০২. তাম্বূল খণ্ড
(১)
গুজ্জরীরাগঃ॥একতালী ॥
দধি দুধেঁ পসার সজাআঁ।
নেতা বাস ওহাড়ন দিআঁ ॥ ল রাধা
সব সখিজন মেলি রঙ্গে।
একচিত্তে বড়ায়ির সঙ্গে ॥ ল রাধা ॥ ১
নিতি জাএ সর্ববাঙ্গসুন্দরী।
বনপথে মথুরা নগরী ॥ ল রাধা ॥ ধ্রু
এক দিনে মনের উল্লাসে।
সখি সমে রস পরিহাসে ॥
আগু গেলি সত্বর গমনে।
বড়ায়িক না করী যতনে ॥ ২
বকুলতলাত গোআলী।
বড়ায়ির পন্থ নেহালী ॥
বসিলী মাথাত দিআঁ হাথে
বড়ায়ি চলিলী আন পথে ॥ ৩
রাধিকা গুণিআঁ মনে মনে।
বড়াইর বিলম্ব কারনে ॥
বন মাঝেঁ পাইল তরাসে।
গাইল বড়ু চণ্ডীদাসে ॥ ৪
(২)
পাহাড়ীআরাগঃ ॥ ক্রীড়া ॥
রাধিকা হারাআঁ বড়ায়ি বুলে থানে থানে।
ভালমনে পথক না দেখে নয়নে ॥
নাতিনীর মোহে বড়ায়ি মনে বিমরিষে।
কমণ উপায় করোঁ জাওঁ কোন দিশে ॥ ১
পথ হারাইল বড়ায়ি মাঝ বৃন্দাবনে।
দৈবে সে জাণএ যার যেহেন ঘটনে ॥ ধ্রু
মনেত গুনেত বড়ায়ি আধিক তরাসে।
কথাঁ গিআঁ পাওঁ মোএঁ রাধার উদ্দেশে ॥
একসরী হৈলোঁ মোএঁ হেন ঘোর বনে।
রাধিকা এড়িআঁ আজি জীবোঁ কেনমনে ॥ ২
কথো দুর পথ গিআঁ দেখিল বড়ায়ি।
বৃন্দাবন মাঝে চরে শতসংখ্য গাই॥
তাক দেখি বড়ায়ির মনেত হরিষে।
এহা রাখোআল পুছোঁ রাধার উদ্দেশে ॥ ৩
হেন মনে গুণী বড়ায়ি গেলান্তি তথাঞিঁ।
দেখিল লগুড় করে নাতিআ কাহাঞিঁ ॥
হরিষে মেলিলী বড়ায়ি তাহার পাশে।
বাসলী শিরে বন্দী গাইল চণ্ডীদাসে ॥ ৪
(৩)
পাহাড়ীআরাগঃ ॥ চিত্রক লগনী ॥ একতালী ॥
আচম্বিত বুঢ়ী দেখি বৃন্দাবন মাঝে।
বিনয় করিআঁ পুছন্তি দেবরাজে ॥ ১
কথাঁ হৈতেঁ আইলা তোহ্মে কিবা তোর কাজে।
একলী বুলসি কেহ্নে বৃন্দাবন মাঝে ॥ ২
গোঠে হৈতেঁ আসি আহ্মি বুঢ়ী গোআলিনী।
আগুত চলিলী মোর সুন্দরি নাতিনী ॥ ৩
পাছে পাছে জাইতেঁ পথ হারাইল আহ্মি।
মথুরার পথ পুতা কহিআঁ দেহ তুহ্মি ॥ ৪
সঙ্গে কেহ্নে লআঁ ধুল নাতিনিখানী।
কথাঁ তাক হারাইলেঁ কহ তত্ববাণী ॥ ৫
কি নাম তাহার কেহেন তার রূপ।
আহ্মার থানত বুঢ়ী কহিআর সরূপ ॥ ৬
দধি বিকে জাইতেঁ সঙ্গে মথুরা নগরী।
বৃন্দাবনে হারাইলোঁ ত্রৈলোক্যসুন্দরী ॥ ৭
নাতিনী হারাইলোঁ নামে চন্দ্রাবলী।
কোঁঅলী পাতলী বালী সুন বনমালী ॥ ৮
সরূপ কহিবোঁ তবেঁ মথুরার পথ।
যে কাজ বোলোঁ তোহ্মাক তাত কর সত ॥ ৯
বোলা এক বোলোঁ তোক যবেঁ ধর মনে।
তবেঁসি করিবোঁ তোর রাধা দরশনে ॥ ১০
তোঁ মোর নাতি যেহ্ন দুঅজ পরাণ।
তোহ্মার বোলত আহ্মে না করিব আন ॥ ১১
সত্যেঁ সত্যেঁ করিবোঁ মো তোহ্মার বচন।
