শালা শুয়োরের বাচ্চা; কোথায় যাও হে?
আমরাই পাপীরে হারামজাদা?
তাহলে তুমি কি হে?
যখন শালা তুমি হেঁটে যাও ওই বিভিন্ন লোকালয় ধরে: আমরা বলি–
“দ্যখি ওই যে যায়; যায়, যায় মহেন্দুনিদ্রিতকান্তি; শুভ্রবসন
মাথায় পাগড়ি; অলৌকিক পোশাক-আশাক; আননে কি রাপের মায়া
দেখলেই শ্রদ্ধা হয়
আর এখন তুমি ঈশ্বর নামক বদমাসের একান্ত অনুচর হয়ে আমাদের কাছে?
দেখাচ্ছি দাঁড়াও; একদিনে কয় বৎসর পাওনি তো টের—
হাজার জলপানি খেয়ে আমরাও হয়েছি মানুষ; ইকড়ি-মিকড়ি খেলায়
আমরাই এতদিন ছিলেম বলে লোকে দুর্নাম দিতো—
তুমি কি শৈশবে একবারও এক্কাদোক্কায় হেরে গিয়ে টাননি বাসন্তীর
সূক্ষ্ম অন্তর্বাস?
ওই সবদিনে ঘুমের ভান করে রাত্রিকালে কি করেছিস ঠিক কোরে বল্;
নইলে—
নইলে এক্ষুণি প্রস্রাবে ভরে দেব তোর মুখ; জুয়োচ্চোর ফেরেশতা সেজে
এই ভুবনে?—বলে
লোকগুলো নিয়ে গেল বিশ বছরের রমণীদের কাছে
দেখলাম; সেই রমণীবৃন্দ সমস্ত পোশাক খুলে; উন্নত বক্ষে দাঁড়িয়ে
হা হা করে হাসছে
আমি তখন মৃতপ্রায় মানুষের মতো আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করলুম
“আল্লাহ; আমার প্রার্থনা কবলে করো; আমি যেন রোজ ভোর বেলা
এইভাবে আসি
আর এইভাবেই তোমার অপূর্ব হস্তের কারুকাজ দেখে যাই—
হে আমার দয়াময়
তোমার এমন শিল্পকর্ম এতো আমি দেখিনি আগে?”
২৮/৯/৭২
একটি বালক
আপন শিউলী বাগান নীলিমার মতো
লজ্জায় গ্রীবা রাখে সবুজ করতলে—
পরিশ্রান্ত প্রেমিক উদ্ভ্ৰান্ত সকল খেলায়; যতো
বার বলেছি তাকে মুখ রাখে কঠিন জলে!
তাহলে কোথায় যাবে এই অবেলায়?
হিরন্ময় কন্ঠের ভাঁজে বিষন্নতার ঘ্রাণ—
আষাঢ়ে মেঘের স্বর পলাতক বহুদিন; দিনরাত্রি হেঁকে যায়
একটি বালক, “এখানে কি পাওয়া যাবে জন্মের গান”?
২৫/৯/৭০
একটি ভালবাসার মুখ
বরং আরো কিছুক্ষণ এক বুক অন্ধকারে হাত দুটো রাখতে দাও
পেতে দাও ঈশ্বরের অনাবিল শান্তি
এসেছি যোজন পথ পাড়ি দিয়ে মাড়িয়ে খড়কুটে শক্ত পাথর
বড় অসহায় ক্লান্ত আমি
য্যানো অনেক অনেক দিন সুখের মুখ দেখিনি
দেখিনি আত্মীয় স্বজন, পাইনি নিবিড় সান্নিধ্য তাঁর
শুধু চোখের সামনে সারি সারি তৃষ্ণার্ত মুখের মিছিল—বলে
উন্মাদ লোকটি ম্রিয়মান ঘাসের উপর এলিয়ে সমস্ত শরীর তাকালো শূন্যে
পরম কৌতুহলী দৃষ্টিতে
নরম ফুরফুরে বাতাসে মাথার ঝাঁকড়া উস্কোখুস্কো চুলগুলো বড়বেশী
ব্যস্ত হলো বাতাসের অন্তরঙ্গ নর্তকীর মতোন
আমি সামনে দাঁড়িয়ে অবাক দটিতে গালে হাত দিয়ে
দেখছি তার নিপুণ কলা কৌশল; বলার ভঙ্গি–
