ভুলে গেলে তো এই হয়, ছেড়ে চলে গেলে তো এই-ই হয় — যার যার জীবনের মতো
যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপারও যার যার হয়ে ওঠে।
তুমি তো জানোই সব, জেনেও কেন বলো যে মাঝে মাঝে যেন
খবর টবর দিই কেমন আছি!
আমার কেমন থাকায় তোমার কীই বা যায় আসে!
যদি খবর দিই যে ভালো নেই, যদি বলি তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে,
যদি বলি তোমার জন্য আমার মন কেমন করছে,
শরীর কেমন করছে!
তুমি তো আর ছুটে আসবে না আমাকে ভালোবাসতে!
তবে কী লাভ জানিয়ে, কী লাভ জানিয়ে যে আমি অবশেষে সন্ন্যাসী হলাম!
ব্যস্তততা
তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম, যা কিছু নিজের ছিল দিয়েছিলাম,
যা কিছুই অর্জন উপার্জন!
এখন দেখ না ভিখিরির মত কেমন বসে থাকি!
কেউ ফিরে তাকায় না।
তোমার কেন সময় হবে তাকাবার! কত রকম কাজ তোমার!
আজকাল তো ব্যস্ততাও বেড়েছে খুব।
সেদিন দেখলাম সেই ভালোবাসাগুলো
কাকে যেন দিতে খুব ব্যস্ত তুমি,
যেগুলো তোমাকে আমি দিয়েছিলাম।
ব্যস্ততা
তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম, যা কিছু নিজের ছিল দিয়েছিলাম,
যা কিছুই অর্জন-উপার্জন !
এখন দেখ না ভিখিরির মতো কেমন বসে থাকি !
কেউ ফিরে তাকায় না।
তোমার কেন সময় হবে তাকাবার ! কত রকম কাজ তোমার !
আজকাল তো ব্যস্ততাও বেড়েছে খুব।
সেদিন দেখলাম সেই ভালবাসাগুলো
কাকে যেন দিতে খুব ব্যস্ত তুমি,
যেগুলো তোমাকে আমি দিয়েছিলাম।
মন
গাছগুলোকে কেটে মেরে নকশা কাটা বাড়িগুলো গুঁড়ো করে
ম্যাচবাক্সের মত এমন বিদঘুটে দালান তুলছিস কেন রে?
তোর হয়েছে কি?
তুই কি স্থাপত্যে স্মৃতিতে শ্রীতে আর তেমন বিশ্বাস করিস না?
তোর বুঝি খুব টাকার দরকার?
এত টাকা দিয়ে তুই কী করবি কলকাতা?
নিউইয়র্ক হবি?
তোর খুব চাই চাই বাড়ছে,
কাকে ঠকিয়ে নাম করবি, কী ভাঙিয়ে কী হবি–এই নিয়ে আছিস!
তোর সন্ধ্যের আড্ডাগুলো
তখন মরা মানুষের মত হাসতে থাকে যখন বোতল থেকে বেরিয়ে আসা দৈত্য ধরতে
হুমড়ি খেয়ে পড়িস আর এর ওর নামে অর্ধেক রাত খিস্তি করে
যেমন পারিস তেমন করেই দুটো
রবীন্দ্র মেরে দিয়ে টলতে টলতে বাড়ি যাস উপুড় হতে।
তুই কি ভালো আছিস কলকাতা?
যাহ বাজে বকিস নে, ভালো থাকলে কেউ বুঝি এত টাকা টাকা করে? এত গয়না গড়ায়?
তোর কি এখন আর সময় হয় শিশির ছোঁওয়ার? রামধনু চোখে পড়লে কি
সব ফেলে দাঁড়িয়ে যাস না? কোথাও কি কারও পাশে বসিস, যদি দুঃখ দেখিস?
তোর কি সেই মন এখন আর একটুও নেই?
পকেটে পয়সা নেই, অথচ নিজেকে রাজা-রাজা মনে হওয়ার মন?
