আসিলে কে অতিথি সাঁঝে
ভূপালি – আদ্ধা-কাওয়ালি
আসিলে কে অতিথি সাঁঝে
পূজার ফুল ঝরে বন-মাঝে॥
দেউল মুখরিত বন্দনা-গানে,
আকাশ-আঁখি চাহে তব পানে।
দোলে ধরাতল
দীপ-ঝলমল,
নৌবতে ভূপালি বাজে॥
এত কথা কি গো কহিতে জানে
খাম্বাজ-দেশ – দাদরা
এত কথা কি গো কহিতে জানে
চঞ্চল ওই আঁখি।
নীরব ভাষায় কী যে কহে যায়
মনের বনের পাখি –
চঞ্চল ওই আঁখি॥
মুদিত কমলে ভ্রমরেরই প্রায়
বন্দি হইয়া কাঁদিয়া বেড়ায়,
চাহিয়া চাহিয়া মিনতি জানায়
সুনীল আকাশে ডাকি –
চঞ্চল ওই আঁখি॥
বুঝিতে পারি না ও আঁখির ভাষা
জলে ডুবে তবু মিটে না পিয়াসা,
আদর সোহাগ প্রেম ভালোবাসা
অভিমান মাখামাখি।
মানস-সায়রে মরালেরই প্রায়
গহন সলিলে ভেসে ভেসে চায়।
আমার হিয়ার নিভৃত ব্যথায়
সাধ যায় ধরে রাখি।
চঞ্চল ওই আঁখি॥
এলে কী শ্যামল পিয়া কাজল মেঘে
কাজরি – কাহারবা
এলে কী শ্যামল পিয়া কাজল মেঘে
চাঁচর চিকুর ওড়ে পবন-বেগে॥
তোমার লাবণি ঝরে
পড়িছে অবনি পরে,
কদম শিহরে কর-পরশ লেগে॥
তড়িত ত্বরিত পায়ে
বিরহী-আঁখের ছায়ে তরাসে লুকায়।
ছুটিতে পথের মাঝে
ঝুমুর ঝুমুর বাজে ঘুঙুর দু-পায়।
অশনি হানার ছলে
প্রিয়ারে ধরাও গলে,
রাতের মুকুল কাঁদে কুসুমে জেগে॥
ওগো সুন্দর আমার
(ভজন) ভৈরবী – দাদরা
ওগো সুন্দর আমার!
সুন্দর আমার, এ কী দিলে উপহার॥
আমি দিনু পূজা-ফুল,
বর দিতে দিলে ভুল,
ভাঙিল আমার কূল,
তব স্রোতধার॥
গরল দিলে যে এই
অমৃত আমার সেই,
শুকাল নিশি-শেষেই
রাতের নীহার॥
তোমার সুখ-ছোঁয়ায়
ফুটেছে ফুল শাখায়,
তোমারই উতল বায়
ঝরিল আবার॥
ওরে মাঝি ভাই
ভাটিয়ালি – কাহারবা
ওরে মাঝি ভাই।
তুইকী দুখ পেয়ে কূল হারালি
অকূল দরিয়ায়॥
তোর ঘরের রশি ছিঁড়ে রে গেল –
ঘাটের কড়ি নাই,
তুই মাঝদরিয়ায় ভেসে চলিস
ভাসিয়ে তরি তাই।
ও ভাই দরিয়ায় আসে জোয়ার-ভাটি রে
তোর ওই চক্ষের পানি চাই॥
তোর চোখের জল ভাই ছাপাতে চাস
নদীর জলে এসে,
শেষে নদীই এল চক্ষে রে তোর
তুই চলিলি ভেসে।
তুই কলস দেখে নামলি জলে রে
এখন ডুবে দেখিস কলস নাই॥
তুই কূলে যাহার কূল না পেলি,
তারে অগাধ জলে
মিছে খুঁজে মরিস ওরে পাগল
তরি বাওয়ার ছলে।
ও ভাই দু-ধারে এর চোরা বালু রে
তোর হেথায় মনের মানুষ নাই॥
কাঁদিতে এসেছি আপনার লয়ে
জয়জয়ন্তী – একতালা
কাঁদিতে এসেছি আপনার লয়ে
কাঁদাতে আসিনি হে প্রিয় তোমারে।
এ মম আঁখি-জল আমারই নয়নের
ঝরিবে না এ জল তোমার দুয়ারে॥
ভালো যদি বাসি একাকী বাসিব,
বিরহ-পাথারে একাকী ভাসিব।
