তোমাকে দেখলেই আগুনের মত ছুটে যাই তোমার কাছে, তুমি বলেই,
হাত বাড়িয়ে দিই, তুমি বলেই তো,
হাত বাড়িয়ে রাখি, সে হাত তুমি কখনও স্পর্শ না করলেও রাখি, সে তুমি বলেই তো।
রাত
কত কত রাত কেটে যাচ্ছে একা বিছানায়,
রাতগুলো ঘুমিয়ে, না ঘুমিয়ে, একা
স্বপ্নে, না স্বপ্নে, একা
একাকীত্বে একা
পিপাসায় তৃষ্ণায়
বিছানার এক কিনারে আমি, বাকিটা ফাঁকা, অসভ্যের মত ফাঁকা।
তাকে পেতে ইচ্ছে করে আমার, আমার বাঁ পাশে, আমার ডানে,
আমার ওপরে, আমার নীচে।
একজনকে এনে মনে মনে আমি শুইয়ে দিই বিছানায়
সে আমাকে চুমু খায়, চুল থেকে পায়ের নখ অবদি ভিজিয়ে ফেলে
সে আমাকে নগ্ন করে, ভালোবাসে
সারারাত ভালোবাসে,
সারারাত সাত আকাশে উড়ে বেড়ায়, ঘুড়ি ওড়ায়,
সারারাত আমি শীর্ষসুখে মরি–
এরকম রাত কাটে আমার, মনে মনের রাত কাটে।
রাতগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে দিন দিন, রাতগুলো নিভে যাচ্ছে
তাকে হয়ত পাবো একদিন, একদিন পাবো তাকে, শুধু রাতগুলোকেই পাবো না।
রাতগুলো
একদিন অনেক রাতে ফোন করলে,
ঘুম থেকে জেগে সে ফোন ধরতে ধরতে অনেকটা সময় চলে গেল
ইস আরেকটু হলে তো রেখেই দিতে!
সেই থেকে কোনও রাতেই এখন আর আমি ঘুমোই না,
যদি ফোন করো!
যদি কথা বলতে ইচ্ছে করো!
অনেক অনেক কথা আমি মনে মনে মুখস্ত করে রাখি তোমাকে বলবো বলে,
যদি কোনওদিন কথা শুনতে ইচ্ছে করো!
দিনে তো ঘুমোইই না, দিনে তো হঠাৎ হঠাৎ ফোন করই তুমি,
দিনে কিন্তু তোমাকে আমি বলি না আমি যে রাত জেগে থাকি!
সব কথা তো আর তোমার জানার দরকার নেই,
কিছু কথা আমি একা জানলেই তো হল!
যদি আবার ফোন করো, ফোন বাজতে থাকে আর ধরতে ধরতেই রেখে দাও ওদিকে,
যদিও একবারই করেছিলে, সেই রাতের পর আর করোনি, কিন্তু যদি করে ফেলো হঠাৎ
কোনও রাতে! ঘুমোই না, জেগে থাকি ফোনটা হাতের কাছে নিয়ে।
আমার কিন্তু খুব ইচ্ছে হয় তোমাকে ফোন করি,
যে কথা আমার বলতে ইচ্ছে করে, বলি।
কিন্তু ফোন করি না, বলি না, তুমি যদি আবার বলে বসো প্রেমে পড়ে আমার মাথাটা গেছে,
ণত্ব ষত্ব জ্ঞান নেই!
