রেটিনোপ্যাথি
দুশ্চিন্তা কোরো না,
দুশ্চিন্তা করলে তোমার রক্তচাপ বেড়ে আকাশ ছোবে,
দুশ্চিন্তা করলে তুমি নির্ঘাত মরবে।
চিকিৎসক বারবারই সাবধানবাণী আওড়াচ্ছেন।
কিন্তু কী করে দুশ্চিন্তামুক্ত হবো এই অজ্ঞাতবাসে,
একটা স্বাধীনচেতা মানুষকে জন্তুর মতো তুলে এনে
আচমকা খাঁচায় বন্দি করলে কী করে দুশ্চিন্তামুক্ত হবে সে!
খাঁচা থেকে আদৌ কোনওদিন মুক্তি পাবে কি না,
মানুষের কোলাহলে মানুষের মতো কোনওদিন
জীবনখানি যাপন করতে পারবে কি না,
জানতে না পারলে দুশ্চিন্তামুক্ত কী করে হবে সে!
আলোর মানুষেরা কতদিন পারে অন্ধকারে
অন্ধের মতো সাঁতরাতে!
আমার শরীরে তীরের মতো বিঁধে রয়েছে দুশ্চিন্তা,
যতক্ষণ ওই খাঁচা থেকে মুক্তি নেই, ততক্ষণ তীর থেকেও নেই।
চিকিৎসক আজ গম্ভীর মুখে বলে দিলেন,
দুশ্চিন্তা থাবা দিয়ে ধরেছে আমার দৃষ্টিশক্তি,
দুশ্চিন্তা আমাকে উপহার দিয়েছে দূরারোগ্য রেটিনোপ্যাথি।
তীরন্দাজদের উদ্দেশেবলি,
তোমাদের কালো কুৎসিত অন্ধকার আমার আলো কেড়ে নিয়েছে,
আমার চোখদুটো ফেরত দাও বাবুরা,
আশ্রয় চেয়ে কেঁদেছিলাম বাবুরা, আমি আশ্রয় চাই না,
দেশ ছিনিয়ে নিতে চাও আমার হৃদয় থেকে, নাও।
আমার আলোটুকু আমাকে ফেরত দাও বাবুরা।
১৩.০৩.০৮
শিউলি
আশ্চর্য একটা গাছ দেখি পথে যেতে যেতে, যে গাছে সারা বছর শিউলি ফোটে।
গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখে জল উপচে ওঠে,
শিউলি পড়ে শীত গ্রীসুবর্ষা সাদা হয়ে থাকে মাঠ।
তার কথা মনে পড়ে, শিউলির মালা গেঁথে গেঁথে
শীতের সকালগুলোয় দিত,
দুহাতে শিউলি এনে পড়ার টেবিলে রেখে চলে যেত।
শীত ফুরিয়ে গেলে দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলতো তাকে মনে পড়ে।
একবার যদি দুনিয়াটা এরকম হতে পারতো যে নেই সে আসলে আছে,
একবার যদি তাকে আমি কোথাও পেতাম, কোনওখানে,
তার সেই হাত, যে হাতে শিউলির ঘ্রাণ এখনও লেগে আছে,
এখনও হলুদ জাফরান রং আঙুলের ফাঁকে, ছুঁয়ে থাকতাম,
মুখ গুঁজে রাখতাম সেই হাতে।
সেই হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতাম নতুন গাছটার কাছে,
মালা গেঁথে গেঁথে তাকে পরাতাম, যত ফুল আছে তুলে
বৃষ্টির মতো ছড়াতাম তার গায়ে।
দুনিয়াটা যদি এরকম হয় আসলে সে আছে,
শিউলির ঋতু এলে কোনও একটা গাছের কাছে সে যাবে,
মালা গেঁথে মনে মনে কাউকে পাবে, দুহাতে শিউলি নিয়ে
কারও পড়ার টেবিলে চুপচাপ রেখে দেবে,
তাহলে পথে যেতে যেতে যে গাছটা দেখি, সেটায়
হেলান দিয়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো, যতদিন ফুল ফোটে ততদিন।
অক্টোবর ২০০৭