কভু যদি ভুলে আসি তব কূলে,
চমকি চলিয়া যাব দূর-পারে॥
কাঁটার বনে মোর ক্ষণিকের তরে
ফুটেছ রাঙা ফুল শুধু লীলাভরে।
মালা হয়ে কবে দুলিবে গলে কার
জাগিব একাকী লয়ে স্মৃতি কাঁটার।
কেহ জানিবে না শুকাল কে কোথা,
কার ফুলে কারে সাজালে দেবতা।
নিশীথ-অশ্রু মোর যাইবে শুকায়ে
তব সুখ-দিনে হাসির মাঝারে॥
কার বাঁশরি বাজে মুলতানি-সুরে
মুলতান – একতালা
কার বাঁশরি বাজে মুলতানি-সুরে
নদীকিনারে কে জানে।
সে জানে না কোথা সে সুরে ঝরে
ঝর-নির্ঝর পাষাণে॥
একে চৈতালি-সাঁঝ অলস
তাহে ঢলঢল কাঁচা বয়স
রহে চাহিয়া ভাসে কলস
ভাসে হৃদি বাঁশুরিয়া পানে॥
বেণি বাঁধিতে বসি অঙ্গনে
বধূ কাঁদে গো বাঁশরি-স্বনে।
যারে হারায়েছে হেলাভরে
তারে ও-সুরে মনে পড়ে,
বেদনা বুকে গুমরি মরে
নয়ন ঝুরে, বাধা না মানে॥
কী হবে লাল পাল তুলে ভাই
ভাটিয়ালি – কার্ফা
কী হবে লাল পাল তুলে ভাই
সাম্পানের উপর।
তোর পালে যত লাগবে হাওয়া রে
ও ভাই ঘর হবে তোর ততই পর॥
তোর কী দুঃখ হায় ভুলতে চাস ভাই,
ছেঁড়া পাল রাঙিয়ে,
এবার পরান ভরে কেঁদে নে তুই
অগাধ জলে নেয়ে॥
তোর কাঁদনে উঠে আসুক রে
ওই নদীর থেকে বালুর চর॥
তুই কীসের আশায় দিবি রে ভাই
কূলের পানে পাড়ি,
তোর দিয়া সেথা না জ্বলে ভাই
আঁধার যে ঘরবাড়ি॥
তুই জীবনকূলে পেলিনে তায় রে
এবার মরণজলে তালাশ কর॥
কে এল ডাকে চোখ গেল
কালাংড়া – কাহারবা-দাদরা
কে এল।
ডাকে চোখ গেল, ডাকে চোখ গেল,
ডাকে চোখ গেল॥
ওলো ও ডাকে কী ও
ঘুমের সতিনি ও,
ও যে চোখের বালি।
ঘুম ভাঙায় খালি।
সখী আঁখি মেলো॥
মেলোআঁখি মেলো॥
কে ডাকিল আমারে আঁখি তুলে
ভৈরবী – কার্ফা
কে ডাকিল আমারে আঁখি তুলে,
এই প্রভাতে তটিনি-কূলে কূলে॥
ওই ঘুমায়ে সকলই, জাগেনি কেউ,
জল নিতে আসেনি এখনও বউ,
শুধু তব নদীতে জেগেছে ঢেউ,
মেলেছে নয়ন কানন-ফুলে॥
যে সুবাস ঝরে ও এলোকেশে
কমলে তা দিলে নাহিতে এসে,
তব তনুবাস দিঘিতে ভেসে
মাতাইছে, মধুপ পথ ভুলে॥
ও শিশির কপোল-স্বেদবারি
পড়িল ঝরি নয়নে আমারই
জাগিয়া হেরি রূপ মনোহারী
দাঁড়ায়ে উষসী তোরণ-মূলে॥
কে তুমি দূরের সাথি
পুরবি – একতালা
কে তুমি দূরের সাথি
এলে ফুল ঝরার বেলায়।
বিদায়ের বংশী বাজে
ভাঙা মোর প্রাণের মেলায়॥
গোধূলির মায়ায় ভুলে
এলে হায় সন্ধ্যা-কূলে,
দীপহীন মোর দেউলে
এলে কোন্ লোর খেলায়॥
সেদিনও প্রভাতে মোর
বেজেছে আশাবরি,
পুরবির কান্না শুনি
আজি মোর শূন্য ভরি।
অবেলায় কুঞ্জবীথি
এলে মোর শেষ অতিথি,
ঝরা ফুল শেষের গীতি
দিনু দান তোমার গলায়॥