লোকে কি বলবে না বলবে তার দিকে মোটেও তাকাচ্ছে না।
ওদের দিকে লোকে থুতু ছোড়ে, পেচ্ছাব করে
ওদের ছায়াও কেউ মাড়ায় না, ভদ্রলোকেরা তো দৌড়ে পালায়।
নষ্ট মেয়েদের মাথায় ঘিলু বলতেই নেই, সমুদ্রে যাচ্ছে, অথচ ঝড় হয় না তুফান হয়
একবারও আকাশটা দেখে নিচ্ছে না।
ওরা এরকমই, কিছুকে পরোয়া করে না
গভীর অরণ্যে ঢুকে যাচ্ছে রাতবিরেতে, চাঁদের দিকেও দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে!
আহ, আমার যে কী ভীষণ ইচ্ছে করে নষ্ট মেয়ে হতে।
( এ কবিতাও ইংরেজি থেকে অনুবাদ)
না-থাকা
একটি ভীষণ না-থাকাকে সঙ্গে নিয়ে আমি প্রতি রাত্তিরে ঘুমোতে যাই;
ঘুমোই, ঘুম থেকে উঠি, কলঘরে যাই — না-থাকাটি সঙ্গে থাকে।
দিনের হই চই শুরু হয়ে যায় দিনের শুরুতেই,
একশ একটা লোকের সঙ্গে ওঠাবসা–
এই কর সেই করর দৌড়োদৌড়ি–
লেখালেখি–
এ কাগজ পাচ্ছি তো ও কাগজ গেল কই!
হাটবাজার, খাওয়াখাদ্যি, সব কিছুর মধ্যে ওই না-থাকাটি থাকে।
সন্ধ্যেবেলা থিয়েটারে
রেস্তোরাঁ বা ক্যাফের আড্ডার হুল্লোড়ে, হাসিতে
এ বাড়িতে ও বাড়িতে অভিনন্দনে, আনন্দে
ছাদে বসে থাকায়, বসে চাঁদ দেখায়
দেখে চুমু খাওয়ায়,
নিভৃতে থাকে, না-থাকাটি থাকে।
যখন ভেঙে আসি,
বই গড়িয়ে পড়েছে, চশমাটিও–
হেলে পড়া শরীরটিকে আলতো ছুঁয়ে
মাঝরাত্তিরে চুলে বিলি কেটে কেটে না-থাকাটি বলে,
‘মা গো, বড় ক্লান্ত তুমি, এবার ঘুমোতে যাও।’
নারী-জন্ম
তাদের জন্য আমার করুণা হয় যারা নারী নয়
দুর্ভাগাদের জন্য আমার দুঃখ হয়, যারা নারী নয়।
অবিশ্বাস্য এই শিল্প, অতুলনীয় শিল্প এই নারী, বিশ্বের বিস্ময়, বিচিত্রিতা।
আমি নারী, বারবার চাই, শতবার চাই নারী হতে, নারী হয়ে জন্ম নিতে। সহস্র জন্ম চাই
আমি, নারী জন্ম চাই। নারীর প্রেম চাই, তার কামরসে স্নান চাই, মৈথুন চাই।
মৈথুনে মোহাচ্ছত হতে হতে মরিয়া হয়ে চাই একটি শিশু, আমার তীব্র প্রচণ্ড চাওয়া তীব্রতর
হতে থাকে যতক্ষণ না আমার নারী-শরীরটিই শুক্রাণুর জন্ম দিচ্ছে।
একটি ভ্রূণ আমার জরায়ুতে।
নারী-শিশু জন্ম দেব আমি, আমি নারী, জন্ম দেব নারী-শিশু।
আমি ভালোবাসছি সর্বদর্শী সর্বময়ী সর্বব্যাপিনী শাশ্বতী নারীশক্তি। ভালোবাসছি নারীশিশু,
কিশোরী, তরুণী, যুবতী, বৃদ্ধা। হিরন্ময়ী ইচ্ছাময়ী প্রাণবতী হৃদয়বতী আবর্তিত
হতে হতে বিবর্তিত হতে হতে সম্রাজ্ঞী হতে হতে গোটা ব্রম্মাণ্ডের ঈশ্বরী হচ্ছে।
ভালোবাসছি আমাকে!
নারীকে।
নারী-জন্মকে।
নিঃস্ব
শরীর তোকে শর্তহীন দিয়েই দিলাম,
যা ইচ্ছে তাই কর,
মাচায় তুলে রাখ বা মশলা মেখে খা
কী যায় আসে আমার তাতে, কিছু কি আর আমার আছে!
সেদিন থেকে আমার কিছু আমার নেই, যেদিন থেকে মন পেলি তুই,
সবই তোকে দিয়ে থুয়ে নিঃস্ব হয়ে মরে আছি।
আমি তোর হাতের মুঠোয়,
আমি তোর মনের ধুলোয়,
গায়ে পায়ে শক্তি ছিল, নেই। সবই তোর, তুই ঋদ্ধ ভগবান।
শরীরটাকে কষ্ট দিলে আমার কেন কষ্ট হবে!
এ তো এখন তোরই শরীর।
মনটা যদি নষ্ট করিস, ছিঁড়ে ফিরে কুকুর খাওয়াস,
ক্ষতি আমার একটুও নেই,
ও মন আমি ফেরত নিয়ে কোথায় যাবো!
ও মন ধুয়ে জল খাবো কি!
