কিছু একটা করো, স্পর্শ করো আমাকে, চুমু খাও
শুধু ঠোঁটে নয়, সারা শরীরে চুমু খাও, তুমুল চুমু খাও
অত দূরে অমন করে বসে থেকো না, উড়ে চলে এসো, উড়ে এসে চুমু খাও।
আমার ঠোঁটড়োড়া ঠাণ্ডায় পাথর হয়ে আছে, তোমার উষ্ণতা কিছু দাও,
তুমি তো আগুন, আমার অমল অনল, এসো তোমাকে তাপাবো,
তোমাকে তাপাতে দাও।
শুনছো,
তুমুল প্রেমে তুমিও পড়ো না গো!
শুয়ে শুয়ে
আমার সঙ্গে শোবে এসো,
তোমার উরুতে আমি আমার মাথাটি রাখছি,
আর আমার কাত হয়ে শোওয়া কোমরের খাঁজে তোমার বা হু রাখো,
এভাবে ভাই বোনের মত, বোন বোনের মত, টোনাটুনির মত, সুকসারীর মত,
পেঙ্গুইন দম্পতির মত চলো শুয়ে থাকি।
শুয়ে শুয়ে কবে কোন শিশুকালে দুপুরের পুকুরে হাঁসের সাঁতার দেখেছিলে,
একটি বাচ্চা হাঁস পথ হারিয়ে কাঁদছিল, ওকে তুলে নিয়ে মা-হাঁসের কাছে পৌঁছে
দিয়েছিলে–
শুয়ে শুয়ে দৌড়োতে দৌড়োতে হঠাৎ একটি শিমুল গাছকে ছুঁয়ে ছিলাম যখন পাঁচ বছর
বয়স, সেই আমার প্রথম শিমুল ছোঁয়া, প্রজাপতির পেছনে ছুটতে ছুটতে একটি পাহাড়ের
সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম, সেই আমার প্রথম পাহাড় —–
এইসব বলবো আমরা পরস্পরকে,
আমাদের কৈশোর বলবো, যৌবন বলবো।
বার্ধক্যের কথা মুখে বলবো না, ওটি আমরা
গাঢ় করে গভীর করে চুমু খেতে খেতে পরস্পরের প্রতিবিন্দু স্পর্শ করতে করতে
নগ্ন হতে হতে
ভালোবাসতে বাসতে
বলবো।
শেখো
দুদিনের জীবন নিয়ে আমাদের কত রকম ঢঙ
কিছুক্ষণ পরই তো ঢঙ ঢঙ ঘণ্টা বাজবে!
চোখে তখন আর রঙ নেই, সব সাদা কালো,
জঙ ধরা ত্বকে জাঁকালো
অসুখ হাঁটবে, অসুখ তো নয়, সঙ।
কিছুতে কি আর ফিরে পাবো চোখে, চোখের আলো!
বাদ দাও না ওইসব অহেতুক অহং,
যতদিন বাঁচো, ভালোবাসো। ভালো।
যতসব বোমা আর ভড়ং
প্রজাতি কি কোনওকালে টিকেছে এভাবে! হলে আস্ত মানুষখেকো!
এবার একটু শেখো। ভলোবাসতে শেখো।
শেষ পর্যন্ত
না, কলকাতা
শেষপর্যন্ত তুমিও আমার কোনও সমাধান নও
তুমিও আমার প্রশ্নগুলোর কোনও উত্তর নও।
বিশ্বাস কী, তুমিও যে কোনও মুহূর্তে হয়ে উঠতে পারো
যে কোনও শহরের মত লম্পট, কপট।
যে কোনও মুহূর্তে বেছে নিতে পারো র্হাদিক চারদিক ছেড়ে অমানবিক পারমাণবিক দিক।
বিশ্বাস কী, মঞ্চে মঞ্চে তোমার ওই নাটক হয়ত নাটকই
কৃচ্ছউস!ধনের দিকে ভালো করে তাকালেই দেখব কৃত্রিমতা, ফাঁকি।
বিশ্বাসী কী!
তোমার কাছে বাঁচতে এলে তুমিও যদি উষ্ণতা হারিয়ে ফেলো,
মুখ ফিরিয়ে আর সব শহরের মত নিষ্ঠুরতা দেখাও!
ভালোবাসো বলো, বলো ভালোবাসো, আসলে বাসো না!
তোমার সুন্দরগুলোর পিছন-দরজায় উঁকি দিয়ে যেদিন দেখে ফেলবো
কুৎসিতের ডাঁই!