প্রেমেও পড়বো, মাথাও ঠিক থাকবে — এরকমটা ভালো জানো বলে
মাথাটা যে সত্যি সত্যি আমার গেছে তার কিছুই তোমাকে বুঝতে দিই না।
তার চেয়ে এই ভেবে ছাড়া ছাড়া সুখ পাও যে প্রেমে পড়েছি,
আজকালকার চালাকচতুর রমণীরা যেরকম প্রেমে পড়ে।
এই ভেবেই স্বস্তি পাও যে তুমি এখন আমাকে ছেড়ে গেলেও,
আমার খুব একটা কিছু যাবে আসবে না।
লজ্জা, ২০০০
পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করছে এগারোটি মুসলমান পুরুষ, ভর দুপুরে।
ধর্ষণ করছে কারণ পূর্ণিমা মেয়েটি হিন্দু।
পূর্ণিমাকে পূর্ণিমার বাড়ির উঠোনে ফেলে ধর্ষণ করছে তারা।
পূর্ণিমার মাকে তারা ঘরের খুঁটিতে বেঁধে রেখেছে,
চোখদুটো খোলা মার, তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার কিশোরী কন্যার বিস্ফারিত চোখ,
যন্ত্রণায় কাতর শরীর।
পূর্ণিমার বোনটি উপুড় হয়ে পড়ে আছে মাকে শক্ত করে ধরে।
উঠোনে হু ড়োহুড়ি, পূর্ণিমার মা পাথর-কণ্ঠে মিনতি করছেন, বাবারা, এক সাথে না,
একজন একজন কইরা যাও ওর কাছে।
এগারোটি উত্তেজিত পুরুষাঙ্গে তখন ধর্মের নিশান উড়ছে।
পূর্ণিমার কান্না ছাপিয়ে পূর্ণিমার মার, গ্রামের কুলবধূটির তুমুল চিৎকারে তখন দুপুর
দ্বিখণ্ডিত, তিনি ভিক্ষে চাইছেন বাবাদের কাছে, –‘যা করার আমারে করো, ওরে ছাইড়া দেও।’
মুসলমানেরা পূর্ণিমাকে ছেড়ে দেয়নি,
পূর্ণিমার মাকেও দেয়নি,
ছ বছর বয়সী ছোট বোনটিকেও দেয়নি।
লজ্জা, ২০০২
প্রথমে মেয়েটির পেটের বাচ্চাটি বের করে নিল পেট কেটে, খুব ধারালো ছুরিতে কেটে,
এরপর বাচ্চাটির গলা কাটল তারা, মাথাটি ছুঁড়ে ফেললো মেয়েটির পায়ের কাছে, ধড়টি
মাথার কাছে। ছুঁড়ে ফেলে বেদম হাসতে লাগল তারা। কারা তারা?
তারা হিন্দু, সম্ভাব্য হিন্দুরাজ্যের দেশপ্রেমিক নাগরিক।
মেয়েটি যখন চিৎকার করছে বাঁচার জন্য, মেয়েটির শরীরে তারা আগুন লাগিয়ে দিল,
মেয়েটি পুড়তে থাকলো,
পুড়তে থাকলো,
পুড়তে পুড়তে কয়লা হচ্ছে মেয়েটি
তার ত্বক পুড়ে মাংস পুড়ে হাড় পুড়ে কয়লা হচ্ছে,
তার হৃদপিণ্ড, তার ফুসফুস, তার জরায়ু পুড়ে কয়লা হচ্ছে, ছাই হচ্ছে।
কীদোষ ছিল মেয়েটির? কী অন্যায় সে করেছিল?
–সে মুসলমানের ঘরে জন্মেছিল।
তার মুসলমান একটি নাম ছিল।
শুনছো!
আমি তুমুল প্রেমে পড়েছি তোমার,
শুনছো, শুনতে পাচ্ছে!?
এমন প্রেমে অনেককাল আমি পড়িনি
এমন করে কেউ আমাকে অনেককাল আচ্ছত করে রাখেনি।
এমন করে আমার দিনগুলোর হাত পা রাতের পেটে সেঁধিয়ে যায়নি
এমন করে রাতগুলো ছটফট করে মরেনি!
গভীর ঘুম থেকে টেনে আমাকে তুমি বসিয়ে দিলে–
এভাবে কি হয় নাকি?
আমি হাত বাড়াবো আর এখন তোমাকে পাবো না, রাতের পর রাত পাবো না!
আমি ঘুমোবো না, একফোঁটা ঘুমোবো না,
কোথাও যাবো না, কিছু শুনবো না, কাউকে কিছু বলবো না,
স্নান করবো না, খাবো না!
শুধু ভাববো তোমাকে, ভাবতে ভাবতে যা কিছুই করিনা কেন,
সেগুলো ঠিক করা হয়না–
ভাবতে ভাবতে আমি বই পড়ছি, আসলে কিন্তু পড়ছি না,
বইয়ের অক্ষরে চোখ বুলোনো ঠিকই হবে, পড়া হবে না
ভাবতে ভাবতে আমি সেন্ট্রাল স্কোয়ারে যাচ্ছি, যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না,
ঘণ্টা দুই আগে পেরিয়ে গেছি স্কোয়ার, আমি কিন্তু হাঁটছিই,
কিছুই জানি না কী পেরোচ্ছি, কোথায় পৌঁচোচ্ছি,
এর নাম হাঁটা নয়, কোথাও যাওয়া নয়,
এ অন্য কিছু, এ কারও তুমুল প্রেমে পড়া।