আগে কখনও আমার মনে হয়নি ঘুম থেকে অমন আচমকা জেগে উঠতে আমি আসলে
খুব ভালোবাসি
আগে কখনও আমার মনে হয়নি কিছু উষ্ণ শব্দ আমার শীতলতাকে একেবারে পাহাড়ের
চুড়োয় পাঠিয়ে দিতে পারে
আগে কখনও আমি জানিনি যে কিছু মোহন শব্দের গায়ে চুমু খেতে খেতে আমি রাতকে
ভোর করতে পারি।
এসেছি অস্ত যেতে
পুবে তো জন্মেছিই, পুবেই তো নেচেছি, যৌবন দিয়েছি,
পুবে তো যা ঢালার, ঢেলেইছি
যখন কিছু নেই, যখন কাঁচা পাকা, যখন চোখে ছানি, ধুসর ধুসর,
যখন খালি খালি, যখন খাঁ খাঁ — এসেছি অস্ত যেতে পশ্চিমে।
অস্ত যেতে দাও অস্ত যেতে দাও দাও অস্ত যেতে
না দিলে স্পর্শ করো, একটু স্পর্শ করো, স্পর্শ করো একটুখানি
লোমকূপে বুকে
স্পর্শ করো ত্বকের মরচে তুলে ত্বকে, চুমু খাও,
কণ্ঠদেশ চেপে ধরো, মৃত্যুর ইচ্ছেজ্ঞটকে মেরে ফেলো,
সাততলা থেকে ফেলো! স্বপ্ন দাও, বাঁচাও।
পুবের শাড়ির আঁচলটি বেঁধে রেখে পশ্চিমের ধুতির কোঁচায়
রঙ আনতে যাবো আকাশপারে,
যাবে কেউ? পশ্চিম থেকে পুবে,
দক্ষিণ থেকে উত্তরে ঘুরে ঘুরে
এই তো যাচ্ছি আনতে উৎসবের রঙ, আর কারও ইচ্ছে হলে চলো,
কারও ইচ্ছে হলে আকাশদুটোকে মেলাতে, চলো।
মিলে গেলে অস্ত যাবো না, ওই অখণ্ড আকাশে আমি অস্ত যাবো না,
কাঁটাতার তুলে নিয়ে গোলাপের বাগান করব, অস্ত যাবো না,
ভালোবাসার চাষ হবে এইপার থেকে ওইপার, দিগন্তপার
সাঁতরে সাঁতরে এক করে দেবো গঙ্গা পদ্মা ব্রহ্মপুত্র, অস্ত যাবো না।
ও মেয়ে শোনো
তোমাকে বলেছে –আস্তে,
বলেছে –ধীরে.
বলেছে –কথা না,
বলেছে –চুপ।
বলেছে– বসে থাকো,
বলেছে– মাথা নোয়াও,
বলেছে — কাঁদো।
তুমি কি করবে জানো?
তুমি এখন উঠে দাঁড়াবে
পিঠটা টান টান করে, মাথাটা উঁচু করে দাঁড়াবে,
তুমি কথা বলবে, অনর্গল বলবে, যা ইচ্ছে তাই বলবে,
ড়োরে বলবে,
চিৎকার করে বলবে,
এমন চিৎকার করবে যেন ওরা দুহাতে ওদের কান চেপে রাখে।
ওরা তোমাকে বলবে, ছি ছি! বেহায়া বেশরম
শুনে তুমি হাসবে।
ওরা তোমাকে বলবে, তোর চরিষেনর ঠিক নেই,
শুনে তুমি জোরে হাসবে
বলবে তুই নষ্ট ভ্রষ্ট
তুমি আরও জোরে হাসবে
হাসি শুনে ওরা চেঁচিয়ে বলবে, তুই একটা বেশ্যা
তুমি কোমরে দুহাত রেখে পা ফাঁক করে দাঁিড়য়ে বলবে, হ্যাঁ আমি বেশ্যা।
ওদের পিলে চমকে উঠবে। ওরা বিস্ফারিত চোখে তোমাকে দেখবে। ওরা পলকহীন তোমাকে
দেখবে। তুমি আরও কিছু বলো কি না শোনার জন্য কান পেতে থাকবে।
ওদের মধ্যে যারা পুরুষ তাদের বুক দুরু দুরু কাঁপবে,
ওদের মধ্যে যারা নারী তারা সবাই তোমার মত বেশ্যা হওয়ার স্বপ্ন দেখবে।
কলকাতা তুই তোর হৃদয়
সবখানেই পুঁজিবাদের হাতি হাঁটছে, সবখানেই সামা্রজ্যবাদ
মাথায় পাগড়ি পরে বসে আছে
তুমি একবিন্দু পিঁপড়ে কামড় দিলে টেরও পায় না কেউ
তেমন কিছু পারো না কেবল লালসার জিভ দেখতে পারো
বেলায় বেলায় জিভের একশটা মরা মৌমাছি পারো
মুখে মুখে কৃত্রিম হাসি দেখতে পারো
হাসির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই আস্ত কঙ্কালের খুলি দেখে আঁতকে উঠতে পারো
মানুষের শরীরগুলো তুমি আর দেখতে পাচ্ছে! না শরীরগুলো
এখন কাগজ এখন ডলার-ইউরো-পাউণ্ড লিমোজিনে চড়ছে কনকর্ডে উঠছে
মাসে মাসে আরমানি কিনছে গ্রীষ্মকালে সমুদ্র সেরে আসছে
এদের বুক খুলে খুলে দেখে এসেছো হৃদয় নেই
খুলি খুলে দেখেছো মস্তিস্ক নেই
চোখ খুলে দেখেছো দৃষ্টিহীন
হাত রাখতেই হাতের মধ্যে পচা মাংস আর পুঁজ উঠে আসছে
এরা অনেককাল মৃত
অনেককাল এরা কোনও শ্বাস নেয় না।
তুমি যখন এদের ফেলে দৌড়ে উল্টোদিকে পালাচ্ছে!
