জাগো জাগো, পোহাল রাতি
ভৈরবী-ভূপালি – যৎ
জাগো জাগো, পোহাল রাতি।
গগন-আঙনে ম্লান চাঁদের বাতি।
পোহাল রাতি॥
মধুমাছি মধু বোলে,
ফুলমুখী ঘুম ভোলে,
শরমে নয়ন খোলে
শয়ন-সাথি।
পোহাল রাতি॥
সলিল লুটায় ঘটে
বধূর বুকের তটে,
বাজে বাঁশি ছায়াবটে
আবেশে মাতি।
পোহাল রাতি॥
জাগো, জাগো, খোলো গো আঁখি
টোড়ি – যৎ
জাগো, জাগো, খোলো গো আঁখি।
নিকুঞ্জ-ভবনে তব জাগিল পাখি।
খোলো গো আঁখি॥
তোমার রাতের ঘুমে
রবির কিরণ চুমে,
বাঁধিল কানন-ভূমে
ফুলের রাখি।
খোলো গো খোলো আঁখি॥
স্বপনে হেরিছ যারে
সে এল পূরব-দ্বারে,
বাতায়ন খুলি তারে
লহ গো ডাকি।
খোলো গো আঁখি॥
ঝরিছে অঝোরে বরষার বারি
মল্লার – কাওয়ালি
ঝরিছে অঝোরে বরষার বারি।
গগন সঘন ঘোর,
পবন বহিছে জোর,
একাকী কুটিরে মোর
রহিতে নারি॥
শিয়রে নিবেছে বাতি,
অন্ধ তমসা রাতি,
গরজে আওয়াজ বাজ
গগনচারী॥
চমকিছে চপলা,
জাগি ভয়-বিভলা
একা কুমারী॥
তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে
ভাটিয়ালি – কার্ফা
তোমায় কূলে তুলে বন্ধু
আমি নামলাম জলে।
আমি কাঁটা হয়ে রই নাই বন্ধু
তোমার পথের তলে॥
আমি তোমায় ফুল দিয়েছি কন্যা
তোমার বন্ধুর লাগি
যদি আমার শ্বাসে শুকায় সে ফুল
তাই হলাম বিবাগি।
তুমি বুকের তলায় আছ আমার গো
পরে শুকাইনি কো গলে॥
যে দেশ তোমার ঘর রে বন্ধু
সে দেশ হতে এসে
আমার দুখের তরি দিছি ছেড়ে
চলতেছে সে ভেসে,
এখন যে পথে নাই তুমি বন্ধু গো
তরি সেই পথে মোর চলে॥
দারুণ পিপাসায় মায়া-মরীচিকায়
জয়জয়ন্তী – একতালা
দারুণ পিপাসায় মায়া-মরীচিকায়
চাহিতে এলি জল বনের হরিণী।
দগ্ধ মরুতল কে তোরে দেবে জল
ঝরিবে আঁখি-নীর তোরই নিশিদিনই॥
নিবায়ে গৃহদীপ আপন নিশাসে
আলেয়ার পিছে এলি সুখ-আশে,
সে সুখ অবসান সমুখেতে শ্মশান
পিছনে অন্ধকার চির-নিশীথিনী॥
কেন তুই বনফুল বিলাস-কাননে
করিয়া পথ ভুল এলি অকারণে।
ছিঁড়ে সাঁঝে তোরে মালা গাঁথি ভোরে
দলিল বিলাসী পথ-ধূলি সনে॥
সন্ধ্যা-গোধূলির রাঙা রূপে ভুলে
আসিলি এ কোথায় তমসার কূলে।
শ্রাবণ-মেঘ হায় ভাবিয়া কুয়াশায়
হারালি পথ তোর রে হতভাগিনি॥
দুলে চরাচর হিন্দোল-দোলে
হিন্দোল – গীতাঙ্গী
দুলে চরাচর হিন্দোল-দোলে।
বিশ্বরমা দোলে বিশ্বপতি কোলে॥
গগনে রবি শশী গ্রহ তারা দুলে,
তড়িত-দোলনাতে মেঘ ঝুলন ঝুলে।
বরিষা শতনরি
দুলিছে মরি মরি,
দুলে বাদল-পরি
কেতকী-বেণি খোলে॥
নদী-মেখলা দোলে, দোলে নটিনী ধরা,
দুলে আলোক নভ-চন্দ্রতাপ ভরা।
করিয়া জড়াজড়ি দোলে দিবস নিশা,
দোলে বিরহবারি, দোলে মিলনতৃষা।
উমারে লয়ে বুকে
শিব দুলিছে সুখে,
দোলে অপরূপ
রূপলহর তোলে॥
দেখা দাও দাও দেখা ওগো দেবতা
নাগধ্বনি কানাড়া – মধ্যমান
দেখা দাও, দাও দেখা, ওগো দেবতা।
মন্দিরে পূজারিনি আশাহতা॥
