউ যদি মোর সালাম নিয়ে যায়॥
পঙ্গু আমি, আরব সাগর লঙ্ঘি কেমন করে
তাই নিশিদিন কাবা যাওয়ার পথে থাকি পড়ে।

বলি ওরে, দরিয়ার ঢেউ
(মোর) সালাম নিয়ে গেল না কেউ,
তুই দিস মোর সালামখানি মরুর লু হাওয়ায়,
ওরে কাবার দরওয়াজায়॥

কে এলে মোর ব্যথার গানে

ঝিঁঝিট-খাম্বাজ – কারফা

কে এলে মোর ব্যথার গানে
গোপন লোকের বন্ধু গোপন।
নাইতে আমার গানের ধারায়
এলে সুরের মানসী কোন॥

গান গেয়েযাই আপন মনে
সুরের পাখি, গহন বনে,
সুরের পাখি, গহন বনে,
জানে শুধু তারই নয়ন॥

কে গো তুমি গন্ধ-কুসুম,
গান গেয়ে কি ভেঙেছি ঘুম,
তোমার ব্যথার নিশীথ নিঝুম
হেরে কি মোর গানের স্বপন॥

সুরের গোপন বাসর-ঘরে
গানের মালা বদল করে
সকল আঁখির অগোচরে
না দেখাতে মোদের মিলন॥

কোথায় তখ‍্‍ত তাউস, কোথায় সে বাদশাহি

খাম্বাজ – কারফা

কোথায় তখ‍্‍ত তাউস,
কোথায় সে বাদশাহি।
কাঁদিয়া জানায় মুসলিম
ফরিয়াদ য়্যা এলাহি॥
কোথায় সে বীর খালেদ,
কোথায় তারেক মুসা,
নাহি সে হজরত আলি’
সে জুলফিকারনাহি ॥
নাহি সে উমর খাত্তাব,
নাহি সে ইসলামি জোশ,
করিল জয় যে দুনিয়া,
আজ নাহি সে সিপাহি॥
হাসান হোসেন সে কোথায়,
কোথায় বীর শহিদান –
কোরবানি দিতে আপনায়
আল্লার মুখ চাহি॥
কোথায় সে তেজ ইমান
কোথায় সে শান শওকত,
তকদিরে নাই সে মাহ‍্‍তাব,
আছে পড়ে শুধু সিয়াহি॥

 খুশি লয়ে খোশ-রোজের

কাফি – কারফা

খুশি লয়ে খোশ-রোজের
আয় খেয়ালি খোশ-নসিব।
জ্বাল দেয়ালি শবেরাতের,
জ্বাল রে তাজা প্রাণ-প্রদীপ।

আন নয়া দীনী ফরমান
দরাজ দিলের দৃপ্ত গান,
প্রাণ পেয়ে আজ গোরস্থান
তোর ডাকে জাগুক নকিব।

আন মহিমা হজরতের
শক্তি আন শেরে খোদার,
কোরবানি আন কারবালার
আন রহম মা ফাতেমার।

আন উমরের শৌর্য বল,
সিদ্দিকের আন সাচ্চা মন,
হাসান হোসেনের সে ত্যাগ,
শহিদানের মৃত্যু-পণ।

খোদার হবিব শেষ নবি,
তুই হবি নবির হবিব।
খোতবা পড়বি মসজিদে
তুই খতিব নূতন ভাষায়,
শুষ্ক মালঞ্চের বুকে
ফুল ফুটাবি তোর হাওয়ায়,
এসমে-আজম এনে
মৃত মুসলিমে তুই কর সজীব।

খোদার প্রেমের শারাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে

মাঢ়-মিশ্র – কারফা

খোদার প্রেমের শারাব পিয়ে
বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে।
ছেড়ে মসজিদ আমার মুরশিদ
এল যে এই পথ ধরে॥
দুনিয়াদারির শেষে আমার
নামাজ রোজার বদলাতে
চাই না বেহেশ‍্‍ত খোদার জাছে
নিত্য মোনাজাত করে॥
কায়েস যেমন লায়ালি লাগি
লভিল মজনু খেতাব,
যেমন ফরহাদ শিরীর প্রেমে
হল দীওয়ানা বেতাব,
বে-খুদীতে মশগুল আমি
তেমনই মোরা খোদার তরে॥
পুড়ে মরার ভয় না রাখে,
পতঙ্গ আগুনে ধায়;
সিন্ধুতে মেটে না তৃষ্ণা,
চাতক বারি-বিন্দু চায়;
চাকোর চাহে চাঁদের সুধা,
চাঁদ সে আশমানে কোথায়;
সুরুয থাকে কোন সুদূরে,
সূর্যমুখী তারেই চায়;
তেমনি আমি চাহি খোদায়,
চাহি না হিসাব করে॥

