সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ০৭, ২০১১
মায়ের চোখে
আমার মায়ের চোখে আমি ছাড়া য্যানো পৃথিবীর কোন সুন্দর-ই
সহজে লাগে না আর তার কাছে
দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল ভালবাসা সমস্ত শরীরে রেখে
বেঁচে থাকেন পরম তৃপ্তিতে—
কখন তার সোনালী প্রহর গড়িয়ে যায়; দৃষ্টি নেই সে দিকে
অথচ ভীষণ মায়াবী চোখে আমাকে নিয়ে খেলা করে সারাদিন
এবং
মেলে রাখেন আত্মীয় পাড়াপড়শীর কাছে!
আমার মায়ের চোখে কোন দুরন্তপনাই ধরা পড়েন। কখনো; য্যানো
বিরাট গণের অধিকারী
সুবোধ বালক আমি
ঠোঁটস্থ সকাল বিকাল তার আমার সমস্ত কাজ-বুঝি তাই
পরম স্নেহে চোখে মুখে ছুঁয়ে যায় আশীর্বাদের নরম হাত!
আমার মায়ের চোখে আজীবন দুধের শিশুই রয়ে গেছি আমি—
এখনো রাত্রিকালে তিনি সেই শিয়রে বসে দেখে যান; গেয়ে যান
ঘুমপাড়ানিয়া গান!
৮/৮/৬৮
মিছিলে তোমার মুখ
মিছিলে তোমার মুখ ছিলো সেদিনের রক্তগঙ্গা রাজপথে
গ্রামকে গ্রাম উজাড় কোরে অবশেষে এইখানে এসে কোন মতে
বাঁধলে কঠিন বুক পরম সাহসে; হৃদয়ে আশা দোলে; যেন সব
সম্রাজ্ঞী স্বপন
অথবা বিধাতার স্বর্গীয় শান্তি খোঁজো রাত্রিদিন এই দারুণ মিছিলে। কখন
যে পাপময় বাতাস বয়ে গেল গাছের ডালে; একটু চোখ তুলে দেখলেও
না তুমি–
বরং বললে; “এখানে নিবিড় ভালবাসা আছে অথচ কি যেন নেই—
হায় আমার বাংলা আমার জন্মভুমি!”
—বলে সেই যে হারিয়ে গেলে ফিরে তাকালেও না আর–
জানিনা একি অপার মমতা যে হৃদয়ে তোমার!
৩/৭/৬৮
রামায়ণের উৎস কৃষি

“যে মহাকাব্য ট্রাডিশানের অংশীভূত তার সম্বন্ধে নতুন আলোকে বিচার করায় কিছু ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থেকে যায়। যে কোনও রচনা বা সৃষ্টি কোনও এক কালে, কোনও এক সমাজে সৃষ্ট হয়েছিল-সে যে ইতিহাসের বাইরে নয়, কালাতীত নয় এ সহজ সত্যটা গতানুগতিকায় আবদ্ধ মন সহজে মেনে নিতে পারে না। না পারলেও কিন্তু ঘটনাট সত্য। মানুষের ইতিহাসের বাইরে, সমাজবদ্ধ মানুষের সমাজের গণ্ডীমুক্ত অবস্থায় মানুষের কোনও সৃষ্টিই হতে পারে না। তাই রামায়ণ বা মহাভারত আমাদের ঐতিহ্যের একান্ত এবং আত্মস্থ হলেও, তাদের কালিক এবং সামাজিক পটভূমিকা আছে। এ সব মহাকাব্যের মধ্য দিয়ে, তাদের রূপকগুলোর অন্তরালে তৎকালীন সমাজের সমাজবদ্ধ মানুষের সম্বন্ধে যে সব তথ্য লুকিয়ে আছে তাদের ধরতে পারা যায় বিশ্লেষণী মননশীল দৃষ্টি দিয়ে। তাতে মিথ্যা সংস্কারে আঘাত লাগলেও সত্যের হানি হয় না। তবে ট্রাডিশান যে গ্রন্থকে এক বিশেষ কালাতীত আসনে বসিয়ে পুস্তকের অন্তস্থ চরিত্রগুলিকে কালের বাইরে নিয়ে গেছে—তাতে কালিক সত্য নির্ধারণ করতে গেলে দরকার সাহসের দরকার সুস্থ মুক্ত মনের।…রূপক আশ্রিত রামায়ণের মধ্যে বিশ্লেষণের মাধ্যমে লেখক যে ঐতিহাসিক তথ্যের সন্ধান এবং পরিবেশন করেছেন তা আমাদের ঐতিহাসিক ভাবনা চিন্তাকে নতুন ধারায় বাহিত করবে।”