সহসা সমস্ত বিস্ময় চুরমার হলো
প্রচণ্ড হাওয়ায় ট্রাউজারের পকেটে পয়সার মিউজিক বেজে গেল
অন্ধকার চারদিকে, বড় বেশী মেতেছে খেলায়; নিজেরাই খেলছেতো
খেলছেই—
লোকটি উঠে দাঁড়ালো আবার; বললে
আমার চোখ দুটো কেড়ে নিয়ে হাত দুটো সরিয়ে নাও
সহ্য হয়না এখন, সহ্য হয়না কোন কিছুই
এমন কি আজন্ম সাধের বাসন্তীকেও
ওই যে আমার রঙীন স্বপ্ন গলে এখন আর তীর্থ করেনা তার ত্রিসীমানা
কৈশোরের প্রেমগুলো ধুঁকে ধুঁকে মরছে, মরছে সবখানে
আমাকে এখন কেউ ভালবাসেনা, কাছে টানেনা, মাথায় চুলে হাত বুলোয় না
তুমি দয়া করে, দয়া করে সখা হে
যদি পারো এনে দাও একটি ভালবাসার মুখ
একটি ভালবাসার মুখ।
য্যানো বা তার কথাগুলো ঠিক তক্ষুণি শহরের বিষণ্ণ মনুমেন্ট ছুঁয়ে ছুঁয়ে
নিমেষে উধাও হলো দৃশ্যের গভীরে
বিহ্বল চেয়ে দেখি ওই অন্ধকারেই মারবেলের মতো
জ্বলজ্বল করছে তার উজ্জ্বল চোখ দুটো!
১৮/৯/৬৯
একটি যথার্থ ভালবাসা
এইভাবে তুমিও পরস্পর কথা রেখে উঠে যাবে আসল গন্তব্যে
চলে যাবে নিসর্গ বিলাসীর কাছে; পড়ে থাকবে ম্ৰিয়মান ঘাস
ঘাসের ছিন্ন মেঝেয় ইচ্ছাকৃত স্মৃতি;–
অতঃপর চেয়ে থাকবো আজীবন
ভাসবে অতীত দৃশ্যাবলী; একদা
যেমন মুখোমুখী চেয়েছিলে সুসময়ে
পুনরায় হয়তোবা পেয়ে যাবো সোনালী ভবিষ্যৎ; অভ্যাস মতো
পাঠাব ‘তারার গোলাপ’; তোমার খোঁপার জন্যে—তুমি দেবে
একটি যথার্থ ভালবাসা
ঠাঁই নেবে হৃদয়ের সূক্ষ্মতন্ত্রীতে—
এই আশায়
অনায়াসে চলে যাচ্ছো রান্ত্রির নির্জন ট্রেনে : একটি বর্ণনাহীন পাড়াগাঁয়ে
বাতাস তোমাকে আশ্রয় দেবে; ছায়া আমার ঘুরে বেড়াবে চতুর্পাশে
ক্যামোন অসহায়; য্যানো
দীঘকাল শুয়ে আছি নিরবধি অন্ধকারে
একটি যথার্থ ভালবাসা পাবো বলে!
৬/৩/৭২
একদিন আমারো প্রেমিকা ছিলো
একদিন আমারো প্রেমিকা ছিলো
একদিন আমিও খুশিনীল স্বপ্নের শূন্যতায় উচ্চারণ করেছিলাম
পৃথিবীর সব মানুষের আনন্দ-হাসির মত্ততা!
আজ আমি এই মধ্যরাতে বিপুল সিগ্রেট জ্বালিয়ে
হুলুস্থূল সফরী ধোঁয়ায় নিজেকে দেখলাম; বড় বেশী একা, একলা—
আত্মঅহংকার যার কবিত্বের মধ্যে বন্দী; অথাৎ দুই চোখের মাঝখানে
আরেকটি চোখ এসে হয়ে গেছে তৃতীয় নয়ন!
আমি এখন তাঁর নামে একটি কবিতা লিখে বিশ্ব বাজারে
রপ্তানী করে দেব
কেননা, বিমর্ষ হাওয়া জানে কোথায় লুকোবে অধিকার মানুষের ঘ্রাণ
ব্যবহৃত সবুজ রুমাল!
একদিন আমারো প্রেমিক ছিলো
একদিন আমিও খুশিনীল স্বপ্নের শূন্যতায় উচ্চারণ করেছিলাম
শিল্পসম্মত মানুষের আনন্দ-হাসির মত্ততা!