ঘর-ছাড়া ছেলে আকাশের চাঁদ আয় রে

ঘর-ছাড়া ছেলে আকাশের চাঁদ আয় রে
জাফরানি রঙের পরাব পিরান তোর গায় রে।
আয় রে॥
আশমানে যেতে চায় তারা হয়ে আমার নয়ন-তারা
তোর খেলার সাথি কাঁদে শাপলার ফুল, ফিরে আয় পথ-হারা।
দুনয়ন ঘুমে ঢুলে, হৃদয় ঘুমায় না,
কাজ পেতে চায় রে॥
চোখের কাজল তোর চাঁদ-মুখে লেগেছে,
(আয়) মুছাব আঁচলে,
মায়ের পরানে তোর স্নেহের সাগর-তরঙ্গ উথলে।
(মোর) মনের ময়না! ঘরে মন রয় না,
পথ চেয়ে রয়, রাত কেটে যায় রে॥

জাগে না সে জোশ লয়ে আর মুসলমান

ভৈরবী – কারফা

জাগে না সে জোশ লয়ে আর মুসলমান
করিল জয় যে তেজ লয়ে দুনিয়া জাহান॥
যাহার তকবীর ধ্বনি তকদির
বদলাল দুনিয়ার,
না-ফরমানির জামানায়
আনিল ফরমান খোদার,
পড়িয়া বিরান আজি
সে বুলবুলিস্তান॥
নাহি সাচ্চাই সিদ্দিকের,
উমরের নাহি সে ত্যাগ আর,
নাহি সে বেলালের ইমান,
নাহি আলির জুলফিকার,
নাহি আর সে জেহাদ লাগি
বীর শহিদান॥
নাহি আর বাজুতে কুওত
নাহি খালেদ-মুসা-তারেক,
নাহি বাদশাহি তখ‍্‍ত তাউস,
ফকির আজ দুনিয়ার মালিক,
ইসলাম কেতাবে শুধু,
মুসলিম গোরস্থান॥

ঝরা ফুল দলে কে অতিথি

কাফি-মিশ্র – দাদরা

ঝরা ফুল দলে কে অতিথি
সাঁঝের বেলায় এলে কানন-বীথি॥
ও      চোখে কী মায়া
ফেলেছে ছায়া
যৌবন-মদির দোদুল কায়া।
তোমার ছোঁয়ায় নাচন লাগে
দখিন হাওয়ায়
লাগে চাঁদের স্বপন বকুল চাঁপায়,
কোয়েলিয়া কুহরে কূ কূ গীতি॥

তোমার নূরের রওশনি মাখা

তোমার নূরের রওশনি মাখা
নিখিল ভুবন অসীম গগন।
তোমার অনন্ত জ্যোতির ইশারা
গ্রহ তারা চন্দ্র তপন॥
তোমার রূপের ইঙ্গিত খোদা
ফুটিছে বনের কুসুম সদা,
তোমার নূরের ঝলক হেরি
মেঘে বিজলি চমকে যখন॥
প্রাণের খুশি শিশুর হাসি
মধুর তোমার রূপ দেয় প্রকাশি,
তোমার জ্যোতির সমুদ্রে খোদা
আলোক ঝিনুক মোর এ দুটি নয়ন॥
ধানের খেতে নদী-তরঙ্গে
দুলে তোমার রূপ মধুর ভঙ্গে,
নিতি দেখা দাও হাজার রঙ্গে
অরূপ নিরাকার তুমি নিরঞ্জন॥

তোমারই মহিমা সব বিশ্বপালক করতার

মান্দ – কারফা

তোমারই মহিমা সব বিশ্বপালক করতার।
করুণা কৃপার তব নাহি সীমা নাহি পার।
বিশ্বপালক করতার॥
রোজ হাশরের বিচার দিনে
তুমিই মালিক এয়্ খোদা,
আরাধনা করি প্রভু,
আমরা কেবলই তোমার।
বিশ্বপালক করতার॥
সহায় যাচি তোমারই নাথ,
দেখাও মোদের সরল পথ,
তাদের পথে চালাও খোদা
বিলাও যাদের পুরস্কার।
বিশ্বপালক করতার॥
অবিশ্বাসী ধর্মহারা যাহারা সে ভ্রান্ত-পথ,
চালায়ো না তাদের পথে,
এই চাহি পরওয়ারদেগার।
বিশ্বপালক করতার॥

