ঈদুজ্জোহার তকবীর শোন ঈদগাহে
ঈদুজ্জোহার তকবীর শোন ঈদগাহে।
(তোর) কোরবানিরই সামান নিয়ে চল রাহে॥
কোরবানিরই রঙে রঙিন পর লেবাস,
পিরহানে মাখ রে ত্যাগের গুল-সুবাস,
হিংসা ভুলে প্রেমে মেতে ঈদগাহেরই পথে যেতে
দে মোবারক-বাদ দীনের বাদশাহে॥
খোদারে দে প্রাণের প্রিয়, শোন এ ঈদের মাজেরা,
যেমন পুত্র বিলিয়ে দিলেন খোদার নামে হাজেরা,
ওরে কৃপণ, দিসনে ফাঁকি আল্লাহে॥
তোর পাশের ঘরে গরিব কাঙাল কাঁদছে যে
তুই তাকে ফেলে ঈদগাহে যাস সং সেজে,
তাই চাঁদ উঠল, এল না ঈদ, নাই হিম্মত নাই উম্মিদ,
শোন কেঁদে কেঁদে বেহেশ্ত হতে হজরত আজ কী চাহে॥
ও কে সোনার চাঁদ কাঁদে রে
ও কে সোনার চাঁদ কাঁদে রে
হেরা গিরির পরে!
শিরে তাঁহার লক্ষ কোটি
চাঁদের আলো ঝরে॥
কী অপরূপ জ্যোতির ধারা নীল আশমান হতে
নামে বিপুল স্রোতে,
হেরা পাহাড় বেয়ে বহে সাহারা মরুর পথে–
সেই জ্যোতিতে দুনিয়া আজি ঝলমল করে॥
আগুনবরন ফেরেশ্তা এক এসে
খোদার হাবিব জাগো জাগো, বলে হেসে হেসে॥
নবুয়তের মোহর দিল বাহুতে তাঁর বেঁধে
তাজিম করে কদমবুসি করে কেঁদে কেঁদে;
সেই নবিরই নামে আজি দুনিয়া দরুদ পড়ে॥
ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ
পিলু – কারফা
ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে
এল খুশির ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে
শোন আশমানি তাকিদ॥
তোর সোনাদানা বালাখানা
সব রহে লিল্লাহ্
দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ
ভাঙাইতে নিদ॥
তুই পড়বি ঈদের নামাজ রে মন
সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজি মুসলিম
হয়েছে শহিদ॥
আজ ভুলে গিয়ে দোস্ত দুশমন
হাত মিলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল
ইসলামে মুরিদ।
যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা
নিত-উপবাসী
সেই গরিব এতিম মিসকিনে দে
যা কিছু মফিদ॥
ঢাল হৃদয়ের তোর তশতরিতে
শিরনি তৌহিদের,
তার দাওত কবুল করবেন হজরত,
হয় মনে উমিদ॥
তোরে মারল ছুঁড়ে জীবন জুড়ে
ইঁট পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তুল রে গড়ে
প্রেমেরই মসজিদ॥
ও মন, কারও ভরসা করিসনে তুই
ও মন, কারও ভরসা করিসনে তুই
এক আল্লার ভরসা কর।
আল্লা যদি সহায় থাকেন
ভাবনা কীসের, কীসের ডর॥
রোগে শোকে দুখে ঋণে
নাই ভরসা আল্লা বিনে,
তুই মানুষের সহায় মাগিস
তাই পাসনে খোদার নেক-নজর॥
রাজার রাজা বাদশা যিনি
‘গোলাম’হ তুই সেই খোদার,
বড়োলোকের দুয়ারে তুই
বৃথাই হাত পাতিসনে আর॥
তোর দুঃখের বোঝা ভারী হলে
ফেলে প্রিয়জনও যায় রে চলে,
সেদিন ডাকলে খোদায় তাহার রহম
ঝরবে রে তোর মাথার পর॥
ওগো আমিনা তোমার দুলালে আনিয়া
[ধাত্রী হালিমার উক্তি]
ওগো আমিনা! তোমার দুলালে আনিয়া
আমি ভয়ে ভয়ে মরি।
এ নহে মানুষ, বুঝি ফেরেশতা
আসিয়াছে রূপ ধরি॥
সে নিশীথে যখন বক্ষে ঘুমায়
চাঁদ এসে তাঁয় চুমু খেয়ে যায়,
দিনে যবে মেঘ-চারণে সে যায়
মেঘ চলে ছায়া করি।
সাথে সাথে তার মেঘ চলে ছায়া করি॥
মনে হয় যেন লুকাইয়া রাতে তোমার শিশুর পায়
কত ফেরেশ্তা হুরপরি এসে সালাম করিয়া যায়॥
সে চলে চায় যবে মরুর উপরে,
বসরা গোলাপ ফোটে থরে থরে,
তার চরণ ঘিরিয়া কাঁদে গুলবনে
অলিকুল গুঞ্জরি॥
ওরে ও চাঁদ উদয় হলি কোন জোছনা দিতে
(ওরে) ও চাঁদ! উদয় হলি কোন জোছনা দিতে!
