রাগে আমার দাঁত কাঁপে; তব কাউকে পাইন ডেকে
স্ত্রী আমার শাড়ির আঁচলে মুখ রাখে। বোঝাই কতো
তবু বোঝেনা। অবশেষে দেখাই রাগ আসবাবপত্রে বাসন কোসনে
আমাকে দেখে কেউই ভয় করে না; শুধু বিড়ালগুলো পালায় গৃহকোণে।
৬/৬/৬৯
আমি তো প্রেমিক নই
আমিতো প্রেমিক নই, তবু, ক্যানো এ বসন্ত আমাকে পাগল করে!
ছায়া-ছায়া অন্ধকার সকালে নিসর্গ বাহু, মেলে
নিমেষে উধাও হয় আদিম শোভা
উজ্জ্বল প্রেমের মতো সমস্ত রঙীন দৃশ্যাবলী হঠাৎ দাঁড়ায় এসে
আমার সামনে!
এখন রাত্রিদিন বাতাস খেলা করে নিরিবিলি
নদীতে পালতোলা নৌকায় সর্বত্র অন্তরঙ্গ নর্তকীর মতোন গাছেরর
সবুজ পাতা
পায়ে পায়ে ছড়ার আশীর্বাদ মাঠে প্রান্তরে
ফাল্গুন আকাশের চাঁদ জলের নিকানো আঙিনায় পাতে নিবিড় সংসার
নিঃসঙ্গ গাছের ছায়া এলিয়ে সমস্ত শরীর শুয়ে থাকে একাকী;
এবং আমার তরুণ আঙুল
সরোদের আচ্ছন্ন হৃদয় ঘেঁষে যায়; কেঁপে ওঠে পুরোনো শহর
বস্তী গ্রাম
ঝেড়ে ফেলে নিজস্ব পোশাক মাটিতে ঘাসের ছিন্ন মেঝেয়
আমিতো প্রেমিক নই, তবু, ক্যানো আমার চোখোর নন্দন-কানন
মারবেলের বেঞ্চ, পাতা ঝরা, ফুল ফোটার অলৌকিক শব্দ?—কিছুরই
বুঝিনা—বুঝিনা হায় বিশেষত এবয়সে!
তবুও এখন আমার সর্বাঙ্গে বসন্তের জোৎসনা মাখা রমণীয় সন্ধ্যাগুলো
লেপটে আছে প্রত্যহ!
১৪/৫/৭০
আমি ভাল আছি, তোমরা?
আমি ভালো আছি, তোমরা? –কি করছে। এই অবেলায়?
—একটি বালক খেলছে দ্যাখো বিমর্ষ ওই একল। হাওয়ায়!
চুলগুলো তার কাটছে স্মৃতি ভ্রান্তি ও ভুল দিবানিশি
মত্ত মেয়ে বুকের কাছে তবু তাহার দুঃখ বেশী!
কি দুঃখ?–বলতে মানা নানান কথাই হবে জানা রৌদ্রে কিংবা অন্ধকারে
ছিলেম ভালো ঢাকার আলোয় মেয়ের সাথে পার্কে এবং অভিসারে
এখন আমার দুঃখ অনেক কিন্তু আমি ভালো আছি তোমরা কেমন?
—ভালো থাকলেই ভালো কথা, ভালো কথায় খুশি থাকে প্রেমিক যেমন!
২৬/৬/৭৪
আমিও শহীদ হয়ে যাবো
পুনরায় কোন মহান গণ আন্দোলন শুরু হলে
আমিও আসাদের মতো
শহীদ হয়ে
তোমাদের স্মৃতির মণিকোঠায
জ্বেলে রাখবো অলৌকিক শহীদ উজ্জ্বল বাতি!
তুমি বাতি দেখে একদা ভীষণ ভয় করতে–
আলোয় তোমার মুখ দেখা যায় বলে
কেবলি আঁধারে মুখ রাখতে—
মুখ ঢাকতে ঢাকতে এখন
তোমার চেহারায় কালো দাগ
আমি বারবার তোমার মুখের কালো দাগ মুছে দিতে চেয়েছি
তুমি মুখ লুকিয়ে রাখো–
পাছে মুখের সঠিক কারুকাজ ধরা পড়ে যায়!
আমি আঁধার থেকে আলোয় আসতে চাই
তুমি তোমার বাহু দিয়ে শরীর জড়িয়ে রাখো
মিছিলে রক্তের খেলা হয় বলে!