তোমায় যেমন করে ডেকেছিল আরব মরুভূমি

তোমায় যেমন করে ডেকেছিল আরব মরুভূমি!
ওগো আমার নবি প্রিয় আল আরবি
তেমনি করে ডাকি যদি আসবে নাকি তুমি॥
যেমন কেঁদে দজলা ফোরাত নদী
কেঁদে দজলা ফোরাত নদী
হে মোর মরুচারী নবুয়তধারী
তেমনি করে কাঁদি যদি আসবে নাকি তুমি॥
যেমন মদিনা আর হেরা পাহাড়
জেগেছিল আশায় তোমার
হে হজরত মম হে মোর প্রিয়তম
তেমনি করে জাগি যদি আসবে না কি তুমি॥
মজলুমেরা কাবা ঘরে
কেঁদেছিল যেমন করে,
হে আমিনা লালা, হে মোর কমলিওয়ালা,
তেমনি করে চাহিযদি আসবে নাকি তুমি॥

তোরা দেখে যা, আমিনা মায়ের কোলে

তোরা দেখে যা, আমিনা মায়ের কোলে।
মধু পূর্ণিমারই সেথা চাঁদ দোলে॥
যেন উষার কোলে রাঙা রবি দোলে॥
কুল-মখ্‌লুকে আজি ধ্বনি উঠে, কে এল ওই,
কলেমা শাহাদতের বাণী ঠোঁটে, কে এল ওই,
খোদার জ্যোতি পেশানীতে ফোটে, কে এল ওই,
আকাশ গ্রহ তারা পড়ে লুটে, – কে এল ওই,
পড়ে দরুদ ফেরেশতা,
বেহেশ‍্‍তে সব দুয়ার খোলে॥
মানুষে মানুষের অধিকার দিল যে জন,
‘এক আল্লাহ্ ছাড়া প্রভু নাই’কহিল যে জন,
মানুষের লাগি চির-দীন বেশ নিল যে জন,
বাদশা ফকিরে এক শামিল করিল যে জন,
এল ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবি,
ব্যথিত মানবের ধ্যানের ছবি,
আজি মাতিল বিশ্ব-নিখিল মুক্তি-কলরোলে॥

তোরা যা রে এখনই হালিমার কাছে

তোরা যা রে এখনই হালিমার কাছে
লয়ে ক্ষীর সর ননী।
আমি খোয়াবে দেখেছি কাঁদিছে মা বলে
আমার নয়ন-মণি॥
মোর শিশু আহমদে যেদিন কাঁদিয়া
হালিমার হাতে দিয়াছি সঁপিয়া,
সেই দিন হতে কেঁদে কেঁদে মোর
কাটিছে দিন-রজনি॥
পিতৃহীন সে সন্তান হায়
বঞ্চিত মার স্নেহে,
তারে ফেলে দূরে কোল খালি করে
থাকিতে পারি না গেহে॥
অভাগিনি তার মা আমিনায়
মনে করে সে কি আজও কাঁদে, হায়!
বলিস তাহারই আসার আশায়
দিবানিশি দিন গণি॥

তৌহিদের মুরশিদ আমার মোহাম্মদের নাম

তৌহিদের মুরশিদ আমার মোহাম্মদের নাম॥
মুরশিদ মোহাম্মদের নাম।
ওই নাম জপিলেই বুঝতে পারি খোদাই কালাম
মুরশিদ মোহাম্মদের নাম॥
ওই নামেরই রশি ধরে যাই আল্লার পথে,
ওই নামেরই ভেলায় চড়ে ভাসি নূরের স্রোতে,
ওই নামেরই বাতি জ্বেলে দেখি লোহ আরশ-ধাম
মুরশিদ মোহাম্মদের নাম॥
ওই নামেরই দামন ধরে আছি, আমার কীসের ভয়;
ওই নামের গুণে পাব আমি খোদার পরিচয়;
ওই কদম মোবারক যে আমার বেহেশতি তাঞ্জাম
মুরশিদ মোহাম্মদের নাম॥

তৌহিদেরই বান ডেকেছে সাহারা মরুর দেশে

তৌহিদেরই বান ডেকেছে
সাহারা মরুর দেশে।
দুনিয়া জাহান ডুবুডবু
সেই স্রোতে যায় ভেসে॥
সেই জোয়ারে আমার নবি পারের তরি নিয়ে,
আয় কে যাবি পারে, ডাকে দ্বারে দ্বারে গিয়ে;
যে চায় না, তারেও নেয় সে নায়ে আপনি ভালোবেসে॥
পথ সে দেখায় ঈদের চাঁদের পিদিম নিয়ে হাতে,
হেসে হেসে দাঁড় টানে চায় আসহাব তার সাথে॥
নামাজ রোজার ফুল-ফসলে শ্যামল হল মরু,
প্রেমের রসে উঠল পুরে নীরস মনের তরু।
খোদার রহম এল রে আখেরে নবির বেশে॥