যবেঁ আন করোঁ তাক বধওঁ বাহ্মণ ॥ ১২
উদ্দেশ বুলিব যবেঁ রাধিকার আহ্মে।
তবেঁ ভালমতেঁ তার রূপ কহ তোহ্মে ॥ ১৩
কাহ্নের বচনে বড়ায়ি পাইল হরিষে।
বাসলী শিরে বন্দী গাইল চণ্ডীদাসে ॥ ১৪
(৪)
গুজ্জরীরাগঃ ॥ রুপকং ॥
কেশপাশেঁ শোভে তার সুরঙ্গ সিন্দুর।
সজল জলদে যেহ্ন ঊইল নব সূর॥
কনককমলরুচি বিমল বদনে।
দেখি লাজে গেলা চান্দ দুঈ লাখ যোজনে ॥ ১
মুনিমনমোহিনী রমণী আনুপামা।
পদুমিনী আহ্মার নাতিনী রাধানামা ॥ ধ্রু
ললিত আলকপাঁতিকাঁতি দেখি লাজে।
তমালকলিকাকুল রহে বনমাঝে ॥
আলস লোচন দেখি কাজলে উজল।
জলে পসি তপ করে নীল উতপল ॥ ২
কন্ঠদেশ দেখিআঁ শঙ্খত ভৈল লাজে।
সত্বরে পসিলা সাগরের জলমাঝে॥
কুচযুগ দেখি তার আতি মনোহরে।
আভিমান পাআঁ পাকা দাড়িম বিদরে ॥ ৩
মাঝা খিনী গুরুতর বিপুল নিতম্বে।
মত্ত রাজহংস জিণী চলএ বিলম্বে ॥
দিনে দিনে বাঢ়ে তার নহুলী যৌবন।
গাইল বড়ু চণ্ডীদাস বাসলীগণ ॥ ৪
(৫)
দেশাগরাগঃ ॥ রুপকং ॥ অথবা,কানড়া ॥যতিঃ
তোর মুখে রাধিকার রূপকথা সুনী।
ধরিবাক না পারোঁ পরাণী ॥ বড়ায়ি ল
দারুন কুসুমশর সুদৃঢ় সন্ধানে।
আতিশয় মোর মন হানে ॥ বড়ায়ি ল ॥ ১
পরাণ আধিক বড়ায়ি বোলোঁ মো তোহ্মারে।
রাধিকা মানাআঁ দেহ মোরে ॥ ধ্রু ॥
কুসুমিত তরুগণ বসন্ত সমএ।
তাত মধুকর মধু পীএ ॥
সুসর পঞ্চম শর গাএ পিকগণে।
তেকারণে থীর নহে মনে ॥ ২
আতিশয় বাঢ়ে মোর মদনবিকার।
তাত কর মোর উপকার ॥
এ থানক আইলা বড়ায়ি আহ্মার ভাগে।
মোর কাজ তোহ্মাত লাগে ॥ ৩
একবার মোর তোহ্মে কর উপকার।
আহ্মে দেব সংসারের সার॥
রাধিকা মানাআঁ বড়ায়ি পুর মোর আশ।
বাসলী বন্দী গাইল চণ্ডীদাস ॥ ৪
(৬)
আহেররাগঃ ॥ লঘুশেখরঃ ॥
আহ্মে তোর বড়ায়ি তোহ্মে মোর নাতী।
চিন্তিবোঁ তোহ্মার হিত পরাণশকতী ॥
তোহ্মার আন্তরে তাক করিবোঁ শকতী।
আয়র মানায়িবোঁ করী আশেষ যুগতী ॥
বোলহ সুন্দর কাহ্ন রাধার উদ্দেশে।
তথাঁ গেলেঁ তোর কাজ সাধিবোঁ হরিষে ॥ ধ্রু
এ সব কাজের আহ্মে জাণিএ প্রবন্ধ।
এতেকেঁ তোহ্মার তার হৈব নেহাবন্ধ ॥
পরাণ দিবাক পারোঁ তোহ্মার বচনে।
এ কাজ সাধিবো আহ্মে করিআঁ যতনে ॥ ২
আযোড় যোড়ন আহ্মে করিবাক পারী।
সে কি রাধিকা ভৈলী সীতা সতী নারী ॥
আহ্মার হাথত দেহ কিছু ফুল পানে।
তাক লআঁ জাই আহ্মে রাধিকার থানে ॥
বিলম্ব না কর বোল রাধার উদ্দেশে।
আর কিছু দেহ কাহ্নাইঁ উত্তম সন্দেশে ॥
ঝাঁট করি জাই আহ্মে রাধার উদ্দেশে।
বাসলী শিরে বন্দী গাইল চণ্ডীদাসে ॥ ৪
