তোরা যা রে এখনই হালিমার কাছে
তোরা যা রে এখনই হালিমার কাছে
লয়ে ক্ষীর সর ননী।
আমি খোয়াবে দেখেছি কাঁদিছে মা বলে
আমার নয়ন-মণি॥
মোর শিশু আহমদে যেদিন কাঁদিয়া
হালিমার হাতে দিয়াছি সঁপিয়া,
সেই দিন হতে কেঁদে কেঁদে মোর
কাটিছে দিন-রজনি॥
পিতৃহীন সে সন্তান হায়
বঞ্চিত মার স্নেহে,
তারে ফেলে দূরে কোল খালি করে
থাকিতে পারি না গেহে॥
অভাগিনি তার মা আমিনায়
মনে করে সে কি আজও কাঁদে, হায়!
বলিস তাহারই আসার আশায়
দিবানিশি দিন গণি॥
তৌহিদের মুরশিদ আমার মোহাম্মদের নাম
তৌহিদের মুরশিদ আমার মোহাম্মদের নাম॥
মুরশিদ মোহাম্মদের নাম।
ওই নাম জপিলেই বুঝতে পারি খোদাই কালাম
মুরশিদ মোহাম্মদের নাম॥
ওই নামেরই রশি ধরে যাই আল্লার পথে,
ওই নামেরই ভেলায় চড়ে ভাসি নূরের স্রোতে,
ওই নামেরই বাতি জ্বেলে দেখি লোহ আরশ-ধাম
মুরশিদ মোহাম্মদের নাম॥
ওই নামেরই দামন ধরে আছি, আমার কীসের ভয়;
ওই নামের গুণে পাব আমি খোদার পরিচয়;
ওই কদম মোবারক যে আমার বেহেশতি তাঞ্জাম
মুরশিদ মোহাম্মদের নাম॥
তৌহিদেরই বান ডেকেছে সাহারা মরুর দেশে
তৌহিদেরই বান ডেকেছে
সাহারা মরুর দেশে।
দুনিয়া জাহান ডুবুডবু
সেই স্রোতে যায় ভেসে॥
সেই জোয়ারে আমার নবি পারের তরি নিয়ে,
আয় কে যাবি পারে, ডাকে দ্বারে দ্বারে গিয়ে;
যে চায় না, তারেও নেয় সে নায়ে আপনি ভালোবেসে॥
পথ সে দেখায় ঈদের চাঁদের পিদিম নিয়ে হাতে,
হেসে হেসে দাঁড় টানে চায় আসহাব তার সাথে॥
নামাজ রোজার ফুল-ফসলে শ্যামল হল মরু,
প্রেমের রসে উঠল পুরে নীরস মনের তরু।
খোদার রহম এল রে আখেরে নবির বেশে॥
ত্রাণ করো মওলা মদিনার
ত্রাণ করো মওলা মদিনার
উম্মত তোমার গুনাহ্গার কাঁদে॥
তব প্রিয় মুসলিম দুনিয়ার
পড়েছে আবার গুনাহের ফাঁদে॥
নাহি কেউ ইমানদার, নাহি নিশান-বর্দার,
মুসলিম জাহানে নাহি আর পরহেজগার,
জামাত শামিল হতে যায় না মসজিদে,
ভুলিয়াছে কলমা শাহাদত
পড়ে না নামাজ ঈদের চাঁদে॥
নাহি দান খয়রাত,ভুলে মোহ-ফাঁসে
মেতে আছে সবে বিভব-বিলাসে,
বসিয়াছে জালিম শাহি তখতে তব
মজলুমের এ ফরিয়াদ আর কারে কব।
তলওয়ার নাহি নাহি আর
পায়ে গোলামির জিঞ্জির বাঁধে॥
দরিয়ায় ঘোর তুফান, পার করো নাইয়া
জংলা – দাদরা
দরিয়ায় ঘোর তুফান, পার করো নাইয়া।
রজনি আঁধার ঘোর, মেঘ আসে ছাইয়া॥
যাত্রী গুনাহ্গার জীর্ণ তরণি,
অসীম পাথারে কাঁদি পথ হারাইয়া॥
হে চির কান্ডারি,
পাপে তাপে বোঝাই তরি,
তুমি না করিলে পার,
পার হব কেমন করি।
সুখ-দিন ভুলে থাকি,
বিপদে তোমারে স্মরি,
ডুবাবে কি তব নাম,
আমারে ডুবাইয়া॥
মা-র কাছে মার খেয়ে
শিশু যেমন মাকে ডাকে,
যত দাও দুখ শোক,
ততই ডাকি তোমাকে।
জানি শুধু তুমি আছ,
আসিবে আমার ডাকে,