ধূপ পুড়িয়া গেছে, শুকায়েছে মালা,
বন্ধ হল বা দ্বার, একা কুলবালা।
প্রভাতে জাগিবে সবে, রটিবে বারতা॥
জাগো জাগো দেবতা শূন্য দেউলে,
আরতি উঠিছে মোর বেদনার ফুলে।
বাণীহীন মন্দির, কহো কহো কথা॥
না মিটিতে সাধ মোর নিশি পোহায়
ভৈরবী – কাওয়ালি
না মিটিতে সাধ মোর নিশি পোহায়।
গভীর আঁধার ছেয়ে আজও হিয়ায়॥
আমার নয়ন ভরে
এখনও শিশির ঝরে,
এখনও বাহুর পরে
বঁধু ঘুমায়॥
এখনও কবরী-মূলে
কুসুম পড়েনি ঢুলে,
এখনও পড়েনি খুলে
মালা খোঁপায়॥
নিবায়ে আমার রাতি;
পোহাল সবার রাতি
নিশি জেগে মালা গাঁথি,
প্রাতে শুকায়॥
নাইয়া করো পার
ধবলশ্রী – মধ্যমান
নাইয়া, করো পার!
কূল নাহি, নদীজল সাঁতার॥
দু-কূল ছাপিয়া জোয়ার আসে,
নামিছে আঁধার, মরি তরাসে
দাও দাও কূল কুলবধূ ভাসে
নীর পাথার।
নাইয়া, করো পার॥
নিশীথ নিশীথ জাগি গোঁয়ানু রাতি
গৌড়সারং – যৎ
নিশীথ নিশীথ জাগি গোঁয়ানু রাতি।
জ্বলিয়া জ্বলিয়া নেভে শিয়রের বাতি॥
সারা দিন গাঁথি মালা তুলিয়া কুসুম,
পথ চাহি চাহি করে চোখে আসে ঘুম,
রহে পড়ি নব শেজ, কুসুমের পাঁতি॥
আমার কাননে আসি আলি যায় ফিরে,
গাহি গান ফেরে সাঁঝে পাখি সব নীড়ে॥
একেলা রহি গো শুধু আমি বিনা সাথি॥
নিশীথ-স্বপন তোর
ভৈরবী – দাদরা
নিশীথ-স্বপন তোর
ভুলে যা এ নিশি-শেষে
বাদল-অবসানে
আকাশ উঠেছে হেসে॥
চখার পাশে আসে
বিরহ-রাতের চখি।
আঁধার লুকাল ওই
দূর বনে এলোকেশে॥
শরম-রাঙা গালে
জাগিল কুমারী উষা,
তরুণ অরুণ ওই
এল রাঙা বর-বেশে॥
পরজনমে দেখা হবে প্রিয়
পরজ – একতালা
পরজনমে দেখা হবে প্রিয়।
ভুলিয়ো মোরে হেথা ভুলিয়ো॥
এ জনমে যাহা বলা হল না,
আমি বলিব না, তুমিও বোলো না।
জানাইলে প্রেম করিয়ো ছলনা,
যদি আসি ফিরে, বেদনা দিয়ো॥
হেথায় নিমেষে স্বপন ফুরায়,
রাতের কুসুম প্রাতে ঝরে যায়,
ভালো না বাসিতে হৃদয় শুকায়,
বিষ জ্বালা-ভরা হেথা অমিয়॥
হেথা হিয়া ওঠে বিরহে আকুলি,
মিলনে হারাই দু-দিনেতে ভুলি,
হৃদয় যথায় প্রেম না শুকায়,
সেই অমরায় মোরে স্মরিয়ো॥
পরদেশি বঁধু! ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি
মাঢ় – কাওয়ালি
পরদেশি বঁধু! ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশীথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি।
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি॥
যদি দীপ নিভে গো কুটিরে,
বাতায়ন-পানে চাহি যেয়ো না গো ফিরে,
নিবেছে আঁখির শিখা প্রাণ আছে বাকি।
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি॥
যদি গান থামে মোর মুখে,
ফিরিয়া যেয়ো না, বীণা রবে তবু বুকে
নাহি গান, কুলায়েতে আছে তবু পাখি।
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি॥