ত্রাণ করো মওলা মদিনার

ত্রাণ করো মওলা মদিনার
উম্মত তোমার গুনাহ‍্‍গার কাঁদে॥
তব প্রিয় মুসলিম দুনিয়ার
পড়েছে আবার গুনাহের ফাঁদে॥
নাহি কেউ ইমানদার, নাহি নিশান-বর্দার,
মুসলিম জাহানে নাহি আর পরহেজগার,
জামাত শামিল হতে যায় না মসজিদে,
ভুলিয়াছে কলমা শাহাদত
পড়ে না নামাজ ঈদের চাঁদে॥
নাহি দান খয়রাত,ভুলে মোহ-ফাঁসে
মেতে আছে সবে বিভব-বিলাসে,
বসিয়াছে জালিম শাহি তখতে তব
মজলুমের এ ফরিয়াদ আর কারে কব।
তলওয়ার নাহি নাহি আর
পায়ে গোলামির জিঞ্জির বাঁধে॥

দরিয়ায় ঘোর তুফান, পার করো নাইয়া

জংলা – দাদরা

দরিয়ায় ঘোর তুফান, পার করো নাইয়া।
রজনি আঁধার ঘোর, মেঘ আসে ছাইয়া॥
যাত্রী গুনাহ‍্‍গার জীর্ণ তরণি,
অসীম পাথারে কাঁদি পথ হারাইয়া॥
হে চির কান্ডারি,
পাপে তাপে বোঝাই তরি,
তুমি না করিলে পার,
পার হব কেমন করি।
সুখ-দিন ভুলে থাকি,
বিপদে তোমারে স্মরি,
ডুবাবে কি তব নাম,
আমারে ডুবাইয়া॥
মা-র কাছে মার খেয়ে
শিশু যেমন মাকে ডাকে,
যত দাও দুখ শোক,
‍ ততই ডাকি তোমাকে।

জানি শুধু তুমি আছ,
আসিবে আমার ডাকে,
তোমারই এ তরি প্রভু,
তুমি চলো বাহিয়া॥

 দিকে দিকে পুন জ্বলিয়া উঠেছে দীন-ই-ইসলামী লাল মশাল

দিকে দিকে পুন জ্বলিয়া উঠেছে
দীন-ই-ইসলামী লাল মশাল।
ওরে বে-খবর, তুইও ওঠ্‌ জেগে,
তুইও তোর প্রাণ-প্রদীপ জ্বাল।।

গাজী মুস্তফা কামালের সাথে
জেগেছে তুর্কী সুর্খ-তাজ,
রেজা পহ্‌লবী-সাথে জাগিয়াছে
বিরান মুলুক ইরানও আজ
গোলামী বিসরি’ জেগেছে মিসরী,
জগলুল-সাথে প্রাণ-মাতাল।।

ভুলি’ গ্লানি লাজ জেগেছে হেজাজ
নেজদ্‌ আরবে ইবনে সউদ্‌
আমানুল্লার পরশে জেগেছে
কাবুলে নবীন আল-মামুদ,
মরা মরক্কো বাঁচাইয়া আজি
বন্দী করিম রীফ্‌-কামাল।।

জাগে ফয়সল্‌ ইরাক আজমে,
জাগে নব হারুন-আল্‌-রশীদ,
জাগে বয়তুল মোকাদ্দস্‌ রে;
জাগে শাম দেখ্‌ টুটিয়া নিঁদ,
জাগে না কো শুধু হিন্দের
দশ কোটি মুসলিম বে-খেয়াল।।

মোরা আস্‌হাব কাহাফের মত
হাজারো বছর শুধু ঘুমাই,
আমাদেরি কেহ ছিল বাদশাহ্‌
কোন কালে; তার করি বড়াই,
জাগি যদি মোরা, দুনিয়া আবার
কাঁপিবে চরণে টাল্‌মাটাল।।

দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে বাজে

দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে বাজে
মসজিদেরই মিনারে।
এ কী খুশির অধীর তরঙ্গ উঠল জেগে
প্রাণের কিনারে॥
মনে জাগে, হাজার বছর আগে
ডাকিত বেলাল এমনই অনুরাগে,
তাঁর খোশ এলাহান মাতাইত প্রাণ
গলাইত পাষাণ ভাসাইত মদিনারে
প্রেমে ভাসাইত মদিনারে॥
তোরা ভোল গৃহ-কাজ, ওরে মুসলিম নাম
চল খোদার রাহে, শোন ডাকিছে ইমাম।
মেখে দুনিয়ার খাক বৃথা রহিলি না-পাক,
চল মসজিদে তুই শোন মোয়াজ্জিনের ডাক,
তোর জনম যাবে বিফল যে ভাই
এই এবাদত বিনা রে॥

দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলা দেশের কুটির হতে

দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলা দেশের কুটির হতে
বেহোশ হয়ে চলেছি যেন কেঁদে কেঁদে কাবার পথে॥
হায়গো খোদা কেন মোরে
পাঠাইলে কাঙাল করে
যেতে নারি প্রিয় নবির মাজার শরিফ জিয়ারতে॥
স্বপ্নে শুনি নিতুই রাতে যেন মিশর থেকে
কাঁদছে বেলাল ঘুমন্ত সব মুসলিমেরে ডেকে ডেকে
য়্যা এলাহি। বলো সে কবে
আমার স্বপন সফল হবে
(আমি) গরিব বলে হব কি নিরাশ মদিনা
দেখার নিয়ামতে॥

দৃষ্টিতে আর হয় না সৃষ্টি আগের মতো গোলাপ ফুল

(কবির অপ্রকাশিত গান)

দৃষ্টিতে আর হয় না সৃষ্টি আগের মতো গোলাপ ফুল।
কথায় সুরে ফুল ফুটাতাম, হয় না এখন আর সে ভুল॥
বাসি হাসির মালা নিয়ে
কী হবে নওরোজে গিয়ে,
চাঁদ না দেখে আঁধার রাতি বাঁধে কি গো এলোচুল?

আজও দখিন হাওয়ায় ফাগুন আনে,
বুলবুলি নাই গুলিস্তানে,
দোলে না আর চাঁদকে দেখে বনে দোলন-চাঁপার দুল॥
কী হারাল, নাই কী যেন,
মন হয়েছে এমন কেন?
কোন নিদয়ের পরশ লেগে হয় না হৃদয় আর ব্যাকুল॥

দেখে যা রে, দুলা সাজে সেজেছেন মোদের নবি

সিন্ধু – কারফা

দেখে যা রে, দুলা সাজে
সেজেছেন মোদের নবি॥
বর্ণিতে সে রূপ মধুর
হার মানে নিখিল-কবি॥
আউলিয়া আর আম্বিয়া সব
পিছে চলে বরাতি,
আশমানে যায় মশাল জ্বেলে
গ্রহ তারা চাঁদ রবি॥
হুর পরি সব গায় নাচে আজ,
দেয় ‘মোবারক বাদ’ আলম,
আরশ কুরসি ঝুঁকে পড়ে
দেখতে সে মোহন ছবি॥
আজ আরশের বাসর-ঘরে
হবে মোবারক-রুয়ত,
বুকে খোদার ইশক নিয়ে
নওশা ওই আল-আরবি॥
মেরাজের পথে হজরত
যান চড়ে ওই বোররাকে,
আয় কলেমা শাহাদতের যৌতুক
দিয়ে তাঁর চরণ ছোঁবি॥

নাই হল মা জেওর লেবাস এই হৃদে আমার

নাই হল মা জেওর লেবাস এই হৃদে আমার।
আল্লা আমার মাথার মুকুট রসুল গলার হার॥
নামাজ রোজার ওড়না শাড়ি ওতেই আমায় মানায় ভারী,
কলমা আমার কপালে টিম, নাই তুলনা তার॥
হেরা-গুহার হিরার তাবিজ কোরান বুকে দোলে,
হদিস কেকা বাজুবন্দ দেখে পরান ভোলে।
হাতে সোনার চুড়ি যে মা
হাসান হোসেন মা ফাতেমা,
(মোর) অঙ্গুলিতে অঙ্গুরি মা নবি চার ইয়ার॥

নামাজ পড় রোজা রাখ, কলমা পড় ভাই

নামাজ পড় রোজা রাখ, কলমা পড় ভাই।
তোর আখেরের কাজ করে নে সময় যে আর নাই॥
সম্বল যার আছে হাতে
হজের তরে যা ‘কাবা’তে,
জাকাত দিয়ে বিনিময়ে শাফায়ত যে পাই॥
ফরজ তরফ করে করলি কবজ ভবের দেনা
আল্লা ও রসুলের সাথে হল না তোর চেনা।
পরানে রাখ কোরান বেঁধে,
নবিরে ডাক কেঁদে কেঁদে
রাতদিন তুই কর মোনাজাত‘আল্লা তোমায় চাই’।

নিশিদিন জপে খোদা দুনিয়া জাহান

নিশিদিন জপে খোদা দুনিয়া জাহান
জপে তোমারই নাম।
তারায় গাঁথা তসবি লয়ে নিশীথে আশমান
জপে তোমারই নাম॥
ফুলের বনে নিতি গুঞ্জরিয়া
ভ্রমর বেড়ায় তব নাম জপিয়া,
হাত লয়ে ফুল কুঁড়ির তসবি ফুলের বাগান
জপে তোমারই নাম।
সাঁজ সকালে কোকিল পাপিয়া
মধুর তব নাম ফেরে গাহিয়া,
ছলছল সুরে ঝরনার ধারা নদীর কলতান
জপে তোমারই নাম॥
বৃষ্টি ধারার তসবি লয়ে
তব নাম জপে মেঘ ব্যাকুল হয়ে
সাগর কল্লোল, সমকীর হিল্লোল
বাদল ঝড় তুফান
জপে তোমারই নাম॥