যদি জেনে ফেলি মুখে যাই বলো না কেন, আসলে তুমি তাকেই দিচ্ছ যার আছে,
আর যার নেই তাকে ঠকিয়েই যাচ্ছে! প্রতিদিন!
যদি দেখি তলে তলে তুমিও সন্ত্রাসে ব্যস্ত, মনে মনে একটা খুনী তুমি!
যদি মন ওঠে!
মন যদি ওঠে!
তোমার থেকে মন ওঠা মানে ব্রম্মাণ্ড থেকে ওঠা,
তুমি নেই মানে কিছু নেই, শেষ খড়কুটোটুকু নেই।
তুমি তো স্বপ্ন, তুমি স্বপ্ন, তুমি স্বপ্ন হয়েই থাকো
আমি পৃথিবীর পথে তোমাকে নিয়ে হেঁটে বেড়াবো,
এক শহর থেকে আরেক শহরে, কোনও শহরই যে আপন নয় আমি জানবো,
আমি জানবো দূরে কোথাও একটি শহর আছে, কলকাতা নাম,
দূরে কোথাও একটি শহর আছে, আমার শহর,
জগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল শহর, অনিন্দ্য সুন্দর শহর,
একটি শহর আছে, কলকাতা নাম
একটি শহর আছে আমার শহর, আমার ভালোবাসার শহর।
শেষ পর্যন্ত আমি জানি তুমি আমার কোনও সুখ নও,
ওম শান্তি নও।
তবু স্বপ্ন আছে, প্রাণে স্বপ্ন আছে, স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বুঝি বাঁচে?
স্বপ্ন আছে থাক, কলকাতা দূরে থাক।
সময়
সময় চলে যাচ্ছে– এই বীভৎস ব্যাপারটি দেখতে ইচ্ছে করে না
তাই অনেককাল ঘড়ির দিকে তাকাইনি,
অনেককাল হাতে আমি ঘড়ি পরি না,
আর যেই না তুমি বলছো সোয়া দশটায় কোথাও দেখা হবে কী দেড়টায় বাড়িতে আসবে
কী সাতটায় থিয়েটারে,
অমনি তড়িঘড়ি ঘড়ি খুঁজে হাতে পরছি, ঘরের সবগুলো টেবিলে দেয়ালে
বাচ্চা-মেয়ের মত রাখছি, টাঙাচ্ছি।
যেন একটি দিনের একটি বেলার একটি মুহূর্ত বেরিয়ে না যায় কোনও ফাঁক দিয়ে,
যেন ভুল করে সময়ের সামান্য এদিক ওদিক করে তোমাকে না হারাই,
না হারাই কোনওদিন।
জীবনের তিনভাগ পার করে এসে যখন একভাগ বাকি,
জানি যে জীবন খুব ভয়ঙ্কর রকম ছোট, খুব বিচ্ছিজ্ঞর রকম ছোট ,
জানি যে প্রতিটি মুহূর্ত বড় অমূল্য, একটি মুহূর্তকেও
কোথাও তাই একফোঁটা দিতে চাইনি যেতে।
আর এখন, কখনও কোনও রাতে তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা থাকলে
পুরো দিনটুকুকে জীবন থেকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে চাই,
দিন দৌড়ে চলে যাক চাই,
সময়ের আগেই সময় যাক চাই,
রাত আসুক চাই,
তুমি এসো চাই।
কবে যে কখন সময়ের চেয়েও বেশি মূল্যবান হয়ে উঠলে তুমি!
সময় যে যাচ্ছে, সে খেয়ালটি নেই,
জীবন যে ফুরোচ্ছে, সে বোধটি নেই,
মৃত্যু জিনিসটি যে খুব ভয়ঙ্কর, সে ভাবনাটি নেই।
তুমি এসে কি আমার ভালো করলে কিছু!
হিসেব
কতটুকু ভালোবাসা দিলে,
ক তোড়া গোলাপ দিলে,
কতটুকু সময়, কতটা সমুদ্র দিলে,
কটি নির্ঘুম রাত দিলে, ক ফোঁটা জল দিলে চোখের — সব যেদিন ভীষণ আবেগে
শোনাচ্ছিলে আমাকে, বোঝাতে চাইছিলে আমাকে খুব ভালোবাসো, আমি বুঝে নিলাম তুমি
আমাকে এখন আর একটুও ভালোবাসো না।
ভালোবাসা ফুরোলেই মানুষ হিসেব কষতে বসে, তুমিও বসেছো।