১২.০৩.০৮
নিরাপত্তা
এভাবেই, যেভাবে রেখেছে আমাকে, সেভাবেই থাকতে হবে, যদি থাকি,
যদি নিতান্তই থাকতে চাই এদেশে। এভাবেই কারাগারে, বন্ধ ঘরে, একা।
–কতদিন, কত মাস বা বছর?
–তার কোনও ঠিক নেই।
–কোনওদিন কি জীবন ফিরে পাবো?
–ঠিক নেই।
–কী কারণ এই বন্ধ ঘরের?
–বেরোলেই দেশের দশটা লোকের মৃত্যু হতে পারে।
চমকে উঠি। –আমার কারণে?
চোখ নিচু করে লোক বলে,–হ্যাঁ।
বলি,–একবার মুক্তি দিয়েই দেখুন, দেখুন কতটা যুক্তিহীন এই অভিযোগ।
ওদিকে মানুষ তো ভেবে বসে আছে, আমার জন্য বুঝি সব আয়োজন,
নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা আমার জন্য, আমি যেন না মরি!
কাউকে না কাউকে নিরাপত্তা দিতে, হয়তো এ পৃথিবীরই নিয়ম,
কাউকে না কাউকে হারিয়ে যেতে হয় অদ্ভুত আঁধারে।
আমার বন্দিত্ব দশটা লোককে নিরাপত্তা দিচ্ছে,
আমার বন্দিত্ব দশটা লোককে অভাবনীয় নিশ্চিন্তি দিচ্ছে,
খুব জানতে ইচ্ছে করে, কারা সেই দশজন?
তারা কি রাস্তার নাকি রঙিন-দালানবাড়ির লোক!
তারা কি আদপেই লোক, নাকি লোকেদের লোকাতীত লোকনীতি?
কাদের বাঁচাতে আজ আমাকে প্রতিদিন দেখতে হচ্ছে মৃত্যুর বীভৎস মুখ!
১৪.০২.০৮
নিরাপদ বাড়ি
এমন একটা নিরাপদ বাড়িতে আমাকে বাস করতে হচ্ছে
যেখানে ভালো না লাগলে বলতে পারার আমার কোনও অধিকার নেই
যে ভালো লাগছে না।
এমন একটা নিরাপদ বাড়ি যেখানে কষ্ট পেতে থাকবো আমি,
কিন্তু কাঁদতে পারবো না।
চোখ নামিয়ে রাখতে হবে আমাকে, কেউ যেন দেখতে না পারে
কোনও অমীমাংসিত যন্ত্রণা।
এমন একটা বাড়ি যেখানে ইচ্ছেগুলোকে প্রতিদিন ভোরবেলা খুন হয়ে
যেতে হয়, আর সন্ধের আগে আগেই বাড়ির উঠোনে পুঁতে দিতে হয়
ইচ্ছের মলিন মৃতদেহ।
দীর্ঘ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নৈঃশব্দ ভাঙি নিরাপদ বাড়ির,
দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই বাড়ির বাইরে বা ভেতরে।
প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে ঘুমোতে যাই, ভয়ে ভয়ে জাগি,
নিজের ছায়ার সঙ্গে যতক্ষণ জেগে থাকি মনে মনে কথা বলি।
জানি না কোত্থেকে বিষদাঁত-সাপ এসে থিকথিকে ক্রোধ আর ঘৃণা
ছড়াতে ছড়াতে সারাদিন আমার শরীর বেয়ে হাঁটাহাঁটি করে,
হিসহিস করে বলতে থাকে, চলে যাও,
সীমান্ত পার হয়ে দূরে কোথাও, কাক পক্ষী না দেখে
কোনও দূর্গম পর্বতের দিকে কোথাও চলে যাও।
ছায়াটির শরীর বেয়েও সাপ বলতে বলতে যায়, যাও, জন্মের মতো যাও।
বন্ধুরা, প্রার্থণা করো, নিরাপদ বাড়ি থেকে কোনও একদিন
যেন নিরাপদে বেরোতে পারি বেঁচে।
প্রার্থণা করো, যেন কোনও একদিন একটি অনিরাপদ বাড়িতে
বাস করার সৌভাগ্য আমার হয়।
১৬.০২.০৮
নিষিদ্ধ বস্তু
আমি তো মানুষ ছিলাম, সমাজ সংসার ছিল, স্বপ্ন ছিল,
বারান্দার ফুলগাছ, বাজার হাট, বিকেলবেলার থিয়েটার,
বন্ধুর বাড়ি–আর সবার মতো আমারও ছিল।
হঠাৎ কিছু লোক তুড়ি মেরে মুহূর্তে আমাকে
নিষিদ্ধ বস্তু বানিয়ে দিল!