বক্ষে আমার কাবার ছবি

বাগেশ্রী-সিন্ধু – কাহারবা

বক্ষে আমার কাবার ছবি,
চক্ষে মোহাম্মদ রসুল।
শিরোপরি মোর খোদার আরশ্,
গাই তারই গান পথ-বেভুল॥
লায়লির প্রেমে মজনুঁ পাগল,
আমি পাগল ‘লা-ইলা’র,
বোঝে আমায় প্রেমিক দরবেশ,
অ-রসিকে কয় বাতুল॥
হৃদয়ে মোর খুশির বাগান,
বুলবুলি তায় গায় সদাই –
ওরা খোদার দয়া যাচে,
আমি খোদার ইশ‍্‍ক চাই॥

আমার মনের মসজিদে দেয়
আজান প্রেমের ‘মুয়াজ্জিন’,
প্রাণের পরে কোরান লেখা
‘রুহ’ পড়ে তা রাত্রিদিন।

খাতুনে-জিন্নাত আমার মা,
হাসান হোসেন চোখের জল,
ভয় করি না ‘রোজ-কিয়ামত’
পুলসিরাতের কঠিন পুল

মদিনার শাহানশাহ্ কোহ-ই-তূর-বিহারি

মদিনার শাহানশাহ্ কোহ-ই-তূর-বিহারি।
মোহাম্মদ মোস্তফা নবুয়তধারী॥
আল্লার প্রিয় সখা, দুলাল মা আমিনার,
খদিজার স্বামী, প্রিয়তম আয়েশার,
আসহাবের হামদম, ওয়ালেদফাতেমার,
বেলালের আজান, খালেদের তলোয়ার,
কেয়ামতে উম্মত শাফায়ত-কারী॥
তৌহিদ-বাণী মুখে, আল কোরআন হাতে,
খোদার নূর দেখি যার হাসির ইশারাতে,
যাঁর কদমের নীচে দোলে কত জিন্নাত,
যে দু-হাতে বিলাল দুনিয়ায় খোদার মহব্বত
মেরাজের দুলহা আল্লার আরশচারী॥
নয়নে যাঁর সদা খোদার রহমত ঝরে
সংসার মরুবাসী পিয়াসার তরে,
আনিল যে কওসর সাহারা নিঙাড়ি॥

মদিনায় যাবি কে আয় আয়

মদিনায় যাবি কে আয় আয়।
উড়িল নিশান দিনের বিষাণ বাজিল যাহার দরওয়াজায়॥
হিজরত করে যে দেশে
ঠাঁই পেলেন হজরত এসে,
খেলিতেন যথায় হেসে
হাসান হোসেন ফাতেমায়॥

হজরত চার আসহাব যথায় করলেন খেলাফত,
মসজিদে যাঁর প্রিয় মোহাম্মদ করতেন এবাদত;
ফুটল যেথায় প্রথম বীর খালেদের হিম্মত,
খোশ এলহান দিতেন আজান বেলাল যেথায়॥
যার পথের ধূলির মাঝে
আহমদের চরণের ছোঁয়া রাজে,
তৌহিদের ধ্বনি বাজে
যার আশমানে যার ‘লু’হাওয়ায়॥

মরুর ধূলি উঠল রেঙে রঙিন গোলাপ-রাগে

মরুর ধূলি উঠল রেঙে রঙিন গোলাপ-রাগে।
বুলবুলিরা উঠল গেয়ে মক্কার গুলবাগে॥

খোদার প্রেমের কোন দিওয়ানা
দ্বারে দ্বারে দেয় রে হানা,
নবীন আশার আলো পেয়ে ঘুমন্ত সব জাগে॥

এ কোন তরুণ প্রেমিক এল কাবার অঙ্গনে,

সবুজ পাতার নিশান দোলায় শুকনো খেজুর বনে॥
এল নব দ্বীনের নকিব
চির-চাওয়া খোদার হবিব,
নিখিল পাপী তাপী যাঁহার পায়ের পরশ মাগে॥