তোমারই এ তরি প্রভু,
তুমি চলো বাহিয়া॥
দিকে দিকে পুন জ্বলিয়া উঠেছে দীন-ই-ইসলামী লাল মশাল
দিকে দিকে পুন জ্বলিয়া উঠেছে
দীন-ই-ইসলামী লাল মশাল।
ওরে বে-খবর, তুইও ওঠ্ জেগে,
তুইও তোর প্রাণ-প্রদীপ জ্বাল।।
গাজী মুস্তফা কামালের সাথে
জেগেছে তুর্কী সুর্খ-তাজ,
রেজা পহ্লবী-সাথে জাগিয়াছে
বিরান মুলুক ইরানও আজ
গোলামী বিসরি’ জেগেছে মিসরী,
জগলুল-সাথে প্রাণ-মাতাল।।
ভুলি’ গ্লানি লাজ জেগেছে হেজাজ
নেজদ্ আরবে ইবনে সউদ্
আমানুল্লার পরশে জেগেছে
কাবুলে নবীন আল-মামুদ,
মরা মরক্কো বাঁচাইয়া আজি
বন্দী করিম রীফ্-কামাল।।
জাগে ফয়সল্ ইরাক আজমে,
জাগে নব হারুন-আল্-রশীদ,
জাগে বয়তুল মোকাদ্দস্ রে;
জাগে শাম দেখ্ টুটিয়া নিঁদ,
জাগে না কো শুধু হিন্দের
দশ কোটি মুসলিম বে-খেয়াল।।
মোরা আস্হাব কাহাফের মত
হাজারো বছর শুধু ঘুমাই,
আমাদেরি কেহ ছিল বাদশাহ্
কোন কালে; তার করি বড়াই,
জাগি যদি মোরা, দুনিয়া আবার
কাঁপিবে চরণে টাল্মাটাল।।
দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে বাজে
দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে বাজে
মসজিদেরই মিনারে।
এ কী খুশির অধীর তরঙ্গ উঠল জেগে
প্রাণের কিনারে॥
মনে জাগে, হাজার বছর আগে
ডাকিত বেলাল এমনই অনুরাগে,
তাঁর খোশ এলাহান মাতাইত প্রাণ
গলাইত পাষাণ ভাসাইত মদিনারে
প্রেমে ভাসাইত মদিনারে॥
তোরা ভোল গৃহ-কাজ, ওরে মুসলিম নাম
চল খোদার রাহে, শোন ডাকিছে ইমাম।
মেখে দুনিয়ার খাক বৃথা রহিলি না-পাক,
চল মসজিদে তুই শোন মোয়াজ্জিনের ডাক,
তোর জনম যাবে বিফল যে ভাই
এই এবাদত বিনা রে॥
দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলা দেশের কুটির হতে
দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলা দেশের কুটির হতে
বেহোশ হয়ে চলেছি যেন কেঁদে কেঁদে কাবার পথে॥
হায়গো খোদা কেন মোরে
পাঠাইলে কাঙাল করে
যেতে নারি প্রিয় নবির মাজার শরিফ জিয়ারতে॥
স্বপ্নে শুনি নিতুই রাতে যেন মিশর থেকে
কাঁদছে বেলাল ঘুমন্ত সব মুসলিমেরে ডেকে ডেকে
য়্যা এলাহি। বলো সে কবে
আমার স্বপন সফল হবে
(আমি) গরিব বলে হব কি নিরাশ মদিনা
দেখার নিয়ামতে॥
দৃষ্টিতে আর হয় না সৃষ্টি আগের মতো গোলাপ ফুল
(কবির অপ্রকাশিত গান)
দৃষ্টিতে আর হয় না সৃষ্টি আগের মতো গোলাপ ফুল।
কথায় সুরে ফুল ফুটাতাম, হয় না এখন আর সে ভুল॥
বাসি হাসির মালা নিয়ে
কী হবে নওরোজে গিয়ে,
চাঁদ না দেখে আঁধার রাতি বাঁধে কি গো এলোচুল?
আজও দখিন হাওয়ায় ফাগুন আনে,
বুলবুলি নাই গুলিস্তানে,
দোলে না আর চাঁদকে দেখে বনে দোলন-চাঁপার দুল॥
কী হারাল, নাই কী যেন,
মন হয়েছে এমন কেন?
কোন নিদয়ের পরশ লেগে হয় না হৃদয় আর ব্যাকুল॥