কার কী নষ্ট করেছিলাম আমি?
কিছুই তো ছিল না আমার, শুধু ওই স্বপ্নটুকু ছিল,
ওই স্বপ্ন সম্বল করে বেঁচে ছিলাম সুখে দুখে, নিজের মতো। ব্য
স্ত শহরের ভিড়ে, রোদে ভিজে, আর সব
মানুষের মতো আমার ওই সামান্য বেঁচে থাকাটুকু–
কেন কেড়ে নিতে হবে কারও!
নিষিদ্ধ বস্তুকে গর্তে পুরে রেখেছে রাজার লোকেরা।
ধর্ম-ধ্বংস-করা ডাইনিকে অবশেষে পাকড়াও করা গেছে–
ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে পুরো বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছে খবর,
ধর্মান্ধদের হাঁ করা মুখে ঢেলে দিচ্ছে সুস্বাদু খাদ্য,
সন্ত্রাসীর জিভ থেকে ঝরানো হচ্ছে গনগনে লাভা।
কারও খেলার জিনিস তো নয়। আমার জীবন তো জীবন!
জনতার আদালত বলে কোনও আদালত কোথাও কি নেই?
২০.০২.০৮
নো ম্যানস ল্যান্ড
নিজের দেশই যদি তোমাকে দেশ না দেয়,
তবে পৃথিবীতে কোন দেশ আছে তোমাকে দেশ দেবে, বলো!
ঘুরে ফিরে দেশগুলো তো অনেকটা একইরকম,
শাসকের চেহারা চরিত্র একইরকম।
কষ্ট দিতে চাইলে একইরকম করে তোমাকে কষ্ট দেবে,
একইরকম আহ্লাদে সুঁই ফোঁটাবে,
তোমার কান্নার সামনে পাথর-মুখে বসে মনে মনে নৃত্য করবে।
নাম ধাম ভিন্ন হতে পারে, অন্ধকারেও ঠিকই চিনবে ওদের–
চিৎকার, ফিসফিস, হাঁটাচলার শব্দ শুনে বুঝবে কারা ওরা,
যেদিকে হাওয়া, সেদিকে ওদের দৌড়ে যাওয়ার সময়
হাওয়াই তোমাকে বলবে কারা ওরা।
শাসকেরা শেষ অবধি শাসকই।
যতই তুমি নিজেকে বোঝাও কোনও শাসকের সম্পত্তি নয় দেশ,
দেশ মানুষের, যারা ভালোবাসে দেশ, দেশ তাদের।
যতই তুমি যাকে বোঝাও এ তোমার দেশ,
তুমি একে নির্মাণ করেছে তোমার হৃদয়ে,
তোমার শ্রম আর স্বপ্নের তুলিতে একেছো এর মানচিত্র।
শাসকেরা তোমাকে দূর দূর করে তাড়ালে কোথায় যাবে!
কোন দেশ আর দরজা খুলে দাঁড়ায় তাড়া খাওয়া কাউকে আশ্রয় দিতে!
কোন দেশ তোমাকে আর কোন মুখে দেশ দেবে বলো?
তুমি কেউ নও এখন আর,
মানুষও বোধহয় নও।
হারাবার তোমার বাকিই বা কী আছে!
এখনই সময় জগতকে টেনে বাইরে এনে বলে দাও,
তোমাকে ওখানেই দাঁড়াবার জায়গা দিক, ওখানেই ঠাঁই দিক,
দেশের সীমানা ফুরোলে কারও মাটি নয় বলে যেটুকু মাটি থাকে,
সেই অবাঞ্ছিত মাটিই, সেটুকুই না হয় আজ থেকে তোমার দেশ হোক।
০৪.০২.০৮
প্রশ্ন
মরে গেলে লাশখানা রেখে এসো ওখানে,
মেডিক্যালের শবব্যবচ্ছেদ কক্ষে,
মরণোত্তর দেহদান ওখানেই করেছি,