মোহর‍্‍মের চাঁদ এল ওই কাঁদাতে ফের দুনিয়ায়

মর্সিয়া জয়জয়ন্তী মিশ্র – সাদ্রা

মোহর‍্‍মের চাঁদ এল ওই কাঁদাতে ফের দুনিয়ায়।
ওয়া হোসেনা ওয়া হোসেনা তারই মাতম শোনা যায়॥
কাঁদিয়া জয়নাল আবেদিন বেহোশ হল কারবালায়।
বেহেশতে লুটিয়া কাঁদে আলি ও মা ফাতেমায়॥
আজও শুনি কাঁদে যেন কুল মুলুক আশমান জমিন।
ঝরে মেঘে খুন লালে-লাল শোক-মরু সাহারায়॥
কাশেমের লাশ লয়ে কাঁদে বিবি সকিনা।
আসগরের ওই কচি বুকে তির দেখে কাঁদে খোদায়॥
কাঁদে বিশ্বের মুসলিম আজি, গাহে তারই মর্সিয়া।
ঝরে হাজার বছর ধরে অশ্রু শোকে হায়॥

যাবি কে মদিনায়, আয় ত্বরা করি

পিলু – কারফা

যাবি কে মদিনায়, আয় ত্বরা করি।
তোর খেয়া-ঘাটে এল পুণ্য-তরি॥
আবুবকর উমর খাত্তাব
আর উসমান আলি হাইদর
দাঁড়ি এ সোনার তরণির
পাপী সব নাই নাই আর ডর॥
এ তরির কান্ডারি আহমদ,
পাকা সব মাঝি ও মাল্লা,
মাঝিদের মুখে সারি-গান
শোন ওই ‘লা শরিক আল্লাহ্’!
পাপ দরিয়ার তুফানে আর নাহি ডরি॥
ইমানের পারানি কড়ি আছে যার
আয় এ সোনার নায়,
ধরিয়া দীনের রশি
কলেমার জাহাজ-ঘাটায়।
ফেরদৌস হতে ডাকে হুর পরি॥

যেয়ো না যেয়ো না মদিনা-দুলাল

যেয়ো না যেয়ো না মদিনা-দুলাল,
হয়নি যাবার বেলা।
সংসার-পাথারে আজও দুলে পাপের ভেলা।
আজও হয়নি যাবার বেলা॥
মেটেনি তোমারে দেখার পিয়াসা,
মেটেনি কদম জিয়ারত আশা,
হজরত, এই জমেছে প্রথম
দীন-ই-ইসলাম মেলা॥
ছড়ায়ে পড়েনি তোমার কালাম
আজিও সকল দেশে,
ফিরিয়া আসেনি সিপাহিরা তব
আজও বিজয়ীর বেশে॥
দীনের বাদশা চাও ফিরে চাও
শোনো দুর্দিনে বেদনা ভোলাও
গুনাহ‍্‍গার এই উম্মতে তব
হানিয়ো না অবহেলা॥

 রবে না এ বৈকালি ঝড় সন্ধ্যায়

চিত্রা-গৌরী – ঠুংরি

রবে না এ বৈকালি ঝড় সন্ধ্যায়।
বহিবে ঝিরিঝিরি চৈতালি বায়॥
দুপুরে যে ধরেছিল দীপক তান
বেলাশেষে গাহিবে সে মুলতানে গান,
কাঁদিবে সে পুরবিতে গোধূলিবেলায়॥
নৌবতে বাজিবে গো ভীম-পলাশি
উদাস পিলুর সুরে ঝুরিবে বাঁশি,
বাজিবে নূপুর হয়ে তটিনী ও-পায়॥

রাখিসনে ধরিয়া মোরে, ডেকেছে মদিনা আমায়

আশাবরি পিলু – কারফা

রাখিসনে ধরিয়া মোরে,
ডেকেছে মদিনা আমায়।
আরফাত-ময়দান হতে
তারই তকবীর শোনা যায়॥
কেটেছে পায়ের বেড়ি,
পেয়েছি আজাদি ফরমান,
কাটিল জিন্দেগি বৃথাই
দুনিয়ার জিন্দান-খানায়॥
ফুটিল নবির মুখে
যেখানে খোদার বাণী,
উঠিল প্রথম তকবীর
‘আল্লাহ্ আকবর’ধ্বনি,
যে দেশে পাহাড়ে মুসা
দেখিল খোদার জ্যোতি,
যাব রে যাব সেইখানে,
রব না পড়িয়া হেথায়॥
যে দেশের ধুলিতে
আছে নবিজির চরণ-ধূলি,
সে-ধূলি করিব সুর্মা,
চুমিব নয়নে তুলি,
যে দেশের বাতাসে আছে
নবিজির দেহের খোশবু,
যে দেশের মাটিতে আছে
নবিজির দেহ মিশে হায়॥
খেলেছে যেথায় ফাতেমা,
খেলেছে হাসান ও হোসেন,
যাব সেই বেহেশ‍্‍তে ধরার,
খোদার ওই ঘর কাবা যথায়।