‘রামায়ণের উৎস কৃষি‘ বইটির ভূমিকায় লিখেছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শংকরী প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। বইটি আমাদের ইবুক সেকশনে পিডিএফ আকারে আগেই দেয়া হয়েছিল। এবার পুরো ইউনিকোড বাংলায় দেয়া হলো আমাদের লাইব্রেরি সেকশনে।
স্বগত কবিতাগুচ্ছ/১
তাহলে এবার চৈতন্যের নির্জন প্রকোষ্ঠে সহজ সরল বাহ, রাখো—
সমবেত প্রেমিকবৃন্দের উন্নত বক্ষে ঝুলিয়ে দাও লম্বিত মাদুল
দ্রিমিদ্রিমি
বাজুক সমস্বরে; নীলিমায় চোখ রেখে উলঙ্গ করো
নাভীমূল স্তন ও অন্যান্য যৌনাঙ্গ
আমরা এই রঙ্গমঞ্চের অভিজ্ঞ নট পশ্চাতেই নটী
ঘোমটায় কেউ আর পর্দার আড়াল ভেদ কোরে উন্মুক্ত আলোয় আসিনা
যেহেতু অন্ধকারে আমরাই অনেক বালক জন্ম দেই—এইসব
বালকইতো যত সব নটের মূল; পকেটে বিষাক্ত ছুরি
চকচকে সর্টগান
ধারে কাছেও যাওয়া যাবেনা!
ন। যাবোনা; কোথাও যাবোনা; সমস্ত যাত্রা বাতিল
তোমার চিৎকার জুড়ে দাও এই ব্রোথেলে; তুমুল হৈ চৈ বাধাও
ব্যাকুল হও নিজস্ব ভঙ্গিতে —
সমুদ্রের নিঃস্বনে কিবা লাজ; অরণ্যে আমাদের বাস
রোধ করি মহামারী
সহবাসে সন্তান কই? কেবল উঠোন ছেড়ে অলিন্দে ঠাঁই?
এসো সমবেত প্রেমিক প্রেমিকা; নাচো এই রঙ্গমঞ্চেই নাচো—
দেখাও ভালো খেল্ অথাৎ সার্কাসী ভঙ্গিমা
আমরাই শ্রোতা ও দর্শক
তোমাদের নিপুণ ভঙ্গির তালে তালে আমরাও করতালি দেব–
শুধু উলঙ্গ করো নাভীমূল স্তন ও অন্যান্য যৌনাঙ্গ!
২/১২/৭২
স্বদেশ, তোমার মুখ
স্বদেশ, তোমার মুখ, আমার আশৈশব প্রার্থনার একান্ত সঙ্গীত
বেঁচে থাকার পরম ইচ্ছায় তোমার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছি
ক্যামোন নিবিড়
য্যানো সপ্রেমে টেনে নেই তোমার দীর্ঘকায় শরীর, আমার শরীরে
স্বদেশ, তোমার সূক্ষ্ম ভালবাসার শিল্পসম্মত ছাপ
হৃদয়ের উজ্জ্বল প্রকোষ্টে অন্তরঙ্গ সখার মতো নিশ্চল নিঃশব্দ
ঝুলে আছে প্রগাঢ় বিশ্বাস নিয়ে!
তোমার আদিগন্ত সবুজ চিৎকারে ছুটে যাই, তুলে ধরি
স্ফিংসের মতোন শক্তসবল বাহু
রক্ষা করি প্রতিটি রোম; ছুঁড়ে ফেলি গন্ধযুক্ত আৰ্বজনা
গভীরতম ড্রেনে, গর্তে
স্বদেশ, তোমার কল্যাণী মুখের রেখা আমার আনন্দে কিংবা প্রেমে
উধাও হয়নি কোন জটিল অন্ধকারে
অথবা এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের গহ্বরে!