এদিকে দারিদ্র,
এদিকে দুষণ,
দুঃশাসন,
এদিকে সন্ত্রাস,
এদিকে নির্যাতন,
এদিকে মিথ্যে,
ধর্মান্ধতা,
জড়বুদ্ধি।
এদিকে পশ্চাৎপদতা,
পরাধীনতা,
এদিকে বৈষম্য
এদিকে আতংক,
অনিশ্চয়তা,
মৃত্যু।
আমি কোনদিকে যাবো?
জগত বলছে ওদিকে যাও, বাঁচো,
ওদিকে সহমর্মিতা, স্বর্ণপদক,
এদিকে অবজ্ঞা, এদিকে অপমান।
আমি এদিকটাকেই বেছে নিলাম।
০৮.০৩.০৮
দুঃসময়
১.
কূপমণ্ডুকের দল বিপক্ষে গেলেও,
কট্টরপন্থীরা আস্ফালন করলেও,
কবন্ধরা ঘিরে ধরলেও,
মানুষ থাকে পাশে, শুভাকাঙ্খীরা থাকে।
যখন রাজ্য তাড়ায়,
যখন ক্ষমতা বিপক্ষে যায়,
যখন রাষ্ট্রযন্ত্র বিরুদ্ধে দাঁড়ায়,
মানুষ সরতে থাকে, মানুষ পালায়।
শুভাকাঙ্খী বলে পরিচিতরাও নিরাপদ আড়াল খোঁজে,
প্রতিষ্ঠান সরে যায়, বেসরকারি ক্ষুদ্র দলও ক্ষুদ্র গর্তে লুকোয়,
স্বনামধন্যরা চোখ বুজে থাকে। বন্ধু বলে যাদের চিনি,
তারাও আচমকা অন্যত্র ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
হাতে গোনা কিছু মানুষ শুধু পাশে থাকে,
নির্ভেজাল কিছু মানুষ।
সাহস আর সততা সম্বল করে
সত্যিকার কিছু স্বার্থহীন বন্ধু থাকে পাশে।
২.
ওরা আজ মিছিল করছে,
ওরা মোমবাতি হাতে হাঁটছে সন্ধের শহরে,
জোট বেঁধে বিচার চাইছে অবিচারের।
কে বলেছে এই সংগ্রাম একার আমার?
বাক স্বাধীনতা রক্ষা হলে এদেশের মানুষেরই হবে,
এ আমার একার নয়, স্বপ্নবান মানুষের সবার সংগ্রাম।
এই দুঃসময়
আমার একার নয়, আমাদের সবার দুঃসময়।
যদি কোনওদিন জয় হয় মুক্তচিন্তার,
ব্যক্তি আমার চেয়ে শতগুণ হবে ভারতবর্ষের জয়।
এ আমার একার কিছু নয়,
আমার পাশে ওরা নয়, বরং ওদেরই পাশে,
ওই অবস্থান ধর্মঘটের পাশে, অনশনের পাশে,
ওই মিছিলের মানুষের পাশে,
ভারতবর্ষের পাশে, আমি আছি,
দূর কারাবাস থেকেও আছি,
ঘোর অনিশ্চয়তা আর অন্ধকার থেকেও আছি পাশে। ১৮.০২.০৮
দূর-দৃষ্টিহীন
যারা দিচ্ছে কারাগারে আমাকে পাহারা,
তাকায় বিস্ময় নিয়ে মাঝেমধ্যে তারা,
কী কারণে পড়ে আছি একা একা জেলে
জগৎ সংসার দূরে বহুদূরে ফেলে!
বুঝতে পারেনা তারা, চোখের তারায়
হয়তো কফোঁটা জল কাঁপে করুণায়!
কানে কানে বারবারই প্রশ্ন করে যায়
কে বাঁচে এভাবে স্বাধীনতা হীনতায়?
আমি কি বুঝিনা বুঝি? একা অন্ধকারে
বসে থেকে দুরারোগ্য ব্যাধি বাড়ে হাড়ে।
কী করে এতটা ধৈর্য কোথায় পেলাম?
ধৈর্যের পরীক্ষা হলে কার বদনাম!
কে কার পরীক্ষা নেবে, মানবে কে হার!
আমাকে করেছে বন্দি ক্ষুব্ধ সরকার
পরীক্ষা আমার নয়, তাদের এবার,
কতদিনে করে দেখি বিষফোঁড়া পার।
ধৈর্যের যা কিছু বাধ, ভেঙে সর্বনাশ,
লাভ নেই টেনে ধরে ইস্পাতের রাশ!
