জলপদ্য
লিখেছি একখানা অনবদ্য জলপদ্য
তুলেছি জল থেকে এক পদ্ম
লালপদ্ম
জলপদ্ম।
কাকে দেব জলপদ্ম, এই পদ্য
যে ছিল নেবার, তার যাবার
তাড়া ছিল তাই চলে গেছে
শীতের পাখির মত গেছে
জলগ্রস্ত নাবিকের মত গেছে।
হাতে পদ্য, জলপদ্ম
অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি বোকার হদ্দ।
জিগোলো
তুমি তো নেহাত ছিলে এক জিগোলো, প্রেমিক ছিলে না।
প্রেম ভেবে অনর্থক আহলাদিত ছিলাম।
শব্দ নয়, মনে হত এক একটি আস্ত গোলাপ ঝরে পড়ছে
চুম্বনে মোমের মত গলে যেত গা।
তুমি এলে এক আকাশ আলো আসত কেঁপে
হারানো পাখিরা ফিরত দেবদারু গাছে
শীতের গাছগুলো আচমকা সবুজ হত
তুমি এলে ফুল ফুটত কবেকার মরে যাওয়া বাগানে।
স্বপ্নাতুর রমণীরা হলে এমনই অন্ধ হয়।
প্রেমিক ছিলে না বলে ফিয়েস্তা শেষে বাড়ি চলে গেছ, জিগোলোরা যেমন যায়।
সমুদ্র ভেবে আমি কী ভীষণ ডুবে ছিলাম তোমার দুর্গন্ধ ডোবায়।
টুকরো গল্প
১. দু’শটাকা দেবে এই শর্তে পুরুষ চাইল একটি নয়, দুটি কিশোরী। কিশোরীরা রাজি হল। ঘরে ঢুকেই পুরুষ আদেশ করল এক কিশোরীর পায়ের বুড়ো আঙুল আরেক কিশোরীকে চুষতে। তাই করল তারা। আঙুল চুষছে তো চুষছেই, পুরুষ দেখছে তো দেখছেই। চোষা থেকে মুখ ওঠালেই বলছে–থামলি যে?
২. ছেলের আবদার মেয়েকে খাবে, চাবকাবে। চাবুকে কাবু হল মেয়ে আর যৌনানন্দ কুড়িয়ে কুড়ি টাকা ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেল ছেলে।
৩. নারীকে শিকলে বেঁধে চারপায়ে হাঁটাল পুরুষ–কুকুরকে যেমন হাঁটায় কুকুরের বাপেরা।
৪. যৌনাঙ্গ বড় ঢিলে, সরুপথ ভ্রমণে সুখ হয় বেশ–পুরুষ তাই নারীকে উপুড় করে কলসে ঢোকালো কলা।
৫. হেগে দিয়ে নারীর মুখে বুকে পেটে বলল সে চেটে খা। নারী চেটে খাচ্ছে, দেখে খেটে খাওয়া পুরুষের হৃদয় জুড়োল।
৬. নারীর বাহুতে, নিতম্বে আগুনজ্বলা সিগারেট নেভাচ্ছে পুরুষ। একটির পর একটি। পুরুষের ভাল লাগে ত্বক পোড়ার শব্দ। চুলের কাছে ম্যাচকাঠি নিলে চিরচির করে চুল পোড়ে, শব্দ তো নয় যেন সঙ্গীত। সমঝদার পুরুষ হাত পা ছুঁড়ে হাসছে।
৭. মেয়েটিকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিল সে। মরে যেতে থাকা মানুষটির জিভ বেরিয়ে আসছে, চোখ বিস্ফারিত হচ্ছে দেখে পুরুষাঙ্গ উত্থিত হচ্ছে, উত্তেজনায় কাঁপছে পুরুষ।
ডাঙা
যাবে কতদূর, কতদূর আর যেতে পারো একা
ভেড়াতেই হবে নাওখানা কোনও এক তীরে,
জলে জন্ম মানুষের নয়,
দলছুট মানুষও একলা নির্জনে
গহন রাতের কোলে ক্লান্ত মাথা রেখে প্রাণপণ চায় আবার মানুষ।
আমি এক অচেনা ডাঙায়
কোঁচড়ের কানাকড়ি দিয়ে-থুয়ে খালি-হাত বসে আছি
চড়া দামে বিক্রি হয় ভালবাসা এ অঞ্চলে।
তিল পরিমাণ
আমার কাছে তিল ধারণের জায়গা হবে
তালকে যদি ফুঃ মন্তরে তিল করে দাও
জিভখানাকে খসিয়ে তুমি দু’চোখ মেলে দেখতে পারো
এর বেশি আর লোভ ক’রো না।
আমার একটি অন্যরকম জীবন আছে
বড় জোর দরজা অবদি, ভুলেও যেন পা ফেলো না,
সেই জীবনটি যেমন ইচ্ছে যাপন করে গা ছড়িয়ে শোব
প্রয়োজনে শুতেও পারো সংগে তুমি, তিল পরিমাণ তুমি।
তুমি
বেড়ালেরা ঝগড়া করলে ভাবি শিশু কাঁদছে!