ও মন কি আর আমাকে চেনে! আমাকে বাসো ভালো!
বাসে এক তোকেই, তোকেই জাদুকর।
পদ্মাবতী
স্বাতী আর শাশ্বতী ছিল, ওদের মধ্যে কী করে যেন চলে এলো পদ্মাবতী, স্বর্গ থেকে উড়ে এল, কোনও হাওয়া তাকে এনে দিল, স্বপ্ন তাকে এনে দিল নাকি এ পাশের বাড়ির বউ কেউ কিচ্ছু জানে না।
ফিনফিনে শাড়িটি আর ছোটখাটো যা ছিল গাএ, খুলে ফেলে সামনে এসে দাঁড়ালো পদ্মাবতী রূপবতী । স্বাতীর দুটো হাত আপনাতেই উঠে এলো পদ্মাবতীর বুকে ফুটে থাকা পদ্মে। শাশ্বতীর গায়ে স্নানের পর ফোঁটা ফোঁটা জল তখনও, চুলের শেষ বিন্দু থেকে ঝরছে বিন্দু বিন্দু জল মসৃণ পিঠে, জল নয়, যেন নক্ষত্র। পদ্মাবতী ওই নক্ষত্রগুলো আঙৃলে করে তুলে এনে এনে নিজের ঠোঁটে রাখছে। শাশ্বতী উঠে এলো লতার মত পদ্মাবতীর বাঁ হাতে, ঠোঁটের জল শুষে নিতে। ওদিকে স্বাতীর জিভের জল ভিজিয়ে দিচ্ছে পদ্মাবতীর পদ্মবৃন্ত। স্বাতীর ঠোঁটের সামনে এখন জগত, জগতের জ্যোতির্ময় জাদু।
পদ্মাবতী ধীরে ধীরে নিজেকে মেঘের মত শুইয়ে দিল আকাশে। আর তুলো তুলো এক শরীর মেঘের ভেতর শাশ্বতী হারিয়ে যাচ্ছে, স্বাতী পথ খুঁজে পাচ্ছে না। জলতৃষ্ণায় কাতর দুজন। পদ্মাবতীই দিল তাদের তৃষ্ণা মেটাতে। জন্মের তৃষ্ণা ছিল, মেঘে মুখ ডুবিয়ে জল পান করছে দুজনই। আহ, আকাশের গায়ে যেন একটি পুরো সমুদ্র এলিয়ে পড়েছে।
পদ্মাবতীর ভেজা ঠোঁটে উঠে এসেছে শাশ্বতীর ঠোঁটড়োড়া। স্বাতীর ঠোঁটেও ঠোঁট।
বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে পদ্মাবতীর গায়ে, সেই বিদ্যুৎ ঝলসে দিচ্ছে স্বাতীকে, শাশ্বতীকে।
ড়োড়া জোড়া ঠোঁট মিলে যাচ্ছে মিশে যাচ্ছে বিদ্যুতে।
প্রেম হচ্ছে ঠোঁটে ঠোঁটে।
প্রেম হচ্ছে আকাশপারে।
নারী থেকে নারী জন্ম নিচ্ছে।
পাখিটা
তোমার হৃদয়টা জমে পাথর হয়ে আছে,
পাথরটা দাও আমাকে, স্পর্শ করি,
ওকে গলতে দাও।
ভালোবাসা নামের পাখিটাকে তোমার বন্ধ খাঁচা থেকে উড়তে দাও,
নাহলে ও তো মরে যাবে।
পারো তো ধর্ষর্ণণ করো
আর ধর্ষিতা হয়ো না, আর না
আর যেন কোনও দুঃসংবাদ কোথাও না শুনি যে তোমাকে ধর্ষণ করেছে
কোনও এক হারামজাদা বা কোনও হারামজাদার দল।
আমি আর দেখতে চাই না একটি ধর্ষিতারও কাতর করুণ মুখ,
আর দেখতে চাই না পুরুষের পত্রিকায় পুরুষ সাংবাদিকের লেখা সংবাদ
পড়তে পড়তে কোনও পুরুষ পাঠকের আরও একবার মনে মনে ধর্ষণ করা ধর্ষিতাকে।
ধর্ষিতা হয়ো না, বরং ধর্ষণ করতে আসা পুরুষের পুরুষাঙ্গ কেটে ধরিয়ে দাও হাতে,
অথবা ঝুলিয়ে দাও গলায়,
খোকারা এখন চুষতে থাক যার যার দিগ্বিজয়ী অঙ্গ, চুষতে থাক নিরূপায় ঝুলে থাকা
অণ্ডকোষ, গিলতে থাক এসবের রস, কষ।
ধর্ষিতা হয়ো না,পারো তো পুরুষকে পদানত করো, পরাভূত করো,
পতিত করো, পয়মাল করো
পারো তো ধর্ষণ করো,
পারো তো ওদের পুরুষত্ব নষ্ট করো।
লোকে বলবে, ছি ছি, বলুক।
লোকে বলবে এমন কী নির্যাতিতা নারীরাও যে তুমি তো মন্দ পুরুষের মতই,
বলুক, বলুক যে এ তো কোনও সমাধান নয়, বলুক যে তুমি তো তবে ভালো নও
বলুক, কিছুতে কান দিও না, তোমার ভালো হওয়ার দরকার নেই,
শত সহস্র বছর তুমি ভালো ছিলে মেয়ে, এবার একটু মন্দ হও।