আপাতত করে নিচ্ছে ধর্মবাদ-চাষ
পরেরটা পরে হবে, পরে রাজহাঁস।
চুনোপুটি ধৈর্য ধরে বছর যাওয়াবে
তিমিরা সইবে কেন! আস্ত গিলে খাবে।
আমার না হয় আশা আজকাল ক্ষীণ।
ধর্মবাদের ফসল কোনও একদিন
তাদের তুলতে হবে নিজেদের ঘরে,
ভরে যাবে সবকটা ঘর বিষধরে।
কালসাপগুলো পোষা দুধ কলা দিয়ে,
একেকজনকে খাবে গিলে বা চিবিয়ে।
সেদিনের কিন্তু খুব বেশি নেই বাকি,
যেদিন জানবে তারা নিজেদেরই ফাঁকি
দিয়ে গেছে দিন দিন মনোবলহীন
তুখোড় রাজনীতিক দূরদৃষ্টিহীন।
১০.০৩.০৮
দেশ বলে কি কিছু থাকতে নেই আমার
এমনই অপরাধী, মানবতার এমনই শত্রু আমি,
এমনই কি দেশদ্রোহী যে দেশ বলে কিছু থাকতে নেই আমার।
দেশই তবে কেড়ে নেবে আমার বাকিটা জীবন থেকে আমার স্বদেশ।
দেশ দেশ বলে অন্ধের মতো উত্তর থেকে দক্ষিণ গোলার্ধ
পাহাড় সমুদ্র আর সারি সারি বৃক্ষ
অন্ধের মতো আকাশচাঁদ কুয়াশা রোদ্দুর
অন্ধের মতো ঘাস লতাগুল্ম মাটি আর মানুষ হাতড়ে হাতড়ে দেশ খুঁজেছি।
পৃথিবী ফুরিয়ে অবশেষে জীবন ফুরোতে
দেশের তীরে এসে বসা ক্লান্ত পিপাসার্ত মানুষের নিশ্চিন্তিকে তুমি যদি
টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাও, আঁজলার জলটাও ছুড়ে দিয়ে
আমাকে মৃত্যুদণ্ড দাও, তবে কী নামে ডাকবো তোমাকে, দেশ?
বুকের ওপর মস্ত পর্বতের মতো দাঁড়িয়ে
বুটজুতোর পা দিয়ে গলা পিষছে, খুঁচিয়ে তুলে নিয়েছো দুটো চোখ,
মুখ থেকে টেনে বের করে নিয়েছে জিভ, টুকরো করেছে,
চাবুক মেরে চামড়া তুলে নিয়েছো,
গুঁড়ো করে দিয়েছো পা, পায়ের আঙুল, খুলি খুলে মস্তিস্ক থেতলে দিচ্ছো,
বন্দি করেছে, যেন মরি, যেন মরে যাই,
আমি তবু দেশ বলেই তোমাকে ডাকি, বড় ভালোবেসে ডাকি।
কিছু সত্য উচ্চারণ করেছি বলে আমি দেশদ্রোহী,
মিথ্যুকের মিছিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তুমি চলবে বলে আজ আমি দেশদ্রোহী।
মানবতাকে যেন মাটি দিয়ে দিই নয়তো সাত আসমানে উড়িয়ে দিই–
তর্জনী তুলে বলে দিয়েছে।
আর যা কিছুই থাক বা না থাক, দেশ বলে কিছু থাকতে নেই আমার।
আমার জীবন থেকে, তুমি দেশ, হৃদয় খুঁড়ে নিয়ে গেলে আমারই স্বদেশ।
২৩.০১.০৮
নাম
একটা সরল সোজা মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করছে তোমরা,
তার সত্য কথা বলা তোমাদের সহ্য হচ্ছে না,
তার সততা তোমাদের আর পছন্দ হচ্ছে না।
তাকে রাজ্য ছাড়া করেছো,
আচমকা তাকে তার ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছো
মিথ্যে ভয় দেখিয়ে বিমান বন্দরে,
ঘর বাড়ি যেমন ছিল, ওভাবেই এখনও পড়ে আছে,
যে বইটা পড়ছিলাম, সেটা ওভাবেই খোলা,
লেখার খাতাটাও ওভাবে,
কলমের নিব খোলা থেকে থেকে কালি শুকিয়ে গেছে সম্ভবত,
লেখকের কলমের কালি শুকিয়ে ফেলতে চাইছো তোমরা।
লেখককে তার লেখার ঘরে যেতে দিতে চাইছে না,
লেখককে বন্দি করেছে, যেভাবে কোনও
ঘৃণ্য হত্যাকারীকে বন্দি করো।
যেভাবে ফাঁসি দেওয়ার জন্য রেখে দাও দাগী আসামীকে,
সেভাবে আমাকে রেখে দিয়েছে,
কোথায় কোন গুহায় রেখেছো কাউকে জানতে দিচ্ছো না,
পৃথিবীর কাউকে না, আমাকেও না।
লেখককে ভাবতে দিতে চাইছে না,
লেখককে লিখতে দিতে চাইছে না,
লেখককে বাঁচতে দিতে চাইছো না,
তোমাদের না-চাওয়াগুলো স্পষ্ট দেখছে পৃথিবী।
ভাবনা কী!
তোমাদের বশীভূত লেখকেরা,
পোষ্য ঐতিহাসিকেরা
স্বর্ণাক্ষরে তো লিখেই রাখবে ইতিহাসে তোমাদের নাম?