আমি খেলতে খেলতে বাঁচতে চাই
বাঁচতে বাঁচতে মরতে চাই
মরতে মরতে তোমার বুকে
উজল করে লিখে যাবে।
এইতো আমি শহীদ হলাম
শহীদ হলাম
তোমার বকেই শহীদ হলাম!
৬/২/৭৩
আলোর গভীরে
আলোর গভীরে কেউ কেউ অনায়াসে যেতে পারে। যায়।
মিছিলে হঠাৎ শ্লোগান দিয়ে অনেকেই নেতা হবে। হোক।
আমাদের আঙিনায় ভালবাসা পলাতক আজীবন। জেনেছি।
ঘরে অলিন্দে বিভিন্ন সমস্যা চোখের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে। কিছুই
করার নেই।
এইসব লিখিত অলিখিত পব্দাবলী খেলেছে নিরবধি
দেখছি
এবং
শুনছি
শুনছি এবং দেখছি আমার শৈশব থেকে।
এ কথাগুলো শুনতে যেন কেমন লাগে। তাইনা? ঠিকই।
।২।
আমার একজন বন্ধু, ছিলেন। তিনি রাসেল।
এখন ঈশ্বরের রাজ্যে নতুন কোরে নথিপত্র দেখছেন।
সৃষ্টির প্রথমেই ঈশ্বর এক বিরাট ভুল কোরেছেন। অথাৎ মানুষ
এখন অনেক সময় নিয়ে তা আবার দেখতে হবে। দেখা উচিৎ।
এখন নদী হচ্ছে রক্তের
দেশ হচ্ছে যুদ্ধের
মানুষ হচ্ছে হিংস্র
পশু হচ্ছে ভদ্র
।৩।
বর্তমানে নতুন চালে সবাই খেলতে চায়। খেলে।
পকেট ভর্ত্তি কড়কড়ে নোট লুকিয়ে রেখে সৃষ্টি করে দুর্ভিক্ষ।
এদিকে তাই নিঃস্ব হচ্ছি রাত্রিদিন।
এখন তবে যাত্রা কোথায়? জানা নেই।
।৪।
মেয়েটা যাকে ভালবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিল : করতে দিন
বাঁধা দেবেন না।
নইলে মনে একটা দুঃখ থেকে যাবে।
আমার চোখের দিকে যদি কেউ চেয়ে বলে—
তোমার চোখের মধ্যে কে?
আমি বলব—
তুমি|
এই উত্তরে যথার্থ কোন কাজ দেবে না। না দিক।
তবু, তার আনন্দেই আমার আনন্দ!
।৫।
আমরা সবাই আলোর গভীরে যেতে চাই
যেতে চাই উজিয়ে সকল বাধা
পেতে চাই কবিতা ও মানুষের ভালবাসা। তাই না? হাঁ!
২৫/৭/৭০
একটি নিষিদ্ধ কবিতা
গোল চাঁদের শেষ ঘণ্টাধ্বনি বেজে গেলে আমি পুনরায় বাড়ি থেকে
বেরুলাম
সকালের নিপুণ করতালিতে সুন্দর বনরাজি শিউরে উঠলো তুমুল
প্রেম-প্রেম খেলায় অন্ধকার নিবাসগুলো মেতেছিল বহুক্ষণ;-ভেঙে গেল
হঠাৎ
না আমাকে দেখে নয়; তাহলে কার অভিসম্পাতে? সঠিক জানিনা–
কিংবা এও হতে পারে আমারি বদৌলতে!
গোল চাঁদের শেষ ঘন্টাধ্বনি বেজে গেলে আমি দেখলুম; হৈহৈ করতে করতে
একদল রমণীও পুরুষ মিলিত রক্তের স্রোতের মধ্যে থেকে উঠে এল পরস্পর
বাতাস ছিলোনা তখন; সবেমাত্র আঁধার গিয়েছে ছিঁড়ে কিশোরীর
পাজামার গিঁটের মতোন
তারপর খুলে গেল সেই একল। কপাট!
যে রমণী ও পুরুষগুলো দেখলুম; আমাকে দেখেই তারা বলে উঠল—
‘তাহলে তুমিই সেই। প্রত্যহ ভোরে এসে দেখে যাও আমাদের লীলা-খেলা!
কেন সাথী হতে পারো না?
দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা; তোমার চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করবো এই প্রাতে
ফেরেশতা সেজে এই ভুবনে?