বেঁচে থাকার ইচ্ছা নিয়ে গ্রামটি ছেড়ে চলে এলুম
চলে এলুম, তোমায় ছেড়ে চলে এলুম
৯/৫/৭০
চাঁদের ভেতরে একজন
চাঁদের ভেতরে একজন নগ্নপ্রায় ব্রোথেল রমণী বসে
আছে হাঁটুর ভেতরে মাথা গুঁজে; মার্কিনী নায়কের মতো হিংস্র
তার করতলে এক বিষাক্ত ছুরি
জ্যোৎস্নায় চকচকে করছে দীর্ঘকাল
আকাশের সুনীল কপালে একটা মারাত্মক টিপ
প্রেমের লন্ঠনের মতো উজ্জ্বল অথচ ভয়াবহ
উত্তরাধিকার সুত্রে বর্তমান দারুণ আগুন জ্বলে আমাদের হৃদয়ে
রক্তের সবুজ সঙ্গীত ঈশ্বরের একান্ত বন্ধ; স্কুলের মেয়েদের
মতো মিষ্টি
য্যানো মধ্যরাতে সমূহ চুম্বন। শরীরে নেচে বেড়ার অনুভূতির
পাগল জন্তুরা
সন্ধ্যায় রমণীর বিপণী থেকে পরিচিত আকৃতি বেরিয়ে আসে দ্রুত
ছিন্নভিন্ন রঙীন পথে; সোনালী আলোয়; কঠিন চোখে রাখি
ফেরেশতার নিত্য হরিণ
অতঃপর পরবর্তী বিশ্বাসের উপর নির্ভর করতে করতে চলে যায়
প্রতিবাদহীন ফ্ল্যাটে
এবং রাত্রি গাঢ় হলে যখন পরস্পর শরীরে শরীরে মিশতে থাকে—
দ্যাখে; জানলায়
আকাশের সুনীল কপালে মারাত্মক-অশ্লীল মহিলাটি ঠিক তখনে বসে
আছে নির্বিকার
য্যানো গিলে খাবে এই আমুণ্ড আমাকেই!
৬/৩/৭২
ছন্দে, ভুল ছন্দে গদ্যপদ্য খেলা
পাখির ভাষা কণ্ঠে নিয়ে যেতে যেতে পোশাক আমার বদলে নেব
প্রেমিক পুরুষ পথ ভুলে যায় উড়তে উড়তে পথটা আমি চিনিয়ে দেব–
বংশীধ্বনি পরাঙমুখ ভুল ভ্রান্তি দুঃখ সুখ
নদীর স্রোত সোতস্বিনী, আমি যাবো উল্টো দিকে—
দেখতে পাবো ঈশ্বরীকে বসে আছে মা জননী!
বনান্তরে ঘন্টাধ্বনি;– একলা হাওয়া হলদে ডাহুক
কোনদিকে যায়? —ঘন আঁধার খেলা করে অনিমিখে!
।দুই।
পোশাক আমার হরিৎপোশাক, হরিৎ নয়, হতেও পারে—
দোকলা স্বভাব মনের ভেতর, টানাপোড়েন –
আমার তেমন ভাল্লাগেনা নারী আছে সংসারে—
যৌথ খামার দোকানপাট তাহার মাঝে আমার বাস
বানের জলে ডুবল ঘাট কবির দুঃখ বারোমাস
বারে মাসেই যেতে যেতে পোশাক আমার বদলে নেব
মদবিহ্বল জ্যোৎস্না রাতে সকাল সাঁঝে নদীর মতো স্রোতস্বিনী নদী হবো।
১৫/১০/৭৪
জন্মই আমার আজন্ম পাপ
জন্মই আমার আজন্ম পাপ, মাতৃজরায়ু থেকে নেমেই জেনেছি আমি
সন্ত্রাসের ঝাঁঝালো দিনে বিবর্ণ পত্রের মত হঠাৎ ফুৎকারে উড়ে যাই
পালাই পালাই সুদূরে
চৌদিকে রৌদ্রের ঝলক
বাসের দোতলায় ফুটপাতে রুটির দোকানে দ্রুতগামী নতুন মডেলের
চকচকে বনেটে রাত্রির জমকালো আলো ভাংগাচোরা চেহারার হদিস
ক্লান্ত নিঃশব্দে আমি হেঁটে যাই
পিছনে ঝাঁকড়া চুলওয়ালা যুবক। অষ্টাদশ বর্ষিয়ার নিপুণ ভঙ্গি
দম্পতির অলৌকিক হাসি প্রগাঢ় চুম্বন
কাঁথায় জড়ানো শিশুর অসতর্ক চিৎকার
এবং
আমি দেখে যাই হেঁটে যাই কোথায় সামান্য বাতাসে উড়ে যাওয়া চাল–
অর্থাৎ আমার নিবাস।
ঘরের স্যাঁতসেতে মেঝেয় চাঁদের আলো এসে খেলা করে
আমি তখন সঙ্গমে ব্যর্থ, স্ত্রীর দুঃখ অভিমান কান্না
সন্তান সন্তুতি পঙ্গু
পেটে জ্বালা, পাজরায় তেল মালিশের বাসন উধাও–
আমি কোথা যাই? পান্তায় নুনের অভাব।
নিঃসঙ্গতাও দেখেছি আমি, উৎকন্ঠার দিনমান জ্বলজ্বলে বাল্বের মতোন
আমারি চোখের মতো স্বজনের চোখ–
য্যানো আমুন্ড গ্রাস করবে এই আমাকেই
আমিই সমস্ত আহার নষ্ট করেছি নিমেষে!
