পেয়ে কেন নাহি পাই হৃদয়ে মম
খাম্বাজ – ঠুংরি
পেয়ে কেন নাহি পাই হৃদয়ে মম
হে চির-সুদূর প্রিয়তম॥
তুমি আকাশের চাঁদ,
আমি পাতিয়া সরসী-ফাঁদ
জনম জনম কাঁদি
কুমুদীর সম।
হে চির-সুদূর প্রিয়তম॥
আমি ফুলের কুলের রাধা,
বৃন্তের কলে বাঁধা,
চপল গগন-চারী
তুমি নিরমম।
হে চির-সুদূর প্রিয়তম॥
নিখিলের রূপে রূপে
দেখা দাও চুপে চুপে,
এলে না মুরতি ধরি
ওগো নিরুপম!
হে চির-সুদূর প্রিয়তম॥
ফাগুন-রাতের ফুলের নেশায়
পিলু – কাহারবা
ফাগুন-রাতের ফুলের নেশায়
আগুন-জ্বালায় জ্বলিতে আসে।
যে দীপশিখায় পুড়িয়া মরে
পতঙ্গ ঘোরে তাহারই পাশে॥
অথই দুখের পাথার-জলে
সুখের রাঙা কমল-দোলে,
কূলের পথিক হারায় দিশা
দিবস নিশা তাহারই বাসে॥
সুখের আশায় মেশায় ওরা
বুকের সুধায় চোখের সলিল।
মণির মোহে জীবন দহে
বিষের ফণীর গরল-শ্বাসে
বুকের পিয়ায় পেয়ে হিয়ায়
কাঁদে পথের পিয়ার লাগি,
নিতুই নতুন স্বরগ মাগি
নিতুই নয়ন- জলে ভাসে॥
ফুলকিশোরী! জাগো জাগো, নিশি ভোর
জৌনপুরি – দাদরা
ফুলকিশোরী! জাগো জাগো, নিশি ভোর।
দুয়ারে দখিন-হাওয়া
খোলো খোলো পল্লব-দোর॥
জাগাইয়া ধীরে ধীরে
যৌবন তনু-তীরে
যাব চলি উদাসী কিশোর॥
চিনি গো দেবতা চিনি
ও নূপুর-রিনিঝিনি,
ভেঙো না ভেঙো না ঘুম-ঘোর।
মধুমাসে আসো তুমি ফুলবাস-চোর।
প্রভাতে ফুটায়ে আঁখি
নিশীথে বহাবে আঁখি-লোর॥
বনে বনে দোলা লাগে
ছায়ানট – দাদরা
বনে বনে দোলা লাগে।
মনে মনে দোলা লাগে।
দখিনা-সমীর জাগে॥
এ কী এ বেদনা লয়ে
ফুটিল ফুল হৃদয়ে,
গোপনে মধুর ভয়ে
না-জানা পরশ মাগে॥
অশোক রঙিন ফুটে
কিশোর হৃদয় পুটে,
কপোল রাঙিয়া উঠে
অতনুর অনুরাগে॥
বাজায়ে জল-চুড়ি কিঙ্গিণি
আড়ানা – যৎ
বাজায়ে জল-চুড়ি কিঙ্গিণি,
কে চলো জলপথে উদাসিনী।
পথিক ডেকে বলো
ছল গো ছলছল
ছুঁতে উছলে জল
গরবিনি॥
তোমার কোল মাগি
কুলের হতভাগি
রহে ও কূলে জাগি
নিশীথিনী॥
বুকেতে বহে তরি,
চাহো না জলপরি
চলো সাগরে স্মরি
পূজারিনি॥
বৃন্দাবনে এ কী বাঁশরি বাজে
বৃন্দাবনি সারং – কাওয়ালি
বৃন্দাবনে এ কী বাঁশরি বাজে।
গোপিনী উন্মনা, মন নাহি কাজে॥
কুলবধূ-ঘটে ঘটে সে বাঁশি স্বনে
উছলি উছলি ওঠে নীর ক্ষণে ক্ষণে।
নয়ন-সলিল ঝরে গাগরি-মাঝে॥
ভাঙা মন আর জোড়া নাহি যায়
সিন্ধু-ভৈরবী – পাঞ্জাবি ঠেকা
ভাঙা মন আর জোড়া নাহি যায়।
ঝরা ফুল আর ফেরে না শাখায়॥
শীতের হাওয়ায় তুষার হয়ে
গলি খরতাপে বারি যায় বয়ে,
গলে নাকো আর হৃদয়-তুষার
উষ্ণ ছোঁয়ায়॥
গাঁথি ফুলমালা নাহি দিয়া গলে
শুকালে নিঠুর তব মুঠিতলে,
হাসিবে না সে ফুল শত আঁখিজলে