(৭)
পাহাড়ীআরাগঃ ॥ ক্রীড়া ॥ লগনী প্রকীণ্ণক ॥
কথা খানি খানি কহিল বড়ায়ি
বসিআঁ রাধার পাশে।
কর্পূর তাম্বুল দিআঁ রাধাক
বিমুখ বদনে হাসে ॥ ল বড়ায়ি ॥ ১
কহির কপুর তাম্বুল বড়ায়ি
কহির নেত পাটোল।
নেআলী মাহলী আওর নানা ফুল
কে দিআঁ পাঠাইলে মোর ॥ ল বড়ায়ি ॥ ২
আইস রাধা কহোঁ তোহ্মারে
কৃষ্ণের পাঁচ আবথা।
বিরহ জরেঁ তেহেঁ জরিলা
পাঠাইল তোহ্মা বেথাঁ ॥ ল রাধা ॥ ৩
এ বোল সুণিআঁ নাগরী রাধা
হাণএ সকল গাএ।
যত নানা ফুল পান করপুর
সব পেলাইল পাএ ॥ ৪
উঠিআঁ বড়ায়ি রাধাক বুইল
হেন কাম না করিএ।
নান্দের নন্দন ভুবন বন্দন
তোর দরশনে জীএ ॥ ৫
ঘরের সামী মোর সর্ব্বাঙ্গে সুন্দর
আছে সুলক্ষণ দেহা।
নান্দের ঘরের গরু রাখোআল
তা সমে কি মোর নেহা ॥ ৬
যে দেব স্মরণে পাপ বিমোচনে
দেখিল হএ মুকতী।
যে দেব সনে নেহা বাঢ়াইলেঁ
হএ বিষ্ণুপুরে স্থিতী ॥ ৭
ধিক ঝাউ নারীর জীবন
দহেঁ পসূ তার পতী।
পর পুরুষের নেহাএঁ যাহার
বিষ্ণুপুরে হএ স্থিতী ॥ ৮
নাগর শেখর নান্দের সুন্দর
উপেখিল মতিমোষে।
বাসলীচরণ শিরে বন্দীআঁ
গাইল বড়ু চণ্ডীদাসে ॥ ৯
(৮)
কোড়ারাগঃ ॥ রুপকং ॥
আহ্মার কোমল দেহে।
না জাণো দূতী পরপুরুষের নেহে ॥
সরূপেঁ তোরে কহিলোঁ।
আল হের প্রতিজ্ঞা করিলোঁ।
প্রথম যৌবন মোএঁ বঞ্চিলোঁ ॥ ১
না বোল না বোল দূতী নাএ।
আবালী রাধা নহোঁ সুরতী যোগে ॥ ধ্রু
পান আনি নিজ দোষে।
ফল পাইবেঁ মোর রোষে।
ধূর্ত্ত কাহ্নাই না বুঝে সে মতিমোষে ॥
ক্ষেমা করু কাহ্ন মণে।
ধরুক মোর বচনে।
যবেঁ না মরিবে রাধা রস ণিরকারণে ॥ ২
না বুঝোঁ রঙ্গ ধামালী।
না জাণো সুরতী কেলী।
বাহুড়িআঁ চল সে নিষধ বনমালী ॥
জৈসাণে রতি জাণিবোঁ ৫।
তেসাণে কাহ্ন আণিবোঁ।
সুরতী সম্ভোগে সকল রাতী পোহাইবোঁ ॥ ৩
দেখি তোহ্মাক আজলী।
পর কাজে তোঁ বিকলী।
তেসিঁ না বুঝসি আহ্মে বালী ॥
বোল গিআঁ কাহ্ন পাশে।
ছাড়ু সুরতীর আশে।
গাইল বড়ু চণ্ডীদাসে ॥ ৪
(৯)
দেশাগরাগঃ ॥ যতিঃ ॥
আজি রজনীত বড়ায়ি দেখিলোঁ সপনে।
রাধা সিআঁ বসিলী শয়নে ॥ বড়ায়ি ল
তখনে হৃদয়ে মোর বেধিল মদনে।
বুইলোঁ পরিহাস বচনে ॥ বড়ায়ি ল ॥ ১
না জীবোঁ না জীবোঁ বিণি রাধা দরশনে।
সরূপেঁ কহিলোঁ তোর থানে ॥ ধ্রু
নীল জলদ সম চিকণ চিকুরে।
বদন সংপুন শশধরে ॥
বচন ঝরএ তার আমৃতের ধার।
তাক বড় লোভ আহ্মার ॥ ২
হাথ দিআঁ দেখ বড়ায়ি মোর কলেবরে।
জত বড় উপজিল জরে ॥
এত দুখ বড়ায়ি মোর পরাণ না সহে।
মরোঁ হের রাধার বিরহে ॥ ৩
