চুপচাপ বসে থাকি চলো,
কোনও কথা না বলে চলো,
কোনও শব্দ না করে চলো,
শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে চলো,
দেখ প্রেম হয় কি না!
চোখ যত কথা বলতে পারে, মুখ বুঝি তার সামান্যও পারে!
চোখ যত প্রেম জানে, তত বুঝি শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ জানে!
ছিল, নেই
মানুষটি শ্বাস নিত, এখন নিচ্ছে না।
মানুষটি কথা বলত, এখন বলছে না।
মানুষটি হাসত, এখন হাসছে না।
মানুষটি কাঁদত, এখন কাঁদছে না।
মানুষটি জাগত, এখন জাগছে না।
মানুষটি স্নান করত, এখন করছে না।
মানুষটি খেত, এখন খাচ্ছে না।
মানূষটি হাঁটত, এখন হাঁটছে না।
মানুষটি দৌড়োত, এখন দৌড়োচ্ছে না।
মানুষটি বসত, এখন বসছে না।
মানুষটি ভালবাসত, এখন বাসছে না।
মানুষটি রাগ করত, এখন করছে না।
মানুষটি শ্বাস ফেলত, এখন ফেলছে না।
মানুষটি ছিল, মানুষটি নেই।
দিন পেরোতে থাকে, মানুষটি ফিরে আসে না।
রাত পেরোতে থাকে, মানুষটি ফিরে আসে না।
মানুষটি আর মানুষের মধ্যে ফিরে আসে না।
মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে যে মানুষটি নেই,
মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে যে মানুষটি ছিল।
মানুষটি কখনও আর মানুষের মধ্যে ফিরে আসবে না।
মানুষটি কখনও আর আকাশ দেখবে না, উদাস হবে না।
মানুষটি কখনও আর কবিতা পড়বে না, গান গাইবে না।
মানুষটি কখনও আর ফুলের ঘ্রাণ শুঁকবে না।
মানুষটি কখনও আর স্বপ্ন দেখবে না।
মানুষটি নেই।
মানুষটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, মানুষটি ছাই হয়ে গেছে, মানুষটি জল হয়ে গেছে।
কেউ বলে মানুষটি আকাশের নক্ষত্র হয়ে গেছে।
যে যাই বলুক, মানুষটি নেই।
কোথাও নেই। কোনও অরণ্যে নেই, কোনও সমুদ্রে নেই।
কোনও মরুভূমিতে নেই, লোকালয়ে নেই, দূরে বহুদূরে একলা একটি দ্বীপ, মানুষটি ওতেও
নেই।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও আর যাকে পাওয়া যাক,
মানুষটিকে পাওয়া যাবে না।
মানুষটি নেই।
মানুষটি ছিল, ছিল যখন, মানুষটিকে মানুষেরা দুঃখ দিত অনেক।
মানুষটি ছিল, ছিল যখন, মানুষটির দিকে মানুষেরা ছুঁড়ে দিত ঘৃণা।
মানুষটি ছিল, ছিল যখন, মানুষটিকে ভালবাসার কথা কোনও মানুষ ভাবেনি।
মানুষটি যে মানুষদের লালন করেছিল, তারা আছে, কেবল মানুষটি নেই।
বৃক্ষগুলোও আছে, যা সে রোপন করেছিল, কেবল মানুষটি নেই।
যে বাড়িতে তার জন্ম হয়েছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে বাড়িতে তার শৈশব কেটেছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে বাড়িতে তার কৈশোর কেটেছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে বাড়িতে তার যৌবন কেটেছিল, সে বাড়িটি আছে।
যে মাঠে সে খেলা খেলেছিল, সে মাঠটি আছে।
যে পুকুরে সে স্নান করেছিল, সে পুকুরটি আছে।
যে গলিতে সে হেঁটেছিল, সে গলিটি আছে।
যে রাস্তায় সে হেঁটেছিল , সে রাস্তাটি আছে।
যে গাছের ফল সে পেরে খেয়েছিল, সে গাছটি আছে।
যে বিছানায় সে ঘুমোতো, সে বিছানাটি আছে।
যে বালিশে সে মাথা রাখত, বালিশটি আছে।
যে কাঁথাটি সে গায়ে দিত, সে কাঁথাটি আছে।
যে গেলাসে সে জল পান করত, সে গেলাসটি আছে।
যে চটিড়োড়া সে পরত, সে চটিড়োড়াও আছে।
যে পোশাক সে পরত, সে পোশাকও আছে।
যে সুগন্ধী সে গায়ে মাখত, সে সুগন্ধীও আছে।
কেবল সে নেই।
যে আকাশে সে তাকাত, সে আকাশটি আছে
কেবল সে নেই।
যে বাড়ি ঘর যে মাঠ যে গাছ যে ঘাস যে ঘাসফুলের দিকে সে তাকাত, সব আছে
কেবল সে নেই।
মানুষটি ছিল, মানুষটি নেই।
ছিলে
একটু আগে তুমি ছিলে, ভীষণরকম ছিলে, নদীটার মত ছিলে, নদীটা তো আছে,
পুকুরটা আছে, খালটা আছে।
এই শহরটার মত, ওই গ্রামটার মত ছিলে। ঘাসগুলোর মত, গাছগুলোর মত।
ছিলে তুমি, হাসছিলে, কথা বলছিলে, ধরা যাক কাঁদছিলেই, কিন্তু কাঁদছিলে তো, কিছু
একটা তো করছিলে, যা কিছুই করো না কেন, ছিলে তো!