আর সে শোভায়॥
স্রোতের সলিলে
যে বাঁধ বাঁধিলে
ভাঙিয়া সে বাঁধ
তোমারে ভাসায়॥
মন কেন উদাসে এই ফাগুন-বাতাসে
(শুদ্ধ) সারং – একতালা
মন কেন উদাসে।
এই ফাগুন-বাতাসে॥
যাহারে না পাইনু কভু এ জীবনে,
সে কেন গো কাঁদাতে আসে নিতি স্মরণে।
কুসুমের গন্ধে গো
তারই সুবাস ভাসে॥
কেন এ সমীরে
সে আসে ফিরে ফিরে,
নয়ন-নদীতীরে
কেন জল উছাসে॥
মাধবী-তলে চলো মাধবিকা দল
মধুমাদ সারং – কাওয়ালি
মাধবী-তলে চলো মাধবিকা দল
আইল সুখ-মধুমাস।
বহিছে খরতর থর থর মরমর
উদাস চৈতি-বাতাস॥
পিককুল কলকল অবিরল ভাষে,
মদালস মধুপ পুষ্পল বাসে।
বেণু-বনে উঠিছে নিশাস॥
তরুণ নয়ন সম আকাশ আনীল,
তটতরু ছায়া ধরে নীর নিরাবিল,
বুকে বুকে স্বপন-বিলাস॥
মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর
ভৈরবী-গজল – দাদরা
মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর
নমো নম, নমো নম, নমো নম।
শ্রাবণ-মেঘে নাচে নটবর
ঝমঝম ঝমঝম ঝমঝম॥
শিয়রে বসি চুপি চুপি চুমিলে নয়ন
মোর বিকশিল আবেশে তনু
নীপসম নিরুপম মনোরম॥
মোর ফুলবনে ছিল যত ফুল
ভরি ডালি দিনু ঢালি দেবতা মোর!
হায় নিলে না সে ফুল ছি ছি বেভুল
নিলে তুলি খোঁপা খুলি কুসুম-ডোর।
স্বপনে কী যে কয়েছি তাই গিয়াছ চলি
জাগিয়া কেঁদে ডাকি দেবতায় –
প্রিয়তম প্রিয়তম প্রিয়তম॥
মোর ধেয়ানে মোর স্বপনে
পাহাড়ি মিশ্র – কাহারবা
মোর ধেয়ানে মোর স্বপনে
পরান-প্রিয়, দিয়ো হে দেখা।
মোর শয়নে মোর নয়নে
লিখিয়া যেয়ো সলিল-লেখা॥
পথ চলিতে আসিলে ভুলে
নিয়ো না তুলে তব দেউলে,
হবে না পূজা এ বনফুলে
দেবতা মম, ঝরিব একা॥
যাও যাও তুমি ফিরে
ভৈরবী – দাদরা
যাও যাও তুমি ফিরে
এই মুছিনু আঁখি।
কে বাঁধিবে তোমারে
হায় বনের পাখি॥
মোর এত প্রেম আশা
মোর এত ভালোবাসা
আজ সকলই দুরাশা
আর কী দিয়ে রাখি॥
এই অভিমান-জ্বালা
মোর একেলারই কালা,
ম্লান মিলনেরই মালা
দাও ধুলাতে ঢাকি॥
তোমারবেঁধেছিল নয়ন
শুধু এ রূপের জালে,
তাইদু-দিন কাঁদিয়া
হায় সে বাঁধন ছাড়ালে।
মোর বাঁধিয়াছে হিয়া
তায় ছাড়াব কী দিয়া,
সখা হিয়া তো নয়ন নহে
সে ছাড়ে না কাঁদিয়া
দু-দিন কাঁদিয়া।
আজ যে ফুল প্রভাতে
হায় ফুটিল শাখাতে,
তায় দেখিল না রাতে
সে ঝরিল না কি॥
হায় রে কবি প্রবাসী
নাই হেথা সুখ-হাসি
ফুল ঝরে হলে বাসি
রয় কাঁটার ফাঁকি॥
হিন্দোলি হিন্দোলি ওঠে নীল সিন্ধু
হিন্দোল – সাদ্রা
হিন্দোলি হিন্দোলি
ওঠে নীল সিন্ধু।
গগনে উঠিল তার
কোন্ পূর্ণ ইন্দু॥
শত শুক্তি-আঁখি দিয়া
পিইছে চাঁদ অমিয়া,
শিশির রূপে ঝরিয়া
পড়ে জ্যোৎস্না-বিন্দু॥