মন ওঠো
মন তুমি ওঠো, ওঠো তুমি, তুমি ওঠো মন,
মন মন মন ওঠো মন ওঠো মন তুমি ওঠো ওঠো মন
মন ওঠো তুমি
ওঠো তুমি মন
মন মন মন
ওঠো, ল ক্ষ্মী মন, তুমি ওঠো এবার,
ওঠো ওই পুরুষ থেকে, মন ওঠো,
ওঠো তুমি, শেকল ছিঁড়ে ওঠো, ভালোবাসার শক্ত শেকলটা ছিঁড়ে এখন ওঠো
তুমি তোমার মত করে কথা বলো,
তুমি তোমার মত তাকাও
তোমার মত হাসো
আনন্দ তোমার মত করে করো। দুঃখ তোমার মত করো।
মন তুমি ওঠো, যতক্ষণ তুমি ওই পথে, পথিকে, ওই পতিতে, ওই পুরুষে,
পুরুষের পদাঙ্কে, পদাশ্রয়ে, ওই পাতে, পতনে,
যতক্ষণ তুমি পরজীবী, তুমি পরোপজীবী, যতক্ষণ পরায়ত্ত, পরাহত,
ততক্ষণ তুমি তুমি নও।
যতক্ষণ প্রণত, পউচ্ছত, ততক্ষণ তুমি প্রফুল্ল নও, প্রবল প্রখর নও, প্রতাপান্বিত নও
ওঠো, পরিষনাণ পেতে ওঠো, প্রাণ পেতে ওঠো।
মন ওঠো মেয়ে, ও মেয়ে, ওঠো,
পুনর্জন্ম হোক, পুনরুত্থান হোক তোমার।
হৃদয়ে কখনও এমন আস্ত একটি পুরুষ পুরে রেখো না,
পুরুষ যখন ঢোকে, একা ঢোকে না, গোটা পুরুষতন্ত্র ঢোকে।
এই তন্ত্রের মগজ-মন্ত্রে মুগ্ধ হবে, প্রেমে প্রলুব্ধ হবে, মৃত্যু হবে তোমার তোমার।
ও মন তুমি ওঠো, নাচো, তোমার মত, তোমার মত করে বাঁচো
মেয়েটি
মেয়েটি একা,
মেয়েটি অসহ্য রকম একা, এরকমই সে একা,
এরকম নির্লিপ্তি আর জগতের সকল কিছুতে তার নিস্পৃহতা নিয়ে একা,
এভাবেই সে বেঁচে আছে দীর্ঘ দীর্ঘ কাল নির্বাসনে।
কেবল কলকাতাই তরঙ্গ তোলে মেয়েটির স্থির হয়ে থাকা জলে,
কেবল কলকাতাই তাকে বারবার নদী করে দেয়, কলকাতাই
কানে কানে ভালো থেকো মন্ত্র দেয়। কেবল কলকাতাই।
কলকাতার ধুলোয় কালো হয়ে আছে মেয়েটির শরীর
আর ওদিকে তার মনের চোখের নিচে
যত কালি পড়েছিল, সব কালি শুষে নিয়ে
এই কলকাতাই কেমন ফরসা করে রেখেছে সব কিছু।
দুজন মিলে এখন জগতের না দেখা রূপগুলো দেখছে,
না পাওয়া সুখগুলো পাচ্ছে।
কত রকম অসুখ কলকাতার,
কতরকম নেই নেই,
অনটন
অথচ জাদুর মত কোত্থেকে যে সে বের করে আনে হিরে মানিক!
মেয়েটি প্রেমহীন ছিল অনেক বছর,
তাকে, না চাইতেই এক গাদা প্রেম দিয়ে দিল কলকাতা।
যখন নেই, তখন থাকো
যখন আমার সঙ্গে নেই তুমি,
আমার সঙ্গে তুমি তখন সবচেয়ে বেশি থাকো।
আমি হাঁটি, পাশাপাশি মনে হয় তুমিও হাঁটছো,
তোমাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে যাই,
যা যা খেতে পছন্দ করো, কিনি, তুমি নেই জেনেও কিনি।
রাঁধি যখন, দরজায় যেন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো,
মনে মনে কথা বলি।
খেতে বসি, ভাবি তুমিও বসেছো।
যা কিছুই দেখি, পাশে দাঁড়িয়ে তুমিও দেখছো,
শুনি, শুনছো।
তত্ত্বে তর্কে, গানে গপ্পে পাশে রাখি তোমাকে।
তুমি সারাদিন সঙ্গে থাকো,
যতক্ষণ জেগে থাকি, থাকো,
ঘুমোলে স্বপ্নের মধ্যে থাকো।
তুমি নেই, অথচ কি ভীষণভাবে তুমি আছো।