ছিলে তো তুমি, একটু আগেই ছিলে।
কিছু ঘটলো না কোথাও, কিছু হলো না, হঠাৎ যদি এখন বলো যে তুমি নেই!
কেউ এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে যে তুমি নেই,
বসে আছি, লিখছি বা কিছু, রান্নাঘরে লবঙ্গ আছে কি না খুঁজছি, আর অমনি শুনতে হল
তুমি নেই। তুমি নেই, কোথাও নেই, তুমি নাকি একেবারে নেইই,
তোমাকে নাকি চাইলেই আর কোনওদিন দেখতে পাবো না! আর কোনওদিন নাকি কথা
বলবে না, হাসবে না, কাঁদবে না, খাবে না, দাবে না, ঘুমোবে না, জাগবে না, কিছুই নাকি
আর করবে না!
যত ইচ্ছে বলে যাও যে তুমি নেই, যত ইচ্ছে যে যার খুশি বলুক,
কোনও আপত্তি নেই আমার, কেন থাকবে, আমার কী! তোমাদের বলা না বলায় কী যায়
আসে আমার! আমার শুধু একটাই অনুরোধ, করড়োড়ে একটা অনুরোধই করি,
আমাকে শুধু বিশ্বাস করতে বোলো না যে তুমি নেই।
জীবনের কথা
জীবন এত ছোট কেন! এত ছোট কেন জীবন!
ছোট কেন এত!
জীবনের ওপর প্রচণ্ড রাগ হয়,
হলিই যদি, এত ছোট হলি কেন!
এর রূপ রস গন্ধ ঘ্রাণ
উপভোগ করতে দে, দিলিই যদি জগতকে হাতে।
ভালোবাসা যদি শেখালিই, তবে পেতে দিস না কেন,
দিতে দিস না কেন সাধ মিটিয়ে!
খালি চলে যাস, খালি ফুরিয়ে যাস।
জীবন খসে যাক ধসে যাক
জীবন জাহান্নামে যাক,
চলো ভুলে যাই জীবন ফুরোচ্ছে সে কথা,
ভুলে যাই মৃত্যু বলে ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘাড়ের ওপর বসে আছে।
চলো ভালোবাসি,
চলো বেঁচে থাকি, প্রচণ্ড বেঁচে থাকি
হৃদয় বাঁচিয়ে রাখি হৃদয়ের তাপে
যেমনই ভাঙাচোরা হোক জীবন, চলো জীবনের কথাই বলি,
চুম্বনে চুম্বনে শুকোতে থাকা শরীরকে ভিজিয়ে রাখি, তরতাজা রাখি।
তিন চার পাঁচ
লোকটি বেরোলো ঘর থেকে, মুখে স্মিত হাসি,
পাড়ায় বলাবলি হয়, হাসিটি বেশ মানায় ও মুখে,
বয়স ষাট পেরিয়েছে কেউ বলবে না, স্ত্রীটিরও বেশ চোখ কাড়া রূপ।
আজ দুপুরবেলা লোকটি একাই বেরোলো,
একাই সে ভাবলো আজ ও বাড়িতে যাবে, ও বাড়ির যুবতীটি
কদিন ধরে কেমন কেমন চোখে যেন তাকাচ্ছে!
হাত ধরলেই যুবতী গলে যাবে, লোকটি নিশ্চিত,
মোম যেমন আগুন পেলেই গলে। গাটা এখন সত্যিকারের তার আগুন আগুন।
যুবতীটি একা থাকে, বছর দুই হল একা থাকে, বিচ্ছিজ্ঞররকম হিমহিম একা।
যুবতীর ফুটফুটে বাচ্চা-মেয়েটিরও সঙ্গী নেই, একা একাই বালুতে মিছিমিছির
ঘর বানিয়ে খেলে, যেমন ধারালো যুবতী, তেমন তার কন্যা।
লোকটি ওই বাড়িটির দিকে যাচ্ছে, ভর দুপুরে বাড়িটি খুব ফাঁকা থাকে।