শত্রুর দেখা নেই, অথচ আমারি শত্রু আমি–
জ্বলন্ত যৌবনে ছুটি ফ্যামিলি প্ল্যানিং কোথায়
কোথায় ডাক্তার কম্পাউন্ডার?
যারা আমাকে অপারেশন করবে?
পুরুষত্ব বিলিয়ে ভাবি, কুড়িটাকায় একসের চাল ও একদিনের অন্যান্য
সামান্য দ্রব্যাদী মিলবে তো?
আমার চৌদিকে উৎসুক নয়ন আহ্লাদী হাসি ঘৃণা আমি পাপী
এরা কেন জন্ম নেয়? এরাই তো আমাদের সুখের বাধা অভিশাপ
মরণ এসে নিয়ে যাক; নিয়ে যাক
লোকালয়ের কিসের ঠাঁই এই শত্রুর?–বলে
প্রাসাদ প্রেমিকেরা
আমিও ভাবি তাই; ভাবি নতুন মডেলের চাকায় পিষ্ট হবো।
আমার জন্যই যখন তোমাদের এত দুঃখ
আহা দুঃখ
দুঃখরে!
আমিই পাপী; বুঝি তাই এ জন্মই আমার আজন্ম পাপ।
জর্ণাল : স্মৃতিচিত্র
কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল
মেঘের প্রবল খেলার ভঙ্গিতে আমি এক নিবিড় শুয়েছিলাম
কোমল শয্যার শরীরে
আমার চৌদিকে বৃষ্টির নিপুণ করতালি
ডাকছিল আমাকে।
“আয় আয় ভিজে উঠি গুরুজনের দারুণ চোখ ফাঁকি দিয়ে”—
যেন পেয়ে গেছে বালকবেলার সাথী!
কাল সারারাত একা একা বৃষ্টি হয়েছিল
টিনের ছাদে খেলছিল তুমুল
যৌবনের ব্যস্ত প্রেমিকের মতো ছুটেছিল পার্কে বাগানে—
নদী কি এখনো বসে আছে ভীষণ উৎকন্ঠায় ?
আমিতো মেঘের অনুচর বিষে নীল গোলাপ
শহরময় হেঁটে গেলে ঘেমে যায় ক্ষয়িত পাথর
আমিতো জোৎস্নার শত্রু, ঘন কুয়াশা বক্ষের বন্ধু!
আমার খেলার ভঙ্গিতে বর্ষাতি চাপিয়ে গায় ছুটে যায় মহাজন
রাজাধিরাজ
ব্যাকুল চেয়ে থাকে সম্রাজ্ঞীর করুণ হৃদয় কিশোরীর বুক
আমিতো খেলছি এই মধ্যরাতে ; টিনের ছাদে খেলছি একা একা
সখী নেই
আমিতো এক্ষুণি চলে যাবো বিষন্ন মেঘের ইশারায় –
হয়তো বা
সেই মেঘ ভেবেছিল বহুবার?
আমি একা শুয়ে আছি; নিবিড় শুয়ে আছি
কোমল শয্যার শরীরে
সেই বৃষ্টি এখনো কি সখীবিনা ঘরে বেড়ায় আকাশের একলা পথে
আমি যেমন শুয়ে আছি এই বিজন ঘরে?