বারেক করাহ যবেঁ রাধা দরশনে।
তবেঁ রহে আহ্মার জীবনে ॥
এহা জাণী ঝাঁট চল রাধিকার পাশে।
গাইল বড়ু চণ্ডীদাসে॥
(১০)
রামগিরিরাগঃ ॥ রূপকং ॥
এত কালে বুঢ়ী তোর কেহ্নে হেন মন।
ভাল বুলিবে তোরে শুণী কোন জন ॥
আদি আন্ত এখো বোল না বোলসি ভাল।
মারিবোঁ পরাণে তোকে জানাআঁ গোআল ॥ ১
দারুণী বুঢ়ী তোর বাপেত নাহিঁ লাজ।
তেকারণে মোক বোলসি হেন কাজ ॥ ল ॥ ধ্রু
বার বার না বুলিহ হেনক উত্তর।
সামী দুরুবার মোর নহোঁ সতন্তর ॥
মো যবেঁ জাণোঁ তোর হেন দুষ্ট মতী।
তবেঁ কেহ্নে আসিবোঁ মো তোহ্মার সংহতী ॥ ২
তোঁ মোর বড়ায়ি মোঁ তোর নাতিনী।
এবেঁসি তোহ্মার মুখে শুণী হেন বাণী ॥
আর যবেঁ বোল মোরে হেন পরিহাস।
আবসি করিবোঁ তবেঁ তোহ্মার বিনাশ ॥ ৩
এহা গুআ পান তোহ্মে আপণেই খাহা।
আপণাক চিহ্নিআঁ কাহ্নের থান যাহা ॥
এহা বুলী বড়ায়িক চড়ে মাইল রোষে।
বাসলী শিরে বন্দী গাইল চণ্ডীদাসে ॥
(১১)
বরাড়ীরাগঃ ॥ রূপকং ॥
তোহ্মার আন্তরে কাহ্নাঞিঁ করিলোঁ যতনে।
আনেক প্রকারেঁ তাক বুলিলোঁ বচনে ॥
তাহাত মুগধী রাধা না পাতিল কানে।
পাএ পেলাইল তোর সব গুআ পানে ॥ ১
কাহ্নাঞিঁ।
চড়েঁ মাইলে রাধা মোরে দেখ বিদ্যমানে।
এত আপমান সহে কাহার পরাণে ॥ ধ্রু
আওর বুইল তোক যত বীরদাপ।
তাক সোঁঅরিতেঁ মোর মনে বাঢ়ে তাপ ॥
এখোহি না রাখিলেক তোর মাঅ বাপ।
কোপেঁ গরজিলী রাধা যেন কালসাপ ॥ ২
তীন ভুবনে নাহিঁ হেন আছিদরী।
হাণে কুলে এখো নাহিঁ পাটাবুকী তিরী॥
তোহ্মার কারণে মোরে যত দিল দুখ।
পালটি না দেখোঁ আর তাহার মুখ ॥ ৩
নিতি নিতি দধি বিকে মথুরাক জাএ।
তাক দুখ দিতেঁ কিছ চিন্তহ উপাএ ॥
তবেঁসি মনের মোর দুখ পালাএ।
বাসলী শিরেঁ বন্দী চণ্ডীদাস গাএ ॥ ৪
(১২)
দেশাগরাগঃ ॥ রূপকং ॥
বড়ায়ি ল।
কদলের তলে বসী যমুনার তীরে
দান ছলেঁ রাখিবোঁ রাধারে।
বড়ায়ি ল।
লুড়িআঁ সব পসার খাইবোঁ দধি তাহার
কাঢ়ী লৈবোঁ সাতেসরী হারে ॥ ১
বড়ায়ি ল।
বাটেত সৃজিআঁ দান করি তার আপমান
তোর মোর সাধিব মান ॥ ধ্রু
বড়ায়ি ল।
ধরিহ মোর যুগতী রাধার হআঁ সংহতী
চলি জাইহ মথুরার হাটে।
আহ্মাক রুষ্ট বচনে তোষিহ রাধার মনে
আহ্মে যবেঁ রোধিব বাটে ॥ ২
ছাড়াইবেঁ তার ক্ষীর কাঞ্চুলী করিবোঁ চীর
হাথ দিবোঁ তাহার তনে।
তোর আনুমতী লআঁ বলে রাধাক ধরিআঁ
লআঁ যাইবোঁ মাঝ বৃন্দাবনে ॥ ৩
পাছেত মদনবাণে হাণিআঁ তাক পরাণে
রহিবোঁ ধরি মুনিবেশে।
বসি তোহ্মে তার পাশে করিহলি ঊপহাসে
গাইল বড়ু চণ্ডীদাসে ॥ ৪