(দেয়) অনেক বেশি আলো আমার নবির পেশানীতে॥
(ওরে) রবি! আলোক দিস যত তুই দগ্ধ করিস তত,
আমার নবি স্নিগ্ধ শীতল কোটি চাঁদের মতো,
(সে) নাশ করেছে মনের আঁধার ঈষৎ হাসিতে॥
(ওরে) আশমান! তুই সুনীল হলি জানি কেমন করে,
আমার নবির কালো চোখের একটুকু নীল হরে।
(ওরে) তারা! তোরা জ্যোতি পেলি নবির চাউনিতে॥
ওরে বসরা গোলাব! অনেক বেশি খোশবু তোদের চেয়ে
সেই ধূলিতে মোর নবিজি যেতেন যে-পথ বেয়ে।
সেই বারতা ফুলকে শোনায় বুলবুলি সংগীতে॥
কাবার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদিনায়
কাবার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদিনায়।
আমার সালাম পৌঁছে দিয়ো নবিজির রওজায়॥
হাজিদেরই যাত্রা পথে
দাঁড়িয়ে আছি সকাল হতে,
কেঁদে বলি কেউ যদি মোর সালাম নিয়ে যায়॥
পঙ্গু আমি, আরব সাগর লঙ্ঘি কেমন করে
তাই নিশিদিন কাবা যাওয়ার পথে থাকি পড়ে।
বলি ওরে, দরিয়ার ঢেউ
(মোর) সালাম নিয়ে গেল না কেউ,
তুই দিস মোর সালামখানি মরুর লু হাওয়ায়,
ওরে কাবার দরওয়াজায়॥
কে এলে মোর ব্যথার গানে
ঝিঁঝিট-খাম্বাজ – কারফা
কে এলে মোর ব্যথার গানে
গোপন লোকের বন্ধু গোপন।
নাইতে আমার গানের ধারায়
এলে সুরের মানসী কোন॥
গান গেয়েযাই আপন মনে
সুরের পাখি, গহন বনে,
সুরের পাখি, গহন বনে,
জানে শুধু তারই নয়ন॥
কে গো তুমি গন্ধ-কুসুম,
গান গেয়ে কি ভেঙেছি ঘুম,
তোমার ব্যথার নিশীথ নিঝুম
হেরে কি মোর গানের স্বপন॥
সুরের গোপন বাসর-ঘরে
গানের মালা বদল করে
সকল আঁখির অগোচরে
না দেখাতে মোদের মিলন॥
কোথায় তখ্ত তাউস, কোথায় সে বাদশাহি
খাম্বাজ – কারফা
কোথায় তখ্ত তাউস,
কোথায় সে বাদশাহি।
কাঁদিয়া জানায় মুসলিম
ফরিয়াদ য়্যা এলাহি॥
কোথায় সে বীর খালেদ,
কোথায় তারেক মুসা,
নাহি সে হজরত আলি’
সে জুলফিকারনাহি ॥
নাহি সে উমর খাত্তাব,
নাহি সে ইসলামি জোশ,
করিল জয় যে দুনিয়া,
আজ নাহি সে সিপাহি॥
হাসান হোসেন সে কোথায়,
কোথায় বীর শহিদান –
কোরবানি দিতে আপনায়
আল্লার মুখ চাহি॥
কোথায় সে তেজ ইমান
কোথায় সে শান শওকত,
তকদিরে নাই সে মাহ্তাব,
আছে পড়ে শুধু সিয়াহি॥