দেখ ভিড় দেখ কয়েক কোটি জলজ্যান্ত মানুষ এদের অনুসরণ করছে
মানুষগুলো পাথর-পাথর হাতে তোমাকে ভিড়ের মধ্যে টেনে নিতে চাইছে
তুমি সন্ত্রস্ত তুমি সড়োরে সরোষে ছাড়িয়ে নিচ্ছে! নিজেকে
পাথর-পাথর জিভগুলো চুকচুক শব্দ করছে
পাথর-পাথর চোখগুলোয় করুণা
তুমি পালাচ্ছে!–
প্রাণপণ দৌড়ে এবার শহর ছাড়ছো তুমি মানুষ খুঁজছো তুমি
রক্তমাংসের মানুষ
মানুষ খুঁজছো হন্যে হয়ে যে মানুষ গান গায়
যে মানুষ স্বপ্ন দেখে যে মানুষ ভালোবাসে
উন্মাদের মত মানুষ খুঁজছো
খুঁজছো
একটি শহর খুঁজছো যে শহরের হৃদয় বলে কিছু আছে
এখনও কিছু অবশিষ্ট আছে তিল পরিমাণ হলেও আছে
তুমি দৌড়োচ্ছে! যেন শত বছর ধরে শত শতাব্দি ধরে দৌড়োচ্ছে!
ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়োচ্ছে! তোমার চুল উড়ছে চুলে জট বাঁধছে চুলে পাক ধরছে
তোমার ত্বকে ধুলো লাগছে ভাঁজ পড়ছে
চোখের কোলে কালি পড়ছে
পায়ে জুতো নেই পায়ে কাদা পায়ে কাঁটা পায়ে রক্ত
তুমি খুঁজে পেলে শেষে পেলে
হাঁপাতে হাঁপাতে তুমি থামলে শ্বাস নিলে
তুমি কলকাতায় থেমেছো মেয়ে
কলকাতা-কালচার
রবীন্দ্রসদনে আজ গান হচ্ছে, নন্দনে বাজাচ্ছে আমজাদ,
শিশির মঞ্চে নাটক হচ্ছে, অ্যাকাডেমিতেও কিছু একটা
কলকাতার গরম গরম কালচার-পাড়ায় দাঁড়িয়ে এখন গরম গরম চা খাও
ইতিউতি দেখ, চেনা মুখ খোঁড়ো, পেলে মাথাটা ঝাঁকাও,
এই কী খবর বল,
এমনভাবে দাঁড়াও সিঁড়িতে বা গাছটার তলে যেন সকলেই দেখে তোমাকে,
তুমি যে কালচার পাড়ায় নিয়মিত, দেখে।
তুমি যে দশটা পাঁচটা করেও কালচার নিয়ে আছো, দেখে
সংসারের সাত রকম ঝামেলা সয়েও কালচারটা যে রেখেছো, দেখে
যেন তোমার সুতোর কাজের পাঞ্জাবি দেখে, শাড়ির নেশা নেশা রঙ দেখে,
তোমার গান-গান কবিতা-কবিতা মুখ দেখে
যেন তোমার থিয়েটারি চুল দেখে, ফিল্মি ভাবসাব দেখে
কালচার শালার বাপের বাপ যে তুমি, যেন দেখে।
এমনভাবে হাঁটো কথা বলো যেন দর্শক শ্রোতারা জেনে যায়
নিদেনপক্ষে একটা অ্যামবাসাডার বা মারুতি তোমার থাকতেও পারে।
এমনভাবে হাসো যেন লোকে বোঝে মনে কোনও দুঃখ নেই তোমার,
যেন বোঝে, তুমি একটা বড়লোকের পাড়ায় বাস করো,
তুমি ওইসব বিচ্ছিজ্ঞর বস্তিতে বাস করো না,
শহরের দশ লক্ষ মানুষ যেখানে করে।
আরেকটু পা বাড়াও, কারও পাশে ঘন হয়ে দাঁড়াও, মনে মনে চুমু খাও
খেয়ে পুলকে পুরুষ্টু হয়ে বোঝাও যে তুমি ওই দুর্ভাগা দশ লক্ষের কেউ নও।
কলকাতার প্রেম
তোমাকে তিরিশ তিরিশ লাগে, অথচ তুমি তেষট্টি
তেষট্টি হও, তিরিশ হও তাতে কার কী এলো গেলো
তুমি তুমিই; তেমনই, তোমাকে ঠিক যেমন হলে মানায়।