শহিদি ঈদগাহে দেখ আজ জমায়ত ভারি

পিলু-খাম্বাজ – দাদরা

শহিদি ঈদগাহে দেখ আজ জমায়ত ভারি।
হবে দুনিয়াতে আবার ইসলামি ফরমান জারি॥
তুরান ইরান হেজাজ মেসের হিন্দ মরক্কো ইরাক,
হাতে হাত মিলিয়ে আজ দাঁড়ায়েছে সারি সারি॥
ছিল বেহোশ যারা আঁশু ও আপশোশ লয়ে,
চাহে ফিরদৌস তারা জেগেছে নও জোশ লয়ে।
তুইও আয় এই জমা-তে ভুলে যা দুনিয়াদারি॥
ছিল জিন্দানে যারা আজকে তারা জিন্দা হয়ে
ছোটে ময়দানে দারাজ-দিল আজি শমশের লয়ে।
তকদির বদলেছে আজ উঠিছে তকবীর তারই॥

সকাল হল, শোন রে আজান, ওঠ রে শয্যা ছাড়ি

সকাল হল, শোন রে আজান, ওঠ রে শয্যা ছাড়ি।
মসজিদে চল দীনের কাজে ভোল দুনিয়াদারি॥
ওজু করে ফেল রে ধুয়ে নিশীথ রাতের গ্লানি,
সিজদা করে জায়-নামাজে ফেল রে চোখের পানি,
খোদার নামে সারাদিনের কাজ হবে না ভারী॥
নামাজ পড়ে দু-হাত তুলে প্রার্থনা কর তুই,
ফুল-ফসলে ভরে উঠুক সকল চাষির ভুঁই,
সকল লোকের মুখে হউক আল্লার নাম জারি॥
ছেলেমেয়ে সংসার-ভার সঁপে দে আল্লারে,
নবিজির দোওয়া ভিক্ষা কর রে বারে বারে,
তোর হেসে নিশি প্রভাত হবে, সুখে দিবি পাড়ি॥

সাহারাতে ফুটল রে রঙিন গুলে-লালা

পাহাড়ি – কারফা

সাহারাতে ফুটল রে
রঙিন গুলে-লালা।
সেই ফুলেরই খোশবুতে
আজ দুনিয়া মাতোয়ালা॥
সে ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি
চাঁদ সুরুয গ্রহ তারায়,
ঝুঁকে পড়ে চুমে সে ফুল
নীল গগন নিরালা॥
সেই ফুলেরই রওশনিতে
আরশ কুরসি রওশন,
সেই ফুলেরই রং লেগে
আজ ত্রিভুবন উজালা॥
সেই ফুলেরই গুলিস্তানে
আসে লাখো পাখি,
সে ফুলেরে ধরতে বুকে
দুলে রে ডাল-পালা॥
চাহে সে ফুল জিন ও ইনসান
হুর পরি ফেরেশতায়,
ফকির দরবেশ বাদশা চাহে
করতে গলে মালা॥
চেনে রসিক ভোমরা বুলবুল
সেই ফুলের ঠিকানা,
কেউ বলে হজরত মোহাম্মদ
কেউ বা কমলিওয়ালা॥

 সৈয়দে মক্কী মদনী আমার নবি মোহাম্মদ

মিশ্র খাম্বাজ – কারফা

সৈয়দে মক্কী মদনী
আমার নবি মোহাম্মদ।
করুণা-সিন্ধু খোদার বন্ধু
নিখিল মানব-প্রেমাস্পদ॥
আদম নূহ্ ইবরাহিম দাউদ
সোলেমান মুসা আর ইসা,
সাক্ষ্য দিল আমার নবির,
তাদের কালাম হল রদ॥
যাঁহার মাঝে দেখল জগৎ
ইশারা খোদার নূরের,
পাপ দুনিয়ায় আনল যে রে
পূণ্য বেহেশ‍্‍তি সনদ॥
হায় সেকান্দর খুঁজল বৃথাই
আব-হায়াত এই দুনিয়ায়,
বিলিয়ে দিল আমার নবি
সে সুধা মানব সভায়।
হায় জুলেখা মজল বৃথাই
ইউসোফের ওই রূপ দেখে,
দেখলে আমার নবির সুরত
যোগীন হত ভসম্ মেখে।
শুনলে নবির শিরীন জবান,
দাউদ মাগিত মদদ॥
ছিল নবির নূর পেশানীতে,
তাই ডুবল না কিশতী নূহের,
পুড়ল না আগুনে হজরত
ইব্রাহিম সে নমরুদের,
বাঁচল ইউনোস মাছের পেটে
স্মরণ করে নবিব পদ,
দোজখ আমার হারাম হল
পিয়ে কোরানের শিরীন শহদ॥

Exit mobile version