হেলিকপ্টার উড়ছে আর ভেবে বসি জলের কিনারে ডানা ঝাঁপটাচ্ছে একঝাঁক হাঁস।
ক্রিসমাসের শহর দেখে ভাবি জোস্নায় ভেসে যাচ্ছে সব।
তুমি কাছে এলে মনে হয় অন্য কেউ এল
হাসো যখন, ভাবি বিষম কাঁদছ বুঝি।
আমার সব কিছু কেমন গোলমাল হয়ে যায় আজকাল।
কিছুই মানাচ্ছে না আমাকে
বাগানবাড়ি
পর্স গাড়ি
গুচি
ভারসাচি
কেবলটিভি
ডিভিডি
গোয়ার্তুমি
তুমি।
তুমি নেই বলে
তুমি নেই বলে ক’টি বিষাক্ত সাপ উঠে এসেছে উঠোনে, ফিরে যাচ্ছে না
জলায় বা জংলায়।
কাপড়ের ভাঁজে, টাকা পয়সার ড্রয়ারে, বালিশের নিচে, গ্লাসে-বাটিতে, ফুলদানিতে,
চৌবাচ্চায়, জলকলের মুখে
ইঁদুর আর তেলাপোকার বিশাল সংসার এখন,
তোমার সবকটি কবিতার বইএ এখন উঁই।
তুমি নেই বলে মাধবীলতাও আর ফোঁটে না
দেয়াল ঘেঁসে যে রজনীগন্ধার গাছ ছিল, কামিনীর,
ওরা মরে গেছে, হাসনুহানাও
গোলাপ বাগানে গোলাপের বদলে শুধু কাঁটা আর পোকা খাওয়া পাতা।
বুড়ো জাম গাছের গায়ে বিচ্ছুদের বাসা, পেয়ারা গাছটি হঠাৎ একদিন
ঝড় নেই বাতাস নেই গুঁড়িসুদ্ধ উপড়ে পড়ল।
মিষ্টি আমের গাছে একটি আমও আর ধরে না, নারকেল গাছে
না একখানা নারকেল।
সুপুরি গাছেদের নাচের ইশকুল বন্ধ এখন।
তুমি নেই বলে সবজির বাগান পঙ্গপাল এসে খেয়ে গেছে
সবুজ মাঠটি ভরে গেছে খড়ে, আগাছায়।
তুমি নেই বলে মানুষগুলো এখন ঠান্ডা মাথায় খুন করতে পারে যে কাউকে।
তুমি নেই
তোমার না থাকা জুড়ে দাপট এখন অদ্ভুত অসুস্থতার,
আমার শ্বাসরোধ করে আনে দুষিত বাতাস…
আমিও তোমার মত যে কোনও সময় নেই হয়ে যেতে চাই।
(তোমার না থাকার দৈত্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে ঘাড়ে,
তোমার না থাকার শকুন ছিঁড়ে খাচ্ছে আমার সর্বাঙ্গ,
তোমার না থাকার উন্মত্ত আগুন পুড়িয়ে ছাই করছে
তোমার না থাকার সর্বগ্রাসী জল আমাকে ডুবিয়ে নিচ্ছে…)
তোমার না থাকা
তুমি কি কোথাও আছ
মেঘ বা রঙধনুর আড়ালে!
হু হু বাতাসের পিঠে ভর করে মাঝে মধ্যে আসো, আমাকে ছুঁয়ে যাও!
তুমি কি দেখছ চা জুড়িয়ে জল হচ্ছে আমার
আর আমি তাকিয়ে আছি সামনে যে বাড়ি ঘর, মানুষ, যন্ত্রযান
দুপুরের আগুনে রাস্তা, ঝরে পড়া শুকনো পাতা, মরা ডাল
বুড়ো কুকুরের লালা ঝরা লাল জিভের দিকে
আর তোমার না থাকার দিকে!
তুমি কি খুব গোপনে দেখছ তাকিয়ে থাকতে থাকতে
চোখ কেমন জ্বালা করছে আমার–
তুমি কি কোনও বৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছ কোথাও,
কোনও পাখি বা প্রজাপতি!
কোনও নুড়ি কোনও অচিন দেশে!
মানুষগুলো খাচ্ছে পান করছে হাঁটছে হাসছে
দৌড়োচ্ছে, জিরোচ্ছে, ভালবাসছে
তোমার না থাকা মাঝখানে বসে আছে, একা।