আমি আমার মতো বৃষ্টি বাদলায় বাঁচি,
ঘামাচি গরমে বাঁচি।
আমার মতো রাতভর চাঁদ দেখে দেখে, চাঁদ থেকে চু
য়ে পড়া সুখ দেখে দেখে বাঁচি।
ভুল করেও কাউকে বলি না ঘাস হতে আর,
ভুল করে নিজেও কখনও বৃক্ষ হই না।
অক্টোবর ২০০৭
ছি!
আমি জেলে থাকি তাতে কার কী?
এরকম কত লোক জেলে আছে!
অন্যায় করিনি তাতেই বা কী!
কত নিরপরাধ মরে পড়ে আছে কতখানে!
ফাঁসি হয়ে যায় কত নির্দোষের,
যাবজ্জীবনও হচ্ছে তো প্রতিদিনই।
আমি কারাগারে এ আর এমন কী!
এ তথ্য নতুন নয়। অনেক লেখককে
শাসকেরা ভুগিয়েছে বিভিন্ন দেশে।
খুব কিছু অভিনবনয় কারাগার-বাস।
এরকম বলে দায়িত্ব এড়ান বড় বড় লোক।
হঠাৎ কখনও রহস্যময় মৃতুটি এসে গেলে
খবর বেরোবে, আপদ মরেছে অবশেষে
তাতেই বা কারও কিছুই কি যায় আসে!
কজন দাঁড়াবে জানতে মৃত্যুর কারণ,
প্রতিবাদ মিছিলে সাকুল্যে
কুড়িজন হবে তোক?
অভিজ্ঞতা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে বটে,
ক্ষমতাকে কম বেশি সবাই আমরা চিনি।
নির্বাসনে না গেলে মানুষ কি চেনা যায়?
এই মেরুদণ্ডহীনের দেশে
ভাবতে লজ্জা হয় ভালোবেসে বাস করি।
হাতে গোনা কিছু সৎ ও সাহসী মানুষ
হৃদয়ে রয়ে যাবে যতদিন বাঁচি,
এই দেশ থেকে আর প্রাপ্তির কিছু নেই।
১০.০৩.০৮
ছোটখাটো জিনিস
নাওয়া
দিনের পর দিন যাচ্ছে, স্নান করি না।
মাস পেরোচ্ছে, গা থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে,
স্নানের তবু কোনও ইচ্ছে জাগে না,
কেনই বা স্নান করবো, কী লাভ স্নান করে..
এক অদ্ভুত অনীহা আমাকে অধিকার করে রাখে।
খাওয়া
তিনবেলা লোক আসে খাবার নিয়ে
পছন্দ হোক বা না হোক, খেতে হয়।
না খেয়ে যদি বাঁচা যেত–
বলে দিতাম কাল থেকে যাই দিক, অন্তত খাবারটা যেন না দেয়।
ঘুম
ঘুমোতে যাবার আগে ভয় হয়, যদি কিছু হয়!
যদি আর না জাগি!
ঘুমোলে চমকে চমকে বার বার উঠে যাই, আশেপাশে তাকাই,
আমার ঘর কি এ ঘর? না, এ আমার ঘর নয়।
নির্বাসন নেহাতই একটা দুঃস্বপ্ন, এ সত্যি নয়–
এই স্বপ্নটি সারাদিন দেখি,
ঘুমোলে স্বপ্ন যদি উবে যায়, ঘুমোতে ভয় হয়।
হাঁটাচলা
চার দেওয়াল ঘেরা ওই চতুষ্কোণ ঘরটির মধ্যেই
হাঁটাচলা করো যদি নিতান্তই করতে হয়–
এরকমই আদেশ এসেছে।
ঘর ঘরের মতো পড়ে থাকে, আমি এক কোণে আদেশে অবশ হয়ে,
স্তব্ধ বসে ভাবি, বিশাল বিস্তৃত এই পৃথিবী, কবে থেকে এত কৃপণ হল।
দেখা সাক্ষাৎ
জেলেও শুনেছি কিছু নিয়ম থাকে,
দেখা সাক্ষাৎএর সময় ইত্যাদি নাকি থাকেই,
আমারই কিছু নেই। স্বজন বন্ধু বলতে কিছু থাকতে নেই এক আমারই,
জেলের সুবিধে চেয়ে আবেদন করি প্রতিদিন, নিরুত্তর ভারতবর্ষ। ১১.০২.০৮
ঝরাপাতা
ঝরাপাতাদের জড়ো করে পুড়িয়ে দেব ভেবেছি অনেকবার,
রাত হলেও যত রাতই হোক, আগুন হাতে নিই।
ওদের তাকিয়ে থাকা দেখলে গা শিরশির করে।
ঝরে গেলে কিছুর আর দায় থাকে না
যেমন খুশি ওড়ে, ঘরে বারান্দায় হৈ হৈ করে খেলে,
জানালায় গোত্তা খাচ্ছে, গায়ে লুটোপুটি, হাসছে,
কানে কানে বার বার বলে, ঝরে যাও, ঝরো, ঝরে যাও।
মন বলে কিছু নেই ওদের। তারপরও কী হয় কে জানে, আগুন নিভিয়ে দিই।
পাতাগুলো পোড়াতে পারি না, কোনও কোনও দিন হঠাৎ কাঁদে বলে পারি না,
গুমড়ে গুমড়ে কারও পায়ের তলায় কাঁদে।
কান্নার শব্দ দিগন্ত অবধি ছড়ানো শত শতাব্দির মরুময় নৈঃশব্দ
ভেঙে ভেঙে জলতরঙ্গের মতো উঠে আসে…
কেউ হেঁটে আসে, আমার একলা জীবনে কেউ আসে।
সে না হয় দুদণ্ড দেখতে এল, তবু তো এল।
সে না হয় কাছেই কোথাও গিয়েছিলো, তাই এল, তবু তো এল।
ঝরাপাতারা তাকে নিয়ে নিয়ে আসে, যতক্ষণ নিয়ে আসে,
ততক্ষণ জানি আসছে, ততক্ষণ নিজেকে বলি কাছেই কোথাও নয়, পথ ভুল করে
নয়,
আসলে আমার কাছেই, বছরভর ঘুরে, ঠিকানা যোগাড় করে, খুঁজে খুঁজে
আমার কাছেই আসছে কেউ, ভালোবেসে।
ওই অতটা ক্ষণই, ওই অতটা কুয়াশাই
আমার হাত পা খুলে খুলে, খুলি খুলে, বুক খুলে গুঁজে দিতে থাকে প্রাণ।
বাড়ির চারদিক পাহাড় হয়ে আছে ঝরাপাতার,
পোড়াতে পারি না।
ডুবে যেতে থাকি ঝরাপাতায়, পোড়াতে পারি না।
অক্টোবর ২০০৭
তারা কারা
যাদের সঙ্গে বাস করবো বলে আমি অন্ধকূপে পড়ে আছি,
অপেক্ষা করছি,
এক একটা মুহূর্ত এক একটা যুগের মতো যদিও দীর্ঘ, করছি।
যাদের সঙ্গে বাস করবো বলে ত্যাগ করছি আনন্দ উৎসব,
জীবন যাপন,
সমাজ সংসার,
স্বাধীনতা,
যাদের সঙ্গে বাস করবো বলে শরীর ক্ষয় করছি,
ভেঙে গুঁড়ো হতে দিচ্ছি মন!
যাদের সঙ্গে বাস করবো বলে প্রতিদিন জল ফেলছি চোখের,
নিঃসঙ্গতার গায়ে
সারারাত ধরে
টুপটুপ ঝরে পড়ছে সে জল,
ভেসে যাচ্ছে বয়স,
যাদের সঙ্গে বাস করবো বলে বুকের মধ্যে বিশাল এক
প্রত্যাশার প্রাসাদ গড়েছি,
তারা কারা?
তারা কি আমাকে মনে করে একবারও?
কখনও হঠাৎ? কোনওদিন?
কাদের সঙ্গে বাস করবো বলে
ভয়ংকর দাঁতালের বিরুদ্ধে এক বিন্দু পিঁপড়ে হয়েও
লড়াই-এ নেমেছি?
তারা কি আমার মতো ভালোবাসা জানে?
আদৌ কি তারা ভালোবাসে?
০৭.০৩.০৮
দিক-দর্শন
ওদিকে ঐশ্বর্য,
ওদিকে যশ খ্যাতি,
ওদিকে সম্মান।
ওদিকে গণতন্ত্র,
বাক স্বাধীনতা,
ওদিকে মুক্তচিন্তা,
মানবাধিকার,
ওদিকে সুস্থতা,
সমতা,
ওদিকে সুন্দর,
ওদিকে সততা।
ওদিকে নিশ্চিতি,
নিরাপত্তা,
ওদিকে যুক্তিবাদ,
ওদিকে জীবন।