খুশি লয়ে খোশ-রোজের
কাফি – কারফা
খুশি লয়ে খোশ-রোজের
আয় খেয়ালি খোশ-নসিব।
জ্বাল দেয়ালি শবেরাতের,
জ্বাল রে তাজা প্রাণ-প্রদীপ।
আন নয়া দীনী ফরমান
দরাজ দিলের দৃপ্ত গান,
প্রাণ পেয়ে আজ গোরস্থান
তোর ডাকে জাগুক নকিব।
আন মহিমা হজরতের
শক্তি আন শেরে খোদার,
কোরবানি আন কারবালার
আন রহম মা ফাতেমার।
আন উমরের শৌর্য বল,
সিদ্দিকের আন সাচ্চা মন,
হাসান হোসেনের সে ত্যাগ,
শহিদানের মৃত্যু-পণ।
খোদার হবিব শেষ নবি,
তুই হবি নবির হবিব।
খোতবা পড়বি মসজিদে
তুই খতিব নূতন ভাষায়,
শুষ্ক মালঞ্চের বুকে
ফুল ফুটাবি তোর হাওয়ায়,
এসমে-আজম এনে
মৃত মুসলিমে তুই কর সজীব।
খোদার প্রেমের শারাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
মাঢ়-মিশ্র – কারফা
খোদার প্রেমের শারাব পিয়ে
বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে।
ছেড়ে মসজিদ আমার মুরশিদ
এল যে এই পথ ধরে॥
দুনিয়াদারির শেষে আমার
নামাজ রোজার বদলাতে
চাই না বেহেশ্ত খোদার জাছে
নিত্য মোনাজাত করে॥
কায়েস যেমন লায়ালি লাগি
লভিল মজনু খেতাব,
যেমন ফরহাদ শিরীর প্রেমে
হল দীওয়ানা বেতাব,
বে-খুদীতে মশগুল আমি
তেমনই মোরা খোদার তরে॥
পুড়ে মরার ভয় না রাখে,
পতঙ্গ আগুনে ধায়;
সিন্ধুতে মেটে না তৃষ্ণা,
চাতক বারি-বিন্দু চায়;
চাকোর চাহে চাঁদের সুধা,
চাঁদ সে আশমানে কোথায়;
সুরুয থাকে কোন সুদূরে,
সূর্যমুখী তারেই চায়;
তেমনি আমি চাহি খোদায়,
চাহি না হিসাব করে॥
ঘর-ছাড়া ছেলে আকাশের চাঁদ আয় রে
ঘর-ছাড়া ছেলে আকাশের চাঁদ আয় রে
জাফরানি রঙের পরাব পিরান তোর গায় রে।
আয় রে॥
আশমানে যেতে চায় তারা হয়ে আমার নয়ন-তারা
তোর খেলার সাথি কাঁদে শাপলার ফুল, ফিরে আয় পথ-হারা।
দুনয়ন ঘুমে ঢুলে, হৃদয় ঘুমায় না,
কাজ পেতে চায় রে॥
চোখের কাজল তোর চাঁদ-মুখে লেগেছে,
(আয়) মুছাব আঁচলে,
মায়ের পরানে তোর স্নেহের সাগর-তরঙ্গ উথলে।
(মোর) মনের ময়না! ঘরে মন রয় না,
পথ চেয়ে রয়, রাত কেটে যায় রে॥
জাগে না সে জোশ লয়ে আর মুসলমান
ভৈরবী – কারফা
জাগে না সে জোশ লয়ে আর মুসলমান
করিল জয় যে তেজ লয়ে দুনিয়া জাহান॥
যাহার তকবীর ধ্বনি তকদির
বদলাল দুনিয়ার,
না-ফরমানির জামানায়
আনিল ফরমান খোদার,
পড়িয়া বিরান আজি
সে বুলবুলিস্তান॥
নাহি সাচ্চাই সিদ্দিকের,
উমরের নাহি সে ত্যাগ আর,
নাহি সে বেলালের ইমান,
নাহি আলির জুলফিকার,
নাহি আর সে জেহাদ লাগি
বীর শহিদান॥
নাহি আর বাজুতে কুওত
নাহি খালেদ-মুসা-তারেক,
নাহি বাদশাহি তখ্ত তাউস,
ফকির আজ দুনিয়ার মালিক,
ইসলাম কেতাবে শুধু,
মুসলিম গোরস্থান॥
ঝরা ফুল দলে কে অতিথি
কাফি-মিশ্র – দাদরা
ঝরা ফুল দলে কে অতিথি
সাঁঝের বেলায় এলে কানন-বীথি॥
ও চোখে কী মায়া
ফেলেছে ছায়া
যৌবন-মদির দোদুল কায়া।
তোমার ছোঁয়ায় নাচন লাগে
দখিন হাওয়ায়
লাগে চাঁদের স্বপন বকুল চাঁপায়,
কোয়েলিয়া কুহরে কূ কূ গীতি॥
তোমার নূরের রওশনি মাখা
তোমার নূরের রওশনি মাখা
নিখিল ভুবন অসীম গগন।
তোমার অনন্ত জ্যোতির ইশারা
গ্রহ তারা চন্দ্র তপন॥
তোমার রূপের ইঙ্গিত খোদা
ফুটিছে বনের কুসুম সদা,
তোমার নূরের ঝলক হেরি
মেঘে বিজলি চমকে যখন॥
প্রাণের খুশি শিশুর হাসি
মধুর তোমার রূপ দেয় প্রকাশি,
তোমার জ্যোতির সমুদ্রে খোদা
আলোক ঝিনুক মোর এ দুটি নয়ন॥
ধানের খেতে নদী-তরঙ্গে
দুলে তোমার রূপ মধুর ভঙ্গে,
নিতি দেখা দাও হাজার রঙ্গে
অরূপ নিরাকার তুমি নিরঞ্জন॥
তোমারই মহিমা সব বিশ্বপালক করতার
মান্দ – কারফা
তোমারই মহিমা সব বিশ্বপালক করতার।
করুণা কৃপার তব নাহি সীমা নাহি পার।
বিশ্বপালক করতার॥
রোজ হাশরের বিচার দিনে
তুমিই মালিক এয়্ খোদা,
আরাধনা করি প্রভু,
আমরা কেবলই তোমার।
বিশ্বপালক করতার॥
সহায় যাচি তোমারই নাথ,
দেখাও মোদের সরল পথ,
তাদের পথে চালাও খোদা
বিলাও যাদের পুরস্কার।
বিশ্বপালক করতার॥
অবিশ্বাসী ধর্মহারা যাহারা সে ভ্রান্ত-পথ,
চালায়ো না তাদের পথে,
এই চাহি পরওয়ারদেগার।
বিশ্বপালক করতার॥
তোমায় যেমন করে ডেকেছিল আরব মরুভূমি
তোমায় যেমন করে ডেকেছিল আরব মরুভূমি!
ওগো আমার নবি প্রিয় আল আরবি
তেমনি করে ডাকি যদি আসবে নাকি তুমি॥
যেমন কেঁদে দজলা ফোরাত নদী
কেঁদে দজলা ফোরাত নদী
হে মোর মরুচারী নবুয়তধারী
তেমনি করে কাঁদি যদি আসবে নাকি তুমি॥
যেমন মদিনা আর হেরা পাহাড়
জেগেছিল আশায় তোমার
হে হজরত মম হে মোর প্রিয়তম
তেমনি করে জাগি যদি আসবে না কি তুমি॥
মজলুমেরা কাবা ঘরে
কেঁদেছিল যেমন করে,
হে আমিনা লালা, হে মোর কমলিওয়ালা,
তেমনি করে চাহিযদি আসবে নাকি তুমি॥
তোরা দেখে যা, আমিনা মায়ের কোলে
তোরা দেখে যা, আমিনা মায়ের কোলে।
মধু পূর্ণিমারই সেথা চাঁদ দোলে॥
যেন উষার কোলে রাঙা রবি দোলে॥
কুল-মখ্লুকে আজি ধ্বনি উঠে, কে এল ওই,
কলেমা শাহাদতের বাণী ঠোঁটে, কে এল ওই,
খোদার জ্যোতি পেশানীতে ফোটে, কে এল ওই,
আকাশ গ্রহ তারা পড়ে লুটে, – কে এল ওই,
পড়ে দরুদ ফেরেশতা,
বেহেশ্তে সব দুয়ার খোলে॥
মানুষে মানুষের অধিকার দিল যে জন,
‘এক আল্লাহ্ ছাড়া প্রভু নাই’কহিল যে জন,
মানুষের লাগি চির-দীন বেশ নিল যে জন,
বাদশা ফকিরে এক শামিল করিল যে জন,
এল ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবি,
ব্যথিত মানবের ধ্যানের ছবি,
আজি মাতিল বিশ্ব-নিখিল